My Name is Md E Mahmud, live in Dhaka, Work at Home ইসলামী জীবন দর্শনে (বিশ্বস্রষ্টার অস্তিত্ব, তার প্রেরিত বার্তাবাহকগন, ঐশীগ্রন্থ, ফেরেস্তাকুল, পরজগত, তাকদির এবং মৃত্যুর পরবর্তি জীবন) এই সাতটি বিষয়বস্তুর উপর ইমান আনার পর সবচেয়ে গুরত্বপূর্ন বিষয় হল সালাত আদায় করা। একজন অমুসলিম যখন ইমানের স্বাক্ষ্য দিয়ে ইসলামী জীবন দর্শনের সীমান্তে প্রবেশ করে তার কিছুক্ষন পর যদি সেই নওমুসলিমের কর্ণকুহরে মুয়াজ্জিনের আযান প্রবেশ করে এমতাবস্তায় সালাতের জন্য সুরা কেরাত জানা থাক বা না থাক তার উপর সালাত কায়েম করা ফরজে আঈন হয়ে যায়। অমুসলিমদের জন্য এই সমস্ত বিষয় অনেকটাই শিথীলযোগ্য যতক্ষন পর্যন্ত না তার দ্বীন ইসলামের জ্ঞানের পূর্নতা না আসে।
ইমানের পর মুসলিমদের জন্য সর্বাধিক গুরত্বপূর্ন ও অপরিহার্য বিষয় যথাযথভাবে যথা সময়ে সালাত আদায় করা এই বিষয়ে যেমন সাহাবী ও তাবেয়ীদের মধ্যে কোন মতভেদ নেই, মতভেদ নেই এই বিষয়েও যে, সালাত বর্জন করা মহান রবের সঙ্গে সরাসরি কুফরী ! তবে তারা ফাসেক না কাফের এই বিষয়ে মতভেদ রয়েছে, অধিকাংশ সাহাবা এবং তাবেয়ী মনে করেন কাফের, আবার অনেকে বলেছেন ফাসেক, তবে তারা যে ফাসেক এই বিষয়ে কোন মতভেদ নেই (তবে কেহ যদি সালাত এবং সালাতের প্রয়োজনীয়তা অস্বীকার করে তার কাফের হওয়ার বিষয়ে কোন মতভেদ নেই যদিও সে ইমানের সাতটি বিষয়বস্তুর উপর ইমান রাখে) আর ফাসেক শব্দটি শুনে যাদের মনোজগত কম্পিত হয় না পবিত্র কুরআনে তাদের জন্য ভয়াবহ সতর্কবাণী উচ্চারিত হয়েছে। একাধিক জায়গায় এরশাদ হয়েছে ‘‘আর আল্লাহ ফাসেক সম্প্রদায়কে হেদায়েত দেন না’’ ফাসেকদের উপর মহান আল্লাহ কতটুকো ক্রোধান্নিত উক্ত আয়াতের আলোকে বিষয়টি আমরা অনুধাবন করতে পারি।
পবিত্র কুরআনের অনত্র এরশাদ হয়েছে ‘‘ জাহান্নামীদের কান্না শুনে ফেরেস্তাকুল জিজ্ঞাসা করবে তোমরা কোন কর্মদোষে এই ভয়ংকর শাস্তীর সম্মুখিন হলে ? তারা বলবে আমরা সালাত আদায় করতাম না’’ সূরা মুদ্দাসের। উক্ত আয়াত অত্যান্ত সুষ্পষ্টভাবে প্রমান করে সালাত বর্জনকারীগন জাহান্নামী ! হয়ত প্রশ্ন আসতে পারে সালাত বর্জনকারীদের ক্ষেত্রে পরজগতের বিধান এত কঠোর করা হল কেন ? ধরনীতে এমন লোকদেরও অস্তিত্ব দেখতে পাই যারা একে অমানবিক আখ্যায়িত করে স্রষ্টার বিধানে কলঙ্কের দাগ অঙ্কন করতে চায়। বস্তুত মহান আল্লাহপাক নবুয়াতের ধারা রহিত করে অনাগত সকল যুগের জন্য মুসলিমজাতীকে আত্ববিষ্মিত লোকদের জন্য পথ প্রদর্শক করে পাঠিয়েছেন আর এভাবেই মুসলিমজাতীকে দায়িত্বশীল ঘোষণা করে শ্রেষ্টত্বের আসনে সমাসীন করেছেন। এরশাদ হয়েছে ‘‘তোমরাই হলে শ্রেষ্ট জাতী। তোমাদের বাছাই করা হয়েছে মানুষের কল্যান সাধনের জন্য।
তোমরা মানুষকে সকল ভাল কাজের আদেশ করবে এবং মন্দকর্ম থেকে মানুষকে বিরত রাখবে এবং আল্লাহর উপর ইমান রাখবে’’
উক্ত আয়াত বিশ্লেসন করলে জীবন দর্শনের যে তিনটি মৌলিক মুলনীতি মুসলিমজাতীর সম্মুখে আসে ১। মুসলিমজাতী পরিবারবর্গ এবং সমাজের লোকদেরকে সকল ভাল কাজের আদেশ করবে। ২। পরিবার এবং সমাজের লোকদেরকে মন্দকর্ম করতে দেখলে সাধ্যনুযায়ী তাদেরকে সেই কাজ থেকে বিরত রাখবে। ৩।
এই সমস্ত দায়িত্ব পালন করে তারা দুনিয়াবাসীর সম্মুখে ইমানের স্বাক্ষ্য প্রদান করবে।
*প্রশ্ন হচ্ছে যে মহানসত্বা এই দুইটি দায়িত্ব পালন করে দুনিয়াবাসীর সম্মুখে সত্যের স্বাক্ষ্য দিতে পবিত্র কুরআনের মাধ্যমে মুসলিমজাতীকে আদেশ করেছিলেন সেই দায়িত্ব তারা কতটুকো পালন করেছে ? যে মহানসত্বা নেক কাজের দিকে মানুষকে আহবানের দায়িত্ব দিয়ে (মুসলিমজাতীকে) প্রেরন করেছিলেন সেই জাতী এখন নিজেরাই পীর বুজুর্গদের মুক্ষাপেক্ষি ! কখন কোন হুজুরের মুখ থেকে স্বর্গীয় বানী উচ্চারিত হবে তারা এখন সেই বাণী শ্রবনের প্রতাশ্যায় থাকে, তারা মনে করে থাকে কুরআনের জ্ঞান হৃদয়ঙ্গম করবে আলেম ওলামা পীর বুজর্গ ! নিজেরা কুরআন অধ্যায়ন করতে চায় না অথচ মহান রবের প্রতিনিধিত্বের দায়িত্ব শিক্ষিত এবং সাধারণ শিক্ষিতগন পালন করতে হলে সর্বাগ্রে প্রয়োজন পবিত্র কুরআনের জ্ঞান। আর প্রতিনিধিত্বের আসনে কিন্তু পীর বুজর্গদের শুধু রাখা হয়নি। আদেশটি সামগ্রিক অর্থে সকল মুসলিমদের জন্য প্রযোজ্য। যারা মনে করে পবিত্র কুরআন অধ্যায়ন করবে আলেমগন এমন হতভাগ্য লোকদের উদ্দেশ্য করে আল্লাহপাক এরশাদ করেন ‘‘এক কল্যানময় কিতাব ! ইহা আমি অবতির্ণ করেছি যাহাতে মানুষ ইহার আয়াত সমুহ অনুধাবন করে আর বোধশক্তি সম্পন্ন লোকেরাই এই কিতাব থেকে উপদেশ গ্রহন করে’’ সূরা সাদ।
অনত্র এরশাদ হয়েছে ‘‘আমি এই কুরআনে মানুষের জন্য সর্বপ্রকার দৃষ্টান্ত পেশ করেছি যাহাতে উহারা এই কিতাব থেকে উপদেশ গ্রহন করে’’ সূরা যুমার।
*অতপর যে মহান সত্বা মন্দকর্ম থেকেও মানুষকে বিরত রাখার দায়িত্ব দিয়ে মুসলিমজাতীকে প্রেরন করেছিলেন দিবষ রজনীতে অধিকাংশ মুসলিম এখন নিজেরাই মন্দকর্মে ডুবে থাকে ! এর চেয়ে দূর্ভাগ্যের বিষয় আর কি হতে পারে। যে মহানসত্বা উপরোক্ত দুইটি দায়িত্ব পালনের মাধ্যমে দুনিয়াবাসীর সম্মুখে মুসলিমজাতীকে ইসলামী জীবন ব্যবস্থার স্বপক্ষে সত্যের স্বাক্ষ্য পেশ করতে বলেছিলেন তারা যদি নিজেরাই পীর পূজা, বুজুর্গ পূজা, মাঝার পূজা, আত্বপূজা, বংশপূজা, শয়তানের পূজা, নফসের পূজা, মানব রচিত মতাদর্শের পূজায় নিমগ্ন থাকে তা হলে কেমন করে স্রষ্টার প্রতিনিধিত্বের দায়িত্ব পালন করা সম্ভব ? এই শোচনিয় নৈতিক ও আধ্বাত্বিক পতনে নিপতিত হয়ে কেমন করে অপার্থিব অনন্ত অসীম জগতে স্রষ্টার পক্ষ থেকে ইতিবাচক আচরণ প্রত্যাশা করা সম্ভব ? সালাতের গুরত্ব বর্ননা করতে গিয়ে প্রসঙ্গক্রমে উপরোক্ত আলোচনা অনেকের নিকট সম্পর্কহীন মনে হলেও পরোক্ষভাবে সালাতের সঙ্গে এই সমস্ত আলোচনার গভির সম্পর্ক বিদ্যমান। একটি প্রশ্নের জবাব দিতে গিয়ে আলোচনা কিছুটা সম্প্রসারন করেছি যেন মুসলিম ভাইগন সালাতের গুরত্ব অনুধাবন করতে পারে।
বস্তুত সালাত আদায়ে যেমন রয়েছে অপার্থিব অনন্ত অসীম কল্যান।
রয়েছে পার্থিব কল্যানও। ইসলামী চিন্তাবিদগন পরজগতের মুক্তির পাশাপাশি সালাতের পার্থিব অসংখ্য কল্যানের কথাও তারা তাদের কিতাবে ব্যক্ত করেছেন সেই সমস্ত বিষয় উক্ত প্রবন্ধে এনে আলোচনা দির্ঘায়িত না করে চলে যাচ্ছি নবী সম্রাটের পবিত্র মানুসিক রাজ্যে। আমি এখন সালাত বর্জন কারিদের ক্ষেত্রে নবী সম্রাটের বিশ্বজনীন দৃষ্টিভঙ্গি পেশ করব যেন মুসলিমজাতী সালাত আদায়ের গুরত্ব উপলদ্ধি করতে পারে। এরশাদ হয়েছে
১। ইমান এবং কুফরের মধ্যে একমাত্র প্রার্থক্য সালাত।
বুখারী মুসলিম।
২। কাফের এবং আমাদের মধ্যে চুক্তি হল সালাত। অতএব যে ব্যক্তি সালাত ত্যাগ করেছে সে (ইসলামকে) অবিশ্বাস করেছে। মিশকাত, তিরমিযী, নাসায়ী, ইবনে মাযাহ।
৩। সাহাবায়ে কেরাম নামাজ বর্জনকারীদেরকে কাফের মনে করতেন। তিরমিযী।
৪। মহানবীর যুগ থেকে সকল ইসলামী চিন্তাবিদদের ফতোয়া হল বিনা কারনে সালাত বর্জনকারী কাফের।
মেশকাত, আহমেদ, দারেমী।
৫। বিচার দিবষে সর্বপ্রথম সালাতের হিসাব নেওয়া হবে। অতএব যার সালাত ঠিক থাকবে সে মুক্তি পেয়ে যাবে, আর যার সালাত ঠিক থাকবে না সে চরম ক্ষতিগ্রস্থ হবে। আবু দাউদ, মেশকাত, আহমেদ।
যে অন্তরে মহান রবের ভীতি রয়েছে তাদের জন্য উপরোক্ত পাচটি সহীহ হাদিস যথেষ্ট মনে করি। নবী সম্রাটের এই সমস্ত সুষ্পষ্ট সতর্কবাণী পতাক্ষ করেও যারা একে বর্জন করার প্রয়াস চালাবে তাদের ইমানের উপর যথেষ্ট সন্দেহ এবং প্রশ্ন থেকে যায়। অনেক মুসলিম ভেবে থাকে মহান রবের মৌলিক অদেশগুলো মেনে না চললেও পরজগতে মুক্তি মিলে যাবে। যেহেতু আপনজন ইসালে সওয়াব এবং হুজুরদেরকে দিয়ে দোয়ার আয়োজন করে থাকে এভাবে মুক্তি পেয়ে যাওয়া অসম্ভব কিছু নয় ! কোটি কোটি অসচেতন মুসলিম এমন আছে যারা বিষয়টিকে এভাবে দেখে থাকে ! বস্তুত ইহা একপ্রকার শয়তানের ধোকা ব্যতিত আর কিছুই নয়। মুলত যারা কখনো ইসলামী অনুশাসন মেনে চলেনি, ইসলামের মৌলিক বিধানগুলো যারা অবহেলার ছুড়ি দিয়ে ক্ষত বিক্ষত করেছে তারা পরজগতে এই সমস্ত দোয়ার মাধ্যমে মুক্তি পেয়ে যাবে এর স্বপক্ষে কোন দলিল নেই।
এছাড়া ইসালে সওয়াব কবরবাসীর নিকট পৌছে কিনা এই বিষয়ে মাযহাবের চার ইমামের মধ্যে মতভেদ রয়েছে ! ইমাম শাফেয়ীর অভিমত হল ইসালে সওয়াব কবরবাসীর নিকট পৌছে না ! আশ্চর্যের বিষয় হল যে বিষয়বস্তু নিয়ে মাযহাবের ইমামদের মধ্যে মতভেদ হয়েছে এমন একটি বস্তুকে চলমান শতাব্দির কোটি কোটি মুসলিম মুক্তির ভিত্তি ভাবছে ! এর চেয়ে নির্বোধ্বিতা আর কি হতে পারে। ইমাম শাফেয়ীর পর পরবর্তি যুগের মনীষীরা এই বিষয়ে আরও কঠিন মত ব্যক্ত করেছেন যেমন মহাসাধক বড়পীর আব্দুল কাদের জিলানী রাহঃ এর অভিমত হল যারা সালাত আদায় করেনা তাদেরকে মুসলিমদের গোরস্তানে দাফন করা অনুচিত এবং তাদের জানাযা পড়াও অনুচিত হবে। সুত্র: গুনিয়াতুত তালিবীন। একই অভিমত ব্যক্ত করেছেন আরবের উনবিংশ শতাব্দির অন্যতম আলেমে দ্বীন আল্লামা মোহাম্মদ বিন সালেহ আল উসাইমীন রাহঃ, তিনি বলেছেন সালাত বর্জনকারীদের জন্য জানাযা এবং দোয়া দরুদ হারাম। সালাত ত্যাগকারীর বিধান গ্রন্থে তিনি তার অভিমতের স্বপক্ষে কুরআন হাদিস থেকে অত্যান্ত শক্তিশালী কতিপয় দলিল প্রমান উপস্থাপন করেছেন যেন মুসলিমগন বিষয়টি নিয়ে নূতন করে চিন্তা করে।
এই বিষয়ে বিস্তারিত তথ্যের জন্য ইসলামবিডি.অরগানাইজেশন থেকে বইটি ফ্রি ডাউনলোড করা যেতে পারে। অবশেষে মুসলিম ভাইদের একটি কথা বলে রাখা নৈতিক দায়িত্ব মনে করছি। সালাত বর্জনকারীদের ক্ষেত্রে ইসলামী চিন্তাবিদদের এই সমস্ত নেতিবাচক অভিমত বা ফতোয়া দ্ধারা কাহারো কষ্ট পাওয়া অনুচিত কারন বিজ্ঞ ইসলামী চিন্তাবিদগন অনেক চিন্তা গবেষনা করেই একটি অভিমত ব্যক্ত করে থাকেন। এই সমস্ত ফতোয়া দেন তারা ধর্মিয় দৃষ্টিভঙ্গি থেকে। এই সমস্ত ফতোয়া পেয়ে মুসলিম সমাজে হৈচৈ সৃষ্টি করাও সমীচিন নয়।
আপাত দৃষ্টিতে যদি স্রষ্টার হুকুম পালন করা মুসলিমদের ব্যক্তিগত ব্যপাড় ধরেও নেই তাহলে মানুষের মধ্যে বিভ্রান্ত সৃষ্টি করার অবকাশ কোথায়। আর মাযহাবের ইমামগন এই বিষয়ে আরও অনেক বেশি কঠিন কথা বলেছেন, মুসলিম ভাইদের মানুসিক কষ্টের কথা বিবেচনা করে সেগুলো উক্ত প্রবন্ধে আমি ইচ্ছাকৃতভাবেই নিয়ে আসিনি। উক্ত প্রবন্ধে কোন ভুল হয়ে থাকলে বিচক্ষন দৃষ্টির কাছে আমার চিন্তা সত্বাকে সমর্পন করছি। এই প্রবন্ধের মাধ্যমে আপনারা কিছুটা উপকৃত হয়ে থাকলে আমার প্রচেষ্টা সার্থক হবে।
তাফসীর হাদিস গ্রন্থ সহ পৃথিবীর সেরা সেরা ইসলামী চিন্তাবিদদের লেখা বাংলা বই ডাউনলোড ফ্রি !
islamic book ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।