সততাই সবসময় রাখা চাই,বাচিবার তরে । দেড় বছর পর হত্যা রহস্য উন্মোচন!
খুলনায় শিল্পপতি দম্পতির হাতে নিহত কিশোরী গৃহকর্মী সীমার (১৩) হত্যা রহস্য দীর্ঘ দেড় বছর পর পুলিশ উদঘাটন করতে সক্ষম হয়েছে। চাঞ্চল্যকর এই হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকার অভিযোগে শিল্পপতি মাসুদ হাসান (৪২) ও তার স্ত্রী ইয়াসমিনকে (৩৬) রবিবার গ্রেফতার করেছে পুলিশ। গতকাল সোমবার মাসুদ ও তার স্ত্রী ফাতেমা ইয়াসমিনকে জিজ্ঞাসাবাদে অনুমতির জন্য খুলনা মহানগর হাকিম কেরামত আলীর আদালতে হাজির করা হয়। আদালত শুনানি শেষে আগামী ২১ অক্টোবর ফের শুনানির দিন ধার্য করে।
এর আগে গত রবিবার মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা এস আই শাহ আলম তাদের জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ১০ দিনের রিমান্ডের আবেদন জানান। জানা গেছে, মাসুদ হাসানের বিরুদ্ধে উজ্জ্বল নামে তার আইসক্রিম ফ্যাক্টরির এক কর্মচারীকে হত্যার অভিযোগেও একটি মামলা রয়েছে।
সূত্র জানায়, নগরীর মুজগুন্নি আবাসিক এলাকার ৬ নম্বর রোডের ৭৬ নম্বর বাড়ির বাসিন্দা ছিলেন মিল্কিওয়ে আইসক্রিম ফ্যাক্টরির মালিক মাসুদ হাসান ও তার স্ত্রী ইয়াসমিন। গৃহকর্ত্রী ইয়াসমিন ২০০৯ সালে তার পিতার বাড়ি নড়াইল জেলার লোহাগড়া উপজেলার চর দৌলতপুর গ্রামের মৃত ওলিয়ার রহমানের নয় বছরের মেয়ে সীমাকে তাদের বাসার কাজের জন্য নিয়ে আসে। দীর্ঘদিন কাজ করার পর এক সময় কিশোরী সীমার ওপর কুদৃষ্টি পড়ে গৃহকর্তা মাসুদ হাসানের।
একদিন রাতে মাসুদ তাকে জোর করে ধর্ষণ করে। এ ঘটনা কাউকে যাতে না জানায় সেজন্য সীমাকে শাসানো হয়। এভাবে প্রায় রাতেই মাসুদ তার ওপর যৌন নিপীড়ন চালাতো। গত বছরের ৩ এপ্রিল রাতে সীমার সাথে অবৈধ মেলামেশার সময় মাসুদের স্ত্রী ফাতেমা ইয়াসমিন ঘটনাটি দেখে ফেলে। এ সময় সীমাকে প্রচণ্ড মারধর করা হয়।
আশঙ্কাজনক অবস্থায় তারা সীমাকে খুলনা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিত্সক তাকে মৃত ঘোষণা করে। পরে তারা সীমার লাশ নিয়ে এসে বাসার ডিপ ফ্রিজের ভিতর রেখে দেয়। দীর্ঘ নয়মাস ধরে এভাবে লাশটি ফ্রিজে রাখার পর গত ৩০ জানুয়ারি এলাকাবাসী টের পায়। ক্ষুব্ধ লোকজন মাসুদের বাড়ি ঘেরাও করলে পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে। দীর্ঘ সময় ধরে পুলিশ ও স্থানীয় কতিপয় প্রভাবশালী ব্যক্তির সঙ্গে দেনদরবার ও মোটা অঙ্কের টাকার বিনিময়ে ওই দিন রাতের অন্ধকারে সেই লাশের হাত-পা বেঁধে বস্তাবন্দি করে ডুমুরিয়া উপজেলার লাইন বিল পাবলার একটি খালে ফেলে দেয়া হয়।
পরের দিন এলাকাবাসী বস্তাবন্দি লাশটি পানিতে ভাসতে দেখে পুলিশকে খবর দেয়। ডুমুরিয়া থানা পুলিশ অজ্ঞাত লাশটি উদ্ধার করে থানায় মামলাসহ সেটি পোস্টমর্টেমের জন্য খুলনা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পাঠায়।
এদিকে ঘটনাটি ভিন্নখাতে নিতে মাসুদ হাসান সীমার নামে থানায় জিডি, পত্রিকায় নিখোঁজ সংবাদ প্রকাশ, সীমা ও তার মামা ইখলাস গাজীর বিরুদ্ধে মিথ্যা চুরি মামলা দিয়ে সীমার পরিবারকে হয়রানি করে। অপরদিকে সীমার মা তার মেয়েকে পাচার করা হয়েছে এই অভিযোগে খুলনার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আদালতে পাল্টা মামলা দায়ের করেন। আদালত ঘটনাটি নিয়মিত মামলা হিসাবে রুজু করার জন্য খালিশপুর থানাকে নির্দেশ দেন।
গত বছরের ১৫ জুলাই থানার খালিশপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মামলাটি রেকর্ড করে এর তদন্ত দেন এস আই শাহ আলমের ওপর। তিনি দীর্ঘ দেড় বছর তদন্তের পর গত রবিবার সকাল ১০টার দিকে নগরীর মুজগুন্নি আবাসিক এলাকার ১৫ নম্বর সড়কের ২০১ নম্বরের বর্তমান বাসা থেকে মাসুদ হাসান ও তার স্ত্রী ইয়াসমিনকে গ্রেফতার করে। মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা এস আই শাহ আলম জানান, তিনদিন আগে নিহত সীমার লাশের ছবি তার মা নড়াইল জেলার লোহাগড়া উপজেলার চরদৌলতপুর গ্রামের সুফিয়া বেগমের কাছে পাঠানো হয়। তিনি ও স্থানীয় ইতনা ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক শেখ মনিরুজ্জামানসহ চরদৌলতপুর গ্রামের লোকজন ও খুলনার মুজগুন্নি এলাকার লোকজন ছবিটি দেখে সীমার বলে সনাক্ত করেন। সীমার ছবি সনাক্তের পর মাসুদ হাসান ও ফাতেমা ইয়াসমিনকে গ্রেফতার করা হয়।
এদিকে মেয়ের হত্যাকারীদের গ্রেফতারের খবর পেয়ে সুফিয়া বেগম ও তার ভাই ইখলাস গাজী গত রবিবার লোহাগড়া থেকে নগরীর খালিশপুর থানায় ছুটে আসেন। এ সময় সুফিয়ার আহাজারিতে এক হূদয়বিদারক দৃশ্যের সৃষ্টি হয়। তিনি বুক চাপড়িয়ে বলেন, মাসুদ ও তার স্ত্রী ইয়াসমিন আমার বুকের ধনকে কেড়ে নিয়েছে। আমি তাদের ফাঁসি চাই। সীমার মামা ইখলাস গাজী বলেন, মাসুদ হাসান শুধু আমার ভাগ্নির ওপর পাশবিক নির্যাতন ও হত্যা করেই ক্ষান্ত হয়নি।
সে আমার নামে মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানি করেছে। আমি ভিটেমাটি বিক্রি করে মামলা চালিয়েছি। কিন্তু আল্লাহ তারে ছাড়েনি। তবে গ্রেফতারকৃত মাসুদ হাসান সাংবাদিকদের বলেন, তাকে ও তার স্ত্রীকে ফাঁসানোর জন্য এ মিথ্যা মামলা দেয়া হয়েছে। এদিকে অভিযোগ উঠেছে, সীমা হত্যা মামলা ধামাচাপা দিতে মাঠে নেমেছে প্রভাবশালী একটি মহল।
ইতিমধ্যে মামলাটি ভিন্নখাতে প্রবাহিত করতে নগরীর খালিশপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সুকুমার বিশ্বাস ও মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা এস আই শাহ আলমকে সেনা কর্মকর্তা পরিচয় দিয়ে মোবাইল ফোনে কয়েকদফা হুমকি দেয়া হয়েছে।
লিংক-http://new.ittefaq.com.bd/news/view/157075/2012-10-16/1 ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।