সাইফ আমার বিশ্ব বিদ্যালযের কাছের বন্ধুদের মধ্যে একজন। হঠাৎ করেই একদিন ফোন দিলাম খোজ খবর নেয়ার জন্য, ফোন দিলাম অনেক বিষয়ে কথাও হলো এর মধ্যে কথার মাঝে বললো ১৮ অক্টোবর রাতে ও আর শিমুল নিশান শ্রীমঙ্গল যাবে, কালেন্ডারের দিকে তাকিয়ে দেখি আজ ১৫তারিখ। কি জানি মনে হলো বলে ফেললাম আমিও যাবো, মনটা একটু খারাপই হয়ে গেলো শিমুল আর আমি একসাথে থাকি কিন্তু শিমুল শ্রীমঙ্গল যাবে আমাকে জানালো না, সাইফ জানালো ওরা নাকি ট্রেনে যাবে, ফোনেই কথা পাকাপাকি করে সাইফকে জানালাম আমিও যাবো। ট্রেনের অপেক্ষায়
ঠিক করা হলো আমিও ট্র্রেনে যাবো। এবার প্রস্তুতির পালা শিমুল কে ফোন দিলাম টিকিটের কি করলি ও জানালো ওদের টিকিট আগেই নিশান কেটেছে, এবার আমি পড়লাম বিপদে।
যাবো কিভাবে, ঈদের আগে ট্রেনের টিকিট পাওয়া যাবে কিনা, ভয় হলো। আর পাওয়া গেলেও একসাথে যাবো কিভাবে হয়তো একই ট্রেন হবে কিন্তুু পাশাপাশি সিটেতো আর যাওয়া যাবে না। যাই হোক আমি নিশানকে ফোন দিলাম দেখো তো কোনো টিকিট কাটতে পারো কিনা, ও জানালো আমাকে বিকেলে জানাবে। এদিকে আমার দুলাভাই ট্রেনে জব করে তাকে ফোন দিলাম ভাইয়া একটা টিকিট ম্যানেজ করা যায় কিনা, ভাইয়া জানালো এতো কম সময়ে সিলেটের রাতের টিকেট পাওয়া যাবে না তবুও চেষ্টা করছি, আমার মনটা খারাপ হয়ে আসছে, তাহলে যেতে পারবোনা সময় গড়িয়ে যাচ্ছে আমার টেনশন ততো বাড়ছে, টিকিট কি পাবো এই চিন্তায় ভালোমতো মনযোগ দিয়ে অফিসের কাজও করতে পারছিনা। অপেক্ষায় আছি....
বিকেলে নিশানকে ফোন দিলাম ও জানালো টিকিট পায়নি মনটা একটু বিষাদে আচ্ছন্ন হয়ে পড়লো অনেক দিন পর কোথায় বেড়াতে যেতে চাচ্ছি তা মনে হয় আর হলো না, নিশান বললো রাতে গাড়িতে করে শ্রীমঙ্গল যেতে, কিন্তু আমি যেতে চাচ্ছি ট্রেনে কারন আমি কখনই এর আগে ট্রেনে লং জার্নি করি নাই, যাই হোক অফিস শেষ করে রাতে বাসায় গেলাম।
রাত ৯.৩০ দিকে দুলাভাই ফোন দিয়ে জানালো টিকিট পাওয়া গেছে সাথে সাথে বলে ফেললাম কেটে রাখুন আমি পরে এসে আপনার কাছ থেকে নিয়ে নেবো। ওহ কি যে শান্তি পেলাম, মাথা থেকে বিরাট একটা বোঝা নেমে গেলো, মনটা কেমন ফুরফুরে লাগছে, স্বপ্ন দেখা শুরু হয়ে গেলো। কি আর করা না হয় একটু বসেই থাকি
কি কি করবো মাথার মধ্যে আইডিয়া গিজ গিজ করতে থাকলো, কি কি করে আনন্দ পাওয়া যায় সেই সব চিন্তুা মাথায় ঘুরতে শুরু করছে। যাই হোক পরের দিন সকালে শ্রী মঙ্গল নিয়ে পড়াশুনা শুরু করলাম, ইন্টারনেটে সার্চ দিয়ে অনেক তথ্য সংগ্রহ করলাম কি কি স্পট আছে, কিভাবে সেখানে যাওয়া যায়, কোথায় কোথায় থাকা যাবে এ নিয়ে বিশাল ১২ পৃষ্টার এম এস ওয়ার্ড ফাইল তৈরী করে ফেললাম, নিশানকে ফোন দিয়ে ওর ইমেইল এড্রেস নিয়ে ওকে মেইল করলাম। আমার মাঝে বিশাল ভ্রমন ইচ্ছুক মন প্রস্তুত হয়ে আছে এখন শুধু হাটার পালা কিন্তু সময় এখনো অনেক বাকি।
ফোনে কি বলছে শিমুল কে জানে আমি জানি না
১৮ তারিখ আমরা সবাই এয়ারপোর্ট রেল ষ্টেশনে হাজির। রাতে ট্রেন। উপবন নাম, ট্রেনের ছাড়বে ১০.২০। এদিকে আমি তো মহা খুশি কারন এক সাথে সিট না পড়লেও একই বগিতে আমাদের সিট। অপেক্ষা করছি তো করছি ট্রেনের খবর নাই।
শিমুল আর নিশান বিড়ি ফুকছে, আমি ঘুরে ঘুরে রেল ষ্টেশন দেখতে লাগলাম।
রাতের বিষন্ন ষ্টেশন...
রাতের রেল ষ্টেশনের একটা সৌন্দর্য আছে, ব্যস্ততার, অপেক্ষার, বাড়ি যাওয়ার, প্রিয়জন ছেড়ে আসার বিভিন্ন ধরনের আবেগ ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে ষ্টেশনের সাথে। আলো আধারের সাথে লম্বা ষ্টেশনের কেমন জানি মন ভোলানে আকর্ষন আছে। কতো মুখ সবার মাঝে আলাদা আলাদা অনুভুতি। ধুর থেকে ট্রেনের সার্চ লাইটের মাঝে একাকী থাকার বিষন্নতা আছে, নিজে পথ দেখিয়ে নিয়ে যায় কিন্তু তাকে দেখার কেউ নেই, কথা বলার নেই।
আমার কাছে সমান্তরাল রাস্তাটাকে এতো ভালো লাগে, জানি না কেনো এই অনুভুতি, মনে হয় নির্ভেজাল বন্ধনে দুটি প্রান একসাথে চলে গেছে দুর থেকে দুরে। তবে এদের মাঝে দুঃখও আছে একসাথে এতোটা পথ পাশাপাশি চলে কিন্তু কোন দিন মিলন হয় না, অনন্তকাল দূর থেকে ভালোবাসি যেতে হয়। আহ কি বেদনার বসতি হৃদয়জুড়ে।
আলো আধারের রেল ষ্টেশন
এই আনমনা ভাবার মাঝেই ট্রেন চলে আসে, বগি খুজে উঠে পড়লাম ছ নাম্বার বগিতে সিট নাম্বার ৫২। ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখি ১১.৫।
রাতের ষ্টেশন
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।