আসুন আমরা ২টি ভারী বস্তু আল্লাহর কুরান ও রাসুলের(সাঃ) পরিবারকে(আঃ) অনুসরন করি। Written by নূর হোসেন মজিদী
আলোচনার মানদণ্ড
অত্র আলোচনার শুরুতে আমরা দ্বীনী বিষয়াদিতে আলোচনার ক্ষেত্রে সর্বজনগ্রহণযোগ্য অকাট্য মানদণ্ড সম্পর্কে সংক্ষেপে উল্লেখ করতে চাই। কারণ, আমরা যাতে সন্দেহাতীত উপসংহারে উপনীত হতে পারি সে লক্ষ্যে আমাদেরকে কেবল ঐ সব মানদণ্ডের ভিত্তিতে আলোচনা করতে হবে যেগুলো অকাট্য এবং মাযহাব ও ফির্ক্বাহ্ নির্বিশেষে সকল মুসলমানের কাছে সমভাবে গ্রহণযোগ্য হওয়া অপরিহার্য।
মাযহাব ও ফির্ক্বাহ্ নির্বিশেষে সকল মুসলমানের জন্য দ্বীনী বিষয়াদিতে আলোচনার ক্ষেত্রে যে সব মানদণ্ড অকাট্যভাবে গ্রহণযোগ্য হওয়া অপরিহার্য সেগুলো হচ্ছে ‘আক্বল্ (বিচারবুদ্ধি), কোরআন মজীদ, মুতাওয়াতির হাদীছ ও ইজ্মা ‘এ উম্মাহ্।
সংক্ষেপে বলতে হয়, ‘আক্বল্-কে এ কারণে মানদণ্ড হিসেবে গ্রহণ করতে হবে যে, তা সমস্ত মানুষের কাছে গ্রহণযোগ্য সর্বজনীন মানদণ্ড যার ভিত্তিতে পর্যালোচনা করে একজন অমুসলিম ইসলামের সত্যতায় উপনীত হয় ও তা গ্রহণ করে এবং কোরআন মজীদ সহ অন্য সমস্ত জ্ঞানসূত্র থেকে সঠিক তাৎপর্য গ্রহণের ক্ষেত্রে ‘আক্বল্ সহায়ক ভূমিকা পালন করে থাকে।
অন্যদিকে আল্লাহ্ তা‘আলার পক্ষ থেকে নাযিলকৃত সর্বশেষ, পূর্ণাঙ্গ ও সংরক্ষিত কিতাব হিসেবে কোরআন মজীদকে মুসলমানদের জন্য মানদণ্ড হিসেবে গ্রহণের অপরিহার্যতা সম্পর্কে আলাদা কোনো দলীল উপস্থাপনের প্রয়োজন নেই। কারণ, কেউ যদি কোরআন মজীদকে অকাট্য মানদণ্ড হিসেবে গ্রহণ না করে তাহলে তার ঈমানই থাকে না।
আর যেহেতু মুতাওয়াতির হাদীছ হচ্ছে তা-ই যা ছাহাবায়ে কেরাম থেকে শুরু করে গ্রন্থাবদ্ধকরণ পর্যন্ত প্রতিটি স্তরে এতো বেশী সংখ্যক ব্যক্তি থেকে বর্ণিত হয়েছে মিথ্যা রচনার জন্য যত লোকের পক্ষে একমত হওয়া বিচারবুদ্ধির দৃষ্টিতে অসম্ভব বলে মনে হয় সেহেতু এ ধরনের হাদীছ যে সত্যি সত্যিই হযরত রাসূলে আকরাম (সাঃ) থেকে এসেছে তাতে সন্দেহের অবকাশ নেই।
এছাড়া যে সব আমল বা যে সব হাদীছ হযরত রাসূলে আকরাম (সাঃ)-এর পর থেকে ধারাবাহিকভাবে মাযহাব ও ফির্ক্বাহ্ নির্বিশেষে মুসলমানদের কাছে গ্রহণযোগ্য বিবেচিত হয়ে এসেছে উপরোক্ত তিন সূত্রের কোনোটির সাথে সাংঘর্ষিক না হওয়া সাপেক্ষে হযরত রাসূলে আকরাম (সাঃ) থেকে চলে আসার ক্ষেত্রে তার নির্ভুলতা সম্পর্কেও সন্দেহের অবকাশ নেই।
এর বাইরে খবরে ওয়াহেদ্ হাদীছ ও ইসলাম বিশেষজ্ঞ মনীষীদের মতামত কেবল উক্ত চার সূত্রের কোনোটির সাথে সাংঘর্ষিক না হওয়া সাপেক্ষেই গ্রহণযোগ্য।
অবশ্য সেই সাথে, পরস্পর বিরোধী দুই বা বিভিন্ন চৈন্তিক গোষ্ঠীর কোনোটির সূত্রে যদি তার বিরোধী কোনে চৈন্তিক গোষ্ঠীর দাবীর সপক্ষে কোনো দলীল থাকে সে ক্ষেত্রে বিচারবুদ্ধির কাছে উক্ত দলীলের গ্রহণযোগ্যতা বৃদ্ধি পায়।
তবে অত্র আলোচনায় আমরা প্রধানতঃ ‘আক্বল্ ও কোরআন মজীদের ভিত্তিতেই ফয়সালায় উপনীত হবার জন্য চেষ্টা করবো। কারণ, আমাদের উদ্দেশ্য হচ্ছে যথাসম্ভব সংক্ষেপে অকাট্য ফয়সালায় উপনীত হওয়া। এ ক্ষেত্রে অবশিষ্ট দলীলগুলোর আশ্রয় নিতে গেলে আলোচনা শুধু দীর্ঘই হবে না, বরং অবিতর্কিত ফয়সালায় উপনীত হওয়াও বেশ কঠিন হয়ে পড়তে পারে। কারণ, এমনকি কোনো মুতাওয়ার্তি হাদীছ সম্পর্কেও কেউ তার মুতাওয়ার্তি হওয়ার ব্যাপারে সন্দহ প্রকাশ করতে পারে।
ফলে এরূপ সম্ভাব্য সন্দেহ মোকাবিলার জন্য অনেক বেশী বিস্তারিত আলোচনা প্রয়োজন হয়ে পড়ে; খবরে ওয়াহেদ্ হাদীছের ব্যাপারে প্রশ্ন তোলা তো খুবই সাধারণ ব্যাপার, বিশেষ করে যখন পরস্পর বিরোধী হাদীছের অস্তিত্ব থাকে।
সর্বোপরি, যদি ‘আক্বল্ ও কোরআন মজীদ কোনো বিষয়ে অকাট্য ফয়সালায় উপনীত হবার জন্য যথেষ্ট হয় তাহলে সে ক্ষেত্রে অন্যান্য দলীলের দ্বারস্থ হয়ে আলোচনার কলেবর বৃদ্ধি করার কোনোই যৌক্তিকতা নেই।
কোরআন মজীদে রাসুলুল্লাহর (সাঃ) আহলে বাইত্ ও বিবিগণ
আল্লাহ্ রাব্বুল ‘আলামীন কোরআন মজীদের সূরাহ্ আল্-আহযাবের ২৮ নং আয়াত থেকে ৩৩ নং আয়াতের প্রথমাংশ পর্যন্ত হযরত রাসূলে আকরাম (সাঃ)-এর বিবিগণ সম্পর্কে নির্দেশাদি দিয়েছেন এবং এরপর ৩৩ নং আয়াতের দ্বিতীয়াংশে আহলে বাইতের কথা উল্লেখ করেছেন। আয়াতগুলো হচ্ছে ঃ
يَا أَيُّهَا النَّبِيُّ قُل لِّأَزْوَاجِكَ إِن كُنتُنَّ تُرِدْنَ الْحَيَاةَ الدُّنْيَا وَزِينَتَهَا فَتَعَالَيْنَ أُمَتِّعْكُنَّ وَأُسَرِّحْكُنَّ سَرَاحًا جَمِيلًا2وَإِن كُنتُنَّ تُرِدْنَ اللَّهَ وَرَسُولَهُ وَالدَّارَ الْآخِرَةَ فَإِنَّ اللَّهَ أَعَدَّ لِلْمُحْسِنَاتِ مِنكُنَّ أَجْرًا عَظِيمًا يَا نِسَاء النَّبِيِّ مَن يَأْتِ مِنكُنَّ بِفَاحِشَةٍ مُّبَيِّنَةٍ يُضَاعَفْ لَهَا الْعَذَابُ ضِعْفَيْنِ وَكَانَ ذَلِكَ عَلَى اللَّهِ يَسِيرًا30وَمَن يَقْنُتْ مِنكُنَّ لِلَّهِ وَرَسُولِهِ وَتَعْمَلْ صَالِحًا نُّؤْتِهَا أَجْرَهَا مَرَّتَيْنِ وَأَعْتَدْنَا لَهَا رِزْقًا كَرِيمًا31يَا نِسَاء النَّبِيِّ لَسْتُنَّ كَأَحَدٍ مِّنَ النِّسَاء إِنِ اتَّقَيْتُنَّ فَلَا تَخْضَعْنَ بِالْقَوْلِ فَيَطْمَعَ الَّذِي فِي قَلْبِهِ مَرَضٌ وَقُلْنَ قَوْلًا مَّعْرُوفًا32وَقَرْنَ فِي بُيُوتِكُنَّ وَلَا تَبَرَّجْنَ تَبَرُّجَ الْجَاهِلِيَّةِ الْأُولَى وَأَقِمْنَ الصَّلَاةَ وَآتِينَ الزَّكَاةَ وَأَطِعْنَ اللَّهَ وَرَسُولَهُ إِنَّمَا يُرِيدُ اللَّهُ لِيُذْهِبَ عَنكُمُ الرِّجْسَ أَهْلَ الْبَيْتِ وَيُطَهِّرَكُمْ تَطْهِيرًا
“হে নবী! আপনার স্ত্রীদেরকে বলুন, তোমরা যদি পার্থিব জীবন ও তার সৌন্দর্য (ভোগ-বিলাসিতা) কামনা কর তাহলে এসো, আমি তোমাদেরকে ভোগ্য উপকরণাদির ব্যবস্থা করে দেই এবং তোমাদেরকে উত্তমভাবে বিদায় করে দেই। আর তোমরা যদি আল্লাহ্ ও তাঁর রাসূলকে এবং পরকালের গৃহকে কামনা কর তাহলে অবশ্যই (জেনো যে,) আল্লাহ্ তোমাদের মধ্যকার উত্তম কর্ম সম্পাদনকারীদের জন্য মহাপুরস্কার প্রস্তুত করে রেখেছেন।
হে নবী-পতœীগণ! তোমাদের মধ্য থেকে যে প্রকাশ্যে অশ্লীল কাজ করবে তাকে দ্বিগুণ শাস্তি দেয়া হবে এবং এটা আল্লাহর জন্য খুবই সহজ। আর তোমাদের মধ্য থেকে যে আল্লাহ্ ও তাঁর রাসূলের অনুগত থাকবে এবং নেক আমল সম্পাদন করবে সে জন্য তাকে আমি দুই বার পুরষ্কার প্রদান করবো এবং আমি তার জন্য সম্মানজনক রিয্ক্ব প্রস্তুত করে রেখেছি। হে নবী-পতœীগণ! তোমরা অন্য কোনো নারীর মতো নও; (অতএব,) তোমরা যদি তাক্বওয়া অবলম্বন করে থাকো তাহলে তোমরা (পরপুরুষদের সাথে) তোমাদের কথায় কোমলতার (ও আকর্ষণীয় ভঙ্গির) আশ্রয় নিয়ো না, কারণ, তাহলে যার অন্তরে ব্যধি আছে সে প্রলুব্ধ হবে। বরং তোমরা স্বাভাবিকভাবে কথা বলো। আর তোমরা গৃহে অবস্থান করো এবং পূর্বতন জাহেলীয়াত-যুগের সাজসজ্জা প্রদর্শনীর ন্যায় সাজসজ্জা প্রদর্শন করে বেড়িয়ো না।
আর তোমরা নামায কায়েম রাখো, যাকাত প্রদান করো এবং আল্লাহ্ ও তাঁর রাসূলের আনুগত্য করো। হে আহলে বাইত্! আল্লাহ্ অবশ্যই তোমাদের থেকে অপকৃষ্টতা অপসারিত করতে এবং তোমাদেরকে পরিপূর্ণরূপে পূতপবিত্র করতে চান। ”
এখানে সর্বপ্রথম লক্ষণীয় বিষয় এই যে, ৩৩ নং আয়াতের শেষাংশে আহলে বাইত্কে সম্বোধন করে কথা বলার পূর্ব পর্যন্ত আলোচনা ও নির্দেশাদির লক্ষ্য হচ্ছেন হযরত রাসূলে আকরাম (সাঃ)-এর বিবিগণ। নবী করীম (সাঃ)কে সম্বোধন করে তাঁর ‘স্ত্রীগণকে’ বলার জন্য নির্দেশ দান, এরপর সরাসরি তাঁদেরকে ‘হে নবী-পতœীগণ!’ বলে সম্বোধন এবং তাঁদেরকে বুঝাতে کُنتُنَّ, تُرِدنَ, مِنکُنَّ ইত্যাদিতে বহুবচনে স্ত্রীবাচক সংযুক্ত সর্বনাম ব্যবহার থেকে এ ব্যাপারে কোনোই সন্দেহের অবকাশ থাকছে না। কিন্তু ৩৩ নং আয়াতের শেষাংশে আহলে বাইত্কে সম্বোধন করে কথা বলার ক্ষেত্রে عَنکُم ও يُطَهِّرَکُم বলা হয়েছে যাতে বহুবচনে পুরুষবাচক সংযুক্ত সর্বনাম ব্যবহার করা হয়েছে।
আর আরবী ভাষায় বহুবচনে দু’টি ক্ষেত্রে পুরুষবাচক সর্বনাম ব্যবহার করা হয় ঃ শুধু পুরুষ বুঝাতে এবং নারী ও পুরুষ একত্রে বুঝাতে।
অতএব, এ থেকে সুস্পষ্ট যে, এখানে “আহলে বাইত্” কথাটি আভিধানিক অর্থে ব্যবহৃত হয় নি। কারণ, যেহেতু হযরত রাসূলে আকরাম (সাঃ)-এর পরিবারে কেবল তাঁর স্ত্রীগণ ছিলেন; কোনো নাবালেগ (এমনকি সাবালেগও) পুরুষ সন্তান ছিলেন না, সেহেতু “আহলে বাইত্” কথাটি আভিধানিক অর্থে ব্যবহার করা হলে আগের মতোই বহুবচনে স্ত্রীবাচক সম্বোধন ব্যবহার করা হতো। অতএব, এতে সন্দেহের অবকাশ নেই যে, এখানে কথাটি বিশেষ পারিভাষিক অর্থে ব্যবহৃত হয়েছে, আর সে অর্থে নারী ও পুরুষ উভয়ই হযরত রাসূলে আকরাম (সাঃ)-এর আহলে বাইত-এর মধ্যে শামিল রয়েছেন।
দ্বিতীয় প্রশ্ন হচ্ছে এই যে, আহলে বাইত্-এ শামিলকৃত পুরুষ সদস্য কে বা কা’রা এবং নারী সদস্যই বা কে অথবা কা’রা? এ নারী সদস্য কি হযরত রাসূলে আকরাম (সাঃ)-এর বিবিগণ, নাকি অন্য কেউ, নাকি তাঁর বিবিগণের সাথে অন্য কেউ?
এখানে আমাদেরকে আয়াতের বক্তব্যের ও তার বাচনভঙ্গির প্রতি দৃষ্টি দিতে হবে।
উল্লিখিত আয়াত সমূহে হযরত রাসূলে আকরাম (সাঃ)-এর বিবিগণ সম্পর্কে এবং তাঁদেরকে সম্বোধন করে যে সব কথা বলা হয়েছে তাতে তাঁদেরকে কয়েকটি বিষয়ে সতর্ক করা হয়েছে, বরং চরম পত্র দেয়া হয়েছে, কয়েকটি বিষয়ে নিষেধ করা হয়েছে এবং কয়েকটি বিষয়ে আদেশ দেয়া হয়েছে। চরম পত্রের বিষয় হচ্ছে এই যে, তাঁরা পার্থিব জীবন ও তার সৌন্দর্য (ভোগ-বিলাসিতা) কামনা করলে তাঁদেরকে বিদায় করে দেয়া হবে। এতে এ ইঙ্গিত রয়েছে যে, তাঁরা পার্থিব উপায়-উপকরণাদির জন্য হযরত রাসূলে আকরাম (সাঃ)-এর ওপর চাপ সৃষ্টি করেছিলেন।
এছাড়া তাঁদেরকে পরবর্তী বক্তব্যে যে সব বিষয়ে সতর্ক করা হয়েছে ও নিষেধ করা হয়েছে সে সব বিষয়ে কোরআন মজীদের অন্যত্র সাধারণভাবে এবং প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে সকল মু’মিনা নারীকেই সতর্ক ও নিষেধ করা হয়েছে, কিন্তু এ সত্ত্বেও নবী-পতœীগণকে স্বতন্ত্রভাবে সতর্কীকরণ ও নিষেধকরণ থেকে এ ইঙ্গিত মিলে যে, অন্য মু’মিনা নারীদের মতোই তাঁদের ঐ সব বিষয় থেকে মুক্ত থাকার বিষয়টি নিশ্চিত নয়, কিন্তু রাসূলের (সাঃ)-এর বিবি হিসেবে তাঁর মর্যাদার সাথে জড়িত বিধায় তাঁদের এ সব থেকে মুক্ত থাকা অনেক বেশী প্রয়োজন এবং এ কারণেই তাঁদেরকে আলাদাভাবে সতর্ক করা ও নিষেধ করা প্রয়োজনীয় হয়ে পড়ে। সুস্পষ্ট যে, একই অপরাধ করলে সাধারণ মু’মিনা নারীর তুলনায় তাঁদের দ্বিগুণ শাস্তি দেয়ার ফয়সালার কারণও এটাই যে, তাঁদের আচরণের সাথে রাসূলের (সাঃ) ব্যক্তিগত মর্যাদা ও আল্লাহর দ্বীনের মর্যাদা জড়িত।
এখানে আরেকটি লক্ষণীয় বিষয় এই যে, বিদায় করে দেয়ার হুমকির ক্ষেত্রে হযরত রাসূলে আকরাম (সাঃ)-এর বিবিগণের সকলকে একত্রে শামিল করা হয়েছে যা থেকে প্রমাণিত হয় যে, এ ব্যাপারে দাবী তোলা বা চাপ সৃষ্টির ক্ষেত্রে তাঁরা সকলেই শামিল ছিলেন।
যদিও, উল্লেখ না করলে নয় যে, স্ত্রী বা স্ত্রীগণ স্বামীর কাছে স্বাভাবিক ভরণ-পোষণ ও ভোগোপকরণ ‘দাবী’ করলে, এবং এমনকি তার অতিরিক্ত অলঙ্কারাদি ও আরাম-আয়েশের উপকরণাদির জন্য ‘আবদার’ করলে তা গুনাহ্র কাজ নয়, তেমনি স্বামীর জন্যও স্ত্রীকে বা স্ত্রীদেরকে তালাক দেয়া নাজায়েয নয়। কিন্তু রাসূলের (সাঃ) বিবি হওয়ার মর্যাদার এটাই দাবী ছিলো যে, তিনি যা কিছু দিতে সক্ষম তার চেয়ে বেশী দাবী করে (এমনকি বৈধ হলেও) তাঁর ওপর চাপ সৃষ্টি করা হবে না, কিন্তু তা সত্ত্বেও চাপ সৃষ্টি করা হলে তা আল্লাহ্ তা‘আলার পসন্দনীয় হয় নি।
কিন্তু গুনাহ্র জন্য শাস্তির ভয় দেখানো ও নেক আমলের পুরষ্কারের সুসংবাদের বিষয়গুলোতে তাঁদের সকলকে সম্মিলিতভাবে শামিল না করে প্রত্যেককে ব্যক্তিগতভাবে সতর্ক করা হয়েছে ও সুসংবাদ দেয়া হয়েছে।
অতঃপর আহলে বাইত্ সম্পর্কে এরশাদ হয়েছে ঃ
إِنَّمَا يُرِيدُ اللَّهُ لِيُذْهِبَ عَنكُمُ الرِّجْسَ أَهْلَ الْبَيْتِ وَيُطَهِّرَكُمْ تَطْهِيرًا
“হে আহলে বাইত্! আল্লাহ্ অবশ্যই তোমাদের থেকে অপকৃষ্টতা অপসারিত করতে এবং তোমাদেরকে পরিপূর্ণরূপে পূতপবিত্র করতে চান।
”
আয়াতের এ অংশে ব্যবহৃত শব্দাবলীর প্রতি সতর্কতার সাথে দৃষ্টিপাত করলে আমরা দেখতে পাই যে, এখানে আল্লাহ্ তা‘আলা আহলে বাইত্কে সম্বোধন করলেও হযরত রাসূলে আকরাম (সাঃ)-এর বিবিগণের ন্যায় তাঁদেরকে কোনোরূপ সতর্কীকরণ তো দূরের কথা, কোনো আদেশ দেন নি বা নছীহতও করেন নি। বরং এখানে আল্লাহ্ তা‘আলা আহলে বাইত্ সম্পর্কে তাঁর দু’টি ফয়সালা বা সিদ্ধান্তের কথা জানিয়ে দিয়েছেন। তা হচ্ছে, তিনি তাঁদের থেকে অপকৃষ্টতা অপসারিত করতে এবং তাঁদেরকে পরিপূর্ণরূপে পূতপবিত্র করতে চান। আর এ সিদ্ধান্ত ঘোষণার বাক্য শুরু করা হয়েছে انما (অবশ্যই) শব্দ দ্বারা। এর মানে হচ্ছে, এটি একটি অপরিবর্তনীয় সিদ্ধান্ত; কোনোরূপ দুই সম্ভাবনাযুক্ত বিকল্প সিদ্ধান্ত নয়।
এ থেকে আহলে বাইতের পাপমুক্ততা (عصمة)-ও অকাট্যভাবে প্রমাণিত হয়।
কিন্তু এর বাইরে কোরআন মজীদে কোথাওই হযরত রাসূলে আকরাম (সাঃ)-এর বিবিগণের ক্ষেত্রে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ কোনোভাবেই পাপমুক্ততা (عصمة)-এর ঘোষণা দেয়া হয় নি।
[এখানে আমরা বলে রাখতে চাই যে, কারো মা‘ছূম্ (معصوم পাপমুক্ত) হওয়ার মানে এই যে, তিনি নিশ্চিতভাবেই পাপমুক্ত ছিলেন, কিন্তু কারো মা‘ছূম্ না হওয়ার মানে এই নয় যে, তিনি নিশ্চিতভাবেই পাপ করেছেন। বরং মা‘ছূম না হওয়ার মানে হচ্ছে, পাপ থেকে মুক্ত থাকার নিশ্চয়তা না থাকা। এমতাবস্থায় কারো পাপে লিপ্ত হওয়ার বিষয়টি অকাট্যভাবে প্রমাণিত না হওয়া পর্যন্ত কাউকে পাপী বলে গণ্য করা চলে না।
]
কোরআন মজীদের উপরোদ্ধৃত আয়াত সমূহে ব্যবহৃত বাচনভঙ্গি থেকেই সুস্পষ্ট যে, হযরত রাসূলে আকরাম (সাঃ)-এর বিবিগণ মা‘ছূম ছিলেন না। অবশ্য কোরআন মজীদে তাঁদেরকে মু’মিনদের মাতা বলে উল্লেখ করা হয়েছে (সূরাহ্ আল্-আহযাবঃ ৬) এবং হযরত রাসূলে আকরাম (সাঃ)-এর ইন্তেকালের পর তাঁদের কাউকে বিবাহ করা মু’মিনদের জন্য হারাম করে দেয়া হয় (সূরাহ্ আল্-আহযাব ঃ ৫৩)। এ কারণে তাঁদের সাথে মু’মিনদের যে সম্মানার্হ সম্পর্ক তার পরিপ্রেক্ষিতে অনেকে তাঁদের মর্যাদাকে পাপমুক্ততার পর্যায়ে উন্নীত করার চেষ্টা করেন।
কিন্তু প্রকৃত ব্যাপার হলো মু’মিনদের জন্য মাতৃস্বরূপ হওয়া আর মা‘ছূম হওয়ার মধ্যে কোনো সম্পর্ক নেই, ঠিক যেমন কোনো মু’মিন ব্যক্তির জন্মদাত্রী মায়ের সাথে তার সম্মানার্হ সম্পর্ক থাকা সত্ত্বেও তার মাকে অনিবার্যভাবেই মা‘ছূম বলে গণ্য করা সঠিক হতে পারে না। এমনকি কোনো মু’মিন ব্যক্তির পিতা-মাতা যদি কাফেরও হয় তাহলেও তাদের সাথে সম্মানার্হ ও সৌজন্যমূলক আচরণ অব্যাহত রাখার জন্য কোরআন মজীদে নির্দেশ দেয়া হয়েছে, কিন্তু ঐ মু’মিন ব্যক্তির এ আচরণ তার পিতা-মাতাকে মু’মিনে পরিণত করবে না।
মু’মিনদের জন্য হযরত রাসূলে আকরাম (সাঃ)-এর বিবিগণকে মায়ের ন্যায় সম্মানার্হ গণ্য করার বিষয়টিও একই ধরনের। প্রকৃত পক্ষে স্বয়ং রাসূলুল্লাহ্ (সাঃ)-এর স্ত্রীর মর্যাদাই তাঁদের প্রতি সম্মান প্রদর্শনকে মু’মিনদের জন্য অপরিহার্য করেছে। কারণ, হযরত রাসূলে আকরাম (সাঃ) মু’মিনদের জন্য পিতৃতুল্য, বরং পিতার চেয়ে অধিকতর সম্মান, শ্রদ্ধা, ভক্তি ও ভালোবাসা পাবার হকদার। এমতাবস্থায় তাঁর পরে তাঁর কোনো স্ত্রীকে বিবাহ করলে স্বয়ং রাসূলুল্লাহ্ (সাঃ)-এর প্রতি পূর্বানুরূপ সম্মান, শ্রদ্ধা, ভক্তি ও ভালোবাসা বজায় থাকবে না এটাই স্বাভাবিক। এমতাবস্থায় তাঁর পরে তাঁর বিবিগণকে বিবাহ করা হারাম হওয়া ও তাঁদেরকে মাতৃতুল্য গণ্য করা অপরিহার্য ছিলো।
কিন্তু এর দ্বারা কিছুতেই তাঁদেরকে মা‘ছূম বলে গণ্য করা চলে না।
যদিও অনুরূপ ক্ষেত্রে অতীতের নবী-রাসূলগণের (আঃ) বিবিগণের ক্ষেত্রে আল্লাহ্ তা‘আলার বিধান কী ছিলো তা কোরআন মজীদে উল্লেখ করা হয় নি (এবং তা উল্লেখের প্রয়োজনও ছিলো না)। তবে আমরা নিদ্বির্ধায় ধরে নিতে পারি যে, অতীতের নবী-রাসূলগণের (আঃ) বিবিগণের ক্ষেত্রেও আল্লাহ্ তা‘আলার বিধান অভিন্ন ছিলো। কিন্তু তাঁদের ক্ষেত্রেও মা‘ছূম হওয়ার বিষয় প্রমাণিত হয় না। অর্থাৎ তাঁদের মধ্যে কেউ কেউ মা‘ছূম থেকে থাকলে তা ব্যক্তি হিসেবে, নবী-রাসূলের (আঃ) স্ত্রী হিসেবে নয়।
তার প্রমাণ, কোরআন মজীদে হযরত নূহ্ (আঃ) ও হযরত লূত্ব (আঃ)-এর স্ত্রীর কুফরী ও জাহান্নামী হওয়ার বিষয়টি সুস্পষ্ট ভাষায় উল্লিখিত হয়েছে। একটি ঐশী মূলনীতি হিসেবে নবী-রাসূলের (আঃ) স্ত্রী তথা মু’মিনদের মাতা হওয়া যদি কারো পাপমুক্ততা নিশ্চিত করতো তাহলে ঐ দু’জন নারী তার ব্যতিক্রম হতো না।
নীতিগতভাবে তথা একটি ঐশী মূলনীতি হিসেবে উম্মাহাতুল মু’মিনীন অর্থাৎ হযরত রাসূলে আকরাম (সাঃ)-এর বিবিগণ-এর মা‘ছূম না হওয়ার তথা আহলে বাইত্-এর অন্তর্ভুক্ত না হওয়ার বিষয়টি উল্লিখিত আয়াত সমূহ ও উপরোক্ত আলোচনা থেকে অকাট্যভাবে প্রমাণিত হয়। কোরআন মজীদের আরো কতক আয়াত থেকে এ বিষয়টি অধিকতর সুস্পষ্টভাবে প্রমাণিত হয়। অর্থাৎ এখানে যা এজমালীভাবে প্রমাণিত হয় অন্য কতক আয়াত থেকে তা দৃষ্টান্ত সহকারে প্রমাণিত হয়।
কোরআন মজীদের সূরাহ্ আত্-তাহ্রীম্ থেকে জানা যায় যে, হযরত রাসূলে আকরাম (সাঃ) তাঁর কোনো একজন স্ত্রীর কাছে একটি গোপন কথা বললে তিনি গোপনীয়তা ভঙ্গ করে তা রাসূলুল্লাহ্ (সাঃ)-এর অপর এক স্ত্রীর কাছে বলে দেন। এছাড়া তাঁর দুই স্ত্রী [যথাসম্ভব ঐ দু’জনই অর্থাৎ যারা একজন আরেক জনের কাছে রাসূলুল্লাহ্ (সাঃ)-এর গোপন কথা বলে দিয়েছিলেন] “রাসূলুল্লাহ্ (সাঃ)-এর বিরুদ্ধে” পরস্পরকে সাহায্য করতে তথা তাঁর বিরুদ্ধে কোনো একটি বিষয়ে চক্রান্ত করতে যাচ্ছিলেন। এ জন্য আল্লাহ্ তা‘আলা তাঁদেরকে কঠোর ভাষায় তিরস্কার করেন ও সতর্ক করে দেন এবং তাওবাহ্ করার জন্য নছীহত্ করেন। [ আহলে সুন্নাতের ওলামায়ে কেরামের দৃষ্টিতে নির্ভরযোগ্য বলে পরিগণিত বিভিন্ন হাদীছ-গ্রন্থ ও তাফসীরে হযরত রাসূলে আকরাম (সাঃ)-এর এ দু’জন স্ত্রীর নাম সুনির্দিষ্টভাবে এবং সংশ্লিষ্ট গোপন কথা সংক্রান্ত ঘটনা ও চক্রান্তের কথা সুস্পষ্ট ভাষায় উল্লিখত আছে। কিন্তু ব্যক্তি হিসেবে সুনির্দিষ্টভাবে তাঁদেরকে চিহ্নিত করা আমাদের অত্র আলোচনার জন্য অপরিহার্য নয়।
বরং আমাদের আলোচনা হচ্ছে একটি নীতিগত আলোচনা। এ কারণে, তাঁদের মধ্য থেকে একজনের ব্যাপারেও যদি মা‘ছূম্ না হওয়ার বিষয়টি প্রমাণিত হয় (তা যিনিই হোন না কেন) তাহলে তা থেকে এটাই প্রমাণিত হয় যে, কেবল হযরত রাসূলে আকরাম (সাঃ)-এর স্ত্রীর মর্যাদা কাউকে মা‘ছূম বানাতে পারে না। ]
এরশাদ হয়েছে ঃ
وَإِذْ أَسَرَّ النَّبِيُّ إِلَى بَعْضِ أَزْوَاجِهِ حَدِيثًا فَلَمَّا نَبَّأَتْ بِهِ وَأَظْهَرَهُ اللَّهُ عَلَيْهِ عَرَّفَ بَعْضَهُ وَأَعْرَضَ عَن بَعْضٍ فَلَمَّا نَبَّأَهَا بِهِ قَالَتْ مَنْ أَنبَأَكَ هَذَا قَالَ نَبَّأَنِيَ الْعَلِيمُ الْخَبِيرُ
“আর নবী যখন তাঁর স্ত্রীদের কারো কাছে কোনো একটি কথা গোপনে বললেন, অতঃপর সে (অন্য কাউকে) তা জানিয়ে দিলো এবং আল্লাহ্ তাঁর [রাসূলুল্লাহ্ (সাঃ)-এর] কাছে তা প্রকাশ করে দিলেন তখন তিনি (তাঁর ঐ স্ত্রীকে) তার কিছুটা জানালেন এবং কিছুটা জানালেন না। আর তিনি যখন তাকে তা জানালেন তখন সে বললো ঃ কে আপনাকে এটি জানিয়েছে? তিনি বললেন ঃ পরম জ্ঞানী সর্বজ্ঞ (আল্লাহ্)ই আমাকে জানিয়েছেন। ” (সূরাহ্আত-তাহরীম-৩)
এতে কোনোই সন্দেহ নেই যে, যে কোনো ঈমানদার কর্তৃক, বিশেষ করে নবীর (সাঃ) একজন ঘনিষ্ঠ ব্যক্তি কর্তৃক যাকে তিনি বিশ্বাস করে কোনো গোপন কথা বলেছিলেন Ñ তাঁর গোপন কথা অন্যের কাছে বলে দেয়া একটি গুরুতর বিষয় ছিলো।
কিন্তু এখানেই শেষ নয়।
আল্লাহ্ তা‘আলা এরপর এরশাদ করেছেন ঃ
إِن تَتُوبَا إِلَى اللَّهِ فَقَدْ صَغَتْ قُلُوبُكُمَا وَإِن تَظَاهَرَا عَلَيْهِ فَإِنَّ اللَّهَ هُوَ مَوْلَاهُ وَجِبْرِيلُ وَصَالِحُ الْمُؤْمِنِينَ وَالْمَلَائِكَةُ بَعْدَ ذَلِكَ ظَهِيرٌ
“তেমাদের দু’জনের অন্তর অন্যায়ের প্রতি ঝুঁকে পড়ার কারণে তোমরা যদি তাওবাহ্ করো (তো ভালো কথা), নচেৎ তোমরা দু’জন যদি তাঁর (রাসূলের) বিরুদ্ধে পরস্পরকে সহায়তা করো (তথা তাঁর বিরুদ্ধে চক্রান্ত করো) তাহলে (জেনে রেখো,) অবশ্যই আল্লাহ্ই তাঁর অভিভাবক, আর এছাড়াও জিবরাঈল, উপযুক্ত মু’মিনগণ ও ফেরেশতাগণ তাঁর সাহায্যকারী। ” (সূরাহ্ আত্-তাহ্রীম ঃ ৪)
পরবর্তী আয়াত থেকে মনে হয় যে, তাঁদের দু’জনের কাজটি এমনই গুরুতর ছিলো যে কারণে হযরত রাসূলে আকরাম (সাঃ)-এর পক্ষ থেকে তাঁদেরকে তালাক প্রদান করা হলেও অস্বাভাবিক হতো না। আর তাতে দ্বিবচনের পরিবর্তে স্ত্রীবাচক বহুবচন ব্যবহার থেকে মনে হয় যে, রাসূলুল্লাহ্ (সাঃ)-এর স্ত্রীগণের মধ্যে যারা এ চক্রান্তে অংশ নেন নি সম্ভবতঃ তাঁরাও বিষয়টি জানার পরে তাতে বাধা দেন নি বা রাসূলুল্লাহ্ (সাঃ)-কে সাথে সাথে অবগত করেন নি, তাই এ শৈথিল্যের কারণে তাঁদেরকেও তালাক দেয়া হলে তা-ও অস্বাভাবিক হতো না।
এরশাদ হয়েছে ঃ
عَسَى رَبُّهُ إِن طَلَّقَكُنَّ أَن يُبْدِلَهُ أَزْوَاجًا خَيْرًا مِّنكُنَّ مُسْلِمَاتٍ مُّؤْمِنَاتٍ قَانِتَاتٍ تَائِبَاتٍ عَابِدَاتٍ سَائِحَاتٍ ثَيِّبَاتٍ وَأَبْكَارًا
“তিনি (রাসূল) যদি তোমাদেরকে তালাক্ব প্রদান করেন তাহলে হয়তো তাঁর রব তোমাদের পরিবর্তে তাঁকে তোমাদের চেয়ে উত্তম অকুমারী ও কুমারী স্ত্রীবর্গ প্রদান করবেন যারা হবে ঈমানদার, (আল্লাহর কাছে) আত্মসমর্পিত, আজ্ঞাবহ, তাওবাহ্কারিনী, ‘ইবাদত-কারিনী ও রোযা পালনকারিনী (বা আল্লাহর পথে পরিভ্রমণকারিনী)।
” (সূরাহ্ আত্-তাহ্রীম ঃ ৫)
এ আয়াতে এ ধরনের ইঙ্গিতও রয়েছে যে, হযরত রাসূলে আকরাম (সাঃ)-এর ঐ সময় জীবিত বিবিগণের কারো মধ্যেই এতে উল্লিখিত সবগুলো গুণ-বৈশিষ্ট্য বাঞ্ছিত সর্বোচ্চ মাত্রায় ছিলো না।
এ থেকে অকাট্যভাবে প্রমাণিত হয় যে, হযরত রাসূলে আকরাম (সাঃ)-এর বিবিগণ মা‘ছূম ছিলেন না এবং তাঁরা আহলে বাইত্-এর অন্তর্ভুক্ত ছিলেন না। কিন্তু এরপরও অনেকে ভাবাবেগের বশে কেবল আল্লাহর রাসূলের স্ত্রী হবার কারণে তাঁদেরকে পাপ ও ভুলের উর্ধে গণ্য করেন। তাঁদের এ ভুল ভেঙ্গে যাওয়ার জন্য কোরআন মজীদের নিুোক্ত আয়াতই যথেষ্ট হওয়া উচিত যা হযরত রাসূলে আকরাম (সাঃ)-এর স্ত্রীগণের সমালোচনা ও তাঁদের উদ্দেশে উচ্চারিত হুমকির ধারাবাহিকতায় তাঁদেরকে সতর্ক করার লক্ষ্যে নাযিল হয়েছে ঃ
ضَرَبَ اللَّهُ مَثَلًا لِّلَّذِينَ كَفَرُوا اِمْرَأَةَ نُوحٍ وَاِمْرَأَةَ لُوطٍ كَانَتَا تَحْتَ عَبْدَيْنِ مِنْ عِبَادِنَا صَالِحَيْنِ فَخَانَتَاهُمَا فَلَمْ يُغْنِيَا عَنْهُمَا مِنَ اللَّهِ شَيْئًا وَقِيلَ ادْخُلَا النَّارَ مَعَ الدَّاخِلِينَ
“যারা কাফের হয়েছে তাদের জন্য আল্লাহ্ নূহের স্ত্রী ও লূত্বের স্ত্রীর উপমা প্রদান করেছেন; তারা দু’জন আমার দু’জন নেক বান্দাহর আওতায় (বিবাহাধীনে) ছিলো, কিন্তু তারা উভয়ই তাদের সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করলো। ফলে তারা দু’জন (নূহ্ ও লূত্ব) তাদের দু’জনকে আল্লাহর (শাস্তি) থেকে রক্ষা করতে পারলো না; আর তাদেরকে বলা হলো ঃ (অন্যান্য) প্রবেশকারীদের সাথে দোযখে প্রবেশ করো।
” (সূরাহ্ আত্-তাহ্রীম্ ঃ ১০)
আহলে বাইত্ কারা?
আমরা ভূমিকায় যেমন উল্লেখ করেছি, হযরত রাসূলে আকরাম (সাঃ)-এর যুগ থেকে শুরু করে এ ব্যাপারে যে সর্বসম্মত মত (ইজ্মা‘) চলে এসেছে তা হচ্ছে, কোরআন মজীদে আহলে বাইত্ বলতে হযরত ফাতেমাহ্, হযরত আলী, হযরত ইমাম হাসান ও হযরত ইমাম হোসেন (রাযীয়াল্লাাহু তা‘আালাা ‘আন্হুম্ আজ্মা‘ঈন্)-কে বুঝানো হয়েছে তেমনি আালে মুহাম্মাদ (সাঃ) বলতেও তাঁদেরকে বুঝানো হয়েছে। এ বিষয়ের সমর্থনে বিভিন্ন সূত্রে বর্ণিত প্রচুর হাদীছ রয়েছে।
বর্ণনাসূত্রের বিচারে এ বিষয়ক হাদীছগুলো মুতাওয়াতির কিনা সে বিষয়ে পর্যালোচনায় না গিয়েও আমরা বলতে পারি যে, প্রথমতঃ এ সব হাদীছের বিষয়বস্তু ইসলামের চারটি অকাট্য জ্ঞানসূত্রের কোনোটির সাথেই সাংঘর্ষিক নয় এবং দ্বিতীয়তঃ সংশ্লিষ্ট আয়াত নাযিলকালে হযরত রাসূলে আকরাম (সাঃ)-এর পুত্রসন্তান না থাকা ও কোরআন মজীদের দৃষ্টিতে তাঁর বিবিগণ মা‘ছূম না হওয়া তথা আহলে বাইতের অন্তর্ভুক্ত না হওয়ার প্রেক্ষাপটে এ বিষয়ক হাদীছগুলো গ্রহণ করা ছাড়া সংশ্লিষ্ট আয়াতাংশের প্রায়োগিকতা থাকে না। কারণ, সে ক্ষেত্রে আদৌ তাঁর কোনো আহলে বাইত্ থাকে না এবং সংশ্লিষ্ট আয়াতাংশ অর্থহীন হয়ে যায় Ñ যে ধরনের উক্তি থেকে চির জ্ঞানময় সর্বজ্ঞাতা আল্লাহ্ তা‘আলা পরম প্রমুক্ত।
অধিকন্তু আয়াতে মুবাাহালাহ্ (সূরাহ্ আালে ‘ইমরান্ ঃ ৬১) অনুযায়ী হযরত রাসূলে আকরাম (সাঃ) যে আমল করেন তদ্সংক্রান্ত যে তথ্যের ওপরে উম্মাহর মধ্যে ইজ্মা‘ রয়েছে তা থেকেও উক্ত চারজন মহান ব্যক্তিত্বের আহলে বাইত্ বা আালে মুহাম্মাদ (সাঃ) হওয়ার ব্যাপারে অকাট্য সমর্থন পাওয়া যায়।
নাজরানের খৃস্টান ধর্মনেতাদের কাছে ইসলামের সত্য দ্বীন ও হযরত রাসূলে আকরাম (সাঃ)-এর সত্যিকারের পয়গাম্বর হওয়ার বিষয়টি অকাট্যভাবে সুস্পষ্ট হয়ে যাওয়া সত্ত্বেও তারা ইসলাম ও হযরত রাসূলে আকরাম (সাঃ)-এর বিরোধিতার ব্যাপারে, বিশেষ করে হযরত ‘ঈসা (আঃ)-এর ব্যাপারে একগুঁয়েমি করতে থাকলে আল্লাহ্ তা‘আলা তাদেরকে লা‘নতের চ্যালেঞ্জ দেয়ার জন্য রাসূলুল্লাহ্ (সাঃ)কে নির্দেশ দেন; এরশাদ করেন ঃ
فَمَنْ حَآجَّكَ فِيهِ مِن بَعْدِ مَا جَاءكَ مِنَ الْعِلْمِ فَقُلْ تَعَالَوْاْ نَدْعُ أَبْنَاءنَا وَأَبْنَاءكُمْ وَنِسَاءنَا وَنِسَاءكُمْ وَأَنفُسَنَا وأَنفُسَكُمْ ثُمَّ نَبْتَهِلْ فَنَجْعَل لَّعْنَةُ اللّهِ عَلَى الْكَاذِبِينَ
“(হে রাসূল!) আপনার কাছে প্রকৃত জ্ঞান এসে যাওয়ার পরেও যে আপনার সাথে এ ব্যাপারে (‘ঈসার ব্যাপারে) বিতর্ক করে তাকে বলুন ঃ এসো আমরা ডেকে নেই আমাদের পুত্রদেরকে ও তোমাদের পুত্রদেরকে, আমাদের নারীদেরকে ও তোমাদের নারীদেরকে এবং আমাদের নিজেদেরকে ও তোমাদের নিজেদেরকে, অতঃপর আমরা প্রার্থনা করি এবং মিথ্যাবাদীদের ওপর আল্লাহর লা‘নত করি। ” (সূরাহ্ আালে ‘ইমরাান্ ঃ ৬১)
ইসলামের সকল মাযহাব ও ফির্ক্বাহ্র সূত্রে বর্ণিত হাদীছ সমূহের ভিত্তিতে সমগ্র উম্মাহ্র কাছে সর্বসম্মতভাবে গৃহীত তথ্য অনুযায়ী হযরত রাসূলে আকরাম (সাঃ) হযরত ফাতেমাহ্, হযরত আলী, হযরত ইমাম হাসান ও হযরত ইমাম হোসেন (রাযীয়াল্লাহু তা‘আালা ‘আন্হুম্ আজ্মা‘ঈন্)-কে স্বীয় চাদর বা ‘আবা-র নীচে নিয়ে নাজ্রানের খৃস্টানদের সাথে মুবাাহালাহ্ করতে যান এবং এ সময় আল্লাহ্ তা‘আলার কাছে যে দো‘আ করেন তাতে তাঁদেরকে “এরাই আমার আহলে বাইত্” বলে উল্লেখ করেন। এ সংক্রান্ত হাদীছগুলোরও বিষয়বস্তু এমন যা ইসলামের অকাট্য জ্ঞানসূত্র সমূহের কোনোটির সাথেই সাংঘর্ষিক নয় এবং এ ব্যাপারে এতদ্ব্যতীত অন্য কোনো বর্ণনা নেই। এমতাবস্থায় এটিকে গ্রহণ করা ছাড়া উপায় নেই। নচেৎ ধরে নিতে হয় যে, রাসূলুল্লাহ্ (সাঃ) এ আয়াত অনুযায়ী আমল করেন নি Ñ যে ধারণা নির্দ্বিধায় প্রত্যাখ্যানযোগ্য।
লক্ষণীয় যে, সংশ্লিষ্ট আয়াত অনুযায়ী হযরত রাসূলে আকরাম (সাঃ)-এর জন্য তাঁর সবচেয়ে কাছের মানুষগুলোকে নিয়ে মুবাাহালাহ্ করতে যাওয়া অপরিহার্য ছিলো। এ আয়াতে উভয় পক্ষে মুবাাহালায় অংশগ্রহণকারীকে তিন ধরনের লোকদেরকে নিয়ে এতে অংশগ্রহণ করতে বলা হয়, তা হচ্ছে ঃ انفسنا (আমরা নিজেরা), ابنئنا (আমাদের পুত্রগণ/ বংশধর পুরুষগণ) ও نسائنا (আমাদের নারীগণ/ স্ত্রী-কন্যাগণ)। এ আয়াতে প্রদত্ত নির্দেশের ভিত্তিতে রাসূলুল্লাহ্ (সাঃ) যাদেরকে নিয়ে মুবাাহালাহ্ করতে গেলেন সুস্পষ্ট যে, তাঁদের মধ্য থেকে হযরত ইমাম হাসান ও হযরত ইমাম হোসেন (রাঃ)কে ابنئنا (আমাদের পুত্রগণ/ পুরুষ বংশধরগণ) হিসেবে, হযরত ফাতেমাহ্ (রাঃ)কে نسائنا (আমাদের নারীগণ অর্থাৎ প্রিয়তম নারীগণ) ও হযরত আলী (রাঃ)কে انفسنا (আমরা নিজেরা) হিসেবে সাথে নিয়ে যান। অর্থাৎ তিনি তাঁর পুরো আহলে বাইত্কে সাথে নিয়ে যান।
এখানে আরো গভীরভাবে তলিয়ে চিন্তা করার বিষয় হচ্ছে এই যে, মুবাাহালাহ্র আয়াতে যাদেরকে সাথে নিয়ে মুবাাহালাহ্ করার নির্দেশ দেয়া হয় তাঁদের সম্পর্কে আভিধানিক অর্থ গ্রহণ করা হলে রাসূলুল্লাহ্ (সাঃ)-এর জন্য কন্যাকে নয়, বরং তাঁর স্ত্রীগণকে সাথে নিতে হতো, অথবা কন্যার সাথে সাথে স্ত্রীগণকেও সাথে নিতে হতো।
অবশ্য জীবিত পুত্রসন্তান না থাকা অবস্থায় নাতিদ্বয়কে নিয়ে যাওয়ার যৌক্তিকতা থাকলেও আভিধানিক তাৎপর্যের দৃষ্টিতে জামাতাকে সাথে নেয়ার বিষয়টি এর আওতায় আসে না। কিন্তু যেহেতু মুবাাহালাহ্র ক্ষেত্রে রক্ত বা বৈবাহিক সম্পর্কের নিকটতম ব্যক্তিদেরকে সাথে নেয়ার যৌক্তিকতা ছিলো না এবং প্রতিপক্ষও তা দাবী করতো না, বরং দু’টি আদর্শিক পক্ষের মধ্যে পারস্পরিক চ্যালেঞ্জের ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট নেতার জন্য আদর্শিক দৃষ্টিকোণ থেকে যারা তাঁর নিকটতম ও পরবর্তী উত্তরাধিকারী তথা নেতার সাথে যারা ধ্বংস হয়ে গেলে সংশ্লিষ্ট আদর্শের চিরবিলুপ্তি ঘটবে তাঁদেরকে সাথে নিয়েই মুবাাহালাহ্ করা অপরিহার্য ছিলো।
এ প্রসঙ্গে উল্লেখ্য যে, ইসলামের সকল মত-পথের সূত্রে বর্ণিত হাদীছ-ভিত্তিক সর্বসম্মত মত অনুযায়ী হযরত রাসূলে আকরাম (সাঃ) হযরত আলী (রাঃ)-এর সাথে তাঁর সম্পর্ককে হযরত মূসা ও হযরত হারূন (আঃ)-এর সম্পর্কের অনুরূপ বলে উল্লেখ করেছেন। এর মানে হচ্ছে, হযরত হারূন (আঃ) যেরূপ হযরত মূসা (আঃ)-এর আদর্শিক সত্তার অবিচ্ছেদ্য অংশ ছিলেন, ঠিক সেভাবেই হযরত আলী (রাঃ) হযরত রাসূলে আকরাম (সাঃ)-এর আদর্শিক সত্তার অবিচ্ছেদ্য অংশ ছিলেন। এমতাবস্থায় তাঁকে সাথে নিয়ে না গেলে মুবাহালাহ্ অসম্পূর্ণ থাকতো।
সম্ভবতঃ প্রতিপক্ষও এ বিষয়টি অবগত ছিলো এবং এ কারণে তাঁকে সাথে নিয়ে না গেলে তা প্রতিপক্ষের কাছে গ্রহণযোগ্য হতো না।
অনুরূপভাবে বুঝা যায়, হযরত রাসূলে আকরাম (সাঃ) জানতেন যে, তিনি তাঁর স্ত্রীদেরকে “আমাদের নারীগণ” হিসেবে তথা আহলে বাইতের নারী সদস্য হিসেবে সাথে না নেয়ায় প্রতিপক্ষের কাছ থেকে প্রতিবাদের আশঙ্কা ছিলো না অর্থাৎ প্রতিপক্ষও জানতো যে, তাঁর স্ত্রীগণ আদর্শিক-পারিভাষিক দিক থেকে তাঁর আহলে বাইতের অন্তর্ভুক্ত ছিলেন না।
এ থেকে আরো প্রমাণিত হয় যে, পারিভাষিক অর্থে কোনো নবী বা রাসূলের আহলে বাইত্ বা আালে রাসূলের অন্তর্ভুক্ত হওয়ার জন্য অভিধানিক অর্থে পরিবারের সদস্য বা বংশধর হওয়া অপরিহার্য নয়, বরং এর বাইরে থেকেও অন্তর্ভুক্ত করা হতে পারে। অর্থাৎ পারিভাষিক অর্থে একজন নবী বা রাসূলের আহলে বাইত্ বা আালে রাসূলের অন্তর্ভুক্ত তাঁরাই যারা তাঁর আদর্শিক সত্তার অংশ এবং তাঁর আদর্শিক উত্তরাধিকারী। হযরত মূসা (আঃ) ও হযরত হারূন (আঃ) এবং হযরত মূসা ও হযরত ইউশা‘ বিন্ নূন্ (আঃ)-এর মধ্যে যে সম্পর্ক ছিলো তা এ ধরনেরই এবং এ কারণেই হযরত ইউশা‘ বিন্ নূন্ (আঃ) হযরত মূসা (আঃ)-এর পুত্র না হওয়া সত্ত্বেও তাঁর আদর্শিক নেতৃত্বের উত্তরাধিকারী হয়েছিলেন।
একই কারণে হযরত আলী (রাঃ) হযরত রাসূলে আকরাম (সাঃ)-এর পুত্র না হওয়া সত্ত্বেও তাঁকে আহলে বাইত্-এর অন্তর্ভুক্ত করা হয়।
ইসলামে আহলে বাইত্-এর মর্যাদা
কোরআন মজীদে ও বিভিন্ন হাদীছে হযরত রাসূলে আকরাম (সাঃ)-এর আহলে বাইত্-এর দ্বীনী মর্যাদা সম্বন্ধে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে বহু উল্লেখ রয়েছে। বিশেষ করে কোরআন মজীদের যে সব আয়াতে এ সম্বন্ধে পরোক্ষভাবে উল্লেখ করা হয়েছে ইখলাছের সাথে ও নিরপেক্ষভাবে অর্থগ্রহণ ও ব্যাখ্যা করা হলে সে সব আয়াত থেকেও হযরত রাসূলে আকরাম (সাঃ)-এর আহলে বাইত্-এর বিশেষ দ্বীনী মর্যাদা সুস্পষ্টভাবে ধরা পড়ে। তেমনি বিভিন্ন মুতাওয়াতির হাদীছেও এ সম্বন্ধে উল্লেখ রয়েছে। কিন্তু এখানে আমরা কেবল সেই সব দলীলেরই আশ্রয় নেবো যার তাৎপর্যের ব্যাপারে দ্বিমতের অবকাশ নেই।
এ পর্যায়ে প্রথমেই আমরা যা উল্লেখ করতে চাই তা হচ্ছে আল্লাহ্ রাব্বুল ‘আলামীন আহলে বাইতের প্রতি ভালোবাসাকে মু’মিনদের জন্য অপরিহার্য করেছেন; এরশাদ হয়েছে ঃ
قُل لَّا أَسْأَلُكُمْ عَلَيْهِ أَجْرًا إِلَّا الْمَوَدَّةَ فِي الْقُرْبَى
(হে রাসূল!) বলুন, আমি এজন্য (আল্লাহর হেদায়াত পৌঁছে দেয়ার বিনিময়ে) তোমাদের কাছে আমার ঘনিষ্ঠতমদের জন্য ভালোবাসা ব্যতীত কোনো বিনিময় চাই না। ” (সূরাহ্ আশ্-শূরা ঃ ২৩)
এ আয়াতে মু’মিনদের জন্য হযরত রাসূলে আকরাম (সাঃ)-এর স্বজনদের (قربی) প্রতি ভালোবাসাকে অপরিহার্য করা হয়েছে। কারণ, এ ব্যাপারে দ্বিমতের অবকাশ নেই যে, এতে স্বজন (قربی) বলতে তাঁর আহলে বাইত্কেই বুঝ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।