আমরা প্রায়ই বিভিন্ন সিনেমার কোন দৃশ্য দেখে মুগ্ধ হই। কিন্তু সে জাতীয় দৃশ্য সৃষ্টি করতে পারি না। এবং এই বলে আফসোস করি যে ওদের হাই টেকনোলজি আছে তো তাই তারা এসব পারে। বিষয়টা কিন্তু আসলে তা নয়। এখানে হাই টেকনোলজি ছাড়াই ঐ রকম দৃশ্য তৈরী করা যায় এমন কিছু টিপস দেয়া হল।
মুড এন্ড মিস্টি (রহস্য বা অস্পষ্টতা বোঝাতে)ঃ
লাইট হাফ টোন হবে। অর্থাৎ চেহারার পুরোটা আলোতে থাকবে না। মুখের এক পাশ আলো অন্য পাশ অন্ধকার থাকতে পারে। কন্ট্রাস্ট হাই হবে। মানে আলো ও ছায়ার তফাৎটা অনেক বেশী কড়া হবে।
আলোটা বেশী আলো, ছায়াটা বেশী ছায়া। আলো ছায়ার অনুপাত, আলোঃছায়া=১ঃ২ দিতে পারেন। এখানে হার্ড লাইট ব্যবহার করে সুফল পেতে পারেন। বাকিটা আপনার কাহিনি বা চরিত্রের প্রয়োজন মাফিক।
গ্লুমি মুড (বিষাদ/বিষন্নতা)ঃ
ফেমে আলো আঁধারী পরিবেশ থাকতে হবে।
লাইটের কন্ট্রাস্ট বেশী হবে। হার্ড লাইট ব্যবহার করতে হবে। ডাল (নিষ্প্রভ/একঘেয়ে/ ফ্যাকাশে) কালার ব্যবহার করতে হবে। অর্থাৎ ঘরের রং, জামা কাপড়ের রং সবই ডাল কালার হতে হবে। বাকিটা আপনার কাহিনি বা চরিত্রের প্রয়োজন মাফিক।
গে এন্ড হ্যাপি মুড (উচ্ছল, আনন্দ ঘন মুহূর্ত)ঃ
লাইট উজ্জ্বল হবে। এক্ষেত্রে হার্ড লাইট এড়িয়ে যাওয়া ভাল। পুরো দৃশ্যে ওয়ার্ম কালার ব্যবহার করতে হবে। যেমন হালকা হলুদ, হালকা লাল, হালকা সবুজ, হালকা বেগুনী ইত্যাদি। অর্থাৎ ঘরের রং, জামা কাপড়ের রং সবই ওর্য়াম কালার হতে হবে।
অনেকেই মনে করেন যেহেতু আনন্দের সিন তাই কড়া কড়া রং ব্যবহার করা উচিৎ। কিন্তু প্রকৃত পক্ষে রং যত গাড় হবে তার বৈশিষ্ট তত কুল হবে। কুল রং শান্ত ভাব, উত্তেজনাহীনতা, আবেগহীনতা, অনাগ্রহ, নিরুত্তাপ, গতিহীনতা ইত্যাদি ভাব প্রকাশ করে। অপর দিকে ওয়ার্ম কালার আবেগ, আগ্রহ, গতি, আন্তরিকতা, আনন্দ, সহানুভুতি ইত্যাদি প্রকাশ করে। এখন আপনিই সিদ্ধান্ত নেন আপনার বার্ডডে পার্টির দৃশ্যটি গতিশীল করবেন নাকি গতিহীন করবেন।
(রং নিয়ে বিস্তারিত আরেকটি লেখা লেখার ইচ্ছা রয়েছে)। বাকিটা আপনার কাহিনি বা চরিত্রের প্রয়োজন মাফিক।
কাম এন্ড সেরেন মুড (শান্ত ও স্থিব ভাব)ঃ
কালার ভ্যলুর গ্রে টোনটা ব্যবহার করতে হবে। এখানে বিষয়টি একটু ব্যাখা করা দরকার। কালো রংকে যদি হালকা করতে থাকেন তবে প্রথমে তা ছাই (৫০% কালো বা ৫০% সাদা) হবে তারপর এক সময় ধীরে ধীরে সাদা হয়ে যাবে।
সব রংএর ক্ষেত্রেই এটা সত্য। ধরেন, লাল রংকে আপনি যদি হালকা করতে থাকেন তবে এক সময় তা ৫০% লালে পরিনত হবে তারপর ধীরে ধীরে এক সময় সাদা হয়ে যাবে। এই ৫০% লাল বা নীল বা হলুদকে আমরা ছাই বা গ্রে টোন বলছি। অর্থাৎ এখানে প্রত্যেকটা রংই কিছুটা ফ্যাকাশে হবে। তার মানে এই নয় যে দাঁড়ি পাল্লা দিয়ে মেপে মেপে ৫০% টোনটা ব্যবহার করবেন।
কাহিনি ও চরিত্রের প্রয়োজন মাফিক আপনি রংকে ৬০% থেকে ৪০% টোনে বা তার চেয়েও কম বেশী করতে পারে। তবে কখনওই ১০০% টোন থাকবে না। বাকিটা আপনার কাহিনি বা চরিত্রের প্রয়োজন মাফিক। আউট ডোরের ক্ষেত্রে চৈত্রের দুপুর একটি আর্দশ উদাহরন হতে পারে। বিকালে সূর্যের আলোতে একটা হলদে আভা আসে যা দৃশ্যর গতি বাড়িয়ে দেয়।
তাই এই জাতীয় দৃশ্য শুট করার জন্যে বিকাল বেলা একেবারেই আর্দশ সময় নয়।
ড্রামাটিক এফেক্ট (নাটকীয় মুহূর্ত)ঃ
ঘটনার সাথে সামঞ্জস্য রেখে লাইটের কন্ট্রাস্টের অনুপাত বাড়াতে হবে। অনুপাত হবে রঙ্গিন ছবিতে আলোঃছায়া=১ঃ৩, সাদা কালো ছবিতে আলোঃছায়া=১ঃ৫ বা ১ঃ৪। লাইটের উৎস বদলাতে হবে। মূল কালারের সাথে সম্পূরক কালার ব্যবহার করতে হবে।
ফিল্মে মূল কালার হচ্ছে রেড, গ্রিন, ব্লু (আরজিবি)। এদের সম্পূরক কালার হচ্ছে যথাক্রমে হলুদ, সাইয়ান, ম্যাজেন্টা। মুল কালারের পাশে সম্পূরক কালার রাখলে ডেপথ অফ পাসপেক্টিভ বাড়ে। বাকিটা আপনার কাহিনি বা চরিত্রের প্রয়োজন মাফিক। (পাসপেক্টিভ নিয়ে বিস্তারিত আরেকটি লেখা লেখার ইচ্ছা রয়েছে)।
বিষয়টা এমন হতে পারে, নায়ক নায়িকা কথা বলছে এমন সময় কারেন্ট চলে গেল। (কন্ট্রাস্ট বাড়ল)। সাথে সাথে এমাজেন্সী লাইট জ্বলে উঠল অন্য কোন দিক থেকে। (আলোর উৎস পাল্টে গেল)। সেই সাথে এমার্জেন্সী লাইটটা যদি সাদা না হয় তাহলেই নায়ক নায়িকার পোষাক বা পরিবেশের রং পালটে যাবে।
অথবা ধরেন নায়ক রাস্তায় দাঁড়িয়ে। হঠাৎ তার উপরে একটা ছায়া এসে পড়ল। (কন্ট্রাস্ট বাড়ল)। নায়ক দ্রুত উপরের দিকে তাকালো কিসের ছায়া বোঝার জন্যে। (এতক্ষণ আলো ফ্রেমের উপর দিক থেকে আসছিল।
নায়ক উপরে তাকানোর সময় ও/এস দেখাতে গিয়ে এখন সূর্য সোজা ক্যামেরার দিকে। অর্থাৎ আলোর উৎস পাল্টে গেল)। এক্ষেত্রেও সূর্যের কড়া লাইটের কারণে রংএর পরির্বতন আসবে।
পোয়েটিক এটমোসফিয়ার (কাব্যিক পরিবেশ)ঃ
অতি ধীরে লাইট কন্ট্রাস্ট কমবে বা বাড়বে। এতটাই ধীরে যেন তা র্দশকের চোখে না পড়ে।
ওয়ার্ম কালারের (লাল, কমলা, হলুদ, গোলাপী, বেগুনী) শেডগুলো ব্যবহার করতে হবে। এর বাইরে বাদ বাকি কাহিনি ও চরিত্রের প্রয়োজন অনুযায়ী হবে। এখানে রংএর শেড শব্দটুকু এই কারনে ব্যবহার করা হচ্ছে যে আপনার সিনেমাতে এই রংগুলোর গাঢ় ভার্সন না হালকা ভার্সন লাগবে তা কেবল পরিচালক হিসাবে আপনিই জানেন। বেন হার সিনেমাটিতে পোয়েটিক এটমোসফিয়ারের একটি চমৎকার ব্যবহার রয়েছে।
গ্রেস (সহজ/সাবলীল)ঃ
যদি কাউকে গ্রেসফুল বা সহজ সাবলীল দেখাতে হয় তবে লাইট কন্ট্রাস্ট কম রাখতে হবে।
সফ্ট লাইট ব্যবহার করতে হবে। ডিফিউজড কালার ব্যবহার করতে হবে। ডিফিউজড মানে কুল (নীল, সবুজ, ছাই) কালারের হালকা টোন বা ওয়ার্ম (লাল, কমলা, হলুদ, গোলাপী, বেগুনী) কালারের ফ্যাকাশে টোন। একজন মানুষকে তখনই সাবলীল দেখায় যখন তার মাঝে একটা শান্ত, ধীর স্থির ভাব থাকে। অস্থির লোকেদের সাধারণতঃ সাবলীল দেখায় না।
একারণেই ডিফিউজড কালারের ব্যবহার। বাকিটা আপনার কাহিনি বা চরিত্রের প্রয়োজন মাফিক।
ডিগনিটি (মর্যাদা)ঃ
যদি কাউকে মর্যাদাপূর্ণ দেখাতে হয় তবে লাইট কন্ট্রাস্ট কম রাখতে হবে। সফ্ট লাইট ব্যবহার করতে হবে। ওয়ার্ম কালার ব্যবহার করতে হবে।
সেই সাথে ব্যাক্তিটির আশে পাশে কোন ভার্টিকাল (উলম্ব/ উপর থেকে নীচে) লাইনের ব্যবহার থাকতে হবে। যেমন, সাবজেক্ট কোন সোজা গাছের পাশে দাঁড়িয়ে আছে। অথবা সাবজেক্টের অফিসের ডেকোরেশনটা এমন যে তার পিছনে বেশ কিছু ভার্টিকাল লাইনের ব্যবহার আছে। বাকিটা আপনার কাহিনি বা চরিত্রের প্রয়োজন মাফিক।
ড্রামা/এ্যকশনঃ
অন্ধকার ব্যাকগ্রাউন্ডে তুলনামূলক আলোকিত সাবজেক্টের নড়াচড়া দেখাতে হবে।
বিপরীত রংএর ব্যবহার থাকতে হবে। লালের বিপরীত সাইয়ান, সবুজের বিপরীত ম্যাজেন্টা আর নীলের বিপরীত হলুদ। বিপরীত কালারে ডেপথ অফ পাসপেক্টিভ বাড়ে। বাকিটা আপনার কাহিনি বা চরিত্রের প্রয়োজন মাফিক।
আশা করছি এই টিপসগুলো আপনাদের কাজে আসবে।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।