লালন সম্পর্কে তার এলাকার শিক্ষিত মানুষের মাঝে বিস্তারিত কোন তথ্য না পাওয়া গেলেও তার সম্পর্কে পাওয়া যায় বিশদ বিবরণ দূর-দূরান্তের লোকদের মাঝে। অনেকে আবার এ নিয়ে গবেষণাও করে চলেছে রীতিমত। কেও তাকে মহাত্মা/ ধর্মপ্রচারক/সাধক ইত্যাদি ইত্যাদি উপাধিতে ভূষিত করেন। রীতিমত এই লালন শাহ কে নিয়ে যুদ্ধ চলে কিছু কিছু গবেষকদের মাঝে। বস্তুত সেখানে লালনকে পুঁজি করে নিজেদের জাহিরি বা লোক সম্মুখে সাধক বা জ্ঞানি হিসেবে প্রচার করাটাই মূখ্য বলে প্রতিয়মান।
উঠতি বয়সী যখন ছিলাম তখন শুনতাম নানা কারনে এই মহান ব্যক্তিকে নিয়ে নানা গুঞ্জন গাইতেন আমাদের কলেজ শিক্ষক নজরুল ইসলাম সাহেব। অনেকে নাকি ডক্টরেটও করে তার উপরে। আর সে সবগুঞ্জনে আমার হৃদয়ও টেনে নিত আখড়াতে। সেখানে গিয়ে বেশ ভাল লাগত আবেগী মনে লালন ভক্তদের লালন সংগীত শুনতে। ভক্তদের আচার আচরণ কেমন যেন পরোউপকারী পরোউপকারী মনে হত।
পরবর্তীতে জনাব অশোজ মজুমদার (কবি/সাংবাদিক কাঙাল হরিনাথ মজুমদার এর বংশধর) যখন কাঙাল হরিনাথ মজুমদারের উপর বই বের করতে আগ্রহী হয়েছিলেন তখন উনার কাছ থেকে বেশ কিছু পুরাতন পত্রিকা গান সম্পর্কে অবগত হতে পারি। তারপর জনাব তানভীর মোকাম্মেল যখন ঢাকাতে লালনের উপর সংগীত নির্ভর শর্ট মুভি তৈরী করলেন তখন বেলী রোডের ধ্বনী স্টুডিওতে যাতায়াতের ফলে ঘনিষ্ঠতা বাড়ে বেশ কজন লালন ভক্তের সাথে।
লালন সম্পর্কে যা কিছু তথ্য পাওয়া যায় তা হল কাঙাল হরিনাথ মজুমদারের গ্রামবার্তা প্রকাশিকা পত্রিকা থেকে। সেখান থেকে জানা যায় তার মূলত ছিল একটি গানের দল। তিনি সেই দলবল নিয়ে গ্রামে গঞ্জে গান গেয়ে বেড়াতেন।
সেই জন্য তাকে বাউল লালন বলেও অনেকে জানত। সেসময়ে মুসলমানদের থেকে হিন্দুদের গানের আসর বেশী হত। বিভিন্ন পূজা পার্বনগুলোতে সহ গানের আসর থাকত প্রায় সব সময়ই। উনি হিন্দু মুসলিম সবার আসরেই গান গেয়ে চলতেন তার দল বল নিয়ে।
আর আমার মতে উনি উনার গানের দলকে সচল রাখার জন্যই এই ধরনের গান অথবা যেহেতু উনার জন্ম পরিচয় সম্পর্কে বিষদ বিভেদ ছির তাই নিচের ধরনের গান গেয়ে চলতেন বা রচনা করতেন-
সব লোকে কয়
লালন কি জাত সংসারে।
লালন বলে জাতের কি রূপ
দেখলাম না তা-নজরে। ।
কাজের চেয়ে ঢোলেরবাড়ি বেশী না দিয়ে কাজের কথায় আসা যাক। লালন সাধক হতে হলে আপনার কিছু বুলি প্রথমেই শিখতে হবে।
** মানব ধর্ম বড় ধর্ম
***মানব সেবাই বড় সেবা
****গুরু ভক্তি পরম ভক্তি
*****গুরু ভক্তিনাই যার বৃথা জীবন তার
******সিদ্ধ হতে হলে সাধনা লাগে, সাধনার জন্য চাই সংসার ত্যাগী হওয়া।
*******সংসারের মায়াজালে আটকালে সিদ্ধ পাওয়া সম্ভব না।
********বিয়ে করে সন্তান গ্রহণ মানে নিজেকে ভাগ করা। অস্তীত্বের ভাগীদার করে গড়ে তোলা।
********* গুরুর সেবা দিলে দিলে মিলবে গুরুর কৃপা তাতেই হতে পারে সিদ্ধ জীবন পাওয়া******
**********গুরু খুশি হবে যা পেয়ে দিতে হবে সব ভিন্নমত কিছু তাতে নাই**********
ইত্যাদি ইত্যাদি
তার পর আপনার যে উপকরণগুলি লাগবে
# গুরু ভক্তি- যা না হলে তো আপনি সিদ্ধই হতে পারবেন না।
# একটি কলিকা বা কইলকে সিদ্ধি টানার জন্য।
লালন সাধক যারা আছেন তাদের সিদ্ধি (গঞ্জিকা/গাজা/শুকনা ইত্যাদি নাম) আসক্তি নাই এমন লোক খুবই কম তাও আবার তারা বিশেষ বিশেষ দিনে সিদ্ধি পান করে উড়ে চলে আসমানে।
# ভান ধরার জন্য সাদা লুঙ্গী/ধুতি আর লাল কাপড়ে আবৃত শরীর। আর যদি হন নারী তা হলে চলে আসেন তারা তারী শুধু মাত্র পড়ে একটা সাদা শারী।
# একটা একতাড়া, লাউয়ের খোলা দিয়ে তৈরী এবং যত বেশী পুরোনো হবে তত বেশী আপনি সিদ্ধ হবে আর্চনা পাবেন।
# গোসল না করে চুলে জটবাধাতে পারলে পাবেন বিশেষ আথিতিয়েতা।
# দাঁড়ি হলে তো কথা থাকবে না পাবেন বাড়ীতি কিছু সবিধা।
# মাছ মাংস থেকে থাকতে হবে দুরে।
# লাজ চলবে না নারী পুরুষে মিলে থাকতে রাতভরে
# থাকা চাই আসন একটা পাপোষ টাইপের।
# মিস্টভাষি আস্তে আস্তে কথা বলতে পারলে মিলবে আরো কিছু বেশ।
যা হউক এধরনের উপকরণ আপনার যদি থাকে আপনি শুরু করতে পারনে অকাতরে।
কিছুদিনের মাঝেই আপনি হয়ে উঠবেন লালন সাধক দার্শনিক জ্ঞানি গুনি জনে। ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।