আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

এমরান হাশমি এবং জান্নাত ২ (২০১২)

যতটা প্রত্যাশা নিয়ে জান্নাত ২ দেখলাম প্রাপ্তি ততটা নেই। মূধারার বলিউড এখনো গ্যাংস্টার , স্মাগলিং , নারী এসব প্রচলিত থিম থেকে বেরুতে পারেনি। জান্নাত ২ এর প্রচারণা দেখে মনে হয়েছিল এটি হয়ত জান্নাতের সিকুয়েল হবে; আদতে এটি সিকুয়েল নয় , সম্পূর্ণ একটি ভিন্ন ছবি। মিলের মধ্যে ছিল একমাত্র এমরান হাশমি আর জান্নাতের হিট গান "জারাসে আপনা...'' এর মিউজিককে অবহ সংগীতক হিসেবে পুরো ছবি জুড়ে ব্যবহার। কাহিনীতে কোন নতুনত্ব নেই।

সেই পুরানো চোর- পুলিশ খেলা। তবে উপস্থাপনটা ভালো। সম্প্রতি বলিউডে যে কয়জন নায়ক এসেই বাজিমাত করেছেন এমরান হাশমি তাদের অন্যতম। স্ট্রেইট ফরোয়ার্ড অভিনয় এবং আবেগঘন দৃশ্যে সাহসী অভিনয় তাকে দ্রুত স্পটলাইটে নিয়ে আসে। তার এ বিশেষ ধরণের দৃশ্যে অভিনয়ের পারদর্শিতাকে পূঁজি করে পরিচালক/ প্রযোজকরা তার সিডিউল পাওয়ার জন্য লাইন ধরত।

বেশ কয়েকটা একই ঘরাণার ছবি করার পর তিনি মনোযোগ দেন চরিত্রে ভ্যারিয়েশন আনার। মূলত রাজ ২ ছবিতে একজন পরাবাস্তবে নিমজ্জমান চিত্রশিল্পীর ভূমিকায় অভিনয়ের মাধ্যমেই তিনি তার পরিচিত বৃত্ত থেকে বেরিয়ে আসার প্রয়াস পান। এর পর সাম্প্রতিক আলোচিত সামলোচিত দি ডার্টি পিকচারে সত্তর দশকের একজন উদীয়মান দক্ষিনী চিত্রপরিচালকের ভূমিকায় পর্দায় স্বল্প উপস্থিতি যেকোন চরিত্র চিত্রণে তার সক্ষমতার প্রমান দেয়। জান্নাত ২ মুক্তি পাওয়ার আগে বলা হয়েছিল ছবিটিতে এমরান হাশমিকে ভিন্নরূপে দেখা যাবে। ভেবেছিলাম গভীরতা আছে এধরণের কোন চরিত্রে অভিনয় করেছেন।

ছবি দেখতে বসে সব অনুমান কেমন জানি মিথ্যা হচ্ছিল। ছবির প্রেক্ষাপট পুরাতন দিল্লীর নিম্নবিত্ত পরিবারের দায়ে পড়ে অবৈধ অস্ত্র চোরাকারবারী বনে যাওয়া এক এতিম তরুণের টিকে থাকার সংগ্রাম। এর পর হিন্দী সিনেমায় যা হয়, চোর-পুলিশ- এজেন্টদের ইদুর-বিড়াল খেলা। কিছু কিছু ব্যাপার বলিউড এখনো বাদ দিতে পারেনি। ব্যাপার গুলো হল বিশেষ একটি ধর্মের মানুষদেরকে গ্যাংস্টার দের সর্দার হিসেবে দেখানো।

আজব লাগে ভারতে কি এই ২০১২ সালেও এই বিশেষ ধর্মের মানুষেরা কাঁধে হাজী রূমাল ঝুলিয়ে চোখে গাঢ় সুরমা লাগিয়ে কাঁচা বাজারে যায়? যেহেতু এই ছবির কাহিনি বা ছবি সংশ্লিষ্ট বিষয় বাজারি বলিউড থেকে খুব বেশি আলাদা নয়। তাই এই ছবিও অন্যান্য বাজারি বলিউডের সাথে মিশে যাবে। ছবির দুটো চরিত্র । একজন দায়ে পড়ে সরকারী গোয়ান্দাদের হয়ে কাজ করা অবৈধ অস্ত্র সরবরাহকারী এমরান হাশমী এবং অন্যজন গোয়েন্দা কর্মকর্তা রণদীপ হোডা। স্ত্রীর খুনের কারণে প্রতিশোধ স্পৃহার অনলে জ্বলতে থাকা মানসিক বিষাদগ্রস্থ গোয়েন্দা অফিসারের ভূমিকায় রণদীপ হোডা তুখোড় অভিনয় করেছেন।

তিনি জান্নাত ২ এর আগে জিসম ২ তেও মূল ভূমিকায় সানি লিওনের বিপরীতে অভিনয় করেছেন। এমরান হাশমিও অনবদ্য অভিনয় করেছেন। সদাসিদে গ্যাংস্টার মিডলম্যানের চরিত্রে পুরোই মিশে গেছেন। এমরান হাশমির চকোলেট বয় হিরো ইমেজ এখানে অনুপস্থিত। সে তুলনায় তাকে অভিনয়ে আরো পোক্ত মনে হয়েছে।

বলিউড তার বাণিজ্যিক ধারা বজায় রাখার জন্যে মূল চরিত্র গুলোর সাথে সহচরিত্র গুলোকেও এমনভাবে উপস্থাপন করে যেন সব শ্রেণীর দর্শক তাদের কোন না কোন প্রতিনিধিরূপী চরিত্রকে পর্দায় দেখে। এখানেও এমরান হাশমীর দোস্ত'র ভূমিকায় অভিনয় করা চরত্রটিকে দেখানো হয় পাড়ার মোড়ে ফুটপাতে পাইরেটেড ভিভিডি বিক্রি করছে আর বলছে ''আসেন দেখেন সালমান, শাহরুখ, আমির...'' সিনেমার ভেতরেও যে সিনেমা সংশ্লিষ্ট বিষয় প্রচার করা যায় তা এখানে দেখলাম। ছবির মূল নায়িকা এশা গুপ্তা। পরিচালক হয়ত চেয়েছিলেন এশাকে দিয়ে ছবিটার গ্ল্যামার বাড়াবেন। তার বেশ কয়েকটি ব্যর্থ প্রচেষ্টাও দেখলাম।

মূলধারার হিন্দি ছবি ফর্মুলাটিক। এখানেও ফর্মূলায় ফেলতে এশাকে আনা হয়। এমরান - এশা জুটি পার্কে, মাঠে - ময়দানে, বনে গান করার সময় দুজনকে মনে হচ্ছিল ভাই-বোন; প্রমিক-প্রেমিকা যুগল নয়। শারীরিক দিক থেকে এশা এমরানের চেয়ে লম্বা চওড়ায় অনেক বেশী জবরদস্ত। হয়ত একারণেই এশার পাশে এমরান কে ছোট ভাই মনে হচ্ছিল।

তবে কিছু ক্ষেত্রে বিশেষ করে গানের সিংগেল শট গুলোয় এশাকে দারুণ গ্ল্যামারাস লেগেছে। হিন্দি সিনেমায় নায়ক নায়িকার প্রথম সাক্ষাতে প্রেম এবং প্রমে ফিদা হয়ে যাওয়ার ব্যাপারটা এখানে আরো নাটকীয় ভাবে দেখানো হয়েছে। আধুনিক মনস্ক সরকারী হাসপাতালের ডাক্তার হয়ে কিভাবে একজন ভবঘুরে সন্ত্রাসীর প্রেমে পড়তে পারে সেটা বুঝে ওঠা কঠিন। এবছর এধরণের কাহিনী নিয়ে অনেক হিন্দী ছবি মুক্তি পেয়েছে। গানের লোকেশন, সেট, পোষাক ইত্যাদি দেখে মনে হয়েছে ছবিটি বেশি বাজেটে নির্মিত হয়নি।

তবে সময় কাটবে এবং এনটারটেইনিং মুভি হিসেবে খারাপ না। পরিচালক: কুনাল দেশমুখ। কাস্ট: এমরান হাশমি, এশা গুপ্তা, রণদীপ হোডা। দেশ:ভারত ভাষা: হিন্দী রানিং টাইম:২ ঘন্টা ৩০ মিনিট। রিলিজ ডেট: ৩ মে, ২০১২।

 ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।