পুরান আমি নব ভাবনায় বিভোর..
অফিসের জন্য রোজকার মতো আজও দেরী হয়ে গেছে । হন্তদন্ত হয়ে বাসা থেকে বেরিয়েই বাসার সামনের রাস্তা কাঁটা । ছোট খাট অনেকগুলো মাটির পাহাড় টিঁলা পেরিয়ে প্রধান সড়কে এসে রিক্সা নিলাম । রিক্সা চলছে । এতোক্ষন তারাহুড়োতে যা দেখিনি তা মুখের কথা কেঁড়ে নিলো ।
- মামা , তাড়া আছে । জলদি চাল...। ।
না , রিক্সাওয়ালার এক পাঁ নেই । একটি পাঁ তাঁর কাঠের তৈরী ।
বিসন্যতায় মন ভরে গেলো । জিজ্ঞেস করলাম
- মামা কিভাবে হলো ??
= একসিডেন্ট করছিলাম । কাম করতে যায়া রংপুরত পাইলিং করতে যায় পাঁ গেছে মামা ।
- এই নকল পাঁ নিয়ে রিক্সা চালাও কেন? এটা তো নকল পাঁ দিয়ে চালানো খুব কষ্টের । তুমি বরং অন্য কোন পেশায় যেতে পার ।
বাড়ি কই তোমার ?
= না মামা । রিক্সা ছাড়া আর যেই কামেই করতে যান টাকা লাগবে । একটা ছূটু দোকান দিতেও তো মামা ১০টা হাজার টাকা লাগে । কই পাব কন ?? বাড়ি আমার জলঢাকা, জেলা নীলফামারী । (রিক্সার গতি বাড়িয়ে মুখের ঘাম মুছে সে )
- নাম কি তোমার মামা ? মোবাইল আছে নাকি তোমার , কেমন করে খুজে পাব তোমায় যদি পরে দেখা করতে চাই ।
= নাম আলতাফ হোসেন । মোবাইল নাইতো । যেই গ্যারেজের তন রিক্সা নিছি তার নাম্বার আছে রিক্সার পিছে লেখা আছে ।
তার ছুটন্ত রিক্সায় বসে আমার গোটা দুয়েক পাঁ এর জন্য লজ্জা হয় । রিক্সা থেকে নেমে যেতে মন চায় ।
ধ্যাঁত মন খারাপ দিয়ে সকালটা শুরু হলো । জীবন আলতাফকে কি দিয়েছে জানি না কিন্তু জীবনের সংজ্ঞা তার কাছে ভিন্ন । আমার ছুটে চলা সময়ে একটু হলেও স্থবির করে দিলো ।
ইস , আলতাফ যদি ১০হাজার টাকা দিয়ে একটা চাইয়ের দোকান দিতে পারতো । আমি যদি সাহায্য করতে পারতাম ।
পরক্ষনেই নিজের মানিব্যাগের দন্যদশার কথা ভেবে দুর্ভীক্ষের কথা মনে পড়ে যায় । বিধাতা অনেকেই অনেক কিছু দিয়েছে । অনেকের হয়তো প্রতিদিনের পকেট খরচ ১০হাজারের বেশী যা দিয়ে পঙ্গু আলতাফের জীবনের সমীকরন বদলে দেয়া সম্ভব ।
তাঁর নকল পায়ে রিক্সার প্যাডেল আমাদের নকল মুখোশ পড়া সমাজকে ব্যাঙ্গ করে কিছু বলছে কিনা আমি জানি না । আমার ভিজিটিং কার্ডটা তে মোবাইল নাম্বারটা দেখিয়ে আর আজকের লাঞ্চের ১০০টাকা তাঁর হাতে ধরিয়ে দিয়ে বললাম
- মামা , রবি সোম বারে ফোন দিও ।
আমি জানি রবি সোম নয় কোন বারেই আমি তাঁকে ১০হাজার টাকা দিতে পারব না ।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।