বিরোধী দলের সৈয়দা আসিফা আশরাফী পাপিয়ার এক বক্তব্যকে কেন্দ্র করে রোববার কিছু সময়ের জন্য উত্তপ্ত হয়ে ওঠে সংসদ। অনির্ধারিত আলোচনায় দাঁড়িয়ে পাপিয়া প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সম্পর্কে কথা বললে সরকারি দলের সংসদ সদস্যরা প্রতিবাদমুখর হয়ে ওঠেন। ৮৩ দিন পর বাজেট অধিবেশনে ফেরা বিএনপির সংসদ সদস্যরা এদিন এম কে আনোয়ারের নেতৃত্বে সংসদে যোগ দেন। তাদের সঙ্গে অধিবেশনকক্ষে ঢোকেন এলডিপির সভাপতি কর্নেল (অব.) অলি আহমদ এবং জামায়াতের সংসদ সদস্য আ ন ম শামসুল ইসলাম।
শুরুতে বিএনপির শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানী পয়েন্ট অব অর্ডারে দাঁড়িয়ে গত ৫ জুন বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান সম্পর্কে বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী আব্দুল লতিফ সিদ্দিকীর 'অসংসদীয়' বক্তব্য এক্সপাঞ্জের দাবি জানান।
এ সময় স্পিকার শিরিন শারমীন চৌধুরী বলেন, মন্ত্রীর বক্তব্যে অসংসদীয় কিছু থাকলে পরীক্ষা করে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
এ্যানী অভিযোগ করেন, দুর্যোগ ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় বিরোধী দলের সদস্যদের প্রতি বৈষম্য করছে। টিআর-কাবিখার বরাদ্দ বিরোধী দলের সদস্যদের এলাকায় দেয়া হচ্ছে না। এ্যানী তার দলের সংসদ সদস্য আসিফা আশরাফী পাপিয়াকে পয়েন্ট অব অর্ডারে কথা বলতে দিতেও স্পিকারকে অনুরোধ জানান।
সংরক্ষিত মহিলা আসনের সংসদ সদস্য পাপিয়া তিন দিন আগে পয়েন্ট অব অর্ডারে কথা বলতে দাঁড়ালেও তা বিধিসম্মত হয়নি উল্লেখ করে তাকে সুযোগ দেননি স্পিকার।
এরপর বিএনপি ওয়াকআউট করে।
পাপিয়া রোববার পয়েন্ট অব অর্ডারে দাঁড়িয়ে গত বৃহস্পতিবার আওয়ামী লীগের সংসদীয় দলের বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার এক বক্তব্য উদ্ধৃত করে তার ওই বক্তব্যকে 'ধিক্কার' জানান। তিনি বলেন, 'বিএনপি কারো কাছে মুচলেকা দিয়ে রাজনীতি করে না। সবাই জানে, কারা মুচলেকা দিয়ে ১৯৮৬ সালে নির্বাচনে অংশ নিয়েছিল। তারেক রহমান চিকিৎসার জন্য বিদেশে রয়েছেন।
তিনি কারো কাছে মুচলেকা দিয়ে রাজনীতি করেন না। '
বিরোধী দল সম্পর্কে প্রধানমন্ত্রীসহ সরকারি দলের সংসদ সদস্যরা 'বিভ্রান্তিমূলক' বক্তব্য দিচ্ছেন বলেও অভিযোগ করেন পাপিয়া।
তিনি বলেন, তারেক রহমানকে গ্রেপ্তারের কথা বলে নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকার সম্পর্কে আলোচনার জন্য বিরোধীদলীয় নেতার সন্তানকে এজেন্ডা হিসেবে দাঁড় করাতে চান প্রধানমন্ত্রী।
বক্তব্যের এক পর্যায়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী দীপু মনিকেও আক্রমণ করেন বিরোধীদলীয় সদস্য পাপিয়া। তাকে 'হাইব্রিড' নেতা হিসেবে আখ্যায়িত করেন তিনি।
দলের জ্যেষ্ঠ ভাইস চেয়ারম্যানের প্রশংসা করে পাপিয়া বলেন, তারেক রহমান পথেঘাটে বৃষ্টিতে ভিজে রাজনীতি করেছেন।
পাপিয়ার বক্তব্যের সময়ই সরকারদলীয় হুইপ আ স ম ফিরোজ, স্থানীয় সরকার প্রতিমন্ত্রী জাহাঙ্গীর কবীর নানক এবং ফজলে রাব্বী মিয়া কথা বলতে স্পিকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন।
এক পর্যায়ে সংসদ উপনেতা সৈয়দা সাজেদা চৌধুরীও স্পিকারের দৃষ্টি আকর্ষণের চেষ্টা করেন। তবে স্পিকার শিরিন শারমীনকে এ ক্ষেত্রে মাইক বন্ধ না করে বিরোধী দলের প্রতি নমনীয় থাকতেই দেখা যায়।
পাপিয়ার বক্তব্যের পর ফজলে রাব্বী মিয়া বক্তব্য রাখার সুযোগ পান।
তিনি বিরোধী দলের সংসদ সদস্যের বক্তব্য এক্সপাঞ্জের দাবি জানিয়ে বলেন, এই বক্তব্য কার্যপ্রণালী বিধি অনুযায়ী হয়নি।
এরপর আব্দুল মান্নান বলেন, "পয়েন্ট অব অর্ডারের নামে সংসদ নেতা ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী সম্পর্কে 'অশালীন' বক্তব্য রেখেছেন বিরোধীদলীয় সংসদ সদস্য। আমি তার সমস্ত বক্তব্যকে ধিক্কার জানাই। "_ পাপিয়াকে পাল্টা উত্তর দেন সরকারদলীয় এই সংসদ সদস্য।
রেহানা আক্তার
পরে সম্পূরক বাজেটের ওপর আলোচনায় বিএনপির সংসদ সদস্য রেহানা আক্তার স্পিকারকে উদ্দেশ করে বলেন, 'শোনা যাচ্ছে, আপনি নাকি নির্বাচনকালীন সরকারের প্রধান হবেন।
' তিনি দাবি করেন, তত্ত্বাবধায়ক সরকার ছাড়া কোনো নির্বাচন হবে না। এ সময় ফেনীর ভাষায় তিনি বলেন, 'তত্ত্বাবধায়ক সরকার নিয়া কোনো চুদুরবুদুর চইলত ন। '
তিনি আরো বলেন, 'পদ্মা সেতু নির্মাণের জন্য টিফিনের টাকা নেয়া হলো, চাঁদাবাজি করা হলো। সেই চাঁদাবাজির টাকার ভাগ নিয়ে ছাত্রলীগ-যুবলীগের মারামারিতে রাজশাহীতে একজন খুন হলো। পদ্মা সেতু নির্মাণের আগেই ১২ শতাংশ কমিশন দেয়ার কথা ফাঁস হওয়ার পর বিশ্বব্যাংক ঋণচুক্তি ঘ্যাচাং করেছে।
১০ পারসেন্টের সঙ্গে যারা জড়িত, তাদের নাম পত্রিকায় এসেছে; কিন্তু ২ পারসেন্টের সঙ্গে যারা জড়িত, তাদের নাম পত্রিকায় আসেনি। সম্প্রতি কানাডিয়ান টেলিভিশনের প্রতিবেদনে ওই ২ পারসেন্ট কমিশনের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর পরিবারের সদস্যরা জড়িত বলে উল্লেখ করা হয়েছে। '
এ সময় রেহানা আক্তারের উদ্দেশে স্পিকার বলেন, 'আপনি সম্পূরক বাজেট নিয়ে কথা বলুন। ' কেউ যেন গায়ের জোরে একদলীয় নির্বাচন করতে না পারে, সে ব্যাপারে স্পিকারের হস্তক্ষেপ কামনা করে রেহানা আক্তার বলেন, "কেউ বলছেন, প্রধানমন্ত্রী নির্বাচনকালীন সরকারের প্রধান হবেন। আর বাতাসে ঘুরে বেড়াচ্ছে, আপনি নাকি নির্বাচনকালীন সরকারের প্রধান হবেন।
কিন্তু নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার ছাড়া কোনো নির্বাচন হবে না। আমি আমার ফেনীর ভাষায় বলতে চাই, 'তত্ত্বাবধায়ক সরকার নিয়া কোনো চুদুরবুদুর চইলত ন'। "
কথা বলুন শালীন
ভাষায় : স্পিকার
বিএনপির রেহানা বেগম রানুর বক্তব্যকে কেন্দ্র করে সরকারি দলের সদস্যদের সমালোচনার পর সংসদ সদস্যদের সতর্ক করেন স্পিকার শিরিন শারমীন চৌধুরী।
রোববার সংসদ অধিবেশনে রানুর আগে বিএনপির সৈয়দা আসিফা আশরাফী পাপিয়ার বক্তব্য নিয়েও সংসদে উত্তাপ ছড়ায়।
বিরোধী দলের সংরক্ষিত মহিলা আসনের দুই সদস্যের বক্তব্য নিয়ে উত্তেজনার পর দেশের প্রথম নারী স্পিকার বলেন, 'সংসদে কথা বলার সময় কার্যপ্রণালী বিধি অনুযায়ী কথা বলবেন।
বিশেষ করে ২৭০-এর উপ-দফা-৬ বিধি মেনে চলবেন। '
কার্যপ্রণালী বিধির ২৭০ বিধিতে সংসদে বক্তৃতা দেয়ার সময় 'পালনীয় বিধি' সম্পর্কে বলা হয়েছে। ২৭০-এর উপ-দফা-৬-এ বলা হয়েছে_ 'কোনো আক্রমণাত্মক, কটূ বা অশ্লীল ভাষা ব্যবহার করিবেন না। ' ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।