রোজার ঈদের পর থেকে খুব দখল গেছে মিতুর। কাজের বুয়াটা যে ঈদের ছুটিতে গেল আর ফেরার নাম নেই, প্রথমে ভেবেছিল চলে আসবে, কিন্তু না আর আসেনি। পরে একে ওকে হাতে পায়ে ধরে কাজের একটা মেয়ে পাওয়া গেল। খুবই ভাল একটা মেয়ে, অল্প কিছুদিনেই ঘরের সব কাজ গুছিয়ে নিয়েছে, ঘরের মূল রান্নাটা মিতুই করে, কাজে এগিয়ে দেয় কলি, বাদবাকি টুকিটাকি কাজগুলো কলি করে ফেলে, কোন একটা কিছু বার বার দেখাতে হয়না, এক দুইবার বললে বা দেখিয়ে দিলে সহজেই ধরে ফেলে। ভালই হল রোশনির মা না এসে, তেমন কোন কাজের ছিলনা, ঘর মুছা আর বাসন কোসন ধোয়াপালা ছাড়া আর কিছু হতনা রোশনির মাকে দিয়ে, অবশ্য বাবুনিকে দেখে রাখতো যত্ন করে।
বাবুনিকে তো কলিও দেখে রাখছে তার ওপর এটা ওটা সবকিছু করছে, সাহেদ এর কাপড়ও আয়রন করানো যাচ্ছে, মাসিক মাইনেটা রোশনির মা'র চাইতে একটু বেশী হলেও কলিকে পেয়ে খুব নিশ্চিন্ত আর খুশিতেই আছে মিতু।
সাহেদ, মিতু আর তাদের তের মাসের কন্যা মায়েশা যাকে ওরা আদর করে বাবুনি ও বলে, এই তিন জনের ছোট্ট সংসার। মিতু আর সাহেদ দুজনই চাকরী করে তাই রোশনির মা না আসাতে বিপদেই পড়েছিল তারা। ভাগ্য ভাল মিতুর বাবার বাড়ী মিতুদের কাছেই, সকালে বাবুনিকে নানির কাছে রেখেই ওরা অফিসে যেত আর সন্ধ্যায় ফেরার পথে মিতু নিয়ে আসত। শাহেদ একটু লেইট করে বাড়ী ফেরে, ও আছে একটা গার্মেন্টস এ প্রোডাকশান ম্যানেজার, আর মিতু একটা সিমেন্ট কোম্পানীর হেড অফিসে একাউন্টস অফিসার হিসেবে।
রাতে মাথার চুল আঁচড়াতে আঁচড়াতে মিতু শাহেদকে বলছিল বাবুনির গায়ের রংটা কেমনজানি হয়ে যাচ্ছে, একটু কালচে ফেকাসে মনে হচ্ছে।
শাহেদ জিঞ্জাস করে "ওর খাওয়া দাওয়া হচ্ছেতো ঠিক মতো? আমরাতো সারাদিন অফিসে থাকি, কলি কি পারছে ওকে সামলাতে?
সবকিছুইতো ঠিকই আছে মনে হচ্ছে তবে বাবুনির ফেইসটা কেমনজানি মনে হচ্ছে
ডাক্তার দেখাবো? কি বল? আমারতো এমাসে শিপমেন্ট আছে, খুবই বিজি থাকছি, তোমার কি সময় হবে? পারলে একটু আরলি এসে ওকে ডাক্তার দেখিয়ে আসোনা
হুম দেখি, কাল হাফ অফিস করে ছুটি নিয়ে চলে আসব।
দুপুরে ছুটি নিয়ে অফিস থেকে বের হল মিতু, আজ খুব গরম পড়ছে, কি জানি দুপুরে তো তেমন বের হওয়া হয়না তাই ওর একটু বেশীই গরম লাগছে হয়তো, রিকশার হুক টেনে দিয়েছে তবুও সেতসেতে ঘামের একটা অস্বস্থি লাগছে মিতুর। বাসার একটু আগেই মেইন রোডের সেই ছোট্ট জ্যামে রিকশার গতি একটু কমে আসতেই বিস্ময়ে তাকায় মিতু। বাবুনিকে নিয়ে কলি রাস্তায়, জ্যামে পড়া প্রাইভেট কার টেক্সির নামিয়ে দেয়া কাঁচের জানালার ফাঁকে হাত বাড়িয়ে ভিক্ষা করা হচ্ছে.... ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।