আমাদের বাড়ির পাশেই বড় বাজার। বাজার সহ প্রায় পুরো এলাকা টাই ছোট্ট একটা নদীর পাড়ে গড়ে উঠেছে। আমরা বন্ধুরা মিলে প্রায় প্রতিদিনই বিকাল বেলা নদীর ধারে বড়শি দিয়ে মাছ ধরতাম আথবা সময় কাটানোর জন্য ঘুরা ফেরা করতাম। মাঝে মাঝে একা একাও যেতাম।
আমাদের এলাকায় স্কুল, কলেজ, মসজিদ, মাদ্রাসা, এতীমখানা এসবের অভাব নাই।
বাজারের দক্ষিণ প্রান্তে নদীর পাড় এর কাছাকাছি একটা মসজিদ+ এতীমখানা +মাদ্রাসা টাইপ একটা প্রতিষ্ঠান অনেক আগে থেকেই প্রতিষ্ঠিত।
একদিন আমি বিকাল বেলা নদীর ধারে বড়শি হাতে নিয়ে হাটতেছি। হঠাৎ দেখি পাঞ্জাবী পড়া একটা ছোট্ট ছেলে নদীর দিকে মুখ করে বসে আছে।
তখন প্রায় সন্ধ্যা হতে চলেছে। তাই ছেলেটাকে পিছন থেকে ডাকলাম।
কিন্তু কোন সারা পেলাম না। আমি একটু অবাক হলাম। আমি ছেলেটার কাছে গেলাম এবং সামনে গিয়ে দাঁড়ালাম। দেখি ছেলেটা নিঃশব্দে কাদছে! ছেলেটির দুই কচি গাল বেয়ে অঝোরে চোখের জল ঝরে চলেছে!
আমি একটু অপ্রস্তুত হয়ে পড়লাম। এভাবে এখানে বসে ছেলেটির কান্নার কোন মানে খুঁজে পাচ্ছিলাম না।
যাইহোক, আমি বললাম তুমি এভাবে এখানে বসে কাদতেছ কেন? ছেলেটি কোন জবাব দিলনা। আমি আবার বললাম, কি ব্যাপার কি হয়েছে, তুমি থাক কোথায়, এভাবে কাদতেছ কেন? সন্ধ্যা হইছে বাড়ি চলে যাও।
তখন ছেলেটি বলল, আমি ওই মাদ্রাসায় পড়ি। আজ ফজরের নামাজের সময় আমি ঘুম থেকে উঠতে পারিনি। তাই আমাকে মেরেছে! এই বলে ছেলেটা তার পাঞ্জাবী উপর দিকে তুলে ওর পীঠ (শরীর) দেখাল।
আমিতো দেখে হতবম্ব!
বাচ্চারা যত অপরাধই করুক,একটা মানুষ কখনোই এইভাবে কোন বাচ্চা ছেলের গায়ে হাত তুলতে পারবেনা! ছেলেটির সারাটা পীঠ জুড়ে রক্তাক্ত কাটা কাটা কালচে দাগ গুলো ফুলে উঠেছে!!! ছেলেটিকে পিশাচ হুজুর বাঁশের কাঁচা কঞ্চি দিয়ে ওর পীঠে ক্রমাগত আঘাত করেছে!!
আমি কি করবো বুজতে পারছিলাম না। ছেলেটি সারাদিন বাইরে ঘুরে বেড়িয়েছে। সারাদিন কিছুই খায়নি। ছেলেটার জন্য খুব খারাপ লাগতেছে। আমি বললাম এখন কি করবে, মাদ্রাসায় ফিরে যাবে? ছেলে কোন কথা বলেনা।
একটু পর বলল আমি বাড়ি যাবো। কিন্তু আমার কাছে ভারার টাকা নাই। তখন সন্ধ্যা পাড় হয়ে রাত হবে হবে ভাব।
আমি ছেলেটিকে বাসায় নিয়ে আসলাম। আম্মাকে সব বললাম।
আম্মা খুব যত্ন করে ছেলেটিকে ভাত খাওয়াল। আমি ছেলেটির জন্য কিছু বেথার ট্যাবলেট কিনলাম। এরপর ছেলেটিকে অইদিন রাতেই ওর বাড়ি দিয়ে আসলাম। ছেলের বাবা দরিদ্র, তাই এতিমখানায় পড়তে দিছিল। কিন্তু ছেলের অবস্থা দেখে কান্নায় ভেঙ্গে পড়লো।
সে আর তার ছেলে কে মাদ্রাসায় দেয়নি।
আমাদের মাদ্রাসার হুজুররা ছাত্রদের সামান্য তম অপরাধে শুধু শারীরিক ভাবে নির্যাতন করেই সন্তুষ্ট নয়। তারা এতিমখানার এইসব কোমলমতি শিশুদের নিয়ে নানা অপকর্মে লিপ্ত হয়। ছোট ছোট ছেলে দের সাথে দাস এর মত আচরন করে। এইসব বাচ্চাদের দিয়ে তাদের মেদ বহুল শরীর ম্যাসেজ করায়, মাথা টিপায়, পা টিপায়, কূপ থেকে অথবা টিউব অয়েল থেকে তাদের গোসলের পানি তুলায়।
যেন এই বাচ্চা গুলো তার বাজার থেকে কিনে আনা দাস!!!
আমি জানি, মাদ্রাসার মত স্কুলেও এরকম অপ্রত্যাশিত ঘটনা মাঝে মাঝে ঘটে। কিন্তু সেটা খুবি কম। কিন্তু কিছু হুজুর আছে যাদের জন্য এইটা নিত্যদিনের স্বাভাবিক ঘটনা। পান থেকে চুন খসলেই তারা বাচ্চা ছেলে গুলোর উপর যা খুশি অত্যাচার করে নিজকে একজন বীর মনে করে।
আমি এটাও খুব ভালো করেই জানি, সব মাদ্রাসার হুজুর এক রকম না।
কিন্তু খুব কম সংখ্যক হুজুরই আছে যারা এইরকম না!!! ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।