আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

মালালা, তোমাকে সালাম

স্বাধীনতা, সে তো আমার প্রিয় মানুষের এক সাগর রক্তের বিনিময়ে কেনা মালালা ইউসুফজাই। বয়স মাত্র ১৪। ১৪ হলে কি হবে তিনি এরই মধ্যে আমাদের সবাইকে ছাড়িয়ে অনেক উপরে উঠেছেন। তিনি এখন অনেক বড় ! গোটা বিশ্ব এখন তাকে এক নামে চিনে। হ্যাঁ, বলছিলাম মালালা নামক এক প্রতিবাদী কিশোরীর কথা।

পাকিস্থান নামক অতিমাত্রায় সাম্প্রদায়িক একটি দেশের তিনি নাগরিক। জঙ্গীদের প্রজননক্ষেত্র বলে পরিচিত পাকিস্থান নামক রাস্ট্রটির তিনি নাগরিক হলেও মালালা এখন আর পাকিস্থানের নয়, মালালা সমগ্র বিশ্বের, আমাদের সবার। মালালা এখন একটি প্রতিবাদী প্রতীক, প্রতিবাদী কন্ঠ। যে দু:সাহসিক কাজ পাকিস্থানের মডারেট নাগরিকগণ করতে পারেন নি কিন্তু মালালা সে কাজ একাই করেছেন। পাকিস্থান জঙ্গীদের অভ্যয়রন্য হলেও মালালা, হামিদ মীর, ইমরান খান সহ যে অনেক প্রতিবাদী কন্ঠ এখনো পাকিস্থানে আছেন আমরা এতে কিছু আশ্বান্বিত না হয়ে পারি না।

তবে মালালা এদের সবাইকে ছাড়িয়ে গেছেন। আজকের পাকিস্থান নামক রাস্ট্রটি তালেবান জঙ্গী সমস্যায় পর্যদুস্ত। সেখানে জঙ্গী তো রাতারাতি মাছের পোনার মত জন্ম হয় ! এর জন্য আবশ্য পাকিস্থান নিজেই দায়ী। পাকিস্থান সেই জন্ম লগ্ন থেকেই সেনাতন্ত্র দ্বারা শাসিত হয়ে আসতেছে। জেনারেলগণ নিজেদের ক্ষমতা পাকাপোক্ত করা বা ক্ষমতা দীর্ঘকালীন করার জন্য জঙ্গীদের উৎপাত নিরবে হজম করেছেন বা অনেক সময় মৌন সমর্থন দিয়েছেন বা সরাসরি সহায়তাও করেছেন।

। আবার পাকিস্থান যুক্তরাস্ট্রের কাছ থেকে বিভিন্ন সুযোগ সুবিধা আদায় করতে বা প্রতি বছর মিলিয়ন মিলিয়ন ডলার সহায়তা পাওয়ার জন্য নিরবে যুক্তরাস্ট্রের অবৈধ হস্তক্ষেপ মেনে নিয়েছে যার পরিণতি পাকিস্থানকে এখন হাড়ে হাড়ে ভোগ করতে হচ্ছে। পাকিস্থানে জঙ্গীদের উৎপাত সেই জিয়াউল হক সেনা শাসকের সময় থেকে। সে সময় যুক্তরাস্ট্রের অস্ত্র ও সৌদির অর্থের মাধ্যমে আই এস আই এর সক্রিয় সহযোগীতায় আফগানিস্থানে তালেবান ও আল কায়েদার জন্ম। সোভিয়েত উৎখাতে দীর্ঘ লড়াইয়ে এই তিন রাস্ট্র ছিল তালেবানদের সহযোগী কিন্তু তালেবানরা ক্ষমতায় আসার পর পরেই স্বাধীন সিদ্ধান্ত নিতে থাকে যার মধ্যে বেশিরভাগই ছিল মানবতা বিরোধী।

গোটা বিশ্ব প্রতিবাদ করার পরেও তালেবানরা আফগানিস্থানের প্রাচীন ঐতিহ্য বামিয়ান মুর্তি ধ্বংস করতে পিছপা হয় নি। তালেবানদের সবচেয়ে বড় যে অমানবিক ভূমিকা ছিল তা হল নারীদের জন্য শিক্ষা নিষিদ্ধ করা। শুধু তাই নয় এই তালেবানরা ইসলামের নামে কিছু অমানবিক আইনও সে সময় দেশে চালু করেছিল। যুক্তরাস্ট্র কর্তক ২০০১ সালে তালেবানদের পতনের পর তারা পাকিস্থানে শক্ত ঘাটি করে বসে। অবশ্য তালেবানরা এরপরে আর সংঘবদ্ধ থাকেনি।

এখন পাকিস্থান ও আফগানিস্থানে তালেবান নামে বিভিন্ন সন্ত্রাসী গোষ্ঠী সক্রীয় আছে এবং এই সব দল উপদল পাকিস্থান ও আফগানিস্থানের বিভিন্ন এলাকা নিয়ন্ত্রন করতেছে। ২০০১ সাল থেকে পাকিস্থান সরকার এসময় অনেকটা দ্বিমুখী নীতি গ্রহন করে । একদিকে তারা যুক্তরাস্ট্রের সাহায্য সহযোগীতা লাভের আশায় সন্ত্রাসবিরোধী লড়াইয়ে নিজেদের সম্পৃক্ত করে আবার অন্যদিকে গোপনে তালেবানদের পুষ্ঠপোষকতা দিতে থাকে। আর এখন সেই তালেবানরা হয়েছে পাকিস্থানের গলার কাঁটা ! তালেবানরা ক্ষমতা হারাবার পরেও আদর্শগত কোন পরিবর্তন তাদের মধ্যে আসেনি বিশেষ করে নারী শিক্ষার ব্যাপারে। পাকিস্থানের সোয়াত অঞ্চল ২০০৯ সালে তালেবানদের নিয়ন্ত্রনে আসার পর থেকেই তারা সেখানে নারী শিক্ষা নিষিদ্ধ ঘোষনা করে।

মালালা সে সময় বিবিসির উর্দু বিভাগে লিখতে শুরু করেন যে তিনি স্কুলে যেতে যান। তালেবানরা তাকে হুমকি দেয়, তার বিরুদ্ধে হত্যার ফতোয়া জারী করে। এরপরেও মালালা দমে যান নি। তিনি ২০১১ সালে এক সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন, ”আমি পড়ালেখা করব করবই। ঘরে, স্কুলে, অন্য কোন জায়গায়; কেউ তা বন্ধ করতে পারবে না।

“ মালালার আপসহীন সাহসী ভূমিকার কারনে গত বছরে তিনি পাকিস্থানের জাতীয় শান্তি পুরুস্কার লাভ করেন। আন্তর্জাতিক শান্তি পুরুস্কারের জন্যও মালালা মনোনীত হয়েছিলেন। তাই মালালা এখন শুধু আর পাকিস্থানের মধ্যে নেই, ছড়িয়ে পড়েছেন গোটা বিশ্বে। মালালা গুলিবিদ্ধ হয়েছেন, আশা করি সেরেও উঠবেন কিন্তু যে দাগ তালেবানরা তাদের নিজেদের শরীরে লেপন করল তা কি কখনো মুছে যাবে ? তালেবানরা একের পর এক মানবতা বিরুধী অপকর্ম করেই যাচ্ছে । আমি আশাবাদী এভাবে চলতে থাকলে পাকিস্থানের মানুষ একসময় জেগে উঠবে, তখন শুধু একটি মালালা না এরকম হাজার হাজার মালালা জন্ম হবে।

সে সময় তালেবান ও যুক্তরাস্ট্র উভয়ে পালানোর পথ খুজে পাবে না কারন একদিকে তালেবান আর অন্যদিকে যুক্তরাস্ট্র এই দু’য়ের ভূমিকায় পাকিস্থানীদের জীবনে আজ কোন নিরাপত্তা নেই, নেই কোন স্বাভাবিক জীবনের গ্যারান্টি। ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.