লিখতে ভালোবাসি যাস্ট প্যাশন হোক পেশার চালিকাশক্তি
অনেককে গর্বের সঙ্গে বলতে শুনি, আমি পেশা আর প্যাশনকে (মানুষ যা করতে ভালোবাসে) এক করে দেখি না। ডাক্তারি-ইঞ্জিনিয়ারিং বা আইন পেশায় নিযুক্ত রয়েছি আয়-উপার্জন নিশ্চিত করতে। এটি আমার পেশা; তবে ভালোবাসি গান গাইতে। কিন্তু এ দিয়ে তো আর পেট চলে না। প্যাশন ও পেশাকে এক করে দেখাও ঠিক নয়।
পেশা সহজেই ‘দূষিত’ করে ফেলতে পারে প্যাশনকে।
বাফেট বিশ্বাস করেন এর সম্পূর্ণ বিপরীতটি। তার মতে, পেশা নির্বাচন করতে গিয়ে কেউ কেউ আত্মাকে ধ্বংসের পথে ঠেলে দেয়; তেতো কাজটিই বেছে নেয় উপার্জনের উপায় হিসেবে। তারা এও জানে না, নিজের মতো করে জীবননির্বাহ করতে আসলে কী পরিমাণ অর্থ প্রয়োজন। কেউ কেউ আবার নামডাকওয়ালা পেশায় যুক্ত হতে চায় বায়োডাটার ওজন বাড়াতে।
এমন ব্যক্তিরা বছরের পর বছর দৈনিক ৯-১০ ঘণ্টা করে মেধা-পরিশ্রম অপব্যয় করে পেশায়। স্বপ্ন দেখতে থাকে— আর কয়টা দিন? হাতে কিছু পয়সা-কড়ি জমুক। ছেড়েই দেব এ পেশা। এরপর মন যা চায়, তা-ই করব। কিন্তু সমস্যা হলো, ‘হাতে যথেষ্ট টাকা-পয়সা থাকবে’— এমন দিন আর আসে না।
শেষ বয়সে গিয়ে উপলব্ধি হয়, মূর্খের মতো নিজের জীবন নিজেই ধ্বংস করেছি আমি। আত্মাকে কষ্ট দেয়ায় এরা থাকে ভেতরে ভেতরে ক্ষুব্ধ; যার বহিঃপ্রকাশ মাঝে মধ্যে ঘটতে দেখা যায় স্বজন ও বন্ধুবান্ধবের ওপর। কারও কারও অবশ্য আগে থেকে পরিকল্পনা থাকে না। এদের অনেকে যোগদানের পর কাজটি ভালোবাসতে শেখে। কেউ কেউ ভালোবাসার অভিনয়ও দেখায়।
সেটি যা হোক, যারা অপছন্দনীয় কাজকে পেশা হিসেবে নেয়, তারা আসলে ওই ব্যক্তির মতো— যারা তরুণ বয়সে মনে মনে চায় ঘোড়ায় চড়তে। চড়ে না ‘কাজের সময়’ নষ্ট হবে ভেবে। তার মনোবাঞ্ছা হলো, অবসর নেয়ার পর হাতে প্রচুর সময় থাকবে; তখন চড়ব। অবসরে যাওয়ার পর সে ঘোড়ায় চড়ে ঠিকই। কিন্তু চড়াটা উপভোগ করতে পারে না বয়সের কারণে।
প্রক্রিয়াটি শুরু হয় শৈশব থেকে। বাবা-মা চান সন্তানকে ডাক্তার-ইঞ্জিনিয়ার-আইনজীবী বানাতে। এটি হলো প্রথম প্রভাবক। ‘অর্থবিত্ত’ সম্পর্কে ধারণা জন্মানোর পর সন্তানরাও ছুটতে থাকে প্যাশনকে পাশে রেখে, কোথায় ‘পয়সা-কড়ি’ বেশি— সেদিকে। বলছি না, সবাই পয়সা কামানোর উদ্দেশেই এ ধরনের পেশা বেছে নেয়।
অনেকেই এসব পেশায় আসে শুধু মনের তাগিদ থেকে। সেটি ব্যতিক্রম ও প্রশংসনীয়। অধিকাংশ মানুষ ঝলমলে পেশা বেছে নেয় অর্থের লোভে পড়ে।
বাফেট বিশ্বাস করেন, এভাবে আত্মার চাহিদা পায়ে দলে হয়রান হয়ে অর্থের পেছনে ছোটাটা জীবনের চরম অব্যবস্থাপনা। সাধারণত এ ধরনের মানুষ উন্নতির চূড়ায় পৌঁছতে পারে না।
প্যাশন ও পেশাকে আলাদা রাখতে গিয়ে অনেক সময় পা হড়কে পড়ে যায় খাদেও। ব্যবসায় কথাটা হাড়ে হাড়ে সত্য। এমন একজন অতিসফল ব্যবসায়ীকে দেখান তো, যার পেশাটা প্যাশন নয়? আসলে যে কাজের প্রতি ভালোবাসা নেই, তাতে সফল হওয়া কঠিন। আর বেশির ভাগ মানুষই বুঝে উঠতে পারে না, সফলতার চালিকাশক্তি কোনটি— অর্থবিত্ত, না কাজের প্রতি ভালোবাসা? বড় মিউজিশিয়ান বা খেলোয়াড়ের জীবনী পড়ুন— এটি পরিষ্কার হয়ে উঠবে। সফল কম্পিউটার প্রোগ্রামার, সেলস এক্সিকিউটিভ, কাঠমিস্ত্রি, রাজমিস্ত্রি, নার্স, পুলিশ, ডাক্তার, আইনজীবী, বাবুর্চি— সবার ক্ষেত্রেই এটি কমবেশি প্রযোজ্য।
সবচেয়ে মজার হলো, প্যাশনকে পেশা হিসেবে বেছে নেয়া ব্যক্তিদের বুদ্ধিবৃত্তিক ঘাটতি না থাকলে সিংহভাগ ক্ষেত্রে এরা আর্থিকভাবে সফল হন অন্যদের চেয়ে।
এ তো গেল চাকরিপ্রার্থীর কথা। যখন চাকরিদাতা হবেন? কোন ধরনের ব্যক্তিদের নেবেন ম্যানেজার বা অন্যান্য পদে? বাফেট বলেন, খুঁজুন কারা তাদের প্যাশনকে পেশা হিসেবে নিয়েছে। এমন ব্যক্তিরা কাজে গর্বানুভব করে। ফলে দায়িত্ব দেয়া হলে সেটি তারা পালন করে সর্বোচ্চ আন্তরিকতার সঙ্গে।
একসময় ওই ব্যক্তি হয়ে যায় ব্যবসারই চালিকাশক্তি। তাদের সংস্পর্শে অনুপ্রাণিত হয় সহকর্মীরা। বাফেটের এত উচ্চতায় ওঠার পেছনে বড় শক্তি ছিল এটি। তার ব্যক্তিগত দর্শন হলো— লাইফ ম্যানেজমেন্টে মন যা চাইবে, সেটিকেই বেছে নাও পেশা হিসেবে। আর বিজনেস ম্যানেজমেন্টের বড় কৌশল হলো, এমন ব্যক্তিদেরই কোম্পানিতে যুক্ত করা।
মেরি বাফেট ও ডেভিড ক্লার্কের বই থেকে সংক্ষেপে ভাষান্তর জায়েদ ইবনে আবুল ফজল
লেখাটি এই ওয়েব সাইট থেকে সংগ্রহিত ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।