আমি সত্য জানতে চাই
সার্বজনীন শারদীয় দুর্গোৎসব জমে উঠেছে। সারাদেশে সৃষ্টি হয়েছে উৎসবমুখর পরিবেশ। পূজারি, ভক্ত ও দর্শনার্থীর ভিড়ে জমজমাট হয়ে উঠেছে মণ্ডপ-মন্দিরগুলো। পূজার তৃতীয় দিনে মহাষ্টমীতে অনুষ্ঠিত হয় কুমারী পূজা। এদিনের প্রধান আকর্ষণই থাকে কুমারী পূজা।
হিন্দু ধর্মমতে কুমারী পূজা মাতৃরূপে ইশ্বরেরই একটি আরাধনা। এর মূলভাব যেখানে নারীরা পূজিত হন সেখানে দেবতার প্রসন্ন। যেখানে নারীরা সম্মান পান না, সেখানে সব কাজই নিষ্ফল। কুমারীরা শুদ্ধতার প্রতীক হওয়ায় মাতৃরূপে ঈশ্বরের আরাধনার জন্য কুমারী কন্যাকে নির্বাচন করা হয়। সাধারণত অষ্টমী বা নবমীতে কুমারী পূজা করা হয়।
কাকতালীয়ভাবে আজ জাতীয় কন্যাশিশু দিবস। হিন্দু শাস্ত্রে ১ থেকে ১৬ বছর বয়সী অজাতপুষ্পবালাকে কুমারী বলা হয়। তবে কুমারী পূজার জন্য সাধারণত ৫ থেকে ৭ বছরের কুমারীকন্যাকে মনোনীত করা হয়। যাদের মাঝে কামভাবের উদয় হয়না।
কিন্তু অত্যন্ত পরিতাপের বিষয় সমাজের কিছু নরপশু এই সকল নাবালিকা ও নিস্পাপ কন্যাশিশুদের বলাৎকার করে, যৌন নির্যাতন চালিয়ে এদেরকে স্বাভাবিক বেড়ে ওঠাকে অংকুরে বিনষ্ট করে।
মানুষ গড়ার কারিগর নামের অমানুষগুলো এই সকল কুমারীদের বয়ে বেড়াতে বাধ্য করে কলঙ্কের বোঝা। সম্পতি এক নরপশুর ধর্ষণের শিকার ১১/১২ বছর বয়সী শিশু জন্মদিতে বাধ্য হয়েছে আর একটি শিশুর। যে বয়সে তার হাতে থাকার কথা পুতুল; খেলার কথা কানামাছি ভোঁ ভোঁ। বেণি বেঁধে সখিদের সঙ্গে দল বেঁধে স্কুলে যাওয়ার কথা যে শিশুটির, তার কোলজুড়ে এখন এক নবজাতক। এটি তারই সন্তান!
(কুমারী মাতা ও তার নবজাতক সন্তান)
এক লম্পট পুরুষের লালসার শিকার হয়ে অন্তঃসত্ত্বা হয় সে।
ঘটনাটি ঠাকুরগাঁওয়ের সদর উপজেলার দেওগাঁ চেরাডাঙ্গী গ্রামের। ঠাকুরগাঁও সদর হাসপাতালে গিয়ে দেখা যায়, হাসপাতালের নারী ওয়ার্ডের বারান্দায় শুয়ে আছে মেয়েটি। বুকে জড়িয়ে আছে একটি নবজাতক। হঠাৎ কেঁদে উঠছে নবজাতকটি। সেই কান্না থামাতে না পেরে নিজেই কেঁদে ফেলছে শিশুটি।
এ দৃশ্য দেখে পাশে বসা মেয়েটির মা-ও অঝোরে কাঁদছেন।
পরিমলের কাহিনীতো সবারই জানা। এই নরপশু সারমেয়দের হাত থেকে নিস্কৃতি পাচ্ছেনা নিস্পাপ শিশুরা। তা ছাড়াও কন্যাশিশুদের বিরাট একটা অংশ পরিবারের অসচেতনতা, বাল্যবিবাহ ও সুযোগের অভাবে শিক্ষা জীবন থেকে ঝরে পড়ে। ছেলে শিশুর মতো কন্যাশিশুও যে পরিবার ও জাতির জন্য সমান গুরুত্বপূর্ণ তা আমাদের সকলকে অনুধাবন করতে হবে।
আমাদের দায়িত্ব হবে সরকারের পাশাপাশি পরিবার-সমাজে সবাই মিলে কন্যাশিশুদের সমান সুযোগ ও সুবিধা দিয়ে পরিপূর্ণ মানুষ হিসেবে গড়ে তোলা। কুমারী পূজার ভাবাদর্শ থেকে শিক্ষা নিয়ে কুমারীদের মাতৃজ্ঞানে সম্মানের মাধ্যমে ঈশ্বরের আরাধনা করলে পৃথিবী থেকে নির্বাশিত হবে পরিমল নামের নরপিশাচ। যুগে যুগে কুমারী পূজা পরিমলদের জন্য হয়ে উঠুক প্রতিকী চপেটাঘাত ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।