সীমানা পেরোতে চাই, জীবনের গান গাই...
ডক্টর বেদব্রত পাইন। ইন্ডিয়ান ইন্সটিটিউট অফ টেকনোলজির কৃতি ছাত্র। দীর্ঘ ১৫ বছর চাকরি করেছেন মার্কিন মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসা-র সিনিয়র সায়েন্টিস্ট পদে। ৮৭টি গুরুত্বপূর্ণ প্রযুক্তি-উদ্ভাবনের কৃতিত্ব এবং পেটেন্ট রয়েছে তাঁর দখলে। এমন বিদ্বান এবং কৃতি একজন মানুষ সিনেমা বানাবেন বলে চাকরি ছেড়ে দিয়েছেন।
বানিয়েছেন তাঁর ছবিখানা। নাম চিটাগং। ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনের অন্যতম ঘটনা ১৯৩০ সালে বাঙালি যুব গেরিলাদের চট্টগ্রামের অস্ত্রলুটের কাহিনী তাঁর চলচিত্রের উপজীব্য। বাংলার সশস্ত্র আন্দোলনের এই সেলুলয়েড উপাখ্যান ইতিমধ্যেই যথেষ্ট সাড়া ফেলেছে চলচ্চিত্রমহলে৷
ছবির নাম: চিটাগং (২০১২)
পরিচালক: বেদব্রত পাইন
চিত্রগ্রহণ: এরিক জিমারম্যান
সঙ্গীত: শঙ্কর-এহসান-লয়
প্রযোজনা: সুনীল মোহরা
ভাষা: বাংলা, হিন্দি, ইংরেজি
কিন্তু হঠাৎ কেন চট্টগ্রাম যুব বিদ্রোহের কাহিনিকেই বেছে নিলেন।
বেদব্রতের বক্তব্য, দিল্লির এক ঐতিহাসিক বন্ধুর কাছে প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদারের নাম বলতে তিনি পাল্টা প্রশ্ন করেছিলেন, প্রীতিলতা কে? তখনই তাঁর প্রথম মনে হয়, বাঙালি বিপ্লবীদের কথা বলা দরকার৷
দিল্লির ইতিহাসবিদ প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদারকে চিনতে না পারলেও চট্টগ্রামে গিয়ে প্রীতিলতা সম্পর্কে অনেক তথ্য, চট্টগ্রামের সশস্ত্র সংগ্রাম সম্পর্কে প্রত্যক্ষদর্শীদের বিবরণ পেয়ে যান বেদব্রত৷ এবং তাঁর মনে হয়, শুধু ওই লড়াই নয়, মাস্টারদা সূর্য সেনের আদর্শ সম্পর্কেও সারা পৃথিবীর জানা দরকার৷
২০০৮ সালে কলকাতার হাসপাতালে মৃত্যুশয্যায় শুয়ে বিপ্লবী সুবোধ রায় অনেক জরুরি খুঁটিনাটি জানিয়েছিলেন বেদব্রতকে, যা ইতিহাসেরও অজানা ছিল৷ সুবোধ ওরফে ঝুঙ্কু ছিলেন মাস্টারদার শিষ্য, চট্টগ্রামের ধলঘাট সংঘর্ষে মাস্টারদার কিশোর বাহিনির অন্যতম সৈনিক৷ ‘চিটাগং' ছবিতে এই ঝুঙ্কুর চোখ দিয়েই সমস্ত ঘটনা বলেছেন বেদব্রত৷ সেটাও অত্যন্ত আবেগহীন, নাটকীয়তাবর্জিত ভঙ্গীতে৷
এ প্রসঙ্গে বেদব্রতর বক্তব্য, বাঙালিদের মধ্যে, আরও অনেকের মধ্যেই মেলোড্রামা খুব প্রিয়৷ কিন্তু হাউমাউ করে কাঁদলেও অনেক সময় দুঃখটা প্রকাশ করা যায় না৷ চিটাগং এমন একটা গল্প বলে, যেটা একটু শান্ত ভঙ্গিতে বলা উচিত ছিল বলে তাঁর মনে হয়েছে, যাতে বক্তব্যটা মানুষের মনের ভিতর পর্যন্ত যায়৷
গোটা ছবিতেই মূল ইতিহাসের অনুসারী বেদব্রত, একটি ঘটনা বাদে৷ ইতিহাস বলে, সূর্য সেন গ্রেপ্তার হওয়ার পর প্রচণ্ড অত্যাচার করে তাঁকে মেরে ফেলেছিল ব্রিটিশ পুলিশ৷ তাঁর পর তাঁর মৃতদেহকে ফাঁসিতে ঝুলিয়েছিল৷ কিন্তু চিটাগং ছবিতে সূর্য সেন নিজেই এগিয়ে যান ফাঁসির মঞ্চের দিকে৷
মাস্টারদা জানতেন যে ধরা পড়ার পর তাঁর উপর পাশবিক অত্যাচার হবে৷ সেটাই হয়েছিল এবং তিনি মারা গিয়েছিলেন৷ কিন্তু সেই অত্যাচার এবং মৃত্যুবরণ নয়, বেদব্রত বড় করে দেখাতে চেয়েছেন মাস্টারদার আদর্শ এবং লড়াইকে৷ হারের নয়, জয়ের ছবি তুলে ধরতে চেয়েছেন তিনি৷
বেদব্রত পাইনের চিটাগং উসকে দিয়েছে বাঙালির স্বদেশভাবনাকে৷ মনে পড়িয়ে দিয়েছে, ভারতের স্বাধীনতার আন্দোলনে বাঙালির অবদানের কথা৷
তথ্যসূত্র: আনন্দবাজার পত্রিকা, ডয়েচে ভেলে, উইকিপিডিয়া।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।