প্রথমেই তাজরিন গার্মেন্টসের অগ্নিকাকাণ্ডে নিহত পোশাকশ্রমিকদের রুহের মাগফেরাত কামনা করছি। গার্মেন্টস শিল্পের ইতিহাসে এমন ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ড এই প্রথম (যদিও এর পূর্বে অনেকবার অগ্নিকাণ্ড ঘটেছে ) । মৃত্যুবরণ করেছে শতাধিক শ্রমিক। দেশের অর্থনীতির সবচেয়ে অগ্রসর খাত এই পোশাকশিল্পের ইতিহাসে এই ঘটনা নতুন নয়। প্রতিবারই এই গরীব মেহনতি শ্রমিকেরা জীবন দেন, সংবাদ প্রচার হয়, সহনাভুতি দেখানো হয়, আবার কারখানা চলতে থাকে।
এভাবেই আমরা ভুলে যায় পূর্বের ঘটনা। কিন্তু পোশাকশিল্পের কোন দুর্ঘটনায় আমরা লক্ষ্য করি সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্থ হয় শ্রমিকেরা। নিজের জীবনের মায়া ত্যাগ করে একটু বেচে থাকার আশায় কাক ডাকা ভোর থেকে রাত পর্যন্ত এই মানুষ গুলো (বিশেষত মেয়েরা) পরিশ্রম করে। কিন্তু তাদের বিষয়ে আমরা কতটুকু সচেতন? যাদের পরিশ্রমে আমরা কোটি কোটি টাকা আয় করছি তাদের জীবনের নিরাপত্তা কি আশানুরুপ?? একটি গার্মেন্টস কারখানায় সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ নিরাপদ কাজের স্থান, দুর্ঘটনার সময় দ্রুত বের হওয়ার পথ, আগুন বা দুর্ঘটনা প্রশমন প্রশিক্ষণ এবং সঠিক সময়ে ব্যাবহারের সচেতনতা বৃদ্ধি। সবচেয়ে বেশি দরকারি কর্মকর্তাদের সহযোগিতা বা মানসিকতা।
বিভিন্ন পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী তাজরিন ফ্যাশনের অনেক শ্রমিক আগুন লাগা বুঝতে পেরে বের হতে চাইলে কর্মকর্তারা বাঁধা দেই। এমনকি খারাপ আচরন করে। আসলে এর ফলশ্রুতিতে এই ১১১ টি তাজা প্রাণের মৃত্যু। এভাবে চলতে থাকলে কি অবস্থা হবে আমাদের পোশাকশিল্পের? ইতিমধ্যেই বাংলাদেশী পোশাকশিল্পের অন্যতম ক্রেতা ইউরোপ ও আমেরিকার বাজারে মিশ্র পতিক্রিয়া দেখা গেছে। ইতিমধ্যেই যুক্তরাষ্ট্রের অন্যতম খুচরা প্রতিষ্ঠান ওয়ালমার্ট চুক্তি বাতিল করেছে (বিবিসি বাংলা ওয়েবসাইট) ।
এটাই কি বস্ত্রশিল্পের জন্য অশনিসংকেত নয়?? তাহলে কি পদক্ষেপ নিচ্ছে বিজিএমিএ? দেশের পোশাক কারখানাগুলোতে কাজের পরিবেশ বৃদ্ধি করতে সময় বেঁধে দিয়েছে গার্মেন্টস মালিকদের এই প্রতিষ্ঠানটি। বৃহস্পতিবার বিজিএমইএ-এর এক সভায় কারখানার মান পর্যবেক্ষণের জন্য টাস্কফোর্স গঠনের সিদ্ধান্ত হয়। সংগঠনের সভাপতি শফিউল ইসলাম মহিউদ্দিন জানান, টাস্কফোর্স গঠনের পর সাড়ে ৪ হাজার কারখানার কাজের পরিবেশ পর্যবেক্ষণ করে ‘নন-কমপ্লায়েন্টগুলোকে’ চিহ্নিত করবে। দেশি ও বিদেশি বিশেষজ্ঞদের সমন্বয়ে গঠিত এই টাস্কফোর্স পর্যবেক্ষণ করবে কারখানাগুলো।
অন্যদিকে বাংলাদেশের পোষাক শিল্পে শ্রমিকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে সুপরিচিত পশ্চিমা ব্র্যান্ডগুলোকে একটি চুক্তিতে বাধ্য করতে একটি প্রচারাভিযান শুরু হয়েছে।
ইউরোপ এবং যুক্তরাষ্ট্রের শ্রমিক অধিকার এবং মানবাধিকার সংগঠনগুলো ক্লিন ক্লোদস ক্যাম্পেইন নামে একটি জোটের ব্যানারে এই প্রচারাভিযান শুরু করেছে। ব্রিটেনে ক্লিন ক্লোদস ক্যাম্পেইনের একজন মুখপাত্র সামান্থা মাহের বিবিসি বাংলাকে বলেন, তারা মনে করছেন বাংলাদেশে যদিও অগ্নি নিরাপত্তার ব্যাপারে অনেক আইন এবং নিয়ম-কানুন রয়েছে, তার পরেও এগুলো মানা হচ্ছে কি না তার নজরদারি যথেষ্ট জোরালো নয়। সেখানে হয়তো ইমারত নির্মাণ বিধিমালা আছে, বৈদ্যুতিক নিরাপত্তার নিয়ম-কানুন আছে, কিন্তু বহু কারখানাতেই এগুলো মানা হয় না বলে তাদের অভিজ্ঞতা বলছে (বিবিসি বাংলা ওয়েবসাইট)। সব মিলিয়ে বেশ আশার আলো দেখা যাচ্ছে। পোশাকশিল্পে।
কিন্তু তা নির্ভর করছে পোশাক শিল্প মালিকদের সদিচ্ছার উপর। আমরা আশা করি সব মিলিয়ে একটি সুস্থ পরিবেশ সৃষ্টি হবে। শ্রমিকদের জন্য উপযুক্ত কাজের পরিবেশ সৃষ্টি হবে। আর নতুন তাজরিন অগ্নিকাণ্ড দেখতে হবে। সুন্দর স্বাভাবিক নিয়মে চলবে পোশকশিল্পগুলো ।
পাশাপাশি আরও নতুন নতুন বাজার সৃষ্টি হবে , আর আমরা আয় করব আরও বৈদেশিক মুদ্রা। কিন্তু তা কতদিনে??? সে আশায় বুক বেঁধে রয়।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।