ইডফার উদ্বোধনী আসর তুসানিস্কি থিয়েটারে/ ইডফা ২০১২ এর সৌজন্যে
[সম্প্রতি বিশ্বের প্রাচীনতম প্রামাণ্য উৎসব জার্মানীর লাইপজিগে ও বিশ্বের বৃহত্তম প্রামাণ্য আসর ইডফাতে ‘শুনতে কি পাও!’ প্রামাণ্যছবির সফল বিশ্ব অভিষেক প্রদর্শনী করে ফিরে এসে লিখেছেন পরিচালক কামার আহমাদ সাইমন]
‘অর্ন্তদৃষ্টিতে যারা দেখেন, তাদের চোখের ডাক্তার দেখানো দরকার’ উৎসব পরিচালক তাঁর উদ্বোধনী ভাষণ শুরু করলেন আশির দশকের এক জার্মান চ্যান্সেলরের নির্বাচনী বক্তৃতা থেকে উদ্ধৃত করে। ইউরোপের শিল্পরসিকদের কাছে ‘নতুন বার্লিন’ বলে খ্যাত লাইপজিগ শহরে ১৯৫৫ সাল থেকে অনুষ্ঠিত হয়ে আসা বিশ্বের প্রাচীনতম প্রামাণ্য উৎসবের উদ্বোধনী অনুষ্ঠান, বক্তা ডক-লাইপজিগের উৎসব পরিচালক ক্লাস ড্যানিয়েলসন। জার্মানির দ্বিতীয় বৃহত্তম রূপালি পর্দার ছবিঘরে সমাগত দেশ-বিদেশের চলচ্চিত্র নির্মাতা, রসিক, সমঝদার, সমালোচক, সাংবাদিক, সুধীজন এবং আমরা। ৫৫আসরের শ্লোগানকে ব্যাখ্যা দিয়ে ক্লাস বলে চললেন, ‘একটা ছবিকে কিভাবে মূল্যায়িত করবো, তার দর্শক সংখ্যা দিয়ে? কিন্তু যখন উৎসব শেষের অনেক মাস পরও হঠাৎ কোন পুরানো দর্শক জানতে চান এরকম ছবি আবার কোথায় দেখা যাবে, তার মূল্যায়ন কিভাবে হবে? আশির দশকে পশ্চিমা শহরগুলোর রাস্তা গাড়ির দখল থেকে পুনরূদ্ধারের যে আন্দোলন (রিক্লেইম দ্য স্ট্রীট্স) শুরু হয়ে পরবর্তীতে পুঁজিবাদ বিরোধী সামাজিক আন্দোলনের রূপ নিয়েছিলো, তারই ধারাবাহিকতায় বিশ্বজুড়ে শুরু হয়েছে আজকের দখল আন্দোলন অথবা অক্যুপাই মুভমেন্ট। তাই আজ আমাদের শ্লোগান, অর্ন্তদৃষ্টি খোলো! (রিক্লেইম দ্য ভিশন)।
কারণ অন্তর্দৃষ্টি আমাদের নিত্যদিনের সংগ্রামকে শাণিত করে, আমাদের মনকে উদার করে, আমাদের দৃষ্টিকে অবারিত করে। অন্তর্দৃষ্টি আমাদের শক্তি দেয়, জীবনের সত্যিকারের মানে শেখায়। ’
ডক-লাইপজিগের উদ্বোধনী আসরের মঞ্চ/ ছবি ডক-লাইপজিগ ২০১২ এর সৌজন্যে
হলিউডের চাঞ্চল্য সৃষ্টিকারী নির্মিতি, উপস্থাপন এবং বিত্ত-নির্ভর প্রযোজনার দাপটে সংবেদনশীল ছবির বাজার প্রতিনিয়ত যেখানে সারা বিশ্বেই সংকুচিত হয়ে আসছে... এমনকি ইউরোপের অনেক দেশেই যেখানে ছবি বানানো বন্ধ হয়ে শুধুমাত্র হলিউডি ছবির বাজারে পরিণত হয়েছে, সেখানে এই রকম একটি আসরের মুক্তমঞ্চে সর্ব্বোচ্চ পদ থেকে এ উচ্চারণ রীতিমতো বিপ্লবের আহ্বান। দর্শকের সারিতে প্রচন্ড উত্তেজনা চেপে বসে আছি, তিন বছরের পরিশ্রমে তৈরি ‘শুনতে কি পাও!’ এর প্রথম প্রর্দশনী হবে একটু পরেই। এর আগে আমাদের নিজেদেরও দেখা হয়নি এভাবে বড় পর্দায়।
মূল অনুষ্ঠানের উপস্থাপনায় ও ক্লাসের বক্তৃতায় একাধিকবার ‘বাংলাদেশ’ নামটার উচ্চারণ শিহরণ জাগালো শরীরে... মঞ্চ থেকে ডাক এলো, ছবি শুরুর আগে কিছু বলার জন্য। বিশাল মঞ্চের উপর ছোট দু’টো মানুষ আমরা, আমি আর আমার সহকর্মী-সহধর্মী সারা আফরীন দুরুদুরু বুকে গিয়ে দাড়ালাম। হাজার বাতির রোশনাইতে চোখ ঝলসে গেলো, তবু হাড় কাঁপানো শীত উপেক্ষা করে আসা হলভর্তি দর্শকদের দিকে চোখ বুলিয়ে নিলাম এক ঝলক। মনে মনে ভাবলাম আহা, দেশে যদি এরকম একটা ছবিঘর থাকতো... এইরকম দর্শকভর্তি আসর যদি হতো আমাদের ছবিঘরেও! তারেক মাসুদের কথা মনে পড়ে গেলো, কি অমানুষিক পরিশ্রমই না করেছিলেন দেশব্যাপী ‘রানওয়ে’র প্রর্দশনী করতে। একবার মনে আছে কুষ্টিয়ায় ইসলামিক ইউনিভার্সিটি থেকে মুঠোফোনে ক্ষুদে বার্তা পাঠিয়েছিলেন - ‘দর্শক আমাদের ছবি খায় না, এই অপবাদ ভুল প্রমাণিত... অন্তর্দৃষ্টি দিয়ে দেখার দর্শক এখনো আছে।
’ বিশাল হলভর্তি দর্শক তার সেকি আনন্দ! বিশাল রূপালি পর্দায় অসাধারণ শব্দ ব্যবস্থাপনায় প্রথমবারের মতো নিজেদের ছবি দেখতে দেখতে সব ভুলে গেলাম।
ডক-লাইপজিগে ‘শুনতে কি পাও!’ এর প্রদর্শনী এবং দর্শক/ ছবি ডক-লাইপজিগ ২০১২ এর সৌজন্যে
প্রথম প্রদর্শনী শেষ হলো... হলের গেটের বাইরে দাঁড়িয়ে আছি ভয়ে ভয়ে। সারি সারি দর্শক বেড়িয়ে আসছেন হল থেকে, চোখ তুলে তাকিয়ে দেখে দেখে চলে যাচ্ছেন। বুকটা কাঁপছে উত্তেজনায়... ভাবছি ছবিটা ভালো লাগেনি হয়তো। পেছন থেকে ডাক শুনলাম, ‘কামার ভাই’! ঘুরে তাকালাম... দেখলাম সুহৃদ আরাফাতুল ইসলাম, সুদূর বন থেকে যিনি এসেছেন ডয়েচে ভেলের হয়ে, মাইক্রোফোন হাতে সাক্ষাৎকার নেওয়ার জন্যে।
আরাফাতের সুচিন্তিত প্রশ্ন শুনে ভালো লাগলো, এইরকম ভিনদেশে একজন দেশীভাইয়ের সংক্ষিপ্ত কিন্তু আন্তরিক আড্ডায় মন কিছুটা শান্ত হলেও, একটা ‘কিন্তু’ থেকেই গেলো। সাক্ষাৎকার শেষ করে চলে এলাম ‘মিউজিয়ম অফ মডার্ন আর্ট’এ উৎসবের উদ্বোধনী পার্টিতে, আর সেখানে গিয়েই শুরু হলো প্রশ্নবাণ। কিভাবে বানালে? ধারণাটা কিভাবে এলো? বাংলাদেশে সার্বিক চলচ্চিত্রের অবস্থা কি? সৃজনশীল প্রামাণ্য সিনেমা ধারায় আর কেউ কাজ করছে কিনা ইত্যাদি। আস্তে আস্তে মনটা প্রসন্ন হয়ে এলো, দর্শকের অন্তর্দৃষ্টির প্রতি শ্রদ্ধা বেড়ে গেলো বহুগুণ। কিন্তু প্রশ্নবান চলতেই লাগলো, পরদিন লিফটে, লবিতে, হোটেলে সকালের নাস্তায়।
একটা প্রশ্ন বারবারই ফিরে এলো, ‘এরপরের পরিকল্পনা কি?’ এমনকি একদিন বাদের দ্বিতীয় প্রদর্শনীতেও সেই একই প্রশ্ন, ‘এরপরের পরিকল্পনা কি?’ এই দ্বিতীয় প্রদর্শনীতে একটা বিষয় লক্ষ্য করলাম, সপ্তাহের মাঝখানে ভয়ঙ্কর শীতের সকালে বিশাল ছবিঘরের প্রায় তিন-চতুর্থাংশই পরিপূর্ণ, এবং প্রায় পুরোটাই তিরিশের নীচের বয়সি দর্শক। এখানে আসবার আগে কোথাও একটা লেখায় পড়েছিলাম, সুরস্রষ্টা জন সিবাস্টিয়ান বাখ্ এই লাইপজিগেরই একটি গীর্জায় প্রতি সপ্তাহে একটি নতুন সঙ্গীত উপস্থাপন করতেন, ডক-লাইপজিগ উৎসবের লোগো এরা তৈরি করেছে বিশ্বখ্যাত শিল্পী পিকাসোর একটি আঁকা থেকে। ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের শহর’ হিসাবে খ্যাত লাইপজিগ নিয়ে নিউইয়র্ক টাইমস আসলে ভুল লেখেনি... লাইপজিগ হলো আরো ভালো বার্লিন (বেটার বার্লিন)! ওদের প্রশ্নের উত্তরে বললাম ‘আপাতত পরিকল্পনা একটাই, তবে দেশে ফিরে গিয়ে তোমাদের মতন এইরকম তরুণ দর্শকদের যত বেশিবার সম্ভব ছবিটা দেখাতে চাই। ’
কামার আহমাদ সাইমন ও সারা আফরীন এর সাথে প্রশ্নোত্তরপর্ব: / ছবি মার্টিন জেনিকেন এর সৌজন্যে
লাইপজিগ শেষ করে চলে এলাম আমস্টারডামে, দু’দিন বাদেই শুরু হবে ইডফার ২৫তম আসর। এখানে উল্লেখ্য, ‘শুনতে কি পাও!’ ছবিটির সাথে ইডফার একটা আত্মিক যোগাযোগ আছে।
কারণ, ছবিটিকে এর নির্মাণকালেই দু’বার প্রতিযোগিতামূলক পুরষ্কার দিয়েছে ইডফা ফান্ড। এছাড়াও চিত্রগ্রহণ শুরুর ঠিক আগে ‘ইডফা সামার স্কুলে’ বিখ্যাত ডাচ নির্মাতা পেট্রা ল্যাটেস্টারের সাথে ছবিটির চিত্রনাট্য নিয়ে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করার সুযোগ হয়েছিলো আমাদের। তাই আমস্টারডামে এসে প্রথমে কিছুটা প্রফুল্ল চিত্তে ঘুরে বেড়ালেও, ইডফার আয়োজনের ব্যাপ্তি দেখে মনে একটা প্রশ্ন ঘুরে ফিরে আসতে লাগলো, দর্শক হবেতো প্রর্দশনীতে? প্রথমত, ইডফা হলো বিশ্বের বৃহত্তম প্রামাণ্য ছবির আসর, যার খ্যাতি জগতজোড়া। আর দ্বিতীয়ত, লাইপগিজে যেহেতু এটি ছিলো উদ্বোধনী ছবি এবং বাংলাদেশ থেকে কোন ছবির মূল আর্ন্তজাতিক প্রতিযোগিতায় প্রথম অংশগ্রহণ, তাই এমনিতেই ছবিটি ছিলো মূল আকর্ষণের একটি। আবার ঠিক এই একই কারণে ছবিটিকে ইডফাতে কোন প্রতিযোগিতায় নেওয়া হয়নি।
এমনকি ডক-লাইপজিগের ছবি নিয়ে অংশগ্রহণকারী অনেক ঈর্ষান্বিত বন্ধুদের কাছ থেকে জেনেছিলাম যে, প্রতিযোগিতাতো দূরের কথা... ইডফা নিদেনপক্ষে ইউরোপিয়ান অভিষেক না হলে ছবি প্রদর্শনের জন্যই বিবেচনা করে না। সবটা মিলিয়ে একরকম শঙ্কা নিয়েই প্রথম প্রদর্শনীটাতে গেলাম। প্রথম প্রর্দশনীর জায়গাটা অসাধারণ একটা সাংস্কৃতিক কেন্দ্র, কিন্তু ছবি প্রদর্শনের চাইতে নাটকের মঞ্চ হিসাবে বেশি প্রযোজ্য। পর্দার চারপাশটা সাদা যেখানে ছবির আলো প্রতিবিম্বিত হচ্ছে, এমনকি মেঝেটাও খুব চকচক করছে, প্রক্ষেপণও কেমন যেন চড়া মাত্রার লাগছিলো। কিন্তু সবচাইতে কষ্টদায়ক হলো দর্শক সারির অর্ধেকের বেশিই খালি।
মনটা একেবারেই দমে গেলো, ইডফার আয়োজক বন্ধুদের সাথে গিয়ে কথা বললাম। ওরা সান্ত্বনা দিয়ে বললো, ‘একেবারেই চিন্তা করো না, ইডফাতো এখনো শুরুই হয়নি। তোমার পরের সবগুলো প্রদর্শনীই তুসিনিস্কি আর মুন্টজ্ এ। সুতরাং, রিল্যাক্স। ’ বললেইতো আর ‘রিল্যাক্স করা যায় না।
’ পরদিন সকালে উঠেই টিকেট কাউন্টারে গিয়ে দাঁড়ালাম। মনে মনে বললাম, ‘লাজ, লজ্জা, ভয়... তিন থাকতে নয়। ’ টিকেটের সারির পেছনের দিকের লাইনে দাঁড়ানো একজন প্রৌঢ়াকে দিয়ে শুরু করলাম, হাতে একটা ছবিকার্ড দিয়ে বললাম, ‘তুমি কি শুনতে কি পাও? ছবিটার নাম শুনেছো? তুমি কি জানো এটা বাংলাদেশ থেকে আসা প্রথম ছবি যেটা গত সপ্তাহের ডক-লাইপজিগ উদ্বোধন করেছে!’ আমাকে অবাক করে দিয়ে প্রৌঢ়া বললেন, ‘জানি, আমি এই ছবিটার উপর পড়েছি। কিন্তু এটারতো আজকে কোন প্রর্দশনী নেই!’ আমি হতচকিত হয়ে বললাম, ‘ও হ্যাঁ... কিন্তু এটা কালকে আছে, তুমি একদিন আগে টিকেট কাটতে পারো। ’ মৃদু হেসে প্রৌঢ়া জিজ্ঞাসা করলেন, ‘তুমি কি ছবির পরিচালক?’ আমি অপ্রস্তুত হয়ে কোনরকমে মাথা নেড়ে সায় দিয়ে সরে এলাম।
পরদিন মুন্টজ্ এ গিয়ে দেখি এলাহি কারবার। প্রায় ছ’তলারও বেশি উঁচু দালানের তিনটি তলায় ছোট বড় মিলিয়ে আটখানা ছবিঘর। নীচতলায় ইডফার বিশেষ বক্স অফিসে গিয়ে ভয়ে ভয়ে টিকেটের বিক্রি-বাট্টার খোঁজ নিলাম,শুনলাম অল্প কিছু টিকেট এখনো বাকি আছে। নির্দিষ্ট ছবিঘরে উপস্থিত হয়ে দেখি, তুলনামূলকভাবে ছোট কিন্তু খুবই পেশাদার ছবিঘর। পর্দার চারপাশ এমনকি মেঝে ছাদ, সবই মোটা কালো শব্দচোষা ভেলভেটে মোড়া।
আমাদেরকে অবাক করে দিয়ে ছবি শুরুর মিনিট পাঁচেক আগেই কানায় কানায় পূর্ণ হয়ে গেলো পুরো ঘর। অসম্ভব সুন্দর রঙ আর শব্দ ব্যবস্থাপনা দেখে মন ভরে গেলো। ছবি শেষে আবার শুরু হলো সেই প্রশ্নবাণ। ছবির প্রত্যক্ষ বিষয়ের চাইতে এর সংঘাত-অন্তর্ঘাতের প্রতি এদের বিশেষ উৎসাহ দেখে মন ভরে গেলো, আস্তে আস্তে প্রশ্নের উত্তর দিয়ে গেলাম।
ইডফার প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক আলি ডার্ক্স এবং ইডফা ফান্ড ব্যবস্থাপক ইসাবেল আরাতের সাথে নির্মাতা কামার আহমাদ সাইমন ও সারা আফরীন/ ছবি নাদিন মাসের সৌজন্যে
লাইপজিগে আমাদের ছিলো দু’টো প্রদর্শনী, ইডফাতে চারটে।
পরের দু’টো প্রদর্শনীও কানায় কানায় পূর্ণ হয়ে শেষ হলো। শেষ প্রদর্শনীটি বাকি থাকতেই বাক্স পেটরা গুছিয়ে প্রস্তুতি নিলাম দেশে ফেরার। ফিরতি টিকেট সেভাবেই করা ছিলো, প্রায় একমাস দেশের বাইরে। এয়ারপোর্টে পৌছে বোর্ডিং কার্ড নিয়ে দাঁড়ালাম, বিমানবালা সবুজ পাসপোর্ট হাতে নিয়ে উল্টে-পাল্টে ফোন দিলেন বড়কর্তাকে। পাসপোর্টের পাতা অনেকক্ষণ নাড়াচাড়া করে কর্তা জানালেন, ‘আমাদেরকে তাঁরা বিমানে নিতে পারছেন না, নতুন টিকেট কাটতে হবে।
’ বিষয়টা হলো আমাদের ফিরতি টিকেট অনুযায়ী বিমান যাবে লন্ডন হয়ে। কিন্তু আমাদের যে ভিসা আছে তা ইউরোপের চৌদ্দটা দেশে কাজ করলেও যুক্তরাজ্যে করবে না, এমনকি বিমানের দু’ঘন্টার ‘ট্রানজিট’ যাত্রী হিসাবেও না। অগত্যা আয়োজকদের ফোন দিলাম, কৃতজ্ঞচিত্তে তাদের বদান্যতা স্বীকার করতেই হবে। সাথে সাথে তাঁরা এয়ারপোর্টে ট্যাক্সি পাঠানো থেকে শুরু করে, হোটেল, পরের দিনের নতুন টিকেট... সব ব্যবস্থা করে দিলেন। হোটেল ফিরে এসে দেখি বিশিষ্ট প্রামাণ্যছবি প্রযোজক-পরিবেশক ফিনিশ বন্ধু ইক্কা ভেকালাথি একটা মেইল পাঠিয়েছেন।
মেইলের বিষয়ে লেখা, ‘অভিবাদন’... আর মেইলে শুধু একটা লিংক দেয়া। খুলে দেখি ‘ইউরোপিয়ান ডকুমেন্টারি নেটওয়ার্কের’ প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক, শিক্ষক, প্রামাণ্যকার, সর্বজন শ্রদ্ধেয় ড্যানিস সমালোচক টু স্টিন মুলার একটা আর্টিকেলে লিখেছেন, ‘বাংলাদেশের কামার আহমাদ সাইমন নির্মিত শুনতে কি পাও! একটি চিরন্তন মানবতাবাদী সিনেমাটিকালি অসাধারণ ছবি, যেটা বৈশিষ্ট্যের দিক থেকে সত্যজিত রায়ের অপু-উপাখ্যান মনে করিয়ে দেয়। ’ বহির্দৃষ্টি ঝাপসা হয়ে এলো, আর অন্তর্দৃষ্টিতে হাওরের বাতাস এসে লাগলো বুকে। নেত্রকোনার সাধক পুরুষ উকিল মুন্সির একটা গান মনে পড়ে গেলো, ‘অন্তর্চক্ষু খোলোরে মন, ভবের দেশে চলোরে মন, ভবের দেশে চলো...’ এই শীতার্ত ইউরোপে একবিংশ শতকের অত্যাধুনিকতম ছবি উৎসবে এসে কবির লড়াই, ছবির লড়াই পূবে-পশ্চিমে সব একাকার হয়ে গেলো। ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।