অতি দক্ষ মিথ্যুক না হলে সত্যবাদিতা উৎকৃষ্ট পন্থা
মানুষের বিশ্বাস অদ্ভুত, অলীক, কোনো বাস্তবতার প্রয়োজন নেই, তথ্যগত প্রমাণের প্রয়োজন নেই, আমরা সবাই ভাবছি তুমি কিছু একটা, তাই তোমাকে সেটা হতেই হবে, সামষ্টিক মানুষের বিশ্বাসের চাপটা সময় সময় দুর্বহ।
আজ কথা হচ্ছিলো তারেকের সাম্ভাব্য মুক্তির তারিখ নিয়ে, আপাতত উপায়ান্তর নেই এই সরকারের, জনগণ মোটেও তাদের উপস্থিতি বরদাস্ত করছে না, তারা অনভিপ্রেত বিবেচিত হচ্ছে, এক কালের প্রতাপশালী মাননীয় ১১জনের গলায় এখন আর বাঘের হুংকার শোনা যাচ্ছে না বরং সেখানে বিড়ালেই মিঁউ মিঁউ স্বর।
নির্বাচন কমিশনারত্রয় অনেক রকম ফাঁপা আশার বেলুন ফুলিয়েছিলেন গত ১৮ মাসে, আমরা এইভাবে সেইভাবে রাজনৈতিক দলের নিবন্ধন চাই, সবাই তাদের নির্ধারিত রোড ম্যাপ ছেড়ে পাশের ভাঙাচোরা রাস্তা ডিঙিয়ে আল ভেঙে এখন কাদার উপর দিয়ে হাঁটছেন, অবশ্যই নির্বাচন হবে, নির্বাচন নিয়ে সংশয় নেই।
যদি রাজনৈতিক দল নির্বাচন করতে না চায় তবে প্রয়োজনে সেনাবাহিনী নামিয়ে নির্বাচন হবে, বন্দুক মাথায় ঠেকিয়েই নির্বাচনে রাজী করবে মইন উ আহমেদ, তারও নির্ধারিত মেয়াদ শেষ, বরং বদান্যতায় নিজের প্রভাব খাটিয়েই তিনি তার অবসর কাল এক বছর পিছিয়ে দিয়েছেন।
এই ১৮ মাসে দেশে দুর্নীতি বন্ধ ছিলো না, একটা দিনের জন্যও বন্ধ ছিলো না, মাননীয় সচিবেরা ঘুষ নিয়েছেন বর্ধিত হারে, তাদের ঝুঁকি নিয়ে ভাবতে হয়েছে, একই সময়ে সামরিক বাহিনীকে ঘুষের বখরা দিতে হয়েছে।
তাদের শক্তি বেশী, তাদের খাঁই বেশী, সুতরাং সাধারণ মানুষের পকেটে চাপ বেড়েছে।
গত ১৮ মাসে সবচেয়ে দুর্নীতিগ্রস্থ প্রতিষ্ঠানটি ছিলো সামরিক বাহিনী, এবং সবচেয়ে দুর্নীতিগ্রস্থ মানুষগুলো সবই সেনা সদস্য।
যে যায় লঙ্কায় সেই হয় রাবন, যার হাতেই ক্ষমতা যায় সেই দুর্নীতিগ্রস্থ হয়, দুর্নীতি নিয়ে হাসান মশহুদ দিন রাত এককরে প্রচারানা চালান, রাস্তার মোড়ে মোড়ে বেতনভুক জরপি কর্মীদের দিয়ে গণসাক্ষর সংগ্রহ করেন, দুর্নীতি বিরোধী মনোভাব গড়তে স্কুলে গিয়ে শপথ পাঠ করান।
মজমায় মজমায় সয়লাব দেশ, সবাই কিছু না কিছু বেচতে চাইছে এই সময়টাতে। সুশীল সমাজ নিয়মিত আইনের শাসন এবং ন্যায়ভিত্তিক রাষ্ট্রের রুপরেখা বেচতে চাইলো, তারা এই তত্ত্বাবধায়ক সরকারের ব্যর্থতার জন্য কিয়দংশে দায়ী।
জ্বি হুজুর স্বভাবের কারণেই তারা এই সরকারের ভুল পদক্ষেপগুলো বিপক্ষে কিছু বলতে পারে নি, তবে অধিকাংশ দায়ই অবশ্য তত্ত্বাবধায়ক সরকারের নিজের। যেখানে কোনো সংসদ নেই, সেখানে দেশের মানুষের কণ্ঠ তুলে ধরবার কোনো প্রতিনিধি নেই রাষ্ট্রের কাছে, এই অবস্থায় সাধারণ মানুষের কথা তুলে ধরতো সংবাদপত্র- তবে সংবাদপত্র নিয়ন্ত্রনের ১০১ ছুতা তৈরি করে মূলত সংবাদমাধ্যমের ক্ষমতাকে অকার্যকর করে রেখেছে তারা।
এই সরকারের বিপক্ষে কিছু লেখা যাবে না, এই সরকারকে হেয় করে কোনো বক্তব্য দেওয়া যাবে না, এমন কোনো প্রতিবেদন প্রকাশ করা যাবে না যা এই সরকারের কর্মতৎপরতাকে বাধগ্রস্থ করে। সংবাদ মাধ্যমে এই সরকারের মাননীয় উপদেষ্টাসমুহ এবং এর পেছনে ছায়া হয়ে স্থির সামরিক বাহিনীকে নিয়ে কোনো কটাক্ষ, ব্যঙ্গ কিংবা স্যাটায়র ছাপা যাবে না- তাদের ভুলের সমালোচনা করা যাবে না-
প্রভাবশালী সংবাদমাধ্যমগুলো এই অলিখিত নীতিমালা মেনে নিয়েছে, ব্যতিক্রম একজনই নুরুল কবির, তাকে কোনোভাবেই দমাতে না পেরে অবশেষে নিউ এজের মালিককে আটক করা হয়েছে।
সমালোচনাবিহীন ভুলগুলো সংযুক্ত হতে হতে এমন একটা অবস্থানে এসেছে যখন ব্যবসায়িক স্বার্থে কর্পোরেট সংবাদ প্রকাশনা সংস্থা মূলত সরকারের প্রচারযন্ত্র হিসেবে কাজ করেছে।
বিটিভি যখন সাহেব বিবি গোলামের বাস্ক ছিলো তখন সেটাকে সবাই অপবাদ দিয়েছে, এরপরে সেটা বিবি গোলামের বাস্ক হলো, এরপর এটা বাপবেটি চ্যালাদের বাস্ক হলো, জোট সরকারের আমলে এটা হলো বিবি গোলাম আর দেঁড়েল ছাগলদের লাফালাফি দেখানোর বায়োস্কোপ। সেখানে ১১ই জানুয়ারীর পরে বিটিভি মূলত ১১ সাংবিধানিক উৎপাত আর এক বাইট্যা বুইড়ার তেলেসমাতি দেখানোর বায়োস্কোপ।
বর্তমানে কর্পোরেট সাংবাদিকতার ব্যবসায়িক মনোভাব চরম ভাবে প্রকাশিত, যখন দেশের মানুষ এইসব তেলেসমাতি, হিং টিং ছটকে ঘৃণা করছে তখন এরাই সমালোচনায় আকাশ কাঁপিয়ে ফেলছে, এখন কর্পোরেট মিডিয়া সবচেয়ে বড় তত্ত্বাবধায়ক সংস্কারক। তারা জ্বালাময়ী কলাম প্রকাশ করছে,
সামরিক ব্যটনের ভয়ে যেসব কলমবাজের বীচি এতদিন কপালের টিপ হয়ে ছিলো, তারা সবাই বীচিকে স্বস্থানে স্থাপন করে বিরাট সব বিপ্লবী সেজে বসে আছে। শক্ত মাটিতে বেড়াল হাগে না, তবে মাটি নরম হলে হেগে নষ্ট করে ফেলে, কর্পোরেট চরিত্র প্রকাশিত হওয়ার পর প্রচার সংখ্যার শীর্ষে থাকা সংবাদপত্রগুলোর মন্তব্য আর সম্পদকীয় পাতা এইসব মেকুরের গুয়ে মাখামাখি।
তবে এই ১১ই জানুয়ারীর অভিশাপের পরে সবচেয়ে ন্যক্কারজনক ভুমিকা পালন করেছে নির্বাচিত আপীল বিভাগের বিচারকেরা। অবশ্য আপীল বিভাগ ছেড়ে বাধ্য হয়েই কয়েকজন পদত্যাগ করেছেন, আইনের অবমাননা যখন সহ্য হয় না তখন ব্যক্তিগত কারণ দেখিয়ে পদত্যাগ করাই বাঞ্ছনীয়, এই পদত্যাগী নিরপেক্ষ?? মানুষদের ভেতরে ইসলামীভাবাপন্ন মানুষেরাও আছে। যখন নারী অধিকার নিয়ে একটা জঘন্য পরিস্থিতি তৈরি হলো সে সময়ে আপীল বিভাগের মাননীয় বিচারপতিতে বিভিন্ন বক্তব্য প্রকাশিত হয়েছিলো, সামরিক পদলেহনের এই জঘন্য আচরণের পরেও আশা করা যায় পরবর্তী সময়ে যখন সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতার জন্য কয়েকজন ভবঘুরে সং প্রয়োজন হবে, যখন ১১টা জোকারের প্রয়োজন হবে দেশের তখন এদের নেতৃত্বে থাকবে এইসব পা চাটা কুকুরের দলের এক সদস্য।
বর্তমানে সরকার সমঝোতামূলক ভাবনা ভাবছে, নির্বাচন কমিশন আপোষের সুরে বীনা বাজাচ্ছে, তাই নিবন্ধন শর্ত শিথিল থেকে শিথিলতর করা হচ্ছে, এ কারণেই রাজনৈতিক ব্যবসায়ীদের বিভিন্ন ভাবেই জামিন দেওয়ার বন্দোবস্ত হচ্ছে, ১ বছর আগেই যেখানে জরুরী আইনের গালগল্প চুদিয়ে সামরিক সরকারের সুশীল মুখপত্র ১১ উল্লুক বলেছিলো জরুরী বিধিমালার অন্তর্গত মামলাগুলো জামিন অযোগ্য, সেই মামলাগুলো থেকেই ক্রমশ জামিন পেয়ে বুক ফুলিয়ে বের হয়ে আসছে লালু, ফালু, সালুরা। থুতু মাটিতে ফেলে সেই থুতু চেটে খাওয়ার কদর্য দৃশ্য সচারাচর দেখা যায় না, তবে সংবাদপত্র এবং টিভি সংবাদে নিয়মিত এই কদর্য দৃশ্য প্রচারিত হচ্ছে, জিল্লুর রহমান কিছুটা বিরক্ত হলেও এখনও সেই হাসিমুখ অমলিন, তিনি কিছুটা টেনে টেনে বলছেন আমরাও পরিবর্তন চাই, রাজনৈতিক সংলাপে আমরাও আগ্রহী।
এই আলোচিত রাজনৈতিক সংলাপ নিয়ে কোনো ঝামেলা হতো না যদি ১ বছর আগেই এই শুভবোধ জন্মাতো উজবুকদের। তাহলে হয়তো আমাদের এখন ২ দিনে তারেকের ১১ মামলায় জামিন পাওয়ার দৃশ্য দেখতে হতো না।
তরেকের উপরে নির্যাতন অন্যায় হয়েছে, তবে রাজনৈতিক যোগাযোগ এবং ক্ষমতার কারণে তারেক এবং অন্য সব রাজনৈতিক ব্যবসায়ীরা যেভাবে বিভিন্ন নামী হাসপাতালের কেবিনে অবকাশ যাপন করেছেন তেমন সুযোগ কি সাধারণ মানুষেরা পেয়েছে। এই অন্যায়টুকু মেনে নিতে পারি না আমি। সাংসদ হওয়ার জন্য কারাগারে বিশেষ সুবিধা কিংবা ডিভিশন পাওয়ার যোগ্যতা নেই এইসব অপরাধীদের।
তাদের অপরাধের মাত্রা ডিভিশনের সময় বিবেচিত হয় নি,
আমাদের হাইকোর্টের ক্ষমতাশালী বাগ্মী উকিলদের দেখে লজ্জা লাগে আমার, তারাই অপরাধীকে জামিন দেওয়ার বিভিন্ন আইনি ফাঁকফোঁকর খুঁজে হয়রান এবং রাতের অনুষ্ঠানে তারাই বলছেন দেশটা দুর্নীতির কারণে উচ্ছন্নে গিয়েছে।
যেখানে ৫ হাজার টাকা ঘুষ নেওয়ার জন্য ৩ বছরের সশ্রম কারাদন্ডে দন্ডিত হয় একজন মানুষ, সেখানে কোট টাকা ঘুষ নিয়েও সেনাবাহিনীর মেজরেরা ধরাছোঁয়ার বাইরে, সেখানে মাসুদ মিয়া ৩ মাসে ৫ কোটি টাকা ঘুষ নিয়ে গুরুতর অপরাধ দমন কমিটি থেকে সসম্মানে অপসারিত হয়ে কোনো এক দেশের দুতাবাসের প্রধান কর্মকর্তা হিসেবে চলে যান। তার টিকি কেনো হোগার ফেলে দেওয়া বালও কেউ ছোঁয়ার সাহস দেখালো না, সংবাদ পত্রগুলোতে রিপোর্ট পাঠিয়েও লাভ নেই, সামরিক বাহিনীর সাথে গুরুতর প্রণয়লীলায় মগ্ন কর্পোরেট সংবাদপত্র সম্পাদকেরা এইসব প্রতিবেদন দিয়ে হোগা মুছে ফ্ল্যাশ করে ফেলে দিবেন।
দুর্নীতি কমে নি, বরং আরও বেশী জাঁকিয়ে বসেছে। এক তারেক জামিন পেয়ে বের হয়ে আসাটা তেমন ভয়ংকর ঘটনা না, বরং সবচেয়ে ভয়ংকর হলো তারেক যখন জেলে যায় তখন সে এক ছ্যাচরা অপরাধী, এখন বিএনপি যুবতী দলের অশ্রুতে ধুঁয়ে মুছে গেছে তার ছ্যাঁচরামির ইতিহাস, তার জামিনের খবরে অনেকের আনন্দাশ্রু ঝড়বে, এবং অনেকের অনেক স্থান আবেগে ভিজে যাবে, সেই সব ভিজে যাওয়া মানুষদের কল্যানে একজন অপরাধী শেষ পর্যন্ত নায়ক হয়ে বের হয়ে আসবে কারাগার থেকে।
এই আশংকায় নীল হয়ে থাকা মানুষটাকে কোনো আশাবাদ জানাতে পারলাম না, বললাম তারেকের অবস্থা বিশেষ সুবিধা না, সেরে উঠতে হয়তো বছর দুই লাগবে, তবে সে ফিরে আসবে, এইবার তাকে ঠেকানোর কেউ নেই, কোনো আইন তার কোনো বাল স্পর্শ্ব করতে পারবে না। আমাদের সম্মিলিত পরাজয়ের বেদনায় আমরা অবশ্য মুষড়ে পড়ি নি মোটেও।
অন্তত অচেনা ধর্ষকের কাছ থেকে নিস্কৃতি পেয়ে আমরা চেনা নাগরের হোগা মারা খাবো, এই আনন্দে, আহ্লাদে মেতে আছি সারা দিন। মনটা কেমন উড়ুউড়ু।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।