আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

আলীকদমে ১৫ প্রভাবশালীর বিরুদ্ধে পাহাড়ি ও স্থানীয়দের ভূমি দখলের অভিযোগ

বান্দরবানের আলীকদম উপজেলায় পাহাড়িদের ভোগ দখলীয় জুমচাষের ভূমি রাবার ও হর্টিকালচার ইজারা লীজের নামে বহিরাগত প্রভাবশালীরা দখলে নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। ভূমিদস্যুতার বিরুদ্ধে প্রতিকার চেয়ে জুমিয়া পরিবার প্রধান, কার্বারী (পাড়া প্রধান) ও স্থানীয় রাজনৈতিক দলের নেতাদের স্বাক্ষরিত একটি অভিযোগপত্র প্রধানমন্ত্রী, ভূমি মন্ত্রী, আঞ্চলিক পরিষদের চেয়ারম্যান ও জেলা প্রশাসকসহ বিভিন্ন দপ্তরে পাঠানো হয়েছে। অভিযোগে প্রকাশ, বহিরাগত কতিপয় প্রভাবশালী ব্যক্তি আলীকদম উপজেলার ২৮৭নং তৈন, ২৮৮নং আলীকদম, ২৮৯নং চৈক্ষ্যং ও ২৯১নং তৈনফা মৌজায় স্থানীয় পাহাড়ি জুমিয়া পরিবারগুলোর জায়গা জমি কেড়ে নিচ্ছে। তৈনফা মৌজায় কয়েকটি জুমিয়া পরিবারকে উচ্ছেদ করেছে বদি নামের এক ব্যক্তি। উচ্ছেদের হুমকীর মধ্যে রয়েছে আরো একাধিক জুমিয়া পরিবার।

জনৈক বদিউল আলম (বদি), লেদু মিয়া, হারুন-অর-রশিদসহ ১৫ জনের নামোল্লেখ করে প্রশাসনের কাছে পাঠানো অভিযোগে দাবী করা হয়, এসব ব্যক্তিরা প্রভাব খাটিয়ে কতিপয় দালালের মাধ্যমে জুম চাষের ভূমি জবর দখল করছে। অভিযোগে স্বাক্ষরকারকারী চাহামং মার্মা জানান, পাহাড়বন্দি দুর্গম এলাকায় জুমিয়াদের বসবাস। জুমিয়ারা পার্বত্য চট্টগ্রামের অনগ্রসর প্রজা। দীর্ঘদিন ধরে বন্দোবস্তি প্রক্রিয়া বন্ধ থাকায় জুমিয়ারা পাহাড়ি জুমচাষের ভূমি বন্দোবস্তি নিতে পারছেনা। এ সুবাদে বদিউল আলম (বদি)সহ আরো ১৪/১৫ জন ব্যক্তি চকরিয়া, সাতকানিয়া, চট্টগ্রাম, কুমিল্লা, ঢাকাসহ বিভিন্ন এলাকার প্রভাবশালী ব্যক্তিরা এ উপজেলার শত শত একর ভূমি ইজরা লীজের নামে দখলে নিয়েছে।

তারা ক্ষমতা ও অবৈধ অর্থের জোরে বিভিন্ন মৌজায় শত শত একর পাহাড়ি ভূমি ইজারা লীজের নামে দখলের প্রতিযোগিতায় নেমেছে। স্থানীয় বাসিন্দা ও জুমিয়াদের প্রথাগত জুমচাষের ভূমি ও ভোগ দখলীয় বাগান তারা দখল করে নিচ্ছে। ইজারা লীজের নামে ২০১০ সাল থেকেই এ দখল প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। দীর্ঘদিন ধরে ২৯১নং তৈনফা মৌজায় বদি নামে একব্যক্তি শতাধিক শ্রমিক নিয়োগ করে বনায়নের নামে আগ্রাসী তৎপরতা চালালেও প্রশাসন ব্যবস্থা নিচ্ছেনা। অভিযোগে আরো প্রকাশ, বদিউল আলম (বদি)’র অত্যচার-অনাচার ও দুরাচারের কারণে বর্তমানে তৈনফা মৌজার পাহাড়ি বাসিন্দারা আতংকে দিনযাপন করছে।

অভিযোগের চার নম্বর প্যারায় দাবী করা হয়, বদি নামের একব্যক্তি আলীকদম আসলে রাতযাপন করে স্থানীয় একজন বড়কর্তার সরকারী বাসায়। অভিযোগে স্বাক্ষর করেন স্থানীয় জুমিয়া, কার্বার (পাড়া প্রধান) রাজনৈতিক দলের নেতাসহ ৪৭ ব্যক্তি। উল্লেখ্য, গত ১৭ আগস্ট স্থানীয় প্রেসকাবে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনেও স্থানীয় এক বড়কর্তার সাথে বদি নামের এক ব্যক্তি সখ্যতা গড়ে তোলে জুমিয়াদের ভূমি দখল করা হচ্ছে মর্মে অভিযোগ আনা হয়েছিল। স্থানীয় জেএসএস নেতা বাচিংনু মার্মা জানান, আমরা বিভিন্নভাবে নিশ্চিত হয়েই বদিউল আলমসহ ১৫ জনের নামোল্লেখ করে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীসহ বিভিন্ন দপ্তরে অভিযোগ প্রেরণ করেছি। ভূমিদস্যুতারা কারণে জুমিয়া পরিবার ও স্থানীয় বাসিন্দারা নানাভাবে হয়রানীর শিকার হচ্ছে।

বদিউল আলম নামের ওই ব্যক্তি প্রশাসনের সাথে আঁতাতের মাধ্যমেই ২৯১নং তৈনফা মৌজায় ভূমি দখল অব্যাহত রেখেছে। আলীকদম-থানচি রোডের ৮/৯ কিলোমিটার এলাকায় শত বছর ধরে বসবাসরত মুরুং বাসিন্দাদের পাড়া থেকে উচ্ছেদ করেছে। বর্তমানে প্রায় ১৫শ’ একর পাহাড়ি ভূমিতে বনায়নের নামে রাজত্ব কায়েম করেছে এই বদিউল আলম। এই ভূমিদস্যু বদি শুধু পাহাড়ি বাসিন্দাদের তাদের জন্মগত ভূমি অধিকার থেকে উচ্ছেদ করেই ক্ষান্ত হয়নি; সে গত একবছর পূর্বে পরিবেশ অধিদপ্তর ও প্রশাসনের বিনা অনুমতিতে পাহাড় কেটে তার আস্তানা ও বাগানবাড়িতে যাওয়ার জন্য রাস্তা তৈরী করেছে। আরো যাদের নামে অভিযোগ আনা হয়েছে তারা হচ্ছেন লেদু মিয়া, নোয়াখালী সেনবাগের মোঃ হারুন অর রশিদ, মোঃ মুগুল হোসেন, মেজর (অব হাসান, কুমিল্লার দঃ ঠাকুর পাড়ার সৈয়দ রেজাউর রহমান, তেজগাঁও ঢাকার মনিরুল ইসলাম, চকরিয়ার ইলিশিয়ার এম এ মালেক চৌং, মনজুরুল কাদের চৌং, ডা. মোঃ জাফর আলম, ছলিমুল ইসলাম (দুলাল), বুলু মিয়া, বড় ভেওলার ফরিদুল আলম, কাঁটাবন ঢাকার প্রফেসার মো. শিবলী আহমদ ও সাতকানিয়ার এড. মো. খোরশেদ আলম।

অভিযোগে স্বাক্ষরকারী জুলফিকার আলী ভূট্টো, আনোয়ার জিহাদ চৌধুরী, আলী আকবর ও আবুল কালাম বলেন, এসব ব্যক্তিরা নিজ নামে ও আত্মীয়-স্বজনের নামে চারটি মৌজায় শত শত একর পাহাড়ি ভূমি ইজারা লীজ নিয়েছে। লীজের জুমিয়া পরিবারগুলোকে উচ্ছেদ করা হচ্ছে। তাদের লাঠিয়াল বাহিনী ও শ্রমিক দিয়া মারিবে কাটিবে এবং মিথ্যা মামলায় জড়ানোর ভয়ভীতি ও হুমকী দিচ্ছে স্থানীয়দের। এ ব্যাপারে মৌজা হেডম্যান ও প্রশাসনের কাছে আবেদন-নিবেদন করলেও কোন সুরাহা হচ্ছেনা। জেএসএস সভাপতি কাইনথম মুরুং মেম্বার বলেন, বদি আলম বদির নিয়োজিত লোক জুম ও বাগান না করার জন্য পাহাড়ি পরিবারগুলোকে হুমকী দিচ্ছে।

ইতোমধ্যে ২৯১নং তৈনফা মৌজার ১শ’ বছরের পূরনো ওকিং পাড়ার ১৫টি পরিবার থেকে ৮টি পরিবার উচ্ছেদ হয়েছে। উচ্ছেদকৃতদের মধ্যে কংয়িং মুরুং, মেনহাত মুরুং, লাইলা মুরুং, চিপ্রি মুরুং, বল্লয় মুরুং, রমপুং মুরুং, মেনওয়াই মুরুং, কামছুম মুরুং এর পরিবার রয়েছে। বদির লোকজনের হুমকীর কারণে এ মৌজা করওয়ান মুরুং পাড়া, চাইরা মুরুং পাড়া, দমসি পাড়া, ধর্মচরণ ত্রিপুরা পাড়ার বাসিন্দাদের আতংকে দিন কাটছে। অভিযোগে আরো প্রকাশ, ইজারা লীজের অজুহাতে স্থানীয়দের ভোগ দখলীয় জায়গা অর্থ ও প্রশাসনকে ব্যবহার করে লীজ পুনর্বহাল করা হয়েছে। ১৯৮১-৮২ থেকে ১৯৯৬-৯৭ পর্যন্ত প্রদত্ত ইজারা লীজ ৫ বছরের ভেতর আবাদ এবং ১০ বছরের ভেতর উৎপাদন করার কথা।

কিন্তু ইজার লীজপ্রাপ্ত ব্যক্তিরা সে সময় বনায়ন করেনি। এসব লীজ যথাক্রমে ৩০ বছর ও ১৭ বছর অতিবাহিত হয়েছে। ২০১০ সাল থেকে স্থানীয়দের উচ্ছেদ করে বনায়নের নামে প্রভাবশালীরা এলাকায় ত্রাস সৃষ্টি করছে। ইজারা লীজ চুক্তিমতে ৫ বছরে বনায়ন ১০ বছরে উৎপাদন ৪০ বছর মেয়াদী ১০ কিস্তিতে ৭৫ হাজার টাকা প্রদানে অঙ্গীকারাবদ্ধ। গত ২০ জুলাই ২০০৯ ও ১৮ আগস্ট, ২০০৯ যথাক্রমে খাগড়াছড়ি ও রাঙ্গামাটিতে অনুষ্ঠিত পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভায় বান্দরবান জেলার অস্থানীয়দের নিকট প্রদত্ত ইজারা লীজের মধ্যে যে সমস্ত লীজ ভূমিতে এখনো চুক্তি মোতাবেক কোন রাবার হর্টিকালচার চাষ করা হয়নি সে সমস্ত ইজারা বাতিলের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়।

এ সিদ্ধান্তের আলোকে বান্দরবান জেলা প্রশাসক কর্তৃক ইউএনও, মৌজা হেডম্যান, জেলা কানুনগো, সার্ভেয়ার সমন্বয়ে গঠিত কমিটি তদন্ত শেষে যে সব লীজ ভূমিতে চুক্তি অনুযায়ী বাগান সৃজন করেনি তা বাতিল করার সিদ্ধান্ত নেয়। যা জেলা প্রশাসকের (রাজস্ব শাখা) এর স্মারক নং- জেপ্রবান/লীজ/-১০৬০/ডি/৮০-৮১/২০০৯ তারিখ- ২৯/০৯/২০০৯ রেভেন্যু ডেপুটি কালেক্টর (ভারপ্রাপ্ত) পক্ষে, জেলা প্রশাসক, বান্দরবান পার্বত্য জেলা কর্তৃক স্বাক্ষরিত নোটিশ প্রদান করে আলোচ্য ভূমি সরকারের দখলে আনা হয়। স্থানীয় প্রশাসন লীজ বাতিলের দু’মাসের মাথায় স্মারক নং- জেপ্রবান/লীজ মোঃ নং- ২০৬০(ডি)/৮০-৮১/২০০৯ তারিখ ১৯/১১/২০০৯ মূলে বাতিলকৃত প্লটগুলি প্রায় অধিকাংশ প্লট পুনরায় বহাল করায় এ সমস্যার সৃষ্টি হয়েছে বলে অভিযোগ দাবী করা হয়। - মমতাজ উদ্দিন আহমদ আলীকদম (বান্দরবান) তারিখ : ০২/১২/২০১২ ইং। ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।