আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

দেশে বেপরোয়া চোরাচালান সিন্ডিকেট

বেপরোয়া হয়ে উঠেছে চোরাচালান সিন্ডিকেট। প্রতিবেশী ভারত থেকে স্রোতের মতো চোরাইপণ্য আসছে। বাংলাদেশ অভিমুখী এ পণ্যের মূল্য হাজার কোটি টাকার ওপর হবে বলে জানিয়েছেন রাজধানীর বিভিন্ন মার্কেটের দোকানিরা। শাড়ি, থ্রি-পিস, পাঞ্জাবি, স্যান্ডেল, পিস কাপড়, চাদর, ইমিটেশন গয়না, বিভিন্ন ধরনের মসলা ও প্রশাধনী রয়েছে এ তালিকায়। রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন মার্কেটে ইতোমধ্যে এসব পণ্য বিক্রি শুরু হয়ে গেছে।

ব্যবসায়ীরা জানান, আইনশৃ´খলা বাহিনীর চোখে ধুলা দিয়ে, আবার কোথাও কোথাও ‘ম্যানেজ’ করে চোরাকারবারিরা এসব পণ্য ভারত থেকে অবৈধভাবে নিয়ে আসছে। তারা জানান, বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তের অনেক স্থানে কাঁটাতারের বেড়া থাকলেও চোরাইপণ্য পার হওয়ার ক্ষেত্রে কোনো বাধা হচ্ছে না। ভারতীয় পণ্যের কারণে দেশীয় পণ্যের শিল্প মার খাচ্ছে। শিল্প উদ্যোক্তা ও ব্যবসায়ীদের অনেকেই ব্যাংক ঋণ গ্রহণ করে থাকেন। মূলধন তুলে কিছু লাভের মুখ দেখতে এ ঈদ মওসুমকে তারা সাধারণত টার্গেট করে থাকেন।

এ সময় ভারতীয় পণ্যের দাপটে তারা অনেক ক্ষেত্রে লাভ তো দূরের কথা, চালান তুলতে পারেন না। তাদের অভিযোগ, প্রায়ই সীমান্তে বিএসএফের হাতে খুন হচ্ছেন বাংলাদেশীরা। অথচ এ সীমান্তপথ ভারতীয় পণ্য প্রবেশে খুলে দিয়েছে বিএসএফ। এ অবৈধ কাজে আমাদের দেশের এক শ্রেণীর আইনশৃ´খলা বাহিনীর অসৎ সদস্যও জড়িত। এ দিকে চোরাচালান প্রতিরোধ আইন সংশোধনের সিদ্ধান্ত নিয়েছিল সরকার।

সেটা এখনো প্রণয়ন হয়নি। সংশোধিত আইন অনুযায়ী চোরাচালানের সাথে জড়িতদের গ্রেফতারের পর জামিন দেয়া হবে না। তবে প্রচলিত আইনের ফাঁক-ফোকরে গ্রেফতার হওয়ার পরও চোরাকারবারিরা ছাড় পেয়ে যাচ্ছে। সম্প্রতি জাতীয় চোরাচালান প্রতিরোধ কমিটির ৫০তম বৈঠক শেষে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাহারা খাতুন জানিয়েছিলেন, চোরাকারবারি ‘গডফাদারদের’ ধরার চেষ্টা চলছে। বর্তমান সরকারের সময় কতজন গডফাদারকে আটক করা হয়েছে জানতে চাইলে সাহারা খাতুন সাংবাদিকদের বলেছিলেন, এখনই ধরতে চাইলে তা সম্ভব না।

আমরা তাদের ধরার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। আইনশৃ´খলা রাবাহিনীকে তাদের ধরার নির্দেশও দেয়া হয়েছে। এ প্রসঙ্গে মন্ত্রী বলেন, একজন চোরাচালানীকে ধরার পর অন্য একজনের নাম আসে। দ্বিতীয়জনকে ধরার পর আরেক ব্যক্তির নাম বলে। তৃতীয় ব্যক্তিকে ধরার পর আরো একজনের নাম বেড়িয়ে আসে।

গডফাদার ধরার ব্যাপারে কৌশল রয়েছে। বাংলাদেশ-ভারতের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, সচিব এবং বর্ডারগার্ড-বিএসএফের মহাপরিচালক পর্যায়ের নিয়মিত বৈঠকে দুই পক্ষ থেকে বারবার চোরাচালান বন্ধে ঐকমত্য হয়েছে। চোরাচালানসহ অন্যান্য অপরাধ দমনে ইতোমধ্যে সমনি¦ত সীমান্ত ব্যবস্থাপনা চুক্তি স্বারিত হয়েছে। বর্ডারগার্ড অব বাংলাদেশ (বিজিবি)-এর মহাপরিচালক ও ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর (বিএসএফ) মহাপরিচালক নিজ নিজ দেশের পক্ষে এতে স্বাক্ষর করেন। মানবপাচার এবং পণ্য, অস্ত্র ও মাদক চোরাচালানের মতো আন্তঃসীমান্ত অপরাধের বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট সীমান্ত পয়েন্ট থেকে যৌথ সীমান্ত তদারকি চালু করাই এই চুক্তির উদ্দেশ্য।

সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন এর আগে দিল্লিতে দুই দেশের প্রধানমন্ত্রীর মধ্যে বৈঠকে এ ব্যাপারে আলোচনা হলেও কার্যকর ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীদের বৈঠকের পাশাপাশি বাংলাদেশ-ভারত স্বরাষ্ট্র সচিব এবং বিডিআর-বিএসএফ মহাপরিচালক পর্যায়ের সর্বশেষ বৈঠকও অন্যতম আলোচ্য বিষয় ছিল দুই দেশের মধ্যে চোরাচালান দমন। উচ্চপর্যায়ের এসব বৈঠকের পরও চোরাচালান প্রবণতা কমেনি। একজন কর্মকর্তা জানান, বিভিন্ন সূত্রে পাওয়া তথ্যে দেখা যায় চোরাচালান বাড়ছে। বিশেষ করে ঈদুল ফিতরকে সামনে রেখে প্রতিবছর এ সময়টা চোরাচালান অস্বাভাবিক হারে বেড়ে যায়।

তারা জানান, অবৈধভাবে সবচেয়ে বেশি পণ্য আসে ভারত থেকে। এ ছাড়া মিয়ানমার এবং চীন থেকেও কিছু পণ্য এসে থাকে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানান, চোরাচালানের নতুন নতুন রুটের সাথে অনেক সময় পেরে উঠছে না আইনশৃ´খলা বাহিনী। এক রুটে বাধা পেলে নতুন রুট খুলছে চোরাচালানিরা। এসব গোপন পথ বন্ধ করতে পারছে না বিডিআর, কোস্টগার্ড, পুলিশসহ অন্যান্য আইনশৃ´খলা বাহিনী।

স্থল ও জলপথÑ ঊভয় পথেই তারা কৌশলে অবৈধভাবে পণ্য আনছে। বাহিনীগুলোর প্রযুক্তি বা কোনো কৌশল কাজে লাগছে না। অভিযোগ রয়েছে, বর্তমানে শুধু চোরাচালানি পণ্য বহনকারীদেরই ধরা হয়, গডফাদাররা ধরাছোঁয়ার বাইরে থেকে যায়। ‘এখন থেকে গডফাদারদের রেহাই নেই’Ñ সম্প্রতি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে এক বৈঠকে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর এ ধরনের বক্তব্যের পরপরই বিভিন্ন আইনশৃ´খলা বাহিনী গডফাদারদের একটি তালিকা করে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে জমা দেয়। তবে তালিকা তৈরি হলেও এখন পর্যন্ত কাউকে গ্রেফতার করা হয়নি বলে জানান সংশ্লিষ্টরা।

বর্তমান মহাজোট সরকার ক্ষমতায় আসার পরপরই গডফাদারদের তালিকা তৈরি ও আটক করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে জাতীয় চোরাচালান দমন কমিটির একাধিক বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন নিয়ে আলোচনাও হয়। তবে এ পর্যন্ত এ সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন হয়নি। একাধিক গোয়েন্দা সংস্থা ও বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের দেয়া তথ্য অনুযায়ী বিগত সরকারের আমলেই চোরাচালান গডফাদারদের একটি তালিকা প্রণয়ন করা হয়েছিল। ওই তালিকা দীর্ঘদিন ধরে আটকা পড়ে লাল ফিতায়।

তালিকা অনুযায়ী তাদের বিরুদ্ধে কোনো অ্যাকশন নেয়া হয়নি। তালিকা তৈরির নামে সময়পেণ হয়েছে। মাঠপর্যায়ে চোরাচালানি সদস্য গ্রেফতার হলেও কখনো গডফাদারদের কেউ গ্রেফতার হয়নি। অনুসন্ধানে দেখা গেছে, ভারতের পাশাপাশি প্রতিবেশী মিয়ানমার থেকেও চোরাচালান মালামাল এসে থাকে। বাংলাদেশ থেকে মিয়ানমারে ওষুধ রফতানি হয়।

চোরাচালানের মাধ্যমেও টেকনাফ দিয়ে ওষুধ পাচার হচ্ছে। এসব ওষুধের বিনিময়ে বাংলাদেশের চোরাকারবারিরা মিয়ানমারের চোরাকারবারিদের কাছ থেকে স্যান্ডেল ও আচার পেয়ে থাকে। আশঙ্কা করা হচ্ছে, এ সুযোগে বাংলাদেশ থেকে নিম্নমানের ওষুধ পাচার হতে পারে এবং এর ফলে ওই দেশে বৈধভাবে রফতানি বাধাগ্রস্ত হতে পারে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা চোরাচালান মামলার দীর্ঘসূত্রতা প্রসঙ্গে বলেন, একটি মামলা চলাকালে এর তদন্তকারী কর্মকর্তা বদলি হয়ে যান। অনেকেই অবসরে চলে যান।

ফলে মামলার নিত্তি হয় না। মামলার এফআইআরে তদন্তকা ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.