রাত ২ টার মত বাজে। নন্দিত কথা সাহিত্যিক হুমায়ূন আহমেদ অস্থির ভাবে পায়চারী করছেন। তিনি ঝাপসা দেখছেন। তিনি কাঁদছেন। কারণ- তাঁর কলম দিয়ে একটা শব্দও বের হচ্ছেনা।
লেখকদের নাকি 'Writer's Block' নামক অদ্ভুত এক রোগ হয়। এই রোগটিই হয়েছে হুমায়ূন আহমেদের। আজ ১৩ দিন হয়ে গেল, একটা শব্দও লিখতে পারেননি তিনি। তিনি শঙ্কিত। তাঁর লেখার ক্ষমতা কি কেড়ে নেয়া হয়েছে? তিনি ভাবতে বসেছেন।
কি জন্য এমন হচ্ছে? হ্যাঁ, সঠিক কারণ পাওয়া গেছে। কারণটা হচ্ছে- তিনি ১৪ দিন আগে সিগারেট ছেড়ে দিয়েছেন। তিনি যতবারই সিগারেট ছেড়েছেন ততবারই এমনটি হয়েছে।
হুমায়ূন আহমেদ ছাড়াও অসংখ্য বিখ্যাত ব্যাক্তি সিগারেটের পক্ষে সাফাই গেয়েছেন। জনপ্রিয় উপন্যাসিক সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় বলেছিলেন- "সিগারেটের ধোঁয়ায় আমি আমার উপন্যাসের কাহিনী খুঁজে পাই।
"
বিখ্যাত ডাক্তার সিম্পসন বলেছিলেন- "আমার একটি মাত্র বদভ্যাস আছে; আর তা হল ধূমপান। আমি এতে দোষের কিছু দেখিনা। "
আর পীর বাবা, সাধু বাবাদের আস্তানা গুলোতে সিদ্ধির নাম করে ধূমপানকে মনে করা হয় সৃষ্টিকর্তার পবিত্র নিয়ামত।
এতদিন সিগারেটের তথা ধূমপানের অনেক ক্ষতিকর দিক সম্বন্ধে জেনেছি আমরা। আসুন দেখা যাক ধূমপানের কোন উপকারী দিক আছে কিনা।
-ধূমপায়ীদের মানুষিক চাপ সহ্য করার অসম্ভব রকমের ক্ষমতা থাকে।
-অবিশ্বাস্য হলেও সত্যি যে নিকোটিন "Alzheimer's, Parkinson's and Tourette's syndrome." নামক মারাত্মক রোগ গুলোর মহৌষধ। (http://news.bbc.co.uk/2/hi/health/2994304.stm)
-পাকস্থালীতে এক ধরণের প্রদাহ (ulcerative colitis) ধূমপায়ীদের চেয়ে অধূমপায়ীদের বেশী হয়।
-ধূমপায়ীদের হার্ট অ্যাটাকের সম্ভাবনা থাকে একেবারেই কম।
-ধূমপায়ীদের যেকোনো বিষয়ে concentrate করার ক্ষমতা থাকে অত্যাধিক বেশি।
-ধূমপায়ীদের এন্ডোমেট্রিয়াল ক্যান্সার হওয়ার সম্ভাবনা নেই বললেই চলে। (estrogen-dependent endometrial cancer)
-নিকোটিনের মূল উৎস মনে করা হয় সিগারেট কে। কিন্তু আমরা কি জানি- মরিচ, গাজর, স্ট্রবেরী, টমেটো, পেঁয়াজ এবং আঙুর হচ্ছে নিকোটিনের সবচেয়ে বড় উৎস?
-অল্প ডোজের নিকোটিন (একটি সিগারেটে যে পরিমাণ থাকে) নতুন ব্লাড ভেসেল তৈরিতে সাহায্য করে। যা হার্ট ডিজিস চিকিৎসায় কাজে লাগে (Reuters Health, HealthCentral.com - Sept. 2000)।
কান্সারের মূল কারণ হিসেবে ধূমপানকেই দায়ী করা হয়।
কিন্তু আমরা জানি, ক্যান্সার হচ্ছে অস্বাভাবিক কোষ বিভাজনের ফসল। ফুসফুসের সংখ্যালঘু একটি কোষ কোন কারণে যদি মনে করে যে তার সংখ্যা বৃদ্ধি দরকার তাহলে তার পার্শ্ববর্তী কোষকে বলবে- "দোস্ত আর কতদিন এমন নিগৃহীত থাকবি? চল সংখ্যা বৃদ্ধি করি। " তখন পাশের কোষটি রাজি হোক বা না হোক সে সংখ্যা বৃদ্ধি করবেই। ফলশ্রুতিতে সৃষ্টি হবে ক্যান্সার নামক এক মরন ব্যাধির। সারা পৃথিবীতে লক্ষ-লক্ষ অধূমপায়ী ক্যান্সারে মারা যাচ্ছে।
এতেই কি প্রমাণিত হয়না যে ধূমপানই কান্সারের মূল কারণ নয়?
ধূমপানের যেমন ভাল দিক আছে তেমনি খারাপ দিকও কিন্তু অনেক আছে। যার ভাল দিক আছে তার খারাপ দিক থাকবেনা এমনটি তো কখনো হয়না তাইনা? ধূমপানের কারনেই ক্যান্সার, ব্রঙ্কাইটিস, এমফাইসিমা সহ নানা ধরণের খারাপ-খারাপ অসুখ হয়ে থাকে আমাদের।
এই লেখার দ্বারা কাউকে ধূমপানে স্টিমুলেট বা ইনহিবিট করা হয়নি। সমস্ত ভাল দিক, খারাপ দিক বিবেচনা করে আপনারাই সিদ্ধান্ত নিবেন- ধূমপান করবেন নাকি করবেন না। ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।