জড় এক প্রসঙ্গ কাঠামোর নিবিড় পর্যবেক্ষক :P
জাতি হিসেবে আমরা দিন দিন ডিজিটাল হয়ে যাচ্ছি। সকাল বিকাল তিনবেলা ফেসবুকে না ঢুকলে আমাদের পেটের ভাত হজম হয় না। কিছু খুঁজতে হলেই আমরা গুগল সার্চ করি। কোন ম্যুভির নাম শুনলেই তার আই এম ডি বি রেটিং এ চোখ বুলিয়ে নেই। আমাদের মুখের ভাষাতে ঢুকে পড়েছে লোল, ডব্লিউ টি এফ, টিসি ইত্যাদি।
তবে এই চিত্রটি যে আমাদের সমগ্র জাতির নয় তা আমরা প্রায়ই ভুলে যাই। মনিটরটি থেকে চোখ সরিয়ে একটু জানালায় রাখলেই হয়ত অদূরেই কোন বস্তি দেখা যায়, আমরা তা দেখেও না দেখার ভান করি। সব কিছু দেখলে দেশ এগুবে কি করে? হ্যাঁ দেশকে এগিয়ে নিতে হবে। এজন্য আমাদেরও এগুতে হবে। সামনে এগিয়ে যেতে আমরা গাড়ি কিনি।
আমরা আরও সামনে এগিয়ে যাই। গাড়িটি জ্যামে পড়লে আমরা নাক সিটকাই। কোন বৃদ্ধা হয়ত তার পঙ্গু সন্তানটির চিকিৎসার জন্য এসে গাড়ির গ্লাসে হাত বুলায়। আমরা দেখেও না দেখার ভান করি। গাড়ির কাল গ্লাস, এবং আমাদের চোখের কাল রোদচশমা আমাদের এসব ডিসগাস্টিং মানুষদের দেখা থেকে দ্বিস্তরের নিরাপত্তা দেয়।
উত্তর বঙ্গের কোন এক বৃদ্ধ খাবারের অভাবে মাটি খাচ্ছেন, একজন আবার নাকি কচুপাতা সিদ্ধ করে খাওয়া শুরু করেছেন। কে এফ সির পার্শেল বক্স থেকে ডাবল জিঞ্জার বার্গারটি বের করতে করতে আমরা খবরের কাগজের এই পেইজগুলো বাদ দিয়ে পরের পাতায় চলে যাই। "কেন যে এইসব খবর পেপারে আসে, যত্তসব" কে এফ সির আধখাওয়া বার্গারটা রাস্তার পাশের একটা কুকুরের দিকে ছুড়ে মারতে মারতে আমরা তৃপ্তির ঢেকুর তুলি। বার্গারটা এরা আসলেই ভাল বানায়। গাড়িতে এফ এম রেডিও ছেড়ে একটু চোখ বুজি।
আরজে গুলো আসলেই অনেক স্মার্ট, আগের রেডিওর উপস্থাপকেরা শুদ্ধ উচ্চারণের নামে কেমন খ্যাত করে কথা বলত। দেশটা আসলেই এগিয়ে যাচ্ছে। গুলিস্তান মোড় দিয়ে যখন সন্ধ্যাবেলা গাড়ি করে যাই শত-শত আহাম্মক পাবলিক বাসের জন্য দাঁড়িয়ে থাকে। কেন যে এরা সবাই একটা করে গাড়ি কেনে না আল্লাহই ভাল জানে। রাস্তার এই নোংরা পাবলিক বাসগুলো ব্যান করে দেয়া উচিত।
আমরা এসবও না দেখার ভান করি। এত দেখলে দেশ এগুবে না। আমরা প্রায়ই ভাবি এই দেশটার ম্যাক্সিমাম মানুষই গাধা। কোথাকার কোন ইউনুস একটা মামুলি নোবেল পেল আর সবাই তাকে নিয়ে নাচা শুরু করল। এই লোকের লেকচার এত মনযোগ দিয়ে শুনার কি আছেরে বাবা? আর তাকে এদেশ থেকে বিতারিত করলেও কার কি এসে যায়? মানুষ কিছু না-বুঝেই চিৎকার করে।
আমরা এসবও না দেখার ভান করি। মাটি-কচু খাওয়া সংবাদের সাথে সাথে আজকাল পেপারে আসছে রামুতে নাকি মুসলিমরা বৌদ্ধদের ঘর-বাড়ী জ্বালিয়ে দিয়েছে। এইসব জ্বালাও-পোড়াও ভায়োলেন্সের খবর ছাপিয়ে এরা যে কি মজা পায় গড নওজ। দামী সিগারেটে আগুন দিতে দিতে আমরা পরের পাতায় চলে যাই। সব দেখলে তো আর চলবে না।
পরের পাতাতেই সেই কাঙ্খিত খবর, খবরটা আমাদের নিয়েই--"সম্প্রতি ঢাকা ওয়াসার সামনে অনেক গুলো স্মার্ট ছেলেমেয়ে "ওপা গ্যাঙ্গাম স্টাইল" গানের সুরে ফ্ল্যাশ মব করেছে। " আমরাই আসলে আমাদের দেশটা রিপ্রেজেন্ট করছি। পাবলিক ভার্সিটির ছেলেপেলেদের মত আমাদের পরনে ছিল না ছেড়া জিন্স কিংবা কমদামী নন-ব্র্যান্ডেড টিশার্ট। আমাদের হাত ধরেই একদিন দেশটা এগিয়ে যাবে। "সরকারের কি সাহস ইউটিউব বন্ধ করে দিয়েছে!!! এই তো সেদিন রিহানার একটা গান দেখতে অনেক ইচ্ছা করছিল, কিন্তু দেখতে পারলাম না ইউটিউব বন্ধ থাকায়।
" আমাদের আরো অনেক গুলো ফ্ল্যাশ মোব করা উচিত
--> এক বৃদ্ধা আমার গাড়ির গ্লাস নোংরা করার প্রতিবাদে।
--> কে মাটি খেল না কচু সেদ্ধ খেল সে খবর ছাপানোর প্রতিবাদে।
-->রাস্তায় পাবলিক বাসের মত নোংরা যানবাহনগুলো চলার প্রতিবাদে।
হ্যাঁ আমাদের আরো অনেক ফ্ল্যাশ মব করতে হবে, গত ফ্ল্যাশ মোবে আমাদের অনেকের চেহারাই কালো এসেছে, কাউকে কাউকে আবার মোটাও লাগছিল। বার্গারটা বোধহয় ছাড়তেই হবে।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।