যে মুখ নিয়ত পালায়......। ।
গ্রামের নাম কাশিপুর।
তর্করত্ন বাড়ি ফিরিতেছিলেন। পথের ধারে গফুর মিয়ার বাড়ির সামনে এসে তিনি হাক দিলেন, ওরে ও গফরা! ঘরে আছিস ?
গফুর মিয়ার বছর দশেকের মেয়ে সাড়া দিল, বাবাকে কেন? বাবার যে জ্বর?
ডেকে দে তাকে!পাষন্ড!
হাঁকে-ডাকে গফুর বেরিয়ে আসে।
তর্করত্ন মুখ গম্ভীর করিয়া বলিলেন, কি গফুর মিয়া! খুব তো গরু পুষছ। এ ফেসবুক গাঁ! জুকারবার্গ জমিদার সে খেয়াল আছে!বলি গরুর ফেসবুকে একাউন্ট খুলেছিস?
কী করব বাবাঠাকুর। বড় লাচারে পড়ে গেছি। ফেসবুক একাউন্ট খুলব মাথা ঘুরে পড়ে যাই। ইন্টারনেটের প্যাকেজ করার পয়সা নেই।
তর্করত্ন রাগিয়া কহিলেন, তাহলে কি করলি এবার যা ভাগে পেলি?সব বেচে পেটায় নমঃ। ছি ছি ছি! আজই তর এই বিষয়ে স্ট্যাটাস দিব।
গফুর কাঁদিয়া উঠিল, না না বাবাঠাকুর। আজই আমি মহেশের নামে ফেসবুক একাউন্ট খুলে ফেলব। আপনি স্ট্যাটাস দিবেন না।
তর্করত্ন হাসিয়া কহিলেন, ইস! সাধ করে আবার নাম রাখা হয়েছে মহেশ। হেসে বাঁচি নে।
আর কথা না বাড়িয়ে তিনি হন হন করে হেটে চলে গেলেন।
পরদিন গফুর পিতলের তালা বন্ধক দিয়ে বংশীর দোকান থেকে কিছু টাকা ধার করে ইন্টারনেট প্যাকেজ পি-ফাইভ করল। তারপর মেয়ের সাথে মিলে ফেসবুকে মহেশের নামে একটা পেজ খুলে ফেলল।
নাম দিল,”মহেশ দ্য হিরো অফ কাশিপুর”। এ কথা জমিদারের কানে যাওয়ায় তিনি গফুর কে ডেকে পাঠালেন।
জমিদার শিববাবু ওরফে জুকারবার্গ বাবু বললেন, গফুর তোকে যে কী শাস্তি দেব ভেবে পাই না। কোথায় বাস করে আছিস জানিস?
গফুর হাতজোড় করে বলল, জনাব আমরা খেতে পাই নে। তবুও কাল ধার করে ফেসবুকে আমার মহেশের নামে পেজ খুলেছি আপনার কথায়।
জমিদার রেগে উঠলেন, ওই ব্যাটা অশিক্ষিত। আমি কি পেজ খুলতে বলেছিলাম। আমি বলেছি একাউন্ট খুলতে। আর তুই কি না পেজ খুলেছিস! ছি ছি! কাশিপুরে শুধু আমার ই ফেসবুকে পেজ থাকবে। আর কারো না।
আমি কাশিপুরের জমিদার। এই পেজ ডিলিট করবি অশিক্ষিতের বাচ্চা।
এমন অপমানে গফুরের মান সম্মানে আঘাত লাগল। ইদানীং সে পেপার পত্রিকা পড়ে অনেক কিছু জানতে পেরেছে। সেও এবার দুর্বাক্য উচ্চারন করিল, মহারাণীর রাজত্বে কেউ কারো গোলাম নয়।
খাজনা দিয়ে বাস করি, টাকা দিয়ে নেট চালাই। আমি পেজ ডিলিট করব না।
সভাস্থলে সবাই গফুরের কথায় স্তব্দ হয়ে পড়ল। গফুর আর ক্ষণকাল অবস্থান না করে বীর ধর্পে হেটে বাড়ি ফিরল।
পরদিন সকালে একটা ট্রাক সহ কিছু লোক আসল গফুরের বাড়ির সামনে।
গফুর বের হতেই তারা জানাল, কাকা!আমরা মহারাণীর দলের ছাত্র সংগঠনের কর্মী। শিক্ষিত। দেশের সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠে পড়ালেখা করি। ফেসবুকে আপনার মহেশ রে আমাদের পছন্দ হইছে। আমরা লাইক দিছি।
এখন এটারে নিয়ে যাবো। আশা করি আপনি কোন বাঁধা দেবেন না।
শিক্ষিত ছাত্র সবার হাতেই ছুরি চাপাতি এবং নাম না জানা কিছু বস্তু দেখেই গফুর বুঝল কথা বলে লাভ নেই। সে নির্বাক দাঁড়িয়ে রইল।
তার সামনে মহারাণীর দেশের এক ছাত্র সংগঠনের কর্মীরা মহেশকে ট্রাকে করে তুলে নিয়ে গেল।
এক দীর্ঘশ্বাস বেরিয়ে আসল গফুরের ভেতর থেকে, মহারাণীর রাজত্বে কেউ কারো গোলাম নয়।
সংযুক্তিঃ
এটি একটি ফান ম্যাগাজিনের জন্য লেখা ফান পোস্ট। এরকম অতীতে লেখা কিছু পোস্টের লিংক-
মিসির আলীর দ্বিতীয় প্রহর
হিমু
হৈমন্তী
ফেলুদা
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।