আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

কেউ ভালো নেই.....নুরুল ইসলাম বিএসসি

গনজাগরনের মাধ্যেমে পরিবর্তন সম্ভব....মানুষের চিন্তার পরিবর্তন করাটা জরুরি ....বুদ্ধিবৃত্তিক পুনরজাগরনে বিশ্বাসী জীবনযুদ্ধে হয়তো হেরে গেলাম। সেই ১৯৫২-৫৯ থেকে জীবনযুদ্ধ শুরু করেছিলাম। জীবনকে পারিপার্শ্বিক অবস্থার সঙ্গে খাপ খাইয়ে আর সামনের দিকে এগিয়ে নেয়া যাচ্ছে না। অনেকে মনে করতে পারেন, আমি নৈরাশ্যবাদী! তাই এ কথাগুলো ভাবছি। কিন্তু আমি কখনও নৈরাশ্যবাদী নই।

এই দীর্ঘ সময়ে সব সময় সামনে আলো দেখেছি। এমনকি অন্ধকারে বসেও আলো দেখেছি। কিন্তু এখন চারদিকে অন্ধকার। বাইরে আলো থাকলে অন্ধকারে বসেও আলো দেখা যায়। কিন্তু ঘরে-বাইরে যখন অন্ধকার, তখন আলোর সন্ধান কই পাব? সেন্ট্রাল ব্যাংকের মুদ্রানীতি, ব্যাংকের ঋণের সুদের উচ্চ হার পৃথিবীর সব দেশকে পেছনে ফেলেছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের নতুন নতুন ফর্মুলায় আগামী দু’চার মাসের মধ্যে শত শত শিল্প-কারখানার মালিক, আমদানিকারক, ব্যবসায়ী, ক্লাসিফাইড হয়ে নিঃস্ব হয়ে যাবে। ব্যাংকগুলো লক্ষ্যমাত্রায় পৌঁছানো তো দূরের কথা, লাভের মুখ দেখাও অসম্ভব হয়ে যাবে। ঋণগ্রহীতাদের লাঠিপেটা করলেও ঋণ শোধ করতে পারবে না। হলমার্কের মতো পৃথিবীর কোন দেশের ব্যাংক ব্যবস্থায় এমন অরাজক পরিস্থিতি নেই। পৃথিবীর অনেক দেশে শিল্প গড়ার জন্য আলাদা ঋণ, নিুহারে সুদের ব্যবস্থা থাকে।

কৃষিতেও অতি অল্প সুদে ঋণের ব্যবস্থা থাকে। কিন্তু আমাদের দেশে যে কৃষি ব্যাংক আছে, তারা কোন কৃষককে কম সুদে ঋণ দিয়েছে বলে আমার জানা নেই। তবে আমাকে কৃষিকাজ করার জন্য কোন ঋণ গত দেড় বছর ঘুরিয়েও দেয়নি। আমার কথার সত্যতা যাচাই করার জন্য কৃষি ব্যাংক আগ্রাবাদ শাখায় তদন্ত করলেই আসল ঘটনা বের হয়ে আসবে। আমরা এরই মধ্যে হলমার্ক কেলেংকারি নিয়ে অনেক কাহিনী শুনেছি।

হলমার্কে ক্ষমতাধর কেউ জড়িত না থাকলে, এমন হওয়ার কথা নয়। প্রত্যেকটি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকেই একই অবস্থা। রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকের অনিয়ম-দুর্নীতি রোধে নতুন নতুন আইন-কানুন বেসরকারি ব্যাংকের ঋণগ্রহীতাদের আহত করছে। যে কারও সঙ্গে কথা বলুন, কেউ ভালো নেই। না ব্যবসায়ী, না শিল্পপতি, না রাজনীতিবিদ।

সামান্য সংখ্যক লোকই ভালো আছেন, যারা ক্ষমতা একচেটিয়া ভোগ করছেন। আবার এদের মধ্যে বেশির ভাগই সরকারের সমর্থক না হয়েও মুখোশ পরে নানা অপকর্ম করে সরকারকে বেকায়দায় ফেলছেন। আরও একশ্রেণীর লোক ভালো আছে। তারা হল ভিক্ষুক আর রিকশাচালক। একজন ভিক্ষুকের আয় দৈনিক ৫০০ টাকা আর রিকশাচালকের দৈনিক ৭০০-৮০০ টাকা।

এদের ঋণ নেই, এদের দায়-দায়িত্বও নেই। সরিষার মধ্যে ভূত আছে। আর এই ভূতের কারণে সরকার বারবার বেকায়দায় পড়ে। গত ৫ বছরে দেশে শিল্প-কারখানা গড়ে ওঠেনি। যেগুলো কোনরকমে ধুঁকে ধুঁকে চলছিল, সেগুলো বন্ধ হচ্ছে।

নেই গ্যাস, নেই বিদ্যুৎ, সর্বোপরি ঋণের ওপর উচ্চহারে সুদ। উচ্চহারে সুদের বোঝা টানতে শিল্প-কারখানার মালিকরা দিশাহারা। শেয়ার মার্কেট নিয়ে যে কাণ্ডকারখানা হয়েছে, তা এখানে উল্লেখ করতে চাই না। কিন্তু ব্যাংক পরিচালকদের শতকরা দুই ভাগ শেয়ার রিটেনিংয়ের আদেশ অনেককে ব্যাংকছাড়া করেছে। আর এসব আদেশ দিতে যারা পরামর্শ দেয় এরাই সরকারে থেকে সরকারকে দাঁড় করাচ্ছে জনতার বিপরীতে।

সরকার মনে করছে, এরা ভালো কাজ করছে। আসলে তা মোটেও সত্য নয়। এরাই সরকারকে বিতর্কিত করছে। সরকার নিজেই বলছে, হলমার্ক কেলেংকারির মূল হোতা বিএনপি ও হাওয়া ভবনের লোক ছিল। প্রশ্ন জাগে, তাদের যারা সাহায্য করেছে এরাও বিএনপির সমর্থক কি-না! বিএনপির সমর্থকদের ভালো জায়গাগুলোতে বসাল কারা? শিল্প-কারখানা না হওয়াতে স্কুল-কলেজ থেকে যারা বের হয়েছে, এদের চাকরির ব্যবস্থাও হয়নি।

শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে এ নিয়ে ছাত্রদের হতাশা দীর্ঘমেয়াদি। বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে বর্তমানে যে অস্থিরতা এটাও তার অন্যতম কারণ। ছাত্ররা ভাবছে, লেখাপড়া তাড়াতাড়ি শেষ করে বের হয়ে লাভ কি? জীবনের কোন দিশাই তো নেই কোন দিকে। তার চেয়ে বরং শিক্ষাজীবন দীর্ঘ করে ছাত্র থাকাই শ্রেয়। মারামারিও করা যাবে, অস্ত্র উঁচিয়ে প্রতিপক্ষকে তাড়া করা যাবে।

কোন বিচারের সম্মুখীন হতে হবে না। পৃথিবীটা একটা সংগ্রামের স্থান। আদি মানুষেরা প্রকৃতির সঙ্গে যুদ্ধ করে টিকে ছিল। আর বর্তমানের মানুষগুলো প্রতিনিয়ত অনিয়ম, দুর্নীতির সঙ্গে সংগ্রাম করছে। প্রকৃতি ও পরিবেশের কথা নাই বা বললাম।

বড় মাছ ছোটদের শিকার করে। বিশ্বেও বড় শক্তি ছোটদের গ্রাস করে। কিন্তু নিজের দেশের নিয়মনীতির কারণে ব্যাংকগুলো যেভাবে শিল্প-কারখানা গ্রাস করছে, দীর্ঘ কষ্টের ফসল ঘরবাড়ি গ্রাস করছে, আগামীতে শিল্প-কারখানা থাকবে কিনা, আল্লাহই জানেন। মৌলবাদীরা একটার পর একটা ঘটনার জš§ দিচ্ছে। রামুতে বৌদ্ধমন্দিরে মানবতাবিরোধী কর্মকাণ্ড ঘটেছে।

প্রকৃত দোষীদের এখনও ধরা সম্ভব হয়নি। যাদের ধরা হয়েছে, এরা চুনোপুঁটি। সব দিকেই হতাশ। কোন দিকে যাবে মানুষগুলো? কর্ণফুলী ড্রেজিং নিয়ে যা হচ্ছে, সরকারি জমি দখল করে ড্রেজিংয়ের মাটি ব্যবহার করে যে ইটের কারখানা গড়ে উঠেছে, চিৎকার করেও কোন লাভ হচ্ছে না। মন্ত্রীর সঙ্গে কথা বললেও মন্ত্রী নীরব।

আগামীতে কি হবে বা কি হতে পারে, বুঝে ওঠা মুশকিল। দেশ এখন ফেরার আকীর্ণ। সব শেয়ালের এক রা, মিথ্যা ভাষণে সত্য ইতিবৃত্ত রচনার চতুর্মুখী প্রয়াস। কিছু শিক্ষিত ব্যক্তি লোভে-লাভে বেহায়াপনার শেষ প্রান্তে এসে চাটুকারি করছে। লজ্জা-শরমের মাথা খেয়ে মোসাহেবী করছেন।

সত্য কথাটির ধারেকাছে না গিয়ে, মিথ্যার বেলুন ফুলিয়ে প্রদর্শন করাতে সত্য জেনে ব্যবস্থা যিনি নিতে পারতেন, তা আর হচ্ছে না। ফলে দিন দিন জটিল হচ্ছে সমস্যাগুলো। ড. আহম্মদ শরীফ বলেছেন, ‘বাঁশি অবশ্যই বাজে। বাঁশি কানের মধ্যেও বাজে, মনের মধ্যেও বাজে। বাইরের বাঁশির ধ্বনি অনেকেই শোনে, কিন্তু ক্বচিৎ কারও মনে তা প্রতিধ্বনিত হয়।

তেমনি বাঁশি যখন কারও মনের মধ্যে বাজে মর্মে সতরঙ্গ তোলে, তখন তা বাইরে কখনও প্রতিধ্বনিত হয় না। তা শোনার, জানার, বোঝার লোক মেলে না। জীবনের এই হচ্ছে ট্রাজেডি। ’ আমাদের ট্রাজেডি হচ্ছে, চারদিকে এত কিছু হচ্ছেÑ শোনার, ব্যবস্থা নেয়ার একজন ছাড়া কেউ নেই। একজন প্রধানমন্ত্রী কত দিক সামাল দেবেন? শেখ হাসিনাবিহীন বাংলাদেশ কল্পনা করা যায় না।

শেখ হাসিনা আছেন বলেই আমরা এখনও ভরসা পাই। নুরুল ইসলাম বিএসসি : সংসদ সদস্য ও কলাম লেখক (যুগান্তর, ১৮/১০/২০১২) Click This Link  ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.