কাউসার মুমিন, নিউ ইয়র্ক থেকে: ‘বাংলাদেশের সার্বিক দুর্নীতি পরিস্থিতিতে বিশেষ করে পদ্মা সেতু প্রকল্পের দুর্নীতি বিষয়ে বিশ্বব্যাংক উদ্বিগ্ন। আর এর জন্যই আমরা বাংলাদেশ সরকারকে সুস্পষ্টভাবে জানিয়ে দিয়েছি যে, এই প্রকল্পে নতুন করে যুক্ত হওয়ার জন্য নতুন ‘বাস্তবায়ন ব্যবস্থাপনা’ (ইম্পলিমেন্টেশন এরেইঞ্জমেন্টস) প্রয়োজন, যাতে করে প্রকল্পের ক্রয় সংক্রান্ত প্রক্রিয়ায় বিশ্বব্যাংক ও সহযোগী ঋণদাতাদের অধিকতর তদারকির সুযোগ থাকে। কেবল উপরোল্লিখিত সম্মত বিষয়াবলীর সন্তোষজনক বাস্তবায়নের পরই এবং এ বিষয়ে (গৃহীত সরকারি পদক্ষেপ সম্পর্কে) আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত স্বাধীন বিশেষজ্ঞ প্যানেলের পক্ষ থেকে ইতিবাচক প্রতিবেদন পাওয়া সাপেক্ষে বিশ্বব্যাংক পদ্মা সেতু প্রকল্পে অর্থায়ন করবে’ বলে ২৫শে সেপ্টেম্বর ২০১২ ওয়াশিংটন সময় বিকালে প্রদত্ত এক নতুন বিবৃতিতে জানিয়েছে বিশ্বব্যাংক।
উল্লেখ্য যে, পদ্মা সেতু বিষয়ে গত ২০শে সেপ্টেম্বর ২০১২ তারিখে প্রদত্ত বিশ্বব্যাংকের বিবৃতিটি বাংলাদেশের সংবাদ মাধ্যমে যথাযথভাবে প্রতিফলিত হয়নি। দেশের সিনিয়র সরকারি কর্মকর্তাগণ সংবাদ মাধ্যমে বিশ্বব্যাংকের বিবৃতির ভুল ব্যাখ্যার মাধ্যমে বিকৃতভাবে উপস্থাপন করেছেন বলে অভিযোগ করেছে বিশ্বব্যাংক।
সম্প্রতি এ বিষয়ক এক সংবাদ সম্মেলনে ইআরডি সচিব সাংবাদিকদের জানান, ‘বিশ্বব্যাংক নতুন কোন শর্ত দেয়নি, বরং ইতিমধ্যেই সব শর্ত পূরণ হওয়ায় পদ্মা সেতু প্রকল্পে ফিরতে রাজি হয়েছে’। অর্থমন্ত্রী উল্টো পদ্মা সেতু নির্মাণের দিন তারিখ নির্ধারণ করে বক্তব্য দেন। তিনি বলেন, ‘আমি যেভাবে হিসাব করেছি ফর ব্রিজ কনস্ট্রাকশন, বিশ্বব্যাংক ইতিমধ্যে এগ্রি করেছে। আরও কিছু টেন্ডার ডকুমেন্ট তাদের কাছে আছে। সেগুলো তারা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করছে।
উই শুড গো ফর টেন্ডার। আগামী অক্টোবরে পদ্মা সেতুর জন্য দরপত্র আহ্বান করে এপ্রিল-মে মাসে ব্রিজের ফাউন্ডেশন করবো আমরা’। সর্বোপরি দেশের প্রধানমন্ত্রী গতকাল নিউইয়র্কে এক দলীয় সমাবেশে বক্তৃতা কালে পদ্মা সেতু প্রকল্পে কোন দুর্নীতি হয়নি, দুর্নীতি হলে বিশ্বব্যাংক ফিরে আসতো না’ বলে মন্তব্য করেন।
এ পরিপ্রেক্ষিতে ব্যাংকের সুস্পষ্ট অবস্থান জানতে গতকাল দুপুরে বিশ্বব্যাংকের দক্ষিণ এশিয়া বিষয়ক এক্সটার্নাল এফেয়ার্স ম্যানেজার এঞ্জেলা ওয়াকারের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে, তিনি মানবজমিনকে জানান, ‘বিষয়টি ব্যাংকের নজরে এসেছে এবং এ বিষয়ে আজকের কর্মদিবস শেষে একটি আনুষ্ঠানিক বিবৃতির মাধ্যমে ব্যাংকের অবস্থান আরও সুস্পষ্ট করা হবে’। এরপর ওয়াশিংটন সময় বিকাল চারটায় বিশ্বব্যাংকের ওয়েবসাইটে বিবৃতিটি প্রকাশ করা হয়।
বিবৃতিতে বলা হয়, ‘বাংলাদেশের বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদনে দেশটির সিনিয়র সরকারি কর্মকর্তাগণ পদ্মা সেতু বিষয়ক বিশ্বব্যাংকের বিবৃতিকে বিকৃতভাবে উপস্থাপন (মিসরিপ্রেজেন্ট) করায় এ বিষয়ে একটি ব্যাখ্যামূলক বিবৃতির মাধ্যমে ব্যাংকের অবস্থান সুস্পষ্ট করা বাধ্যবাধকতার পর্যায়ে পড়ে বলে মনে করে বিশ্বব্যাংক’।
বিশ্বব্যাংকের নতুন বিবৃতি:
‘পদ্মা সেতু প্রকল্পে বিশ্বব্যাংকের অর্থায়ন নিয়ে সরকারের সিনিয়র কর্মকর্তাগণের দুর্নীতিতে জড়িয়ে পড়ার বিষয়টি বিশ্বব্যাংক ‘গ্রহণযোগ্য তথ্যপ্রমাণ’ সহ বার বার বাংলাদেশ সরকারকে জানিয়েছে। এ সব বিষয়ে সরকার কোন উল্লেখযোগ্য পদক্ষেপ না নেয়ায় বিশ্বব্যাংক পদ্মা সেতু প্রকল্পে ১ দশমিক ২ বিলিয়ন ডলারের ঋণ বাতিল করে।
গত ২০শে সেপ্টেম্বর ২০১২ বাংলাদেশ সরকার পদ্মা সেতু প্রকল্পে বিশ্বব্যাংকের অর্থায়ন বিষয়টি পুনর্বিবেচনার জন্য অনুরোধ জানিয়ে নিম্নলিখিত বিষয়ে সরকারের সম্মতি জানায়:
১. ‘দুর্নীতি বিষয়ক তদন্ত পূর্ণাঙ্গভাবে শেষ না হওয়া পর্যন্ত সন্দেহভাজন সরকারি কর্মকর্তাদের সরকারি চাকরি থেকে ছুটিতে পাঠানো ;
২. দুর্নীতি দমন কমিশনে (পদ্মা সেতু প্রকল্পের জন্য) বিশেষ ‘ইনক্যুইরী এন্ড প্রসিকিউশন’ টিম গঠন করা;
৩. দুর্নীতি বিষয়ক তদন্তের সমস্ত তথ্য উপাত্তে আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত একটি স্বাধীন বিশেষজ্ঞ প্যানেল এর প্রবেশ থাকবে, যাতে তারা বিশ্বব্যাংক এবং সহযোগী ঋণদাতাদের সরকারি তদন্তের গ্রহণযোগ্যতা বিষয়ে মতামত দিতে পারেন।
বাংলাদেশের সার্বিক দুর্নীতি পরিস্থিতিতে বিশেষ করে পদ্মা সেতু প্রকল্পের দুর্নীতি বিষয়ে বিশ্বব্যাংক উদ্বিগ্ন।
আর এর জন্যই আমরা বাংলাদেশ সরকারকে সুস্পষ্টভাবে জানিয়ে দিয়েছি যে, এই প্রকল্পে নতুন করে যুক্ত হওয়ার জন্য নতুন ‘বাস্তবায়ন ব্যবস্থাপনা’ (ইম্পলিমেন্টেশন এরেইঞ্জমেন্টস) প্রয়োজন, যাতে করে প্রকল্পের ক্রয় সংক্রান্ত প্রক্রিয়ায় বিশ্বব্যাংক ও সহযোগী ঋণদাতাদের অধিকতর তদারকির সুযোগ থাকে।
কেবল উপরোল্লিখিত সম্মত বিষয়াবলীর সন্তোষজনক বাস্তবায়নের পরই এবং এ বিষয়ে (গৃহীত সরকারি পদক্ষেপ সম্পর্কে) আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত স্বাধীন বিশেষজ্ঞ প্যানেলের পক্ষ থেকে ইতিবাচক প্রতিবেদন পাওয়া সাপেক্ষে বিশ্বব্যাংক পদ্মা সেতু প্রকল্পে অর্থায়ন করবে’।
একটি পরিচ্ছন্ন পদ্মা ব্রিজ বাংলাদেশের মানুষের ন্যায্য দাবি। আর এ দাবি নিয়ে সামনে এগিয়ে যাওয়ার জন্য আমরা (এ বিবৃতির মাধ্যমে) আবারও বাংলাদেশ সরকারকে অত্যন্ত জোরালোভাবে একটি গ্রহণযোগ্য তদন্ত শুরুর জন্য বলছি এবং প্রকল্প বাস্তবায়নের সব প্রক্রিয়া এমনভাবে অনুসরণ করার কথা বলছি, যাতে সম্পূর্ণ স্বচ্ছ্তা ও অধিকতর জবাবদিহিতার বিষয়টি নিশ্চিত হয়’
Click This Link ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।