ছবি নেই কুষ্টিয়ার খোকসা থানার একদল পুলিশ মধ্যরাতে রাজবাড়ীর একটি বাসায় হানা দিয়ে বিধবার কলেজপড়ুয়া মেয়ের দিকে হাত বাড়ায়। একটানে মেয়েটির বোরকা খুলে ফেলে পুলিশের এক সদস্য। খুলে ফেলে ওড়নাও। চরমপন্থি কানেকশনের অভিযোগে মা-মেয়েকে টেনে-হিঁচড়ে থানায় নিয়ে চালায় আরও নির্যাতন। সেখানে পরনের কাপড়ও ছিঁড়ে ফেলা হয় মেয়েটির।
৯ সেপ্টেম্বরের এ ঘটনার ব্যাখ্যা জানতে হাইকোর্ট ইতিমধ্যে খোকসা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে (ওসি) তলব করেছেন। ঘটনাটি নিয়ে বাংলাদেশ জাতীয় মহিলা আইনজীবী সমিতি একটি সত্যানুসন্ধানী প্রতিবেদন আদালতে দাখিল করে। ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, থানায় নিয়ে মেয়েটির শরীরের স্পর্শকাতর স্থানে কাঁচামরিচ দেওয়ার চেষ্টা করে পুলিশ। ৯ দিনের নির্যাতনে মেয়েটি সংজ্ঞা হারায় বারবার। একাধিকবার আত্দহত্যা করতে চায়।
নির্যাতনের শিকার অষ্টাদশী মেয়েটি বলেন, গায়ের কাপড় খুলে পুলিশের নির্যাতন দেখানো সম্ভব নয়।
মহিলা আইনজীবী সমিতির প্রতিবেদন বলছে, ৯ সেপ্টেম্বর রাত ৩টার দিকে রাজবাড়ীর বিধবা আলেয়া আক্তারের বাড়িতে খোকসা থানার ১০-১২ জনের একদল পুলিশ যায়। পুলিশের ডাকে ঘরের দরজা খুলে আলেয়া দেখেন, একটি মাইক্রোবাস দাঁড়িয়ে আছে। পুলিশ এ সময় আলেয়ার ১৪ বছরের ছেলে আরিফের অবস্থান জানতে চায়। আরিফের বিরুদ্ধে কুষ্টিয়ার আমবাড়ী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নূরুল ইসলামকে হত্যার অভিযোগ আছে বলে জানায় পুলিশ।
'আরিফ বাসায় নেই' জানালে পুলিশ আলেয়ার বাড়িতে ভাঙচুর চালায়। তার কলেজপড়ুয়া মেয়েসহ তাকে টেনে-হিঁচড়ে মাইক্রোবাসে তুলে নেয়। পুলিশের এক সদস্য টান দিয়ে মেয়েটির বোরকা ও ওড়না খুলে ফেলে। খোকসা থানায় নিয়ে আলেয়া ও তার মেয়েকে বৈদ্যুতিক শক দেওয়া হয়। পুলিশ তাদের লাঠি দিয়ে পেটায়।
জিজ্ঞাসাবাদের নামে চড়-থাপ্পড় দেয়। থানায় কাপড় পরিবর্তন ও গোসলের ব্যবস্থা ছিল না। খেতে দেওয়া হয় টয়লেটের পানি। সেখানে নারীপুলিশ সদস্য না থাকায় একজন নারী হিসেবে নিজেদের একান্ত প্রয়োজনগুলো মা-মেয়ে কারও কাছে শেয়ার করতে পারেননি। নির্যাতনের সময় চিৎকার করত মেয়েটি।
হাতের আঙুলে সুঁচ ঢুকিয়ে দেওয়া হতো। চার দিন পর ডিবি কার্যালয়ে নেওয়া হয় মা-মেয়েকে। সেখানে পুলিশ সদস্যরা ঘর মোছা, ঝাড়ু দেওয়াসহ তাদের পোশাক ধোয়ানোর কাজও করাত। সেখানে কখনো একেকজন পুলিশ সদস্য মেয়েটিকে নিয়ে যেত। কয়েক ঘণ্টা পর নিয়ে ফিরে আসত।
তখন মেয়েটির চুল থাকত এলোমেলো। চেহারা থাকত বিধ্বস্ত। ডিবির মাসুদ ছিলেন এদের মধ্যে অন্যতম। পরনের জামা-কাপড় ছেঁড়া। চিৎকার করে মেয়েটি বলত, 'মা, আমাকে উঁচু করে ধরো।
ফ্যানের সঙ্গে ঝুলে আমি আত্দহত্যা করি। ' ১৪ সেপ্টেম্বর কুমারখালী থানায় নিয়েও চলে নির্যাতন। সেখানে মা-মেয়ের স্পর্শকাতর স্থানে কাঁচামরিচ দেওয়ার চেষ্টা চালায় পুলিশ।
এর পরের ঘটনা বর্ণনা করেন মহিলা আইনজীবী সমিতির কুষ্টিয়া জেলা শাখার সদস্য অ্যাডভোকেট সামস্ তানিম মুক্তি। বাংলাদেশ প্রতিদিনকে তিনি বলেন, 'পর দিন কুমারখালী থানার পুলিশ ৫৪ ধারায় গ্রেফতার দেখিয়ে মা-মেয়েকে আদালতে পাঠায়।
জামিনে ছাড়া পেয়ে ২৫ অক্টোবর তারা হাজিরা দিতে যান। তাদের ওপর নির্যাতনের ঘটনাটি ওই দিন পত্রিকায় প্রকাশিত হওয়ার পরই পুলিশ আবার তাদের একটি হত্যা মামলায় গ্রেফতার দেখিয়ে আদালতে হাজির করে। এখন তারা আদালতের নির্দেশে জেল হাজতে রয়েছেন। ' তিনি জানান, বিষয়টি নিয়ে মহিলা আইনজীবী সমিতি লড়ছে। সমিতি তাদের জামিনের জন্য কুষ্টিয়া জেলা ও দায়রা জজ আদালতে আবেদন করেছে।
ওই মেয়ের মা বলেন, 'পুলিশের এই নির্যাতন একাত্তরে এ দেশের নারীদের ওপর পাকিস্তানি সেনাদের বর্বরতাকেও হার মানিয়েছে। নির্যাতনের কারণে মেয়ে আমার কয়েকবার আত্দহত্যা করতে চেয়েছে। মেয়ের ওপর ওই নির্যাতন কোনো মা সহ্য করতে পারে না। সব শেষ হয়ে গেছে ওর। সে এখন মানসিকভাবে বিধ্বস্ত ও হতাশ।
পুলিশ আমাদের হুমকি দিয়েছে, ঘটনা কাউকে বললে ক্রসফায়ারে দেবে। ' ১ অক্টোবর বিষয়টি হাইকোর্টের নজরে আনেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী অ্যাডভোকেট ফাহিমা নাসরিন মুন্নী। তিনি বলেন, 'সত্যানুসন্ধান টিম ঘটনার সত্যতা পেয়েছে। মা-মেয়ে কোনো অন্যায় করলে তাদের বিচার হবে। কিন্তু তাদের ওপর অন্যায় নির্যাতন কেন? আইনশৃঙ্খলা বাহিনী এমন আচরণ করলে মানুষ যাবে কোথায়? আমরা এর শেষ দেখে ছাড়ব।
' ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।