আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

আহ্লাদে গদগদ (লেঃ জেনারেল হারুনের জামিন ও দুম্বার হাড্ডি চুষার গল্প)

প্রথমেই বলে নেই আমি কোন আইনজ্ঞ অথবা আইনের ছাত্র নই। তাই আমার লেখা নিশ্চিতভাবে কোন দলকানা আইনজীবিদের প্রতিনিধিত্ব করে না। আইনগত দিক থেকে শতভাগ শুদ্ধ হবার বাধ্যবাধকতাও আমার নাই। বরং বলা যায় আমি সেসব আমজনতাদের (Mango people যার এক প্রজাতির patent আবার ভারতের দখলে চলে গেছে ) একজন যাদের চোখের সামনে দেশকে রসাতলে চলে যেতে দেখা, মাঝে মাঝে এসব নিয়ে চায়ের কাপে ঝড় তোলা এবং পা্ঁচ বছর পর পর নৌকা আর ধানের শীষে সিল মারা ছাড়া আর কিছু করার নেই। আজকাল একটা গান খুবই মনে পরে- আমার করার কিছু ছিল না, নাগো, চেয়ে চেয়ে দেখলাম ......... যেভাবে দিন গড়াচ্ছে কদিন পরে আমাদের জাতীয় সঙ্গীত এ জাতীয় কিছু হয়ে গেলে অবাক হবার কিছু থাকবে না।

ঘটনা শুরু করার আগে আসুন নীচের সংবাদটাতে একবার চোখ বুলিয়ে নেই- শর্ত সাপেক্ষে দুই মাসের জামিন পেলেন জেনারেল হারুন ডেসটিনি গ্রুপের প্রেসিডেন্ট লে. জেনারেল (অব.) হারুন-অর-রশিদ দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) দায়ের করা অবৈধভাবে অর্থ হস্তান্তরের দুই মামলায় শর্ত সাপেক্ষে দুই মাসের জামিন পেয়েছেন। হারুন-অর-রশিদের স্বাস্থ্যগত সমস্যার বিষয়ে চিকিৎসকের প্রতিবেদন এবং তাঁর সামাজিক অবস্থান বিবেচনায় নিয়ে গতকাল বৃহস্পতিবার হাইকোর্ট এ আদেশ দেন। বিচারপতি এ এইচ এম শামসুদ্দিন চৌধুরী ও বিচারপতি ফরিদ আহমদের বেঞ্চ জামিনের জন্য যেসব শর্ত দিয়েছেন, তার মধ্যে রয়েছে: জামিনে থাকার সময় হারুন তদন্তকাজে কোনো ধরনের প্রভাব বিস্তার করতে পারবেন না; আদালতের অনুমতি ছাড়া দেশ ত্যাগ করতে পারবেন না এবং জিজ্ঞাসাবাদের প্রয়োজনে তদন্ত কর্মকর্তা যখন ডাকবেন, তখন তাঁকে সহায়তা করতে হবে। শর্তে আরও বলা হয়েছে, তদন্ত চলার সময় হারুন-অর-রশিদ ডেসটিনির কোনো কর্মকর্তা-কর্মচারী বা মামলার অন্য কোনো আসামির সঙ্গে ফোনে বা সরাসরি যোগাযোগ করতে পারবেন না; ডেসটিনি বা আটক ব্যক্তিদের পক্ষে কোনো বিবৃতি দিতে বা তদবির করতে পারবেন না; ডেসটিনি কার্যালয়ে যেতে পারবেন না। এসব শর্ত ভঙ্গ করলে নিম্ন আদালত তাঁর জামিন বাতিল করতে পারবেন।

View this link এবার আসা যাক সংবাদ বিশ্লেষণে। জেনারেল সাহেবের চল্লিশ বছরের Left, Right, Attention, আরামে দাড়াও, সোজা হও মার্কা Rambo শরীরে ধরা পরার সাথে সাথে কি কি রোগ ঢুকে পরল সেটা নিয়ে মানবিক কারনে প্রশ্ন না তুললেও আমাদের কারা-হাসপাতালের ডাক্তার আসলে কারা এটা নিয়ে প্রশ্নতো তোলাই যায়। কারণ দেশের সংবিধান অনুসারে আইন যেহেতু সবার জন্য সমান (অন্তত কাগজে কলমে) তাই অন্য দশটা সাধারন কয়েদিদের মতো জেনারেল সাহেবের চিকিৎসায় তারা কি কারণে অক্ষম হলেন আমার ক্ষুদ্র জ্ঞানে ঠিক ধরতে পারলাম না। আর তার জন্য যদি সত্যিই কোন বিশেষায়িত চিকিৎসার প্রয়োজন হয় তাহলে পুলিশ প্রহরায় সেই ব্যবস্হাতো পিজি হাসপাতালেই সম্ভব। এবার আসি আরো বড় কমেডিতে।

স্বাস্থ্যগত সমস্যার বিষয়ে চিকিৎসকের প্রতিবেদন ছাড়াও তাকে জামিন দেয়ার পেছনে তাঁর সামাজিক অবস্থানও বিবেচনায় নিয়েছেন মহামান্য আদালত। হায়রে দেশ। এই দেশে চোর ডাকাতেরও সামাজিক অবস্হান। বিচার শেষ হবার আগ পর্যন্ত কাউকে নাকি দোষী বলতে নেই। তাই জেনারেল সাহেবদের সবকিছু প্রমাণ না হওয়া পর্যন্ত কিছু বলা যাবে না।

বরং আইনের ফাক ফোকড় গলিয়ে যত ধরনের সুরক্ষা দেয়া যায় তার ব্যবস্হা করা হবে। কিন্ত এখানে লিমন আর কাদেররা থাকলে খেলা হতো অন্যরকম। তাদের জন্য জামিন আর চিকিৎসার কথা বলা হলে এই আইনজ্ঞরাই জিভে কামড় দিয়ে রক্তারক্তি কান্ড ঘটিয়ে ফেলে। মনে আছে ছোটবেলায় যখন বাংলা ব্যাকরণ পড়তাম শব্দ গঠনের অনেক নিয়ম কানুন ছিল এবং সবকিছুরই একটা ব্যাখ্যা ছিল। কিন্ত যখনই কোন ব্যাখ্যা পাওয়া যেত না বলা হতো এটা হচ্ছে নিপাতনে সিদ্ধ অর্থাৎ এর কোন ব্যাখ্যা নেই।

দুঃখ লাগে যখন চোখের সামনে লিমন, কাদেরের মতো নিরাপরাধীদের আইনের মার প্যাচে নির্যাতিত হতে দেখি কিন্ত বিভিন্ন রাজনৈতিক নেতা নেত্রী আর তানভীর, রফিকুল আমিন, শাহ আলমদের ক্ষেত্রে এইসব আইন কানুনগুলো কেমন যেন নিপাতনে সিদ্ধ হয়ে যায়। বিচারকদ্বয়ের মধ্যে একজনের নামে দেখলাম চৌধুরী আছে। তাই সামাজিক অবস্হানে জামিন দেয়ার প্রেক্ষিতে আমি নিশ্চিত কাঠগোড়ায় দাড়ানোর পর জেনারেল সাহেব শারীরিক সমস্যার কথা ভুলে গিয়ে বাংলা ফিল্মের মান্না সাকিবদের মতো চিৎকার করে উঠেছিলেন - "চৌধুরী সাহেব, আমি চোর হতে পারি কিন্ত একজন জেনারেল এবং মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার হিসাবে আমারও একটা সামাজিক অবস্হান আছে। " এছাড়া আর তার সামাজিক অবস্হান বিবেচনায় জামিনে মুক্তি লাভের ব্যাখ্যা কি? ঘটনা এখানে শেষ হলেও চলত। কমেডির পরের অংশ দেখুন।

জামিনের শর্তে বলা হয়েছে জামিনে থাকার সময় হারুন তদন্তকাজে কোনো ধরনের প্রভাব বিস্তার করতে পারবেন না; আদালতের অনুমতি ছাড়া দেশ ত্যাগ করতে পারবেন না এবং জিজ্ঞাসাবাদের প্রয়োজনে তদন্ত কর্মকর্তা যখন ডাকবেন, তখন তাঁকে সহায়তা করতে হবে। রফিকুল আমিন এর মতো একটা ধান্দাবাজ লোক ডেসটিনি ব্যবসা বিস্তৃত করার আগে অনেক রকম হিসাব নিকাশ করেই মাঠে নেমেছে বলে আমার বিশ্বাস। কারন বাটপারি করে ধরা পরার সম্ভাবনা এবং একান্তই ধরা পরে গেলে কিভাবে বা কাদের দিয়ে পরিস্হিতি সামাল দেয়া যাবে এরকম একটা পরিকল্পনা ছাড়া এতো বড় জালিয়াতি করার সাহস তার কোন কালেই হতো না। হারুনের ডেসটিনিতে Entry পাবার প্রধানতম কারন নিশ্চিতভাবেই এটা। সেনাবাহিনীর সাবেক লেঃ জেনারেল হওয়াতে হারুনের প্রভাব খাটানোর হাত যে অনেক লম্বা এবং হাজার হাজার কোটি টাকা মেরে দেয়ার জন্য সেই প্রভাব যে সে খাটানোর শতভাগ চেষ্টা চালাবে সেটা কিন্ত আমি ধরে ফেলেছি কারন আমি যে নিউটনের আপেল খাই ।

কিন্ত আপেলে ফরমালিন থাকাতে এতকিছুর পরও কেন জামিনে মু্ক্তি দিয়ে তাকে প্রভাব খাটানোর সুযোগ দেয়া হলো এটা আর বুদ্ধিতে ঠিক কুলাচ্ছেনা। : জামিনের শর্তে আরও বলা হয়েছে তদন্ত চলার সময় হারুন-অর-রশিদ ডেসটিনির কোনো কর্মকর্তা-কর্মচারী বা মামলার অন্য কোনো আসামির সঙ্গে ফোনে বা সরাসরি যোগাযোগ করতে পারবেন না; ডেসটিনি বা আটক ব্যক্তিদের পক্ষে কোনো বিবৃতি দিতে বা তদবির করতে পারবেন না; ডেসটিনি কার্যালয়ে যেতে পারবেন না। বিনুদুনরে বিনুদুন । আমার কেন জানি মনে হয় বিডিআর বিদ্রোহ, রামুর সহিংসতা, ২১শে আগষ্ট বোমা হামলা, আহসানউল্লাহ মাষ্টারসহ অগণিত ঘটনায় যথা সময়ে কর্তৃপক্ষকে অবহিত করার ব্যর্থতাসত্তেও আমাদের ডি জি এফ আই নিজেদের স্কটল্যান্ড ইয়ার্ড এর সমকক্ষ কিছু মনে করে। তাই এই তথ্যপ্রযুক্তির যুগে যেখানে পাড়ার দোকানে মুড়ি পেয়াজুর সাথে মোবাইল সিম বিক্রি হয় সেখানে তারা মনে করে তারা পাহাড়া দিলে হারুন সাহেব কারো সাথে যোগাযোগ করতে পারবে না।

আরে বাবা এতোই যখন বুঝ সে যোগাযোগ করতে পারে তাহলে ছেড়ে দিয়ে গোয়েন্দা বাহিনীরে দিয়ে সারাক্ষণ দেখিনা কি করে, দেখিনা কি করে টাইপের পাহাড়া বসায়ে অর্থ আর শ্রম অপচয়ের মানে কি? তবে হারুনকে জামিন দেবার আগে দুষ্টু বাচ্চাদের মতো যেভাবে এটা ধরবে না, ওটা করবে না করা হলো তার চেয়ে আমার মনে হয় তাকে নিয়ে হজ্জ এ চলে গেলে ভালো হতো। হাজরে আসওয়াদে চুমু খাইয়ে তাকে পবিত্রও বানানো যেত আর পবিত্রভূমিতে ওয়াদা করিয়ে নেয়া যেত - "সোনামণি, তুমি কিন্ত তদন্তে একদম প্রভাব খাটাবে না। ডেসটিনির দুষ্টুদের সাথেও আর মিশবে না। ডেসটিনির সাথে আজকে থেকে তোমার কিন্ত কাট্টি, কাট্টি, কাট্টি। " আর সফরের অংশ হিসাবে হারুন এখান থেকে কিছু ডেসটিনি গাছ নিয়ে সৌদিতে রোপণ করে আসতে পারত।

ফলে খালাফের মৃত্যুর পর বাংলা সৌদি সম্পর্কের মাঝে যে খালের সৃষ্টি হয়েছে তা হয়ত কিছুটা ভরত, আর সৌদি বাদশাহও নিশ্চয়ই খুশি হয়ে গরীব মুসলিম ভাইদের জন্য ঈদের পর বেশি বেশি করে দুম্বার মাংস পাঠাতো। নাহ। বিশাল মিস হয়ে গেল। প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা আসলে কারা? ডে লাইট সেভিং এর উদ্ভট আইডিয়া দিয়ে মানুষরে মোরগ-মুরগির সাথে ঘুম থেকে উঠানোর চেয়ে এইসব আইডিয়া দিলেতো দেশের টোকাই আর কুত্তাগুলা গরীব সরকারী আমলা আর পলিটিশিয়ানদের ফেলে দেয়া দুম্বার হাড্ডি চুষতে পারত। শেষের আগে শুরুর কথা আবার বলি।

বিচার শেষ হবার আগ পর্যন্ত কাউকে নাকি দোষী বলতে নেই। কিন্ত বিভিন্ন গণমাধ্যম আর মিডিয়ার কল্যাণে এসব লোকজন যে চোর ডাকাতের চেয়ে ভালো কিছু নয় এ নিয়ে ডেসটিনির কিছু টাইধারী ছাড়া মনে হয়না দেশের কেউ আর দ্বিমত করবে। তাই পুরা বিচার প্রক্রিয়াটাকেই আমার কাছে মনে হচ্ছে একটা Formalities (যদি ন্যায় বিচার হয়)। দেশের আইন অনুযায়ী একটা প্রক্রিয়ার মাধ্যমে পুরা বিচারকার্য সম্পন্ন করা এবং অপরাধীদের শাস্তি নিশ্চিত করা। তাই সারা দেশের লোকজনের মতো আমিও অধির আগ্রহে অপেক্ষা করছি তাদের কি শাস্তি হয় দেখার জন্য।

কিন্ত মাঝে মাঝে এসব চিন্হিত বাটপারদের প্রতি বিচার বিভাগের এমন আহ্লাদে গদগদ ব্যবহার দেখলে শংকা জাগে - শেষ পর্যন্ত বসে বসে দুম্বার হাড্ডি চুষতে হবে নাতো? ।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।