কল্পিত চোখে বাস্তবতা দেখি, কম্পিত কলমে স্তব্ধতা লেখি “যে পিচে আপনাদের প্রতিপক্ষ এতোভালো ব্যাটিং করলো, সেই পিচে আপনাদের ব্যাটিং অর্ডার হুড়মুর করে ভেঙ্গে পড়লো কেন?
“প্রতিপক্ষ অনেক দিনের বিরতিতে ওয়ানডে খেলছে, এছাড়া তাদের গুরত্বপূর্ণ একজন খেলোয়ার অনুপস্থিত!প্রতিপক্ষের এইসব দূর্বলতার সুযোগ কেন নিতে পারলেন না ?
উপরিউক্ত প্রশ্নগুলোর সাথে বাংলাদেশের যেকোন অধিনায়ক বেশ পরিচিত থাকবেন। কিন্তু আজকের ম্যাচ শেষে এই প্রশ্ন বাংলাদেশের অধিনায়ক মুশফিকুর রহিমকে নয়, করা যেতে পারে ওয়েস্ট ইন্ডিজের অধনায়ক ড্যারেন স্যামিকে। দাপটের সাথে বাংলাদেশের বিপক্ষে টেস্ট সিরিজ জিতেছেন, তারও আগে জয় করে এসেছেন টি-টুয়েন্টি ওয়ার্ল্ড কাপ। তার দলে আছে গেইল-স্যামুয়েলস-পোলার্ডের মতো বিশ্বসেরা সব পাওয়ার হিটার যারা পাওয়ার এনার্জি ড্রিঙ্ক না খেয়েই গুটিয়ে নয় বরং চুটিয়ে বল পিটিয়ে পাঠিয়ে দেন গ্যালারির দর্শকদের কোলের উপরে। ম্যাচের আগে তাই প্রশ্ন চলেই এসেছিলো এই দলের বিরুদ্ধে বাংলাদেশ কীভাবে বানাবে বিজয়মঞ্চ যেখানে মঞ্চ গড়ার মুল স্তম্ভ সাকিব খেলতে পারবে না ইঞ্জুরির কারনে!!দলের সবচেয়ে কার্যকরী স্তম্ভের অনুপস্থিতিতে প্রক্সি দেবার জন্য নিয়ে আসা হলো এক ম্যাচে চার নতুন অভিষিক্ত স্তম্ভদের (যদিও প্রত্যেকেই দেখতে বাশের খুটির মতো)।
তারা হলেন আবুল হোসেন, সোহাগ গাজী, আনামুল হক এবং মমিনুল হক। সেই সাথে বাংলাদেশকে ভরসা করার দরকার ছিলো নাসির-তামিম—রাজ্জাকদের মতো পুরনো স্তম্ভদের উপরেও। ওয়ানডে অভিষেকেই সোহাগ গাজী স্তম্ভ হবার বদলে বিজয়মঞ্চের নকশাকারী হতেই বেশি পছন্দ করলেন। তার সাথে কলকাঠি নারলেন আব্দুর রাজ্জাক। বাংলাদেশের স্পীনারদের নীল নকশায় একে একে ওয়েস্ট ইন্ডিজের ব্যাটসম্যানরা বেদনায় নীল হলো।
যে দলে গেইল-স্যামুয়েলস-এর মতো ব্যাটসম্যান রয়েছে,সেই দলের ব্যাটিংয়ে সবোর্চ স্কোরার লেঞ্জা (টেইল) এন্ডার সুনীল নারায়ন (৩৬)। তাকে সহায়তা করলো আরেক লেঞ্জা রবি রামপলের ২৫। এই দুজনের নবম উইকেট জুটিতে ৫৭ রানের কারনেই ওয়েসট ইন্ডিজের বলার মতো স্কোর ১৯৮। দলটি তো ১৩৩ রানেই হারিয়ে ফেলেছিলো ৮ উইকেট যেখানে দলের স্বীকৃত ব্যাটসম্যানদের ভেতর শুধু গেইল আর ব্রাভো যা একটু রান করেছেন। তাদের প্রত্যেকেই করেছেন পয়ত্রিশ।
দুইজনের এই ত্রিশ দশা দেখে বাংলাদেশের বোলাররা বত্রিশ দাত বের করে হাসতেই পারেন।
বোলারদের হাসি সার্থক করার দায় নিয়ে ব্যাটিং-এ নামলো উদবোধনী জুটি তামিম আর আনামুল। তামিম যেন গেইল-স্যামুয়েলসদের শেখাতে বসলেন কীভাবে এই পিচে চার-ছয় পেটাতে হয়। তামিম শেখালেন আর তামিমকে যোগ্য সঙ্গ দিয়ে অভিষিক্ত আনামুল নিজের জাত চেনালেন। দুজনের জুটিতে আসলো ৯৩ যেখানে তামিমেরই ৫১ বলে ৫৮ রান।
এরপর তামিম সিদ্ধান্ত নিলেন কীভাবে অফ সাইডে ঘিরে থাকা ফিল্ডারদের মাথার উপর দিয়ে চার মারতে হয় সেটা শেখাবেন। শেখাতে গিয়েই সুনীল নারায়নের বলে পোলার্ডের হাতে ক্যাচ দিলেন। ফিফটির দিকে ধাবিত আনামুলেরও তর সইলো না, স্যামির বলে স্যামির হাতেই ক্যাচ দিয়ে আউট হয়ে ফিরলেন ৪১ রানে। টার্গেট যখন মাত্র ১৯৯ তখন ব্যাটসম্যানদের এইসব আউট চোখে পড়ে না। আর গোটা দিনটাই বাংলাদেশেরই হওয়ায় চোখে পড়লো না বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার সাকিবের অনুপস্থিতিও।
স্পিন এ্যাটাকে সাকিব থাকলে হতো সোনায় সোহাগা কিন্তু সোহাগ গাজী বোলিং-এ তার অভাব ঘুচিয়ে দিয়েলেন । ব্যাটিং-এ সাকিবের চার নম্বর পজিশনে নেমে সাকিবের দায়িত্ব ভুলিয়ে দিতে চাইলেন নাসির। নাইমের সাথে সংক্ষিপ্ত অথচ কার্যকর জুটি গড়ে নাসির সেই পোলার্ডের হাতেই ধরা দিলেন ২৮ বলে ২৯ করে। অবশ্য ক্যাচ নিয়েও পোলার্ডের এবং গোটা ওয়েস্ট ইন্ডিজ দলের কোন ভাবান্তর দেখা গেলো না। তারা ততক্ষনে বুঝে গিয়েছে আজ তারা শবযাত্রার মিছিলে যাওয়া দল, ফুল ছুড়ে (পড়ুন ‘ক্যাচ’) দিলেও সেটা লুফে নিয়ে শোকার্ত থাকতে হবে।
বাংলাদেশকে জেতাবার বাকী কাজটুকু করলেন নাইম আর মুশফিক। টেস্ট ম্যাচ থেকেই ব্যাটিং-এ প্রমোশন পাওয়া নাইম নিজের নব্য ‘টপঅর্ডার ব্যাটসম্যান’ পদবির মর্যাদা রাখলেন অপরাজিত ফিফটি করে। এক কথায় বললেন, হেসে-খেলে জিতে সিরিজে ১-০ তে এগিয়ে গেলো বাংলাদেশ। এই হেসে-খেলে বিশেষণটাও কিন্তু বাংলাদেশ দলের জন্য বহুল প্রচলিত নয়। সর্বশেষ এশিয়া কাপের জয়গুলোও ছিলো ঘাম-ঝরানো জয়।
এক সময় তো প্রায়ই লিখতে হতো “হেসে-খেলে বাংলাদেশের বিপক্ষে জিতলো অমুক দল”। তাহলে কি বাংলাদেশ এখন ওয়ানডেতে একটি বদলে যাওয়া শক্তিশালী দল???উত্তরে “হ্যা” অবশ্যই বলা যায়, তবে এই “হ্যা” আরো জোরালো হবে যদি জয়ের ধারাবাহিকতা অব্যাহত রেখে বাংলাদেশ সিরিজ জিতে নেয়।
অফটপিকঃ খেলার সময়ে চ্যানেল নাইনে প্রচারিত ফেয়ার এন্ড লাভলী-এরএর একই এ্যাড বার বার দেখানোটা বিরক্তির উদ্রেগজনক। ফেয়ার এন্ড লাভলী ফর মেন-এর প্রতি চ্যালেঞ্জ রইলো, সাহস থাকলে যেন ড্যারেন সামিকে তাদের এ্যাডের মডেল বানিয়ে ফর্সা করানোর গ্যারান্টি দেয়!!!
বাংলাদেশ ক্রিকেট নিয়ে ব্লগে আমার সর্বশেষ স্পোর্টস রম্য পড়তে এইখানে ক্লিক করেন
লেখালিখি ভাল লাগলে লাইক দিতে পারেন আমার এই পেইজে ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।