আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

মধ্য যুগের চিকিৎসা বিজ্ঞানীরা ( Medieval Masters of Medicine )

প্রবাসী চিকিৎসা বিজ্ঞানের অনেক চিকিৎসার মূল খুজে পাওয়া যায় মধ্যযুগে। সেই সময়ের চিকিৎসা বিজ্ঞানীদের আবিস্কার আধুনিক চিকিৎসা বিজ্ঞানের ভিত্তি। তারা ছিলেন চিকিৎসা বিজ্ঞানের পথ প্রদর্শক। মধ্যযুগে মধ্যপ্রাচ্যে যারা চিকিৎসা বিজ্ঞানে উল্লেখযোগ্য অবদান রেখেছেন তারা হলেন- ১) খলিফা হারুনুর রশীদ- ৮০৫ খৃস্টাব্দে খলিফা হারুনুর রশীদ ধনী গরীব নির্বিশেষে সবার চিকিৎসার জন্য বাগদাদে হাসপাতাল স্থাপন করেন। ৯ম শতাব্দী থেকে শুরু করে ত্রয়োদশ শতাব্দী পর্যন্ত মুসলিম বিশ্বে স্পেন থেকে শুরু করে ভারত বর্ষ পর্যন্ত গড়ে ওঠে অনেক হাসপাতাল, এই হাসপাতালগুলোতে রোগীদের চিকিৎসার পাশাপাশি চিকিৎসকদের প্রশিক্ষনের ব্যাবস্থা থাকত, থাকত চিকিৎসা শিক্ষা এবং গবেষনার ব্যাবস্থা।

খ্যাতনামা চিকিৎসকেরা চিকিৎসা বিজ্ঞানের ছাত্রদের নিয়ে প্রতিদিন সকালে রোগীদের দেখতেন এবং তাদের জন্য ঔষধপত্র এবং পথ্যের ব্যাবস্থা করতেন। ঐ সময়ে চক্ষু, শৈল্য চিকিৎসা, মেডিসিন, এবং সংক্রামক ব্যাধির জন্য গড়ে উঠেছিল আলাদা ওয়ার্ড। ঐতিহাসিকেরা ঐ সময়ে ইসলামী দুনিয়ায় গড়ে ওঠা চিকিৎসা ব্যাবস্থাকে চিকিৎশা শাস্ত্রে মধ্যযুগীয় ইসলামের শ্রেষ্ঠ অবদান হিসেবে বিবেচনা করে থাকেন। এ প্রসঙ্গে ঐতিহাসিক Howard R Turner বলেন “ Throughout the Islamic Empire the Hospital as an institution was being developed in revolutionary ways that would shape the course of health sciences and health care right down to modern times” ২) রাজেস(Rhazes)- মধ্য নবম শতাব্দীতে তেহরানের উপকন্ঠে প্রাচীন নগরী রাই(Rayy)য়ে জন্ম নেন। তাকে বলা হয়ে থাকে ইসলামী যুগে সারা পৃথিবীর অন্যতম স্রেষ্ঠ চিকিৎসক।

তিনি ভবিষ্যতের চিকিৎসা বিজ্ঞানীদের জন্য রেকর্ড করে রাখতেন চিকিতসা পদ্ধতি যন্ত্রপাতি এবং চিকিৎসা সরঞ্জাম এবং তার ছাত্রদের উৎসাহ দিতেন চিকিৎসা বিজ্ঞানের আধুনিকতম আবিস্কারের সাথে তাল মিলিয়ে চলতে। চিকিৎসা বিজ্ঞানের উপর ২৩ ভলিউমের বই আল হাওয়ি (Al Hawi -Comprehensive book) রচনা করেন রাজেস যা চিকিৎসা বিজ্ঞানের এক অমূল্য সম্পদ। স্ত্রী রোগ , ধাত্রীবিদ্যা ও চক্ষু শৈল্য চিকিৎসার বর্ননা মেলে তার বইয়ে। তার লেখা ৫৬টি চিকিৎসা বিজ্ঞানের প্রবন্ধে সর্বপ্রথম গুটী বসন্ত, এবং হাম রোগের নিখুত বর্ননা পাওয়া যায়। রাইয়ে এবং তেহেরানে হাসপাতাল চালাতেন রাজেস।

মানসিক রোগের উপর সবিশেষ দখলের কারনে তাকে মধ্য যুগের শ্রেষ্ঠ মনোবিজ্ঞানী এবং মনচিকিৎসক হিসাবে বিবেচনা করা হয়ে থাকে। চিকিৎসা বিজ্ঞান ছাড়াও রাজেস, রসায়নশাস্ত্র বা আল কেমি, জোতির্বিদ্যা, অঙ্কশাস্ত্র এবং ধর্ম শাস্ত্রের উপর বই লেখেন । তিনি " জ্বর’ কে সর্ব প্রথম শরীরের এক বিক্রিয়া হিসেবে চিহ্নিত করেন। পরীক্ষাগারে রাজেস। ৩) আবু সিনা (Avicenna) চিকিৎসা বিজ্ঞানের মধ্যযুগীয় মহীরুহ ছিলেন আবুসিনা।

তাকে বলা হয়ে থাকে ১১শ শতাব্দীর শ্রেষ্ঠ চিকিৎসক, দার্শনিক, জ্যোতির্বিজ্ঞানী, এবং অঙ্কশাস্ত্রবিদ। ৯৮০ খৃস্টাব্দে উজবেকিস্তানের বোখারাতে জন্ম নেন ইবনে সিনা। তার লেখা The Canon of Medicine ছিল এক সার্বিক চিকিৎসা বিজ্ঞানের উপর অন্যতম শ্রেষ্ঠ রচনা। তিনি সর্বপ্রথম যক্ষা রোগকে সংক্রামক রোগ হিসেবে চিহ্নিত করেন। মাটি এবং পানির মধ্য দিয়ে রোগ সংক্রমন, এবং শরীরের উপর মনের প্রভাবের ফলে শারীরিক রোগের কারন হিসেবে উল্বলেখ করেন।

ব্যাথা এবং মাংশপেশীর সঙ্কোচনের জন্য নার্ভ বা স্নায়ু অপরিহার্য্য তার এই আবিস্কার আধুনিক যুগেও সমানভাবে প্রাসঙ্গিক। তার বই The Canon of Medicine এ ৭৬০ প্রকার ওষুধের বিশদ বর্ননা দেন আবু সিনা, ল্যাটিন ভাষায় অনুদিত হওয়ার পর তার বই ইউরোপের চিকিৎসা বিজ্ঞানে কয়েক শতাব্দীব্যাপী অবশ্যপাঠ্য পুস্তক হিসাবে বিবেচিত হত। গুটী বসন্ত রোগীর ঔষধ তৈরীর নির্দেশ দিচ্ছেন ইবনে সিনা। ৪) আল বুকাসিস-(Albukasis) আন্দালুসিয়া বা আধুনিক কালের স্পেন এর চিকিৎসা বিজ্ঞানের অপর দিকপাল ছিলেন আল বুকাসিস। ১০ম শতাব্দীর এই অন্যতম শ্রেষ্ঠ চিকিৎসক ৩০ ভলিউমের বই লেখেন চিকিৎসা বিজ্ঞানের উপর যার মধ্যে ৩০০ পৃষ্ঠা ব্যাপী ছিল শৈল্য চিকিৎসার বর্ননা।

তিনি সেই সময়ে শরীরের অভ্যন্তরে সেলাই করার জন্য ক্যাটগাটের(Catgut) ব্যবহারের কথা বলেন, ইউরেথ্রা বা মুত্র নালী দিয়ে মুত্রথলীর পাথর অপসারনের সম্ভাবনার কথা বলেন। তিনি তুলা দিয়ে ক্ষতস্থান ড্রেসিং এর প্রবর্তন করেন। অর্থোপেডিক্সে কাধের গিঠ এর স্থানচ্যুতির চিকিৎসা পদ্ধতি এবং প্লাস্টার দিয়ে হাড়ভাঙ্গা চিকিৎসা তার অপর এক উল্লেখযোগ্য উদ্ভাবন। দাঁতের চিকিৎসা যেমন কৃত্রিম দাঁত , দাঁত স্থাপন ইত্যাদি চিকিৎসা পদ্ধতিও উদ্ভাবন করেন তিনি। আল বুকাসিস তার বইয়ে ২০০ প্রকার শৈল্য চিকিৎসার যন্ত্রপাতি এবং তার ব্যবহার পদ্ধতির বর্ননা দেন।

আল বুকাসিসের শৈল্য চিকিৎসার যন্ত্রপাতি। ল্যাটিনে অনুদিত হওয়ার পর একাদশ এবং দ্বাদশ শতাব্দীতে প্রাচ্যের এই বিজ্ঞানীদের আবিস্কার স্পেন হয়ে ছড়িয়ে পড়ে ইউরোপে। কয়েক শতাব্দী ব্যাপী ইউরোপে প্রচলিত থাকে চিকিৎসাবিজ্ঞানের এই পথিকৃতদের রচনা। নিসন্দেহে আবু সিনা, রাজেস, আল বুকাসিসসের অবদান রচনা করেছিল আধুনিক ইউরোপীয় চিকিৎসা বিজ্ঞানের ভিত্তি। ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।