কিছুদিন আগে আমার এক চাচাতো ভাই বিদেশ থেকে এসেছে। আবার বিদেশ চলে যাওয়ার পূর্বে চাচা চাচী তার একমাত্র ছেলের বিয়ে দেয়ার জন্য উঠে পরে লাগলেন। শুরু হল পাত্রী দেখার ধুম। আজকে এ জায়গায় তো কালকে ও জায়গায়। আমিও পাত্রী দেখার জন্য একদিন চাচা চাচী, চাচাতো ভাই ও তার দুই মামার সাথে সওয়ারী হলাম।
পাত্রীর বাড়িতে এসে দেখি তারা মোটামুটি একটা মিনি বিয়ের অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে। কিছুক্ষন কথা বার্তা হওয়ার পর শুরু হল মেয়ে দেখা পর্ব। মেয়েটি খুব ধীর কদমে এসে সালাম দিয়ে বসল। এবার শুরু হল তার ইন্টারভিউ পর্ব। প্রথমে সাধারন প্রশ্ন উত্তর পর্ব।
তারপর বুদ্ধিবৃত্তিক প্রশ্ন উত্তর পর্ব। এতক্ষন পর্যন্ত পরীক্ষা নিচ্ছিলাম আমি , চাচা, আর চাচাতো ভাই এর একজন মামা। আমাদের প্রশ্ন উত্তর পর্ব শেষ হলে পাত্রীর শুরু হল আসল পরীক্ষা। আমার চাচী ও আরেক মামা শুরু করলেন-- প্রথমে তারা পা্ত্রীকে একটু হাটতে বললেন, পাত্রীর হাটা পর্ব শেষ হলে চাচী কৌশলে পাত্রীকে নিজের কাছে বসিয়ে তার চুল খুলে চুল দেখতে লাগলেন। লক্ষ্য করলাম চাচী পাত্রীর চোখ, কান , মুখ থেকে শুরু করে হাত পায়ের নখ পর্যন্তু খুটিয়ে খুটিয়ে দেখতে লাগলেন।
দেখে আমার মনে হতে লাগল আমরা পাত্রী নয় যেন কোরবানীর হাটে গরু দেখতে এসেছি। পাত্রীর চেহারা দেখে মনে হল সে তার চরম অস্বস্তি ঢাকার প্রানপন চেষ্টা চালাচ্ছে। আমার চাচী এবার তাকে তার ছেলের সাথে বসালেন। তাদের একসাথে দাড় করালেন , আবার বসালেন। বিভিন্ন এঙ্গেল থেকে কৌশলে তাদের দেখতে লাগলেন।
এবার তিনি পাত্রীকে নিজের সাথে মাপলেন। চাচীর এই পর্যবেক্ষন আমি তাজ্জব হয়ে দেখতে লাগলাম আর নিজের কাছে লজ্জিত হতে থাকলাম। প্রায় একঘন্টা এরকম পরীক্ষা দেয়ার পর পা্ত্রীর মুক্তি মিলল। খাওয়া দাওয়া শেষে পাত্রী পক্ষের লোকজনের চোখ মুখ দেখে মনে হতে লাগল মেট্রিক পরীক্ষার ফল প্রকাশ হবে আর কয়েক মিনিটের মধ্যে। কিন্তু তাদেরকে আমরা আশা নিরাশার পেন্ডুলামে ঝুলিয়ে হ্যা বা না কিছুই না বলে চলে আসলাম।
বাড়িতে এসে আশে পাশের লোকজনের অভিব্যাক্ত্যি দেখে আমার মনে হল আমরা বোধহয় কোন অজানা দেশের অজানা জীব দেখে এসেছি। মেয়ে হাত কেমন, পা কেমন, চোখ কেমন, গায়ের রং কেমন, উচ্চতা কেমন, চুল কতবড়, হাটা চলা কেমন, হাসি কেমন, কথা বলার ধরন কেমন, বয়স কত, মেয়ে কি করে, ইত্যাদি নানা প্রশ্নবানে জর্জরিত হতে লাগলাম। আশে পাশের লোকজন আত্নীয় স্বজন একজনের উত্তর শুনে সন্তুষ্ট হতে পেরে আরেক জনের কাছে শুনতে চাইছেন। ভাব দেখে মনে হল যে আগে তথ্য পাবে সে তার বিশ্লেষন করতে পারবে আরও সুচারু ভাবে। ও দিকে আমার চাচী তার কাছে করা পাত্রী সম্পর্কে প্রায় প্রতিটি প্রশ্নের নেতিবাচক জবাব দিচ্ছেন।
তার মানে পাত্রী তার পছন্দ হয় নি। অর্থাৎ পাত্রী পক্ষ পরীক্ষায় ফেল করেছে।
পাত্রী দেখার এই সংস্কৃতি গ্রামে দেখা গেলেও শহর এলাকাও এর বাইরে নয়। ছেলে পক্ষ পাত্রী দেখে পাত্রী পছন্দ না হলে তার কিছু যায় আসে না কিন্তু পাত্রী পক্ষ পড়ে যায় অস্বস্তিকর অবস্থায়। সবচাইতে খারাপ অবস্থা হয় পাত্রীর।
তার আত্নবিশ্বাস চরম হারে কমে যায় এবং সে প্রচন্ড হীনমন্যতায় ভোগে। সে নিজেকে মূল্যহীন ভাবতে থাকে এবং হতাশায় নিমজ্জিত হয়।
পাত্রী দেখার এই সংস্কৃতি বহু যুগ আগে থেকে বাংলাদেশে প্রচলিত। কিন্তু বর্তমান আধুনিক যুগে এর বিকল্প নিয়ে ভাবতে হবে। কেননা মেয়েরা আর যাই হোক কোরবানীর হাটের গরু নয়।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।