আমার সম্পর্কে অনেকের ভুল ধারনা আছে । আশা করি এই লেখাটি অনেকের সেই ভুল ভেঙ্গে যাবে।
প্রতিটা মানুষের জীবনে কোন না কোন এক সময় ভালবাসা নামক ভাইরাসে আক্রমন করে। আমার জীবনেও করেছিল। যদিও ঐ সময়টা এই ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার সঠিক সময় ছিল না।
এখন বুঝি যে সময়টা ঠিক ছিল না । কিন্তু তখন বুঝিনি। মনে হয় খুব তাড়াতাড়ি পেকে গিয়েছিলাম । তাই যা হওয়ার তাই হল । ভাইরাস খুব ভাল ভাবেই ধরল।
সময়টা ছিল ১৯৯৯ সালের ডিসেম্বর মাস । যখন প্রথম প্রেমের চিঠি পেয়েছিলাম । কিন্তু সরাসরি চিঠিটা আমার হাতে আসেনি বা আমি তখনও ঐ চিঠি হাতে পাইনি। আমার প্রথম প্রেমের চিঠি আমার মায়ের হাতে দেওয়া হয়েছিল আমাকে দেওয়ার জন্য। কিন্তু বিধি বাম।
আমাকে দেওয়ার আগে আমার আম্মাজান এই চিঠিতে একবার চোখ বুলিয়েছিলেন । তারপর এই বিষয়ে আমার বাসায় গোল টেবিল বৈঠক বসল। অবশ্য বৈঠকে মানুষ ছিল মাত্র তিন জন । আমার মা-বাবা আর ছোটবোন । যাইহোক বৈঠকে কি সিদ্ধান্ত হয়েছিল তা আমি আজও জানতে পারিনি ।
কিন্তু এইটুকু জানলাম আমার আর বাসায় থাকা হবে না। আমাকে পড়াশুনার জন্য দূরে কোথাও পাঠিয়ে দেওয়া হবে। এইটুকু আমার ছোটবোনের কাছ থেকে শুনেছিলাম । কিছুদিনের মধ্যে আমাকে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছিল। যাওয়ার আগে একদিন লুকিয়ে আম্মার ব্যাগ থেকে নিয়ে সেই চিঠি পড়েছিলাম।
যার পর থেকে আমার মনে সেই ভাইরাস ঢুকেছিল। সেই ভাইরাস মনে নিয়ে চলে গেলাম কিশোরগঞ্জে । ভর্তি হলাম বয়েজ স্কুলে । পারিবারিক কিছু সমস্যার কারনে বেশিদিন আমার কিশোরগঞ্জে থাকা হল না। তারপর আবার বাড়ীতে ফিরে এলাম।
মন আনন্দে নেচে উঠল । তার সাথে দেখা হবে এই কথা ভাবতেই ভাল লাগছিল । যদিও আমি তার চিঠির উত্তর দেইনি। আল্লাহর অশেষ মেহেরবানীতে অল্প কিছুদিনের মধ্যেই দেখা হল । আবার একটি চিঠি পেলাম।
এইপর তার সাথে আর দেখা হয়নি প্রায় ৫ বছর। যার কারনে তার এই চিঠির উত্তর ও দিতে পারিনি। ২ মাসের মধ্যে আমাকে আবার বাড়ীর বাইরে পাঠিয়ে দেওয়া হল। ওর আব্বা বদলি হয়ে গেল । আমি আমার এক বান্ধবীর মাধ্যমে তার সাথে যোগাযোগ করার চেষ্টা করলাম।
কিন্তু মন আমার মানে না। অনেক চেষ্টা করে তার ঠিকানা পাওয়া গেল । ততদিনে আমি মোবাইল ব্যবহার শুরু করেছি । ঠিকানা পাওয়ার পর তাকে চিঠি লিখলাম । আমার লেখা প্রথম চিঠি ।
তাতে আমার মোবাইল নাম্বার দিয়ে দিলাম। চিঠি পোষ্ট করার পর অপেক্ষার পালা। দিন যেন আর কাটছিল না। চিঠি পোষ্ট করার ২ মাস ৭ দিন পর আমার মোবাইলে একটা অপরিচিত নাম্বার থেকে কল আসল । এটা ছিল ২০০৫ সালের ৮ জানুয়ারি ।
সময়টা ছিল ১০.৩৮ মিনিট । এইটা এখনো ভুলতে পারিনি । পারব কিনা জানি না । ফোনের অপর প্রান্তের কণ্ঠ শুনে মনে হল আমার অনেক দিনের পরিচিত। যদিও এর আগে তার সাথে কথা হয়নি ।
দুই মিনিট কথা বলা শেষে ফোন রেখে দিল । আমার তখনও বিশ্বাস হচ্ছিল না । আমার বার বার মনে হচ্ছিল আমি স্বপ্ন দেখছি। সেইদিন সন্ধ্যায় একঘন্টার মত কথা বললাম । এতদিনের জমানো কথা।
একঘন্টা কথা বলার পর ফোনের টাকা শেষ হয়ে গেল । তখন ৩০০ টাকার নিচে কার্ড ছিল না। যার হাতে টাকা পয়সা না থাকায় কার্ড কিনতে পারিনি তাই কথাও হয়নি চার দিন। এরপর থেকে আমাদের নিয়মিত কথা হতে থাকে। চলতে থাকে প্রেমের গাড়ী ।
দেখতে দেখতে আমাদের এস এস সি পরীক্ষা চলে আসে। আব্বা আমার মোবাইল নিয়ে যায়। কিন্তু আমাদের কথা চলতে থাকে । আমি ফোন ফ্যাক্সের দোকান থেকে ফোন করতাম। আমার পরিচিত একটা দোকান ছিল ।
পরীক্ষা শুরু হয়ে গেল । আমাদের কথা বলার মাত্রা আরও বাড়তে লাগল। আব্বা প্রতি পরীক্ষার দিন ১০০ টাকা দিতেন । আমি হলে হেটে যেতাম আর হেটে আসতাম । আর ঐ টাকা দিয়ে কথা বলতাম ।
তার বাসার সবার সাথে আমার কথা হত । তার আম্মা আমাকে খুব আদর করতেন। পরীক্ষা শেষ হলে তাদের বাসায় যাওয়ার কথা বললেন । ঠিক হল পরীক্ষা শেষে তার বাসায় যাব। ২০০৫ সালের এপ্রিলের ১৪ তারিখ আমি আর আমার এক বন্ধু মিলে তার বাসায় যাই।
বাসায় তার আব্বা আম্মা ছিল । তার আম্মা আমাদের ব্যপারটা জানত । অনেক মজা হল । অনেক দিনের আক্ষেপ পূরন হল । চোখ জুড়িয়ে তাকে দেখলাম।
বসে গল্প করলাম। বিকালে আমরা চলে আসলাম। আমাদের প্রেম মনে হয় এরপরে আরও বেপরোয়া হয়ে উঠল। আগে দিনে ১০ মিনিট কি ২০ মিনিট কথা হত । আর এখন ৩০ মিনিট ৪০ মিনিট কথা হয় ।
ততদিনে মোবাইলের কল রেট কিছুটা কমে এসেছিল। এফ এন এফ নামক নতুন এক অফার দিল। মাই টাইম নামক অফার দিল । আর আমরা তার উপযুক্ত ব্যবহার শুরু করলাম। ভালোই কাটছিল দিন ।
তখনও ভাবতে পারিনি কপালে কি অপেক্ষা করছে। ২০০৬ সালের মাঝামাঝি জানতে পারলাম তাদের এলাকার একটি ছেলে তাকে খুব পছন্দ করে । তাকে নাকি প্রায়ই রাস্তায় প্রেম নিবেদন করে । আস্তে আস্তে সেই ছেলে তার মনে জায়গা করে নিতে থাকে। পাথর ঘষলেও নাকি ক্ষয় হয়।
আর এটা তো মেয়ে মানুষের মন। পরিবর্তন হতে বেশি সময় লাগেনি । এই সময়ে মধ্যে তার সাথে আমার আরও তিন চার বার দেখা হয়। আমাদের দেখা হত তার বাসায় । ২০০৭ সালের মাঝামাঝি তার পরিবর্তনের হাওয়া খুব জোরেশোরে লাগে।
আর আমার সাথে তার দূরত্ব বাড়তেই থাকল । সে ঊল্টা পাল্টা কথা বলত। আর আমার মেজাজ খারাপ হত। এভাবে চলতে চলতে একদিন সে আমাকে বলল তাকে ভুলে যেতে । সে এখন আর আমাকে ভালবাসে না।
তার সব স্বপ্ন এখন সেই ছেলেটিকে নিয়ে। আমার মনটাকে ভেঙ্গে ট্রিলিয়ন ট্রিলিয়ন টুকরো করে দিয়ে সে আমার জীবন থেকে সরে গেল। আমার মাথায় সমস্ত সৌর জগত ভেঙ্গে পড়ল । ট্রিলিয়ন টুকরো হৃদয় নিয়ে আমি কিছুদিন পাগলের মত হয়ে গেলাম। আমার স্বাভাবিক সব কাজ কর্ম থেমে গেল ।
আমার পৃথিবীতে এক প্রলংকারী এক সাইক্লোন আঘাত হানল । সাইক্লোন যখন থামল ততক্ষনে আমার সবকিছু হারিয়ে গেছে । আমি বিদ্ধস্ত অবস্থায় হয়ে পড়ে রইলাম। ঝড় থেমে গেছে সেই কবে । তার ক্ষয়ক্ষতি আজও পুষিয়ে উঠতে পারিনি ।
আজও মনে পড়ে সেই ঝড়ের দিনটার কথা । মনে পড়ে গা আজও শিউরে উঠে। যার জন্য পরবর্তীতে কারও সাথে কোন ধরনের সম্পর্কে জড়াতে পারিনি। যদিও আমার নামে অনেকে অনেক রকমের অপপ্রচার চালাচ্ছে। আমি ওই সব লোকের কথাকে থুরাই কেয়ার করি।
নিন্দুকের কথায় কান দেওয়ার মত সময় আমার নেই।
প্রেম একবার এসেছিল নীরবে , আমার দুয়ার প্রান্তে ।
বিঃদ্রঃ- বিশেষ কারনে সেই মহীয়ষীর নাম ঠিকানা দিলাম না।
গুরুচন্ডালী দোষ ক্ষমাযোগ্য অপরাধ। তাই সবাই ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন ।
কষ্ট করে পুরো লেখাটি পড়ার জন্য ধন্যবাদ । ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।