আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

বাংলাদেশ ২০১৫ বিশ্বকাপ চ্যম্পিয়ান (একটি ১৮- বর্ষপুর্তি পোস্ট)

uব্লগিং করলে নাকি জাতে উঠা যায় !জাতে ওঠার তীব্র আকুলতায় ২৭ শে জুন ২০১৫সিডনি ক্রিকেট গ্রাউন্ড মোড়পার্ক । অস্ট্রেলিয়ায় বছরের এই সময়টাতে তাপমাত্রা সহনীয় পর্যায়ে থাকে । বিশ্বকাপ ক্রিকেট ২০১৫ ফাইনাল । মুখোমুখি স্বাগতিক অস্ট্রেলিয়া এবং বাংলাদেশ । অস্ট্রেলিয়ায় ক্রিকেট ততোটা জনপ্রিয় না যতটা জনপ্রিয় সুকার কিংবা রাগবি ।

তারপরও ফাইনাল বলে কথা । ৪৬ হাজার দর্শক ধারনক্ষমতা সম্পন্ন স্টেডিয়ামে অর্ধেক ইতিমধ্যে ভরে গেছে । সাদা কালো বাদামী হরেক জাতির সংকর অস্ট্রেলিয়ানরা অদ্ভুত সাজে শব্দে গ্যালারী মাতিয়ে তুলছে । দিবা রাত্রির খেলাটি স্থানীয় সময় দুপুর ৩ টায় শুরু হবে । লাল সবুজের স্রোত বইতে শুরু করেছে মাত্র ।

এক এক করে পতাকা ব্যানার ফেস্টুন বাশি অদ্ভুত সব মুখোশ পড়ে মাঠে আসতে শুরু করেছে বাঙ্গালী সমর্থকরা । তাদের শোভাযাত্রায় কি নেই ,বাংলার ঐতিহ্য পুরোটাই তারা নিয়ে এসেছে কয়েক হাজার বর্গমাইল দুরের এই দেশটিতে । লুঙ্গি গামছা মাথায় কৃষানীর টুপি পড়া কৃষক,জেলে,বাউল সবই আছে । আর সবার হাতে আছে একটি করে বাঘ । হাজারো ফেস্টুনের মধ্যে একটার উপর চোখ আটকে গেল “দুটো ছবি পাশাপাশি একটাতে সাতজন বীরশ্রেষ্ঠ অন্যটিতে বাংলাদেশের এগারো জন ক্রিকেটার ।

গায়ে কাটা দিয়ে উঠল । অস্ট্রেলিয়ার লাল নীল সাদা পতাকার জেীলুশ কমিয়ে দিয়েছে আমাদের লাল সবুজ পতাকা। মনে হয় লক্ষ মাইল দুরে এ এক ছোট্ট বাংলাদেশ । হাজার হাজার বাঙ্গালীর এক অপুর্ব মিলন মেলা । কেউ এসেছে আমেরিকা থেকে,কেউ ইউরোপের বিভিন্ন দেশ থেকে ।

আবার মধ্যপ্রাচ্যের অভিজাত বাঙ্গালী পাড়ার মানুষও নেহাত কম নয় । দেশ থেকেও কয়েকশ মানুষ হাজির হয়েছে । আনিসুল হক ,আব্দুল্লাহ আবু সাইদ জাফর ইকবালকে দেখা যাচ্ছে লাল সবুজের টি শার্ট আর মাথায় গামছা বেধে বাচ্চাদের মতো লাফালাফি করতে । কয়েকজন মন্ত্রী এমপিও এসেছেন তবে তারা ভি আই পি বলে আমার চোখে পড়ছে না । হয়ত শীততাপ নিয়ন্ত্রিত কক্ষে স্কচে গলা ভেজাচ্ছেন ।

বেবী নাজনীন আর আসিফ কে দেখা যাচ্ছে সমানে চিতকার করছে । “আমার ঘুম ভাঙ্গাইয়া গেল গো মরার কোকিলে “ নড়ে উঠল গ্যালারী । সম্মিলিত কোরাসে গলা মিলাচ্ছেন আনিসুল হক । ফাহমিদা নবী, এস আই টুটুল,আয়ুব বাচ্চু,মানাম আহমেদ গ্যালারির এক প্রান্তে বসে আছে । হয়ত প্রস্তুতি নিচ্ছে জ্বলে উঠবার ।

হটাত চোখে পড়ল আন্দালিব রহমান পার্থ আর জাহিদ হোসেন রাসেল ধুতি পান্জাবী পড়ে মাঠে হাজির । চোখে পড়ক পড়ছে না একি অবস্থা আজ বাংলাদেশের । এদিকে বাংলাদেশে আজ অঘোসিত সরকারী ছুটি । প্রধানমন্ত্রী তার বিদেশ সফর বাতিল করেছেন । সকল দাপ্তরিক কাজও বন্ধ।

সংসদ ভবনের সামনে বিশাল বড়ো প্রজেক্টর লাগানো হয়েছে । এম পি, মন্ত্রী সহ গুরুত্বপুর্ন ব্যাক্তিবর্গ এখানে আজ একসাথে বসে খেলা দেখবে । চারিদিকে নিশ্চিদ্র নিরাপত্তা । ঢাকা শহরের প্রত্যেকটি বিপনি বিতান বন্ধ। মোড়ে মোড়ে বড় পর্দায় খেলা দেখার আয়োজন ।

টি এস সি,ফার্মগেট,গুলিস্তান,গুলশান সব মিলিয়ে কমপক্ষে ১০০ টি স্পটে আজ বড় পর্দায় খেলা দেখার ব্যাবস্থা করা হয়েছে । প্রধান মন্ত্রী গতকাল ঘোষনা দিয়েছেন আজ বাংলাদেশের কোথাও কোন লোডশেডিং হবে না । যাক নিশ্চিন্ত হওয়া গেল । শুধু ঢাকা নয় সারা বাংলাদেশেই আজ একই অবস্থা। সুর্য মাথার উপর আসতেই প্রস্তুতির তোড়জোড় ।

হাসপাতালের ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে টেলিভিশন দেয়া হয়েছে । জেলখানাতে বিশেষ ব্যাবস্থায় খেলা দেখার ব্যাবস্থা করা হয়েছে । এ এক নতুন বাংলাদেশ । খুব ভাল এবং ভয় লাগছে । প্রত্যাশার সাথে প্রাপ্তির কি মিল ঘটবে ? ছেলেরা কি পারবে আজ অস্ট্রেলিয়াকে হারিয়ে বিশ্বচ্যাম্পিয়ান হতে ।

যদিও ফাইনাল পর্যন্ত বাংলাদেশ কারো দয়ায় চড়ে আসেনি । যোগ্যতার প্রমান দিয়ে এসেছে । এইতো সেমিফাইনালে শ্রীলংকাকে হারালো ৫২ রানে হেসে খেলে । কিন্তু পরিসংখ্যান দিয়েত খেলার মুল্যায়ন হয় না । কোটি মানুষের এইযে আশা আকাংখা উল্টো ছেলেদের উপর চাপ না হয়ে যায় ।

খেলা শুরু হতে বেশীক্ষন নেই । দেশ থেকে মা ফোন দিল “বাবা নামায পড়ে দোয়া করছিস তো ?বাড়ীতে ৩ খতম দিছি ,আল্লাহ ভরসা আমরা আজকে জিতবোই । বুকটা ধক করে ওঠে । যদি কিছু না হয় । টস করতে মাঠে প্রবেশ করল মাইকেল ক্লার্ক এবং মুশফিকুর রহিম ।

সাড়ে ৬ ফুটি ক্লার্কের সামনে ৫ ফুট ৩ ইন্চির মুশফিককে বড্ড বেমানান দেখাচ্ছে। সুনিল গাভাস্কার হেড টেলের মুদ্রাটি নিক্ষেপ করলেন । টস ভাগ্য ক্লার্কের। ফ্লাড উইকেন তাছাড়া তাদের বোলিং মুলত পেস নির্ভর আর শেষ বিকেলে সিমাররা উইকেট থেকে বেনিফিট পাবে । যে কোন অধিনায়কই এই উইকেটে চোখ বুজে ব্যাটিং নিবে ক্লার্কও ব্যাতিক্রম হলো না ।

বিষন্ন বদনে মুশফিক প্যাভেলিয়নের দিকে ফিরছে । বড্ড অসহায় লাগছে । ভাগ্য হয়ত আজ সহায় হবে না । খেলোয়ারদের নিয়ে বক্সে ঢুকে দরজা বন্ধ করল মুশফিক । টেবিলে ছড়িয়ে দিল লাল সবুজের পতাকা ।

সবার দিকে একবার তাকিয়ে প্রশ্ন করল এই পতাকাটার জন্য কে কি করতে পার ?ঘর জুড়ে পিনপতন নিস্তবদ্ধতা । সামনে এগিয়ে এল মাশরাফি লাল বৃত্তের মাঝে মুষ্টিবদ্ধ হাত রেখে বলল সব কিছু । এগিয়ে এল সাকিব। একে একে সবাই হাত রাখল। সেনাপতির মতো মুশফিক সবার সামনে গিয়ে গেয়ে উঠল আমার সোনার বাংলা আমি তোমায় ভালবাসি ।

শুধু ঠোট না পুরো শরীর যেন কেপে উঠল সবার । দরজায় কড়া নাড়ছে পাইবাস । মাঠে নামতে হবে । সবাই যেন ব্যক্তিগত কিট বক্স থেকে কি যেন পকেটে ভরছে । মুশফিকের বাবার টুপি,সাকিবের মায়ের দেয়া তাবিজ,রাজ্জাকের ভাগ্নির স্টিকার,মাশরাফির মেয়ের ফুল তোলা রুমাল।

খেলা শুরু হল শেন ওয়াটশন আর বেলী ইনিংসের গোড়াপত্তনে মাঠে নামলেন । বোলিং প্রান্তে মাশরাফি । প্রথম বল অফ স্টাম্পের কিছুটা বাইরে বেলী ঝুকি নিলেন না । দেখে শুনে ছেড়ে দিলেন । ওভারের ৩য় আর ৫ম বলে দু দুটো চার ।

স্টেডিয়ামের অস্ট্রেলিয়া অংশ নেচে উঠল । পরের ওভার নাজমুল মাত্রই ইনজুরি কাটিয়ে উঠেছে। ২য় ওভারে একটি ৬ সহ সবমিলিয়ে ১১ ,ওয়াটশন বেলীর তান্ডবে ৮ ওভার শেষে দলীয় রান ৫৬ বিনা উইকেটে । বাঘের গর্জন কিছুটা স্তিমিত লাগল । মুশফিকের কপালের ভাজও স্পষ্ট হতে লাগল ।

বল তুলে দিবেন দীর্ঘদিনের যোদ্ধা সাকিবের হাতে । সেমিফাইনালে উইকেট শুন্য ছিল আজ যদি কিছু হয় । করলেন ,মামুলি পেস বোলিং এর পর স্পিন আক্রমনে কিছুটা বিপর্যস্ত লাগল অসি ওপেনারকে । দেখে শুনে খেললেন। ওভারে মাত্র ২ রান।

তৃপ্তির ঢেকুর তুলল সাকিব। সবকিছু ঠিকঠাক মতো হচ্ছে। অন্যপ্রান্তে রাজ্জাক । লেফটি স্পিনের প্রথম কুইকারে সরাসরি বোল্ড ওয়াটশন । হাজার মাইল দুর থেকেই স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছি বাংলাদেশের উম্মাদনা।

গ্যালারী উত্তাল । পরের ওভার সাকিব তুলে নিলেন আরো একটা উইকেট। উইকেট পড়ছে তবে রানের চাকা আটকানো যাচ্ছে না । ২০ ওভার শেষে দলীয় রান ১৩৪ দুই উইকেটের বিনিময়ে । ফসকে যাচ্ছে খেলাটি।

মাশরাফি পকেটে হাত দিয়ে মেয়ের ফুলতোলা রুমালটি বের করলেন। কল্পনায় ভেসে উঠল মায়শার মুখ যেন আর্তনাদে বলছে বাবা কিছু একটা কর । কপালের ঘাম নয়ত চোখের পানি কিছু একটা পড়ল বুঝলাম । মুশফিকের কাছে বল চাইল। ১৩০/৩৫ গতির পেস এই মুহুর্তে কোন কাজেই আসবে না ক্রিকেট বোদ্ধাদের অভিমত।

কিন্তু মুশফিক বাজী রাখলেন মাশরাফিতে । হয়ত চোখের পানিতে বলের শাইন ফিরাল প্রথম দুই বলে দুই উইকেট । বাংলা আবার উত্তাল । ৫৬ হাজার বর্গমাইল কেপে উঠল । স্কোর বোর্ড ১৩৪/৪ ,আবার খেই হারাল বাংলাদেশ ।

রানের গতি কমছে না উইকেট মাঝে দুই একটা যাও পড়ছে। একসময় স্কোর দাড়াল ২০৯/৫ ,ক্রীজে ডেভিড হাসি আর শন মার্শ । তুলে মারতে শুরু করেছেন । পরিকল্পনা ওলট পালট হয়ে যাচ্ছে। মুশফিক ঠিকই দেখতে পাচ্ছে বাংলাদেশকে।

রিকশাওয়ালা রিকসা থামিয়ে ঘন্টার পর ঘন্টা সিটের উপর দাড়িয়ে শো রুমের টিভিতে খেলা দেখছে । রং পতাকা হাতে উতসবের জন্য বসে আছে ছোট ছোট বাচ্চারা । সাকিব রিয়াদকে কাছে ডাকলেন । কি যেন পরামর্শ করলেন আর পকেট থেকে বের করে কিছু একটা দিলেন ওদের হাতে । রিয়াদ মুঠো খুলে দেখে ছোট্ট একটা পতাকা ।

তিনজনই তিনজনের দিকে তাকালেন অধিনায়ক ঘোষনা দিলেন স্পিন অলআউট এটাক হবে। হয় খেলায় ফিরব নয়ত ছিটকে যাব । আর মাত্র ২ টা উইকেট পড়লেই ওদেরকে ২৫০ এর ঘরে আটকে রাখা যাবে । অধিনায়কের আস্থার প্রতিদান দিতে বেশী দেরি করল না সাকিব রিয়াদ । ২ টা স্লিপ একটা গালি শর্ট মিড উইকেট আর শর্ট ফাইন্ড লেগে ফিল্ডার রাখা হল ক্রিকেট বোদ্ধারা হায় হায় করে উঠল ।

একি আত্মঘাতি সিদ্ধান্ত !৩ টি উইকেট ভাগ করে নিল সাকিব রিয়াদ আর রাজ্জাক । ৫০ ওভারে ৯ উইকেটে রান দাড়ালো ২৬২ । আড়মোড় ভাঙ্গছে বাংলাদেশ। এই রানতো অজেয় নয় । আমরাতো এখন দিব্বি ২৫০/৩০০ রান করছি ।

তাহলে ভয় কি । আজকে ঠিকই হবে । অধিনায়ক তার সৈনিকদের নিয়ে আবার রুদ্ধদ্বার আলোচনা । প্রোটোকল ভেঙ্গে লুকিয়ে সবাইকে ২ মিনিট সময় দেয়া হল বাড়ীর সাথে কথা বলতে । তামিম সাকিবের মাকে ফোন দিয়ে পাওয়া যাবে না কারন তারা আজ খেলা শেষ না হওয়া পর্যন্ত নামায ছেড়ে উঠবেন না ।

মুশফিকের বাবা রোজা রেখেছেন । আনামুলের মুক্তিযোদ্ধা বাবা কম্পিত কন্ঠে বললেন বাবারা যদি জয়ী হয়ে ফিরিস তবে এই মুক্তি কমান্ডার তোদের স্যালুট দিবে । চেতনা ফিরল ক্রিকেটারদের । ওপেনিং এ নামল তামিম আর জুনায়েদ । বোলিংগার আর সিডেলস বলে আগুন ঝড়াচ্ছে ।

আমাদের তামিমও কম যায় না । ওভারের ৩য় বলে সপাটে ব্যাট চালালেন । ৪,স্টেডিয়াম জুড়ে হুংকার । জুনায়েদও আজকে মরনপন যুদ্ধ করবেন বলে ব্রত করেছেন শেষ বলে আবার ৪ ,মাঝে মাঝে ৪ দুই একটা সিংগেল নিয়ে রান ভালই হচ্ছিল । ৫ ওভার শেষে রান দাড়াল বিনা উইকেটে ৩২ ,কেউ রান বাড়াচ্ছে না সবাই গুনছে আর কত লাগবে ।

হটাত এক ঝড়ে ভেঙ্গে পড়ল উইকেট ভেঙ্গে গেল স্বপ্ন । এক ওভারেই তামিম জুনায়েদ আউট । স্টেডিয়ামের বাংলাদেশ অংশে পিনপতন নিরাবতা । বাংলাদেশের স্বপ্নহোতা মানুষগুলোর মুখ রাতে অন্ধকারের চেয়ে কালো হতে লাগল । রিতী ভেঙ্গে ব্যাট হাতে নামলেন মুশফিক ।

আরে একি একি ওর তো আরো নিচে খেলার কথা !গেল সব গেল বলে আর্তনাদ করে উঠল টিম ম্যনেজমেন্ট। গায়ে মাখালো না অধিনায়ক । সে সাত সাগরের মাঝি,যুদ্ধের সর্বাধিনায়ক বুক পেতে তাকেই দাড়াতে হবে । এক দুই এক দুই করে স্কোরে রান যোগ হতে লাগল । মাঝে আরো দুইটা উইকেট পড়ল কিন্তু মুশফিক আগলে রইল এক প্রান্ত।

মাঠে নামলেন দলের কান্ডারী সাকিব । নামার সময় একটা প্লেকার্ড দেখলেন লেখা সাকিব আল হাসান আমাদের নুর হোসেন । জেদ চেপে গেল মনের মধ্যে । সাকিব মুশফিক ভালোই চলছিল । স্কোর দাড়াল ৪ উইকেটে ১৩৮।

২৯ ওভার শেষ । পরিসংখান দাড়াল ১২৬ বলে ১২৭ রান । উইকেট হাতে ৬ টি । হিসাব মেলাতে না মেলাতেই মুশফিক ফিরে গেল ৪২ রানে । যেন বিনা মেঘে বজ্রপাত ঘটল পুরো স্টেডিয়াম জুড়ে।

রিয়াদ সাকিব বল হিসাব করে করে খেলতে লাগল একসময় রিয়াদও ফিরে গেল যখন রান প্রয়োজন ৬২ বলে ৭৮ রান । রাজ্জাক নামতে চাইলেন কিন্তু অধিনায়ক পাঠালেন মাশরাফিকে । নেমেই ছোট খাট একটা ঝড় বইয়ে দিলেন ডর্থি আর বেয়ারের উপর । বল আর রানের সমতা ফেরালেন । ৪২ বলে ৪৮ রান রেখে মাশরাফিও সাজঘরের পথ ধরলেন ।

৪২ বলে ৪৮ উইকেট হাতে ৩ টি । এবার সাকিব হাল ধরলেন । দেখে শুনে নিজেই স্ট্রাইক বারবার নিয়ে দুই এক করে রান নিলেন । বল আর রানের পার্থক্য আবার বাড়তে লাগল । ১৮ বলে ২৮ রান ।

স্ট্রাইকিং প্রান্তে রাজ্জাক । থমকে আছে বিশ্ব থমকে আছে বাংলাদেশ । ইতিহাস কি নতুন করে লিখা হবে নাকি ইতিহাসেরই পুনরাবৃত্তি হবে । শ্বাস আটকে আছে সবার । কোথা থেকে যেন অশরীরী ভর করল রাজ্জাকের উপর ।

লং অন দিয়ে বিশাল ছক্কা । ওয়াটশনের মুখের চওড়া ভাবটা মুছতে শুরু করেছে । ৪র্থ বলে আবার ৪ । ১২ বলে ১৫ রান । ১৬ কোটি মানুষের ৩২ কোটি চোখ আটকে আছে টেলিভিশনের পর্দায় ।

প্রত্যন্ত গ্রামে যেখানে বিদ্যুত নাই ব্যাটারি দিয়ে খেলা দেখছে বাড়ীর ১০০ বছর বয়স্ক বৃদ্ধা। কিছুই হয়ত বুঝে না তাই দোয়া করে আল্লাহ বাচ্চা গুলান যা চায় তুমি তাই দিয়া দিও । ঢাকা টি এস সি লোকারন্য । যে যাকে পারছে শক্ত করে ধরে রাখছে যেন এতে সাকিবের হাতে একটু জোর আসবে । নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা পুলিশ সব ভুলে চোখ বড় পর্দায়।

সংসদ ভবন এলাকায় ভীর জমাতে শুরু করেছেন সরকারী বেসরকারী সর্বদলীয় লোকজন । গনভবন ছেড়ে প্রধানমন্ত্রী বেড়িয়ে এলেন । খোল জীপে দাড়িয়ে সংসদ ভবনের স্ক্রীনে চোখ আটকে রাখলেন । ওদিকে সিডনি মাঠের অবস্থা আরো কম্পিত । আনিসুল হক আর জাফর ইকবল বেচারারা কিছুক্ষন পরপর চোখ মুছছেন ।

হাত পা কাপছে । আসলেই কি কিছু হবে । আসিফ ব্যাস্ত স্থানীয় বাঙ্গালীদের নিয়ে কোরাস গাইতে বেশ বেশ বেশ সাবাশ বাংলাদেশ,বেচারা হার্টের রুগি আপ্রান চাচ্ছেন টেনশন না নিতে । কিন্তু পারছেন কই । ব্যাট হাতে স্ট্রাইকিং প্রান্তে সাকিব বল হাতে দেীড়ে আসছে জনসন।

পার্থ রাসেলের হাত শক্ত করে ধরে আছে। চোখে পলক পড়ছে না নি:শ্বাস আটকে আছে । প্রথম বলেই সাকিব স্কুইপ ! কিপারের মাথার উপর দিয়ে ৪ । ১১ বলে ১১। নো,২ টি সিঙ্গেল কয়েকটি ডট বলের সর্বশেষ সমিকরন দাড়ায় ৩ বলে ৪ রান ।

স্ট্রাইকে রাজ্জাক । প্রধানমন্ত্রীর গাড়ীর পাশে আর একটি গাড়ী এসে থামলো । পাশ ফেরার সময় নেই তারপরও দেখি সেটা বিরোধী দলীয় নেত্রীর গাড়ী । তিনিও আজ এসেছেন জনতার কাতারে । হাত বাড়িয়ে দিলেন প্রধানমন্ত্রী ।

আজ আর ফেরালেন না বিরোধী দলীয় নেত্রী। হাত মেলালেন । লক্ষ মাইল দুর থেকেই যেন রাজ্জাক দেখতে পেল সব । সপাটে ব্যাট চালালেন । ব্যাটের কোথায় লাগল খেয়াল করলাম না তবে বল চলে গেল সিমানার বাইরে ।

রাজ্জাক ব্যাট হাতে যে দেীড় শুরু করল তা আর থামলোই না । সারা মাঠ জুড়ে দেীড়াতে লাগল। একসময় থেমে গেল ছেলেটা হুস হারিয়ে ফেলেছে ততক্ষনে সাকিব মাঠেই সেজদা দিল পশ্চিম দিক ফিরে। তারপরই ঝরঝর করে কান্না । আরে বাচ্চাগুলো সব কাদে কেন ।

আজতো ওদের খুশির দিন। বাংলাদেশ ২০১৫ বিশ্বকাপ চ্যাম্পিয়ান । আতাহার আলী খান ,আকরাম খান,বুলবুল,হাবিবুল বাশার সব যেন আজ শিশু হয়ে গেছে । কেউ কারো সাথে নেই । সবাই উম্মাদ সবাই উত্তাল।

সে দেশেই হোক কিংবা বিদেশেই হোক । শোভাযাত্রায় নেতৃত্ব দিচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী আর বিরোধী দলীয় নেত্রী । রাজপথে লক্ষ মানুষেল ঢল । আজ কোন কথা হবে না শুধুই উম্মাদনা । যা খুশি তাই ।

যা ইচ্ছা তাই । বি:দ্র: উপরোক্ত ঘটনার প্রতিটি চরিত্র এবং ঘটনা সম্পুর্ন কাল্পনিক যদি ঘটনাটা যদি বাস্তব হতো তবে আমাদের চেয়ে কেউ খুশি হয়ত হতো না । ১৬ কোটি বাঙ্গালীকে এক করতে পারিস তোরা ১১ জন । দেখনা, যদি কিছু হয় !জয় বাংলা ।  ।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে ১৭ বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.