আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

তাহমিমা আনাম

৩৫ বছর বয়সী তাহমিমা আনাম সমৃদ্ধ সাহিত্যিক পরিমণ্ডলের ভেতর থেকেই সাহিত্যচর্চা শুরু করেছেন। তার বাবা মাহ্ফুজ আনাম বাংলাদেশের দ্য ডেইলি স্টার পত্রিকার সম্পাদক। তার দাদা আবুল মনসুর আহমদ একজন খ্যাতিমান লেখক এবং রাজনীতিক ছিলেন। বাংলাদেশের স্বাধীনতাযুদ্ধকে উপজীব্য করে তাহমিমা আনাম তার প্রথম উপন্যাস ‘গোল্ডেন এইজ’ লেখেন। বাবার চাকরিসূত্রে প্যারিস, নিউইয়র্ক সিটি এবং ব্যাংককে বেড়ে উঠেছেন।

তাহমিমা আনাম যুক্তরাজ্য প্রবাসী একজন বাংলাদেশী লেখিকা এবং ঔপন্যাসিক। তিনি প্রথম বাংলাদেশী যিনি ইংরেজি ভাষায় উপন্যাস রচনায় তার সিদ্ধির প্রমাণ রেখেছেন। প্রথম উপন্যাস আ গোল্ডেন এজ (A Golden Age) ২০০৭ সালের মার্চে ইংল্যান্ড থেকে প্রকাশিত হয়। বিখ্যাত প্রকাশক জন মারে এটি প্রকাশ করেছেন। তাঁর দ্বিতীয় উপন্যাস দ্য গুড মুসলিম ২০১১ খ্রিস্টাব্দের মে মাসে প্রকাশিত হয়।

এটি ২০১১ ‘ম্যান এশিয়ান লিটারেরি প্রাইজ’-এর জন্য প্রাথমিকভাবে মনোনীত হয়। ১৯৭৫ সালে তাহমিমা জন্মগ্রহণ করেন। পড়াশোনাও করেছেন ইংরেজি মাধ্যমে। তবে ইংরেজি মাধ্যমে পড়াশোনা করলেও বাংলা সংস্কৃতির চর্চা করেছেন। তার বাবা-মা ছোটবেলা থেকেই বাসায় তার সাথে বাংলাতে কথা বলতেন আর সময় সময় দেশে নিয়ে আসতেন।

চাকুরি ইস্তফা দিয়ে একসময় তার বাবা-মা চিরস্থায়ীভাবে দেশে ফিরে এলেও পড়াশোনার জন্য তাহমিমার আর ফেরা হয়ে উঠেনি। তবে মাঝেমধ্যেই তিনি বাংলাদেশে এসেছেন। বাবা-মা দুজনই একসময় জাতিসংঘে চাকুরি করতেন। তাহমিমা আনাম বলেন- মুক্তিযুদ্ধের গল্প আমার কাছে নতুন কিছু নয়। জন্মের পর থেকে মা-বাবার কাছে আমি মুক্তিযুদ্ধের গল্প শুনে এসেছি।

যত শুনেছি, ততই আগ্রহ বেড়েছে; এবং উপন্যাস লেখার প্রস্তুতির সময় খুব আগ্রহের সঙ্গে গবেষণা করেছি। ঢাকা, ময়মনসিংহ, টাঙ্গাইলে কথা বলেছি অনেক মানুষের সঙ্গে, যাঁরা মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিয়েছেন। অনেকে মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিকথা লিখেছেন, সেগুলোর কিছু কিছু পড়েছি। অনেকে স্মৃতিকথা লিখেছেন, কিন্তু এখনো প্রকাশ করেননি—এমন কিছু স্মৃতিকথাও পড়ার সুযোগ আমার হয়েছে। মা-বাবার কাছে শোনা গল্প ছিল আমার মূল প্রেরণার উৎস।

কিন্তু আমি যখন সিদ্ধান্ত নিলাম যে একটা উপন্যাস লিখব, তখন সিস্টেম্যাটিক্যালি আমাকে গবেষণা করতে হয়েছে। সে জন্য বাংলাদেশে এসে দীর্ঘ সময় কাটাতে হয়েছে। উপন্যাস সোনাঝরা দিন নামে বাংলা ভাষায় অনূদিত হয়েছে। তাহমিমা আনাম যুক্তরাষ্ট্রের সনামধন্য হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সমাজ নৃতত্ত্ব বিষয়ে পিএইচডি ডিগ্রী লাভ করেন। বাংলাদেশে না থাকার কারণে বাংলার উপর ভালো দখল তার ছিলোনা।

এজন্যই মূলত ইংরেজিতে হাত দিয়েছেন। তবে ইংরেজির মাধ্যমে বিশ্ববাসীর কাছে বাংলার ইতিহাস ও ঐতিহ্যকে ফুটিয়ে তোলার সুযোগ তাকে অনুপ্রাণিত করেছে। আ গোল্ডেন এজের বিষয়বস্তু হল বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ। তার জন্মের ৪ বছর আগেই মুক্তিযুদ্ধ শেষ হয়ে গিয়েছিলো। তবুও তিনি তার পূর্বপুরুষদের প্রেরণাকে পুঁজি করে মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে তার উপন্যাসে তুলে ধরতে সমর্থ হয়েছেন।

ক্রীশ্চিয়ান সাইন্স মনিটর বইটি সম্পর্ক লিখছে, "তাহমিমার লেখা যুদ্ধের বিভীষিকার মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের জন্মের এক সফল ট্রিলজি যা সময়ের প্রবাহে ক্রমান্বয়ে শক্তিশালী হয়ে পাঠককে এক অসম্ভব পরিণতির দিকে টেনে নেয়"। বইটিতে অসাধারণ রচনাশৈলী ও হৃদয়গ্রাহী কাহিনীচিত্রের জন্য তিনি ২০০৮ সালের কমনওয়েলথের শ্রেষ্ঠ সাহিত্য পুরস্কার লাভ করেন। তিনি তার পূর্বপুরুষদের প্রেরণাকে পুঁজি করে মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে তার উপন্যাসে তুলে ধরতে সমর্থ হয়েছেন। মূলত বাংলার মানুষের দৃষ্টিতে তিনি মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ফুটিয়ে তুলেছেন। এজন্য তিনি গ্রামে গ্রামে ঘুরে অনেক মুক্তিযোদ্ধাদের সাক্ষাৎকার নিয়েছেন।

এছাড়া তারেক মাসুদ ও ক্যাথরিন মাসুদ পরিচালিত মাটির ময়না চলচ্চিত্রের নির্মাণ সেটেও তিনি কাজ করেছেন। এসময় মুক্তিযুদ্ধ সম্বন্ধে তিনি নিগূঢ় জ্ঞান লাভ করেন। উপন্যাসটির কেন্দ্রীয় চরিত্র রেহানা। রেহানার মধ্যে তাহমিমা তার দাদীমার ছায়া ফেলেছেন। ‘আপনি কেন ইংরেজি ভাষায় লেখেন?’ উত্তরে তাহমিমা বলেন, ‘আমি একটা আন্তর্জাতিক পাঠকগোষ্ঠীর জন্য লিখি।

বিশ্বের বিভিন্ন দেশের পাঠকের কাছে আমি আমার লেখা পৌঁছাতে চাই। এ জন্য আমি ইংরেজিতে লিখি। ’ তাহমিমা আরও বলেন, ‘আমার প্রথম উপন্যাস দ্য গোল্ডেন এজ প্রকাশের অল্প সময়ের মধ্যে বাংলাদেশে বইটির বাংলা সংস্করণ প্রকাশিত হয়েছে। সাড়াও পেয়েছি বেশ ( তথ্যসুত্রঃ উইকিপিডিয়া এবং প্রথম আলো ) ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।