রামুর ঘটনায় আমি লজ্জিত। তবে হে মুসলিম হিসেবে আমি লজ্জিত নই। কারন যারা এই ঘটনার সাথে জড়িত তারা আর যাই হোক মুসলমান হতে পারে না। আমার ধর্ম আমাকে শিক্ষা দেয়নি অন্য ধর্ম তথা ধর্মের লোকদের গালি গালাজ করবার। অন্য ধর্মের লোকদের বাড়ি ঘর, উপাসনালয় পুড়িয়ে দেবার।
তাদের গায়ে অন্যায় ভাবে হাত তুলবার। বরং আমার ধর্ম আমাকে শিক্ষা দিয়েছে আমার পথে কাটা বিছিয়ে যাওয়া মানুষটির বিপদে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেবার তবে কেনো আমি মুসলিম হিসেবে লজ্জিত হব।
যদি মুসলিম হিসেবে লজ্জিত হতেই হয় তবে তার আগে আমাদের মানুষ হিসেবে লজ্জিত হওয়া উচিত। কারন মুসলিম লেবাস ধরবার আগ থেকে তারা মানুষের লেবাস ধরে আমাদের সমাজে আমাদের সাথে বসবাস করছে। আবার তাহলে আমাদের বাংলাদেশী হিসেবেও লজ্জিত হওয়া উচিত কারন তারা এই বাংলাদেশের মাটিতেই অবস্থান করছে।
তাই আজ যারা মুসলিম হিসেবে খুব লজ্জিত বোধ করছেন তাদের ব্যাপারে আসলে আমার কিছুই বলবার নেই। আপনি যদি মুসলমান হিসেবে লজ্জিত হন তবে আপনার মানুষ হিসেবে সর্বপরী বাংলাদেশী হিসেবেও লজ্জিত হওয়া উচিত। কারন যারা এই ঘটনা ঘটিয়েছে তারা পাকিস্থান থেকেও আসেনি তারা ভারত থেকেও আসেনি। তারা এই বাংলাদেশের মাটিতেই বেড়ে উঠা মানুষ। এই কথাগুলো তাদের জন্য বলা যারা আজ ফেসবুক ব্লগ জুড়ে স্পেসেফিক ভাবে মুসলিম হিসেবে লজ্জিত হবার ন্যাকি কান্না শুরু করে দিয়েছে।
আর অপরদিকে তো এই ঘটনায় নাস্তিকদের হুক্কাহুয়া রব উঠে গেছে। তাদের মধ্যে একটা উৎসব উৎসব ভাব চলে এসেছে। তাদের জন্যও আমার উপরের কথা গুলো প্রযোজ্য।
ঘটনার বিবরন: কক্সবাজারের রামু উপজেলার বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের অধ্যুষিত এলাকায় অগ্নিসংযোগ, লুটপাট, ভাংচুরের ঘটনায় রোববার সকাল থেকে অনিদিষ্টকালের জন্য ১৪৪ ধারা জারি করা হয়েছে। শনিবার দিবাগত রাত সাড়ে ১১ টা থেকে শুরু হওয়া এ সংঘাত অব্যাহত ছিল রোববার ভোর ৪ টা পর্যন্ত।
শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত সংঘাতে রামু উপজেলার ৭ টি বৌদ্ধ মন্দির, প্রায় ৩০ টি বসত ঘর, দোকানে অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছে। এসময় আরো শতাধিক বাড়ি ও দোকানে হামলা, লুটপাট ও ভাংচুরও হয়েছে। পরিস্থিতি এখনো থমথমে রয়েছে। ওই এলাকায় বিপুল সংখ্যক পুলিশ, বিজিবি, র্যাব অবস্থান করছে।
অনিদিষ্টকালের জন্য ১৪৪ ধারা জারি করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন কক্সবাজারের ভারপ্রাপ্ত জেলা প্রশাসকের দায়িত্বে থাকা অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) জসীম উদ্দিন।
যারা রামুর ঘটনার সাথে জড়িত তারা মুসলমান তো অনেক দূরের ব্যাপার তারা মানুষ হিসেবেও স্বীকৃতি পাবার যোগ্য নয়। আমরা মুসলমানরা( এবং যারা নিজেদেরকে মানুষ হিসেবে দাবী করে) এর তীব্র নিন্দা এবং প্রতিবাদ জানাচ্ছি এবং এই ঘটনার সাথে জড়িত সকলের বিরুদ্ধে যথাযথ আইনানুগ ব্যবস্থা নেবার জোড়ালো আবেদন জানাচ্ছি। এদের এমন দৃষ্টান্ত মূলক কঠোর শাস্তি হওয়া উচিত যেনো এই ধরনের ঘটনা ভবিষ্যতে আর কখনো এদেশের মাটিতে সংঘটিত হতে না পারে।
আরেকটা ব্যাপার, বার বার জামাত শিবিরের ঘাড়ে বন্দুক রেখে সকল সাম্প্রদায়িক সহিংসতার দায় বর্তমান সরকার এভাবে এড়িয়ে যেতে পারে না। মনে রাখতে হবে সাম্প্রতিক সময়ে ঘটে যাওয়া সবগুলো সাম্প্রদায়িক সহিংশতার ঘটনাই বর্তমান সরকারের প্রশাসনের লোকদের নাকের ডগার সামনেই ঘটেছে এবং এইসব ঘটনার জন্য সরকারকে তেমন কোনো উল্লেখযোগ্য পদক্ষেপও নিতে দেখা যায়নি।
শুধু মাত্র জামাত শিবিরকে দোষ দিয়ে আর যুদ্ধপরাধীর বিচার বানচালের ধোয়া তুলে পরিবেশকে আরো ঘোলাটে করে তুলেছে। যাতে নির্বাচনের আগে ঘোলা পানিতে মাছ শিকারটা আরেকটু সহজ হয়। যদি জামাত শিবিরের লোকরাই এ ঘটনা ঘটিয়ে থাকে তবে আপনারা এর বিরুদ্ধ ব্যবস্থা নিচ্ছেন না কেনো!! প্রশাসন আপনাদের হাতে আইন শৃন্খলা আপনাদের হাতে এর পরও যদি আপনারা বলেন এর জন্য জামাত শিবির জড়িত এবং এই কথা বলে আপনারা হাত গুটিয়ে বসে থাকেন তবে স্বাভাবিক ভাবেই সাধারন মানুষের আংগুলী আপনাদের দিকেও উঠবে। এর দায় ভার থেকে আপনারাও রেহাই পাবেন না।
আর আমাদের দেশরত্ন হাসিনা যে মূহুর্ত্বে জাতিসংঘে গিয়ে ভাষনে বলছেন যে দেশে মৌলবাদ বেড়ে যাচ্ছে, দেশে জন্গীবাদের উত্থান হচ্ছে সেই সময়ে এইরকম একটা ঘটনা অন্য কোনো অর্থ বহন করে কিনা সেটাও ভেবে দেখবার বিষয়।
এই ঘটনার সাথে আর অন্য কোনো কিছুর যোগসাজোশ আছে কিনা সেটাও ভাববার বিষয়। জানামতে ফেসবুক থেকে রামুর ঘটনাটির সূত্রপাত। এমনিতেই অনলাইন নীতিমালা নিয়ে সরকার অনেকদিন ধরেই পায়তারা করে আসছে। দেশে কয়েকবার ফেসবুক ইউটিউব ব্যবহার বন্ধের চেষ্টা করেও তেমন একটা সুবিধা করতে পারেনি। কিন্তু সর্বশেষ ইসলাম অবমাননার ছবির জেড় ধরে ইউটিউবের প্রচার বন্ধে সরকার সমর্থ হয়।
এছাড়াও কিছুদিন ধরেই ওলামালীগ, মুসলিমলীগ এবং বাদবাকী লীগ সংগঠনগুলো সামু সহ অন্যান্ন বাংলা ব্লগ বন্ধের দাবী জানিয়ে আসছে। এই সময়ে রামুর ঘটনাটি যেনো সরকারের কাছে একটি মোক্ষম সুযোগ ফেসবুক বন্ধ ও অনলাইন নীতিমালা প্রয়োগের নামে বাকস্বাধীনতার কন্ঠ রোধ করে মারবার জন্য। সরকার যদি এরকম কিছু ভেবেই থাকেন তবে সেটা হবে সরকারের জন্য অনেক বড় একটা বোকামী। সেক্ষেত্রে সাধারান মানুষের বুজতে আর অসুবিধা হবে না যে এই ঘটনা কিসের জন্য এবং কাদের মাধ্যমে করা হয়েছে। আশা করি সরকার নিজেদেরকে এতটা বোকা প্রমান করবেন না।
ধর্মের দোহাই দিয়ে কোনো অন্যায়কে প্রশ্যয় দিবেন না। মুসলমানদের নাম ব্যবহার করে যে সব সুবিধাভোগীরা আজ আমাদের সমাজকে তথা দেশকে ধ্বংসের মুখে ঠেলে দিচ্ছে আসুন আমরা সবাই মিলে তাদের বিরুদ্ধে একজোট হই। এই অন্যায়ের বিরুদ্ধে রুখে দাড়াই। দ্বায়ী ব্যাক্তিদের বিচারের কঠোর আন্দোলন গড়ে তুলি যাতে করে এই দেশে আর কেউ সাম্প্রদায়ীক সম্প্রীতি নষ্টের চেষ্টা না করতে পারে।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।