ভোলার মনপুরা ও চরফ্যাশন উপজেলায় ঘূর্ণিঝড়ে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলো এখনও খোলা আকাশের নিচে রয়েছে। ৮ দিনেও পেরিয়ে গেলেও ক্ষতিগ্রস্ত এ পরিবারগুলো ঘুরে দাড়াতে পারেনি।
অন্যদিকে, নিখোঁজ জেলেদের অনেকে ফিরে এলেও মনপুরার অন্তত ৫০ জেলে এখনও নিখোঁজ রয়েছেন। তবে নিখোঁজদের উদ্ধারে তাদের স্বজনরা চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন।
প্রশাসনের পক্ষ থেকে যদিও দাবি করা হচ্ছে ২০ জেলে নিখোঁজ রয়েছে, অনেকে ফিরে এসেছে এবং বাকিরাও ফিরে আসবে।
কিন্তু নিখোঁজ জেলেদের স্বজনরা কোনো স্বস্তি পাচ্ছেনা।
ওই পরিবারগুলো এখনও মেঘনা পাড়ে স্বজনদের জীবিত অথবা মৃত পাওয়ার অপেক্ষায় আহাজারি করছেন। এ এলাকার সর্বত্র চলছে শোকের মাতম।
মনপুরা ও চরফ্যাশনে ঘূর্ণিঝড়ে ট্রলার ডুবে নিহত জেলেদের লাশ প্রতিদিনই মেঘনা ও সাগর মোহনায় বিভিন্ন প্রান্ত দিয়ে ভেসে ওঠছে। এ পর্যন্ত মনপুরার হাজিরহাট এবং সাকুচিয়া থেকে ১০টি ও চরফ্যাশনের ঢালচর, স্যামরাজ, কুকরী মুকরী থেকে ৫টিসহ মোট ১৫ জনের লাশ পাওয়া গেছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, চরনিজাম, ঢালচর ও ভাসান চরে আরও ৭ জনের লাশ ভাসতে দেখেছে স্থানীয় জেলেরা। ওই সব মৃতদেহ স্রোতের টানে ভেসে যাচ্ছে এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে।
সরেজমিন দেখা গেছে, ঘূর্ণিঝড়ে বিধ্বস্ত অন্তত ৭ হাজার পরিবার এখনও খোলা আকাশের নিচে রয়েছে। তারা এখনও ঘুরে দাড়াতে পারেনি। সরকারিভাবে যে ত্রাণ দেওয়া হচ্ছে তা প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল।
নিখোঁজের ৭ দিন পার হলেও অনেক জেলে ফিরে না আসায় তাদের পরিবারে চলছে শোকের মাতম। কিছুতেই কান্না থামছে না তাদের।
উপজেলার রামনেয়াজ এলাকার মোশারেফের স্ত্রী সাজু বেগম বাংলানিউজকে জানান, ঝড়ে আমার ঘরটি ভেঙে গেছে। টাকার অভাবে মেরামত করতে পারছিনা।
তিনি আর বলেন, “ঝড়ে আমার ২টি ছাগল, ৯টি হাঁস মারা গেছে।
”
একই এলাকার জেলে আ: হক জানান, তাদের এলাকা থেকে ২৭টি নৌকা ঝড়ের দিন নদীতে মাছ শিকার করতে যায়। এখনও ৭ জন ফিরে আসেনি।
মনপুরা ঘাটের জাহাঙ্গীর মাঝি জানান, ঝড়ের রাতে ১৭ জন জেলেকে নিয়ে তাদের মাছ ধরার ফিশিং বোটটি সাগরের ভাসান চর এলাকায় ডুবে যায়। ৩ দিন পর তারা সবাই বাড়িতে ফিরে আসেন।
হাজিরহাটের চরফৈজউদ্দিন গ্রামের জেলে আ: মান্নান ফিরে না আসায় তার সলিল সমাধি হয়েছে বলে আশংকা করা হচ্ছে।
তবে নিহতের স্ত্রী ফজুলত বেগম স্বামী ফিরে আসবে এমন প্রতিক্ষায় পথ চেয়ে আছেন।
এদিকে, ঝড়ে মনপুরার হাজিরহাট ঘাটে ডুবে যাওয়া সি-ট্রাক এসটি রাসেলকে উদ্ধারকারী জাহাজ হামজা গত ৩ দিন চেষ্টা চালিয়েও উদ্ধার করতে না পারায় অপর উদ্ধারকারী জাহাজ রুস্তম মঙ্গলবার বিকেল সাড়ে ৩ টার দিকে এসে সি-ট্রাকটি উদ্ধার করে।
তবে সি-ট্রাকটি চলাচলের উপযোগী না হওয়ায় ভোলার সঙ্গে বিচ্ছিন্ন দ্বীপ মনপুরার যোগাযোগ বিছিন্ন হয়ে পড়েছে। লোকজন জীবনের ঝুঁকি নিয়ে নৌকা-ট্রলারে করে উত্তাল মেঘনা পাড়ি দিয়ে যাতায়াত করছে।
এদিকে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ক্ষতিগ্রস্ত মনপুরার জন্য নগদ ৫ লাখ টাকা এবং ৫২ মেঃ টন চাল ও চরফ্যাশনের জন্য নগদ ৪ লাখ টাকা এবং ৩০ মেঃ টন চাল বরাদ্দ হয়েছে।
তবে এখনও পর্যন্ত বরাদ্দকৃত ওই ত্রাণ পৌঁছায়নি।
এছাড়াও ঝড়ে নিখোঁজ পরিবারকে ২৫ হাজার টাকা, ক্ষতিগ্রস্থ পরিবারকে ২০ হাজার টাকার ও আশিংক পরিবারকে ১০ হাজার টাকার দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রী। তবে নিখোঁজ জেলেদের পরিবারকে কোনো সহায়না দেওয়া হয়নি। তাই সেখানেও চলছে হাহাকার।
এ ব্যাপারে ভোলার জেলা প্রশাসক খোন্দকার মোস্তাফিজুর রহমান বাংলানিউজকে বলেন, “তাৎক্ষণিকভাবে যে বরাদ্দ ছিলো তা বিতরণ করা হয়েছে।
তবে ২য় দফায় ত্রাণ মন্ত্রী যে বরাদ্দের ঘোষণা দিয়েছেন’ তা আমরা দ্রুত বিতরণের ব্যবস্থা নিচ্ছি। ” ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।