https://www.facebook.com/tanvir.mh ভৈরবের মধুমিতা সিনেমা হলে “মনের মাঝে তুমি” চলছে। অনেকেই দেখে ফেলেছে। প্রেমিকা বিহীন বন্ধুগুলিও সারাদিন “প্রেমিও ও প্রেমিও” করতেছে পাগলের মত। তাই না দেখে আর থাকা যায়না। ভাগলপুর থেকে ভৈরব যাবো আমাদের নীলমণি এগারসিন্দুরে।
হোস্টেলে দুপুরের খাবার খেতেই খেতেই কানে ট্রেনের আওয়াজ চলে আসলো। কোন রকম ভাবে খাওয়া শেষ হতেই দৌড়। কয়েকজন মিলে ভিড় ঠেলে কোন রকম ভাবে দরজায় দাঁড়ালাম। তার মাঝে এক বয়স্ক লোক বলে উঠলো “মানুষ বেশি হয়ে গেছে এইবার ট্রেন ছাইড়া দেন”।
বয়স্ক লোক ভেবেছিল এ মনে হয় বাসই।
কখনও ছাদে কখনও ফার্স্ট ক্লাসে বসে আমাদের চলাফেরা। টিটি টিকেট চাইলে মুখের উপর বলে দেই “বাপে এত কষ্ট করে টাকা কামায় আপনারে দেয়ার জন্য? যান ভাগেন। ”
একবার ট্রেনের টিটির সাথে কথা কাটাকাটি হয়ে যাওয়ায় অরুন ভাই বললো নামার সময় খাবারের বগি থেকে কয়েকটা প্রানের বোতল নিয়ে নেমে যাবি।
“ভাই এইটা চুরি হয়ে যায়না?”
“হ চুরি, আমি কি কইছি নাকি ভালা এইটা কাম। ?”
কয়েকজন মিলে তাই করলাম।
নিজেদের ব্রিটিশ আন্দোলনের সিপাহী মনে হচ্ছিল। এই রকম ভাব যে এই মাত্র তাদের ট্রেন লুট করলাম।
মুলত ২ পাশের দরজার যেকোনো একটা খোলা থাকে কিন্তু একদিন রাতে ২ দরজাই লাগানো। দরজার বাইরে এক লোক ট্রেনে উঠার চেষ্টা করে যাচ্ছে মাথার উপর কি একটা নিয়ে। রাতের বেলা আবছা আলোয় তা বুঝা ও যাচ্ছেনা।
আমরা কয়েকজন মিলে খোলার চেষ্টা করে খুললাম। ধমক দিয়ে বললাম চলতি অবস্থায় কেউ এভাবে দরজায় পা দেয়?
কি করমু পানিতো বেচতে হবে।
না মাম পানির বোতল না তখন ট্রেনের ভেতরে কলসি দিয়ে পানি সরবরাহ করে নামমাত্র মূল্যে বিক্রি করতো।
মানুষ বলে প্রিয়তমার জন্য অপেক্ষা নাকি বড় অপেক্ষা। এই কথা যে বলে তাকে ২ ঘণ্টা রেলস্টেশানে বসিয়ে দিলেই বুঝবে ট্রেনের জন্য অপেক্ষা দুনিয়ার সব থেকে ভয়াবহ অপেক্ষার নাম।
“১২ স্টেশানের রেলগাড়িটা” গানের থেকেও দুর্বিষহ সে অপেক্ষা।
খুব ছোটবেলায় নানা বাড়ি যাওয়ার একমাত্র বাহন তখন এগারসিন্দুরই। কিন্তু ট্রেনের দরজার সিঁড়িটা আমার কাছে ভয়াবহ লাগতো বলে সব সময় মায়ের কোলে করে উঠতে হত। একদিন মা ভিড়ের মাঝে আমাকে জানালা দিয়েই পাস করে দিলেন ট্রেনের ভেতরে। সেদিন আমার বুক কেপেছিল।
তারপর থেকে নিজের পা দিয়েই সব সময় উঠি।
কলেজে ভর্তি হলাম। নিয়মিত টিকেট কেটে ঢাকা যাই। ঢাকা পর্যন্ত ভাড়া মাত্র ৪০ টাকা। ভাড়া কত জানতে পারলাম বড় হয়ে।
কত টাকা পায় এই এগারসিন্দুর আমার কাছে তার হিসাব না চাইলেই হয়। কিন্তু বিমানবন্দর রেলস্টেশান নেমে যখন সিএনজি নেই তখন ভাড়া চায় ১০০ টাকা। থাপ্পড় লাগাইয়া কইতে মন চায় “কিশোরগঞ্জ থেকে আইসা পরলাম ৪০ টাকা দিয়ে আর তুমি এয়ারপোর্ট থেকে ক্যান্টনমেন্ট ১০০ টাকা চাও”?
তখন মিস করতে লাগলাম প্রিয় এগারসিন্দুর কে। এই ঢাকায় যদি ট্রেনটা থাকতো।
কলেজ শেষ হতে এখন ভার্সিটিও শেষ পর্যায়ে।
এগারসিন্দুর আগের মতই আছে। আমরা পরিবর্তন হয়ে গেছি। সব কিছু দ্রুত করার জন্য আবেগ কে ঠেলে দিয়ে দ্রুতগামী কোন গাড়িতেই উঠতে হয় এখন।
কিন্তু চোখে যখনই এগারসিন্দুর পরে তখনই খুব খারাপ লাগে। ২০ টাকা রিকশা ভাড়া না দিয়ে কত রাত স্টেশানে ট্রেনের জন্য কাটিয়ে দিলাম আমরা।
কুয়াশার মাঝে ট্রেনের ইঞ্জিন আসতেছে রাতের বেলা আমি আর আমার স্কুলের ফ্রেন্ডরা চা খেয়ে যাচ্চি গ্রামের এক রেলস্টেশানে। চা একদম শেষ করে দৌড়ে ট্রেনে উঠে দরজায় কোন রকম ভাবে দাড়িয়ে থাকতে পারলেই হয় আমাদের। দরজার ছোট ২ হাত জায়গায় মাঝে মাঝে পেপার বিছিয়ে বসে পরতাম। হা অনেকদিন হয়ে গেলো,দিন না বছর হয়ে গেলো; দরজায় বসে আর গাওয়া হয়না “পাগলা হাওয়ার তরে............”।
তানভীর মাহমুদুল হাসান
২৫/১০/২০১২
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।