যেখানে যা লেখা পাচ্ছি এক নিশ্বাসে পড়ছি, আরে দু-হাত দিয়ে নিজের চোখ মুছে যাচ্ছি। শেয়ার করার দরকার হলে করছি। দেশ-বিদেশ থেকে একটু পর পর আপডেট জানতে চাচ্ছে, আমিও আপডেট দিয়া যাচ্ছি । এই ছিল গত ১দিন আগের আমার পরিস্থিতি। বিভিন্ন মধ্যমে যে সব নিউস পাচ্ছিলাম, তাতে আর ঘরে বসে থাকার মত অবস্থা ছিল না।
কিছু করার তাগিদ, কিছু একটা, যদি আমরাও পারি। এই চিন্তা করেতেই করতেই অফিসের গ্রুপ মেইল এ রাজিন এর মেইল, তাতে লেখা "হেল্পিং সাভার", এক মুহুর্র্ত দেরী না করে রিপ্লাই দিয়া দিলাম। সারারাত অপেক্ষা করেও আরে কারো রিপ্লায় না পেয়ে মনটা খারাপ হোল বটে, মন খারাপ নিয়ে ঘমুতে চলে গেলাম। নিরাশ হয়নি ঘুম থেকে উঠে, একের পর এক পর মেইল আসা শুরু করল, সবারি একমত কিছু করতে হবে, কিছু করা চাই, হউক স্বল্পপরিসরে, তবুউ চাই। দেখতে দেখতে মেইল থ্রেডএ মেইল এ ভরে গেল ।
অফিসের সব কলিগের একই কথা, একই সূর। হটাত মনে হলো পুরো বাংলাদেশটা আমার চোখের সামনে। এই তো কিছুদিন আগেই আমরা অফিসে যখন সরকারী-বিরোধীদল , শাহবাগ-হেফাজত ইসলাম নিয়ে বাক-বিতন্দায় জর্জরিত, তখন আমরাই আবার এক সাথে হতে পারি, দেশের সার্থে।
এরই মাঝে সালমা আপার মেসেজ পেলাম ফেসবুকে -
"খুব অস্থির লাগছে, কি করব। সবাই অক্সিজেন চাচ্ছে এখুনি, এ সব দেখে মাথা খারাপ হয়ে যাচ্ছে"
"অস্থির লাগলে তো হবে না, বন্ধুদের জানান, টাকা জোগান দেন , কাউন্সিল করেন"
অস্থির তো আমিও, নিজের অস্থিরতা কিভাবে দূর করব জানি না , কিভাবে আরেক জনের অস্থিরতা দূর করব।
ইতি মধ্যে আমরা অফিস কলিগরা মিলে ৫০ হাজার মত টাকার তুলে ফেলেছি। এখন দায়িত্ব অনেক, ওষুধ কেনা, অক্সিজেন কেনা, সেগুলো বন্টন করা। সকালেই শাওন ভাইকে ফোন দিয়ে বলে রেখেছিলাম "আপনি আজকে কোথায় যাবেন না, আমরা সাভার যাচ্ছি, ফোন দিলেই বের হয়েই আসবেন", আমার বলা লাগেনি "শাওন তার আগেই রানা ভাই এর বাড়িতে হাজির", এখন আমার যাবার পালা, উত্তরা থেকে আমাকে যেতে হবে পান্থপথ।
শুক্রুবার আমাদের ড্রাইভের ছুটি থাকে, তাকে ফোন দিলাম আসার জন্য। আমি জানি ছুটির দিনে কাউকে ফোন দিয়ে ডিউটি তে আসাটা তার জন্য কতটা বিরক্তিকর।
কিন্তু আমি যখন তাকে বললাম- "সাভার যাব, কিছু ওষুধ দিতে"
ফোনের ওপ্রান্ত থেকে আমার ড্রাইভার বলে উঠল "রাইয়ান ভাই, আমি আসতেসি, আমি রক্ত দিব"
আমার চোখ মনে হয় আবার ভিজে উঠেছিল - আমি তাকে বললাম "আপাতত আগে আস, আর আমাদের সাভার নিয়া যাও "
নাহ, আমারসাভার যাওয়া হয়নি, আমি রানা ভাই বাড়িতে জেতে পারিনি পুরো ৩ ঘন্টা ঢাকা শহর ঘুরেছি, যদি গার্মেন্টস শ্রমিকের অবরোধের ফাক দিয়ে আমি জেতে পারি। কিন্তু পারি নি, রিতিমত মিছিলের সামনে পড়ে যাবার পর , কোনো মতে আমি আবার উত্তরায় ফিরে আসি।
কিন্তু রানা ভাইয়েরা থেমে যায়নি, ইতিমধ্যে মুন্না ভাই, রাজিন চলে এসেছে। ৪ জনের টিম, ২ গ্রুপ এ ভাগ হয়ে কাজ করা হচ্ছে, আর আমি একটু পর পর ফোনে আপডেট নিচ্ছি। এক দল গেছে অক্সিজেন খুজতে, আরেক দল ওষুধ কিনতে।
শাওন ভাইকে একটু পর পর ফোন দিচ্ছি, " অক্সিজেন পেলেন ", প্রতিবারই না সুচক উত্তর, আরো অস্থির হয়ে যাচ্ছি, মনে হচ্ছিল একটা বড় ড্রামে ভরে বাতাস ফিল্টার করে অক্সিজেন নিয়ে সাভার যাই।
এদিকে শায়খুল আরে রাসেল ভাই রওনা দিয়েছে আশুলিয়ার পথ ধরে, কিন্তু জানতে পারলাম তারাও যেতে পারছে না। , রাস্তা আটকানো।
রানা ভাইকে আবার ফোন দিলাম, রানা ভাই একটাই কথা বললেন "অবস্থা ভয়াবহ".. রানা ভাই এর কাছে আমি নেই, আমি যেন রানা ভাইয়ের চোখ দিয়ে পুরো "রানা প্লাজা" কে দেখতে পাচ্ছি।
শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত রানাভাইয়েরা এনাম মেডিকেলে ওষুধ, খাবার নিয়ে গেছে।
এই গল্প কোন মিথ্যে গল্প নয়, আমি জানি হাজার হাজার রানা, শাওন রাস্তায় বেরিয়ে পরিয়েছে। আমি যে রানার গল্প বললাম উনি কোন ব্লগার না, ওনার ২৪ ঘন্টার মধ্যে ২৫ ঘন্টা কাটে কম্পিউটারের সাথে, যে শাওন কথা বললাম- উনি সারাদিন বাইক চালায়, কিন্তু যে কারো বিপদে তার বাইক যেন হয়ে উঠে চে-গুয়াভারার বাইক। যে রাজিন এর কথা বললাম সদ্য আমেরিকা থেকে ডিগ্রী নিয়ে ফিরে আসা এক যুবক, তারাও মনে দাগ কেটে গেছে এই সাভার, মুন্না ভাই, ছোট্ট টোনাটুনির সংসারে টুনি কে ফেলে দৌড় দিয়েছেন সাভারে। তাদের প্রতি ভালবাসাটা আজ বহুগুনে বেড়ে গেল।
এই গল্প লেখার উদ্দেশ্য তাদের সাথে আপনাদের পরিচয় করিয়ে দেয়া নয়।
উদ্দেশ্য হল আমরা সবাই ইচ্ছে করলেই সবই পারি, সবার মাঝেই দেশপ্রেম নামক জিনিষটা আছে, জাস্ট শুধু একটু ইউনিটি দরকার।
দিতীয়ত, সরকার হয়ত উদ্ধার করেই খালাস হবে, কিন্তু যারা এখন হাসপাতালে আছে তাদের কে আসুন একটু সাহায্য করে তাদের কে সাভাবিক জীবনে ফিরেয়ে নিয়ে যাই।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।