আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

কিভাবে সহজ উপায়ে আস্ত একটা সিনেমা বানিয়ে ফেলা যায়

আমরা ছবি বানাই..। । কোন জিনিসই কঠিন নয় যদি আপনার passion থাকে। তবে সব পথই দুর্গম। কথাটা হয়তো একটু বিতর্কিত হয়ে গেলো।

তারপরেও বলছি, আপনি চাইলে বিনা পয়সায় সিনেমা বানাতে পারবেন। সেটাই এখানে শিখাবো আমি। এই পোস্টে কোন প্রকার তাত্ত্বিক কথা-বার্তায় যাবোনা। আমি আর আপনি মিলে সরাসরি সিনেমা নির্মান করে ফেলবো। আসুন তবে আর দেরী করা উচিত হবেনা।

=> সিনেমা বানাতে হলে কি লাগে? ক। দৃষ্টিভঙ্গী (সিনেমা বানাতে হলে এইটা লাগেনা। ভালো সিনেমা বানাইতে গেলে লাগে) খ। গল্প গ। ক্যামেরা ঘ।

অভিনেতা ঙ। কম্পিউটার ভিশন বা দৃষ্টিভঙ্গীর ব্যাপারটা নিয়ে অনেক কথা বলতে হয়। কিন্তু সেসব আজকে নয়। একটা গল্প দাঁড় করিয়ে ফেলুন। যেকোন কিছুই হতে পারে আপনার গল্পের মাল-মশলা।

যে কোন কিছু বলেতো যে কোন কিছু। গল্প তৈরী হয়ে গেলে সেটাকে ফ্রেমবন্দী করতে গেলে লাগবে ক্যামেরা। ক্যামেরার সামনে গল্পটাকে উপস্থাপন করতে হলে লাগবে অভিনেতা। আর শ্যুট করা উল্টো-পাল্টা গল্পটাকে সাজিয়ে দাড় করানোর জন্য চাই একটি কম্পিউটার। এবার আসুন একটু বিস্তারির আলোচনা করি।

-> গল্প নির্বাচন চাই ভালো গল্প। আপনাকে গল্প নির্বাচন করতে হবে। গল্প হলো একটি সিনেমার প্রান। প্রান নিয়ে কোন কম্প্রোমাইজ করবেন না। তারপর, আপনাকে গল্প নিয়ে ভাবতে হবে।

গল্পের আগা-মাথা পুরোটা মাথায় নিয়ে এমন ভাবে সাজাতে হবে যেনো চোখ বন্ধ করলেই আপনি আপনার গল্পটাকে সিনেমাকারে দেখতে পান। এবার সেটা কাগজে লিখে ফেলুন। এবার কাগজের গল্পটাকে আপনার কাছের দু-একজন কে পড়তে দিন। তাদের কাছ থেকে ফিডব্যাক নিন। গল্পটা নিয়ে আলোচনা করুন।

দেখুন কোথাও কোন পরিবর্তন করার প্রয়োজন হয় কিনা। প্রয়োজন হলে পরিবর্তন করুন। কিন্তু ভুলেও আপনার চিন্তা-ভাবনার উপর যেনো কারো প্রভাব না পারে। -> পেপার ওয়ার্ক পেপার ওয়ার্ক কথাটা যত সহজ মনে হচ্ছে আসলে তত সহজ না। মেলা হাবিজাবি আছে।

বলা হয়, আপনি মুভি কতটা ভালো ভাবে নির্মান করতে পারবেন সেটা নির্ভর করবে আপনার পেপার ওয়ার্ক কত ভালো হবে। এক ঝটকায় জেনে নেই পেপার ওয়ার্ক এর মধ্যে কি কি থাকে। ক। Film Concept - আমরা ইতিমধ্যে আমাদের সিনেমার কনসেপ্ট দাড় করিয়ে ফেলেছি। খ।

Writing your script - মাথায় নয়, খাতায়। স্ক্রিপ্ট লিখার কিছু স্ট্যান্ডার্ড ফরম্যাট আছে। সেগুলো আয়ত্ত্ব করতে পারলে ভালো। না পারলে নিজের একটা ফরম্যাট দাড় করে ফেলুন। তবে এমন ভাবে লিখবেন যেনো সবাই বুঝতে পারে।

আমি ডিটেইলস এ যাবো আরেকদিন। গ। Drawing your storyboards -স্টোরীবোর্ড একে যদি আপনার গল্প টাকে কার্টুনের মত খাতায় তুলে ফেলতে পারেন তাহলে ধরে নিতে পারেন শুটিং এর সময় আপনি বিড়ি ফুকে পার করে দিতে পারবেন। বাকী কাজ একদম সহজ করে দেয়। না পারলে নাই।

ঘ। Film Funding - হুম, খুব দামী জিনিস। ফিলিম বানাবেন, টাকা পাবেন কোথায়? শর্ট ফিলিমের জন্য বাংলাদেশে এখনো কোন স্পন্সরশিপ পাওয়া যায়না। সরকার ইন্ডিয়া, যুদ্ধপরাধী আর দেশের শেয়ার বাজার নিয়া এতো ব্যাস্ত থাকে যে ফিলিম নামে যে একটা জিনিস আছে সেটা ভুলেই গেছে। তো, আপনার ফান্ডের জন্য আপনাকে হাত পাততে হবে আপনার পরিবার, দুলাভাই, ভাবী, বন্ধু, বান্ধবী - যার থেকে যেভাবে পারেন।

ঙ। Cast & Crew - ঠিক করে ফেলেন কে অভিনয় করবো আর কে আপনার ব্যাগ টানবো। ক্রু দের একেক জনের একেক নাম। এখন না, পরে কমুনে। মনে করি, আপনার দুই বন্ধু রাজী হয়ে গেলো দুই রুমমেটের ভুমিকায় অভিনয় করার জন্য চ।

Location, Location, Location - একটা চমৎকার লোকেশন আপনার সিনেমার পুরা ডাইমেনশন ঘুরায়া দিবার পারে। সুন্দর লোকেশন মানে কক্সবাজার না। আপনার বন্ধুর ছাদ ও হতে পারে চমৎকার লোকেশন। ছ। Shooting Script - শুটিং এর জন্য স্ক্রিপ্ট আছে আলাদা।

আগের স্ক্রিপ্ট হলো জেনেরাল যেটা অভিনেতাদের কাছেও যাবে। এই স্ক্রিপ্ট থাকবে শুধু ডিরেক্টর আর তার ফার্স্ট এসিস্টেন্ট এর কাছে। আপাতত এটা স্কিপ করে যাই আমরা। পরে এটা নিয়ে বিস্তারিত বলবো। জ।

Scheduling - বন্ধু বান্ধব অভিনয় করলে তো শিডিউল নিয়া খুব বেশী ঝামেলা হয়না, তারপরেও তাদের ক্লাস বা অফিস টাইমের কথা মাথায় রাখা লাগে। আরো আছে লোকেশন ব্যাবহার করার সময়। মনে করুন, এলাকার স্কুল টা ব্যাবহার করবেন। কিন্তু হেডস্যার সময় দিলো শুধু মাত্র টিফিন টাইম, তাহলে আপনাকে কিন্তু ওই সময়ে শুধু মাত্র ওই সম্পর্কিত শট গুলোই নেয়া লাগবে আগে। তো, শিডিওলিং বা স্কেজিউলিং টা করে ফেলুন।

কোথায় করবেন? অবশ্যই মাথায় নয়। ঝ। Equipment - এবার লিস্ট করে ফেলুন কি কি লাগবে। কি কি আছে। ক্যামেরা, সাউন্ড, আলো প্রক্ষেপনকারি - এসবই লাগবে আপনার শট অনুযায়ী।

আমি আগে ভাবতাম শুটিং খুব মজার জিনিস। আসলে শুটিং খুব পেইনফুল একটা জিনিস। শুটিং এর সময় আপনাকে আসলে একজন ম্যানেজার এর ভুমিকায় অভিনয় করতে হবে। সবাইকে ম্যানেজ করতে হবে। অভিনেতাদের শট বুঝিয়ে দিতে হবে, ক্যামেরাম্যান কে শট বুঝিয়ে দিতে হবে।

ফার্স্ট এসিস্টেন্ট কে কাজ বুঝিয়ে দিতে হবে। তো, আপনি কতটা বুঝেছেন সেটার উপর নির্ভর করে কতটা বুঝাতে পারবেন। এই জন্য পেপারওয়ার্ক টা জরুরী। যাইহোক, বিস্তারিত পরে। আগে আমাদের স্টোরী নিয়া আগাইতে থাকি।

শুটিং এর দিন আমাদের লাগবে একটা ক্যামেরা। ক্যামেরা ভাড়া পাওয়া যায়। ১৫০০ থেকে ৭০০০ টাকায় টিভি নাটকে ব্যাবহার হয় এমন ক্যামেরা ভাড়া পাওয়া যায়। কিন্তু আপনার টাকা নাই। তো, আপনি কি করবেন? আপনার কাছে কি dSLR আছে? নাই।

আপনার বন্ধুর কাছে বা এমন কারো কাছে যে চাইলে দিবে? নাই? ওকে। আপনার কি হ্যান্ডি ক্যাম আছে বা আপনার পরিচিত কারো কাছে? তাও নাই? নো প্রব্লেম। আপনার কাছে নিশ্চয়ই ডিজিটাল ক্যামেরা আছে, অথবা আপনার পরিচিত কারো কাছে? তাও নাই? কি বলেন? আপনার মোবাইলটা ক্যামেরাওয়ালা তো? হ্যাঁ, ক্যামেরা আছে!! গুড। আর কি চাই আপনার? তবে যে ক্যামেরাই ব্যাবহার করেন না কেনো, ব্যাবহার করার সময় কাপাবেন না। পারলে ট্রাইপড ব্যাবহার করুন।

না পারলে শট নেয়ার সময় ক্যামেরা রাখুন কোন টেবিলের উপর বা বই এর উপর। হাতে নিয়ে (হ্যান্ডহেল্ড) শুটিং করলে কাপবে। আর কাপাকাপি খুব বাজে জিনিস। তবে আপনি যদি এমন কোন শট নেন যার জন্য কাঁপাকাঁপি টা দরকার (ধরুন, হরর মুভি তে) তাহলে হ্যান্ডহেল্ড করতে পারেন। সাইন্ড হলো একটা সিনেমার অর্ধেক।

পিকচার খারাপ হলেও আমরা সিনেমা দেখি কিন্তু সাউন্ড খারাপ হলে আমরা সিনেমা দেখিনা। আর ভালো সাউন্ড টেক করতে হলে আপনাকে কিছু খরচ করতে হবে। কিন্তু ভিন্ন উপায় ও আছে। ভালো একটা হেডফোন জোগার করুন। তারপর শুটিং শেষে হেডফোন দিয়ে সাউন্ড ফর্জ জাতীয়ে সফটওয়ার ব্যাবহার করে পিসিতে সাউন্ড রেকর্ড করুন ।

মানে, আপনাকে ডাবিং করতে হবে আর কি। কাজটা একটু সময় সাপেক্ষ। এই জন্য যতটুকু পারা যায় ডায়ালগ কম রাখা উচিত। লাইট আপনার শটের ডাইমেনশন তৈরী করতে সাহায্য করবে। ভালোভাবে লাইট প্রক্ষেপন আপনার সিনেমার চেহারা ঘুরিয়ে দিতে পারে।

বাড়িয়ে দিতে পারে আপনার গল্পের আবেদন। চরিত্র কে ফুটিয়ে তুলার ক্ষেত্রে লাইট খুবই গুরুত্বপুর্ন ভুমিকা পালন করে। সিনেমায় লাইট একটা বিশাল এরিয়া। এটা নিয়ে আলোচনা করতে গেলে অনেক সময় নিবে। আমার নিজের ও ভালো জানা নেই।

তবে, কিছু টিপস দেই। ১... স্ক্রিপ্টে রাতের সিকোয়েন্স কম রাখবেন। দিনের আলো অনেক শক্তিশালী। অবশ্য চাই ভালো মতো ব্যাবহার করার ক্ষমতা। ২... ধরুন, একটা সিকোয়েন্স রাতেই নিতে হবে।

দিনের বেলা নিলে হবেনা। আমরা যেটা করতে পারি সেটা হলো, এই রকম রাতের সিকোয়েন্স গুলো দিনের বেলাই শুট করতে পারি। তারপর এডিটিং টুলস এ নিয়ে গিয়ে রাত বানিয়ে দিতে পারি। সেটা আপনাদের শিখিয়ে দিবো পরে। আপাতত আমরা অই সিকোয়েন্স টা দিনের আলোয় করবো।

কারন, রাতের বেলা শুট করলে যদি পর্যাপ্ত আলো সবরাহ করতে না পারেন তাহলে ভিডিও নয়েজ আসবে। মানে, আপনার স্ক্রিন জুড়ে ঝিরঝির আসবে। তাই দিনের বেলা শুট করবেন এই ঝির ঝির থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য। ৩... দিনের আলোটাকে ঠিক মত ব্যাবহার করুন। মনে রাখবেন, বেশী আলো মানেই ভালো কিছু না।

আলোকে নিয়ন্ত্রন করতে হবে। আলো যদি প্রয়োজনের তুলনায় বেশী হয় তাহলে আপনার ভিডিও ফ্যাকাশে আসবে। কম হলে অন্ধকার আসবে। আপনাকে কি করতে হবে? এক্সপেরিমেন্ট করতে হবে। আপনাকে হাতে কলমে শিখতে হবে।

এটাকে বলে - ট্রায়াল ও এরর। জানালার পর্দা আর ঘরের দরজা বার বার এদিক অদিক করে আপনি দেখবেন আপনার ক্যামেরায় কতটুকু আলো পাচ্ছেন। প্রয়োজন হলে আপনার অভিনেতাদের ঘুরিয়ে দিবেন। ৪... রাতের বেলা মোম্বাতির আলো ব্যাবহার করতে পারেন। বা, টেবিল ল্যাম্প।

এ দুটোর কোনটাই সল্যুশন না। তবে কার্যকরি। ৫... ককশিট ব্যবহার করুন। আলো টাকে বাউন্স করতে সুবিধা হবে। ককশিট নাই? তাহলে একেবারে সাদা একটা পেজ কে কোন বোর্ড এ আঠা দিয়ে লাগিয়ে নিন।

তারপর সেটাকে অভিনেতাদের মুখের যতটুকু কাছে নিয়ে যাওয়া যায় ততটুকু নিন। আর কোথাও আলো থাক বা না থাক। অভিনেতাদের মুখে আলো চাই। আলো ছাড়া আর কি আছে? অনেক কিছু। আপনাকে অভিনেতাদের শট বুঝিয়ে দিতে হবে।

আপনার দুই বন্ধু কই? তারা কিছুই জানেনা। তাদের বুঝিয়ে দিতে হবে আপনি কি চান। তারা গল্প শুনে আগ্রহী হলেও শুটিং এর সময় বিরক্ত হবে। স্বাভাবিক, কারন গল্প যেভাবে আগায় শুটিং সেভাবে আগায় না। আগের কাজ পরে হয়, পরের কাজ হয় মধ্যে, আর মধ্যের কাজ হয় আগে।

আপনাকে ভিন্ন ভিন্ন এঙ্গেল থেকে শট নেয়া শিখতে হবে। এঙ্গেল আর শট নেয়ার ব্যাপারে যতটা ক্রিয়েটিভ হবেন ততটা ভালো হবে আপনার কাজ। কিন্তু ব্যাপারটা এমন না যে আপনি সব শট জানেন আর একটা ফিলিমে দেদারছে সব শট ব্যবহার করলেন। তাহলে পরিশেষে কিছুই হবেনা। তাই প্রথম দিকে আমরা সাধারন শট আর এঙ্গেলেই কাজ টা শেষ করে ফেলবো।

এখানে শুধু মাত্র প্রসেস টা নিয়া আলোচনা করতেছি। শুটিং এর সময় আপনাকে ক্যামেরা হ্যন্ডল করতে হবে। আমি ধরে নিচ্ছি আপনি আপনার মোবাইলের ভিডিও চালাইতে পারেন। আমি ধরে নিচ্ছি আপনি আপনার রুম ব্যাবহার করছেন। ধরে নিচ্ছি আপনার টেবিল ল্যাম্প ছাড়া আর কিছু নাই।

ধরে নিচ্ছি আপনার হাতে টাকা পয়সাও নাই। তাই প্রি-প্রোডাকশন বা শুটিং এর আগের কাজ নিয়ে কথা বলেছি, অল্প কিছু টিপস আর শুটিং সম্পর্কিত কিছু আইডিয়া দিলাম। এর পরের পর্বে সরাসরি শুটিং এ চলে যাবো। তখন, এমন কিছু সাব্জেক্ট নিয়ে কথা বলবো যেগুলা আমরা আগে স্কিপ করে এসেছি। যেমন শুটিং লিস্ট বা শট লিস্ট।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.