মানুষের উপকার কম করলাম না,পরিনামে খেলাম শুধু বাঁশ। তবু হাল ছাড়ি নাই....উপকারের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।
বারমুদা ট্রায়াঙ্গল নিয়ে যতসব রহস্য, সব রহস্যেরই একে একে ইতি টেনেছেন বিভিন্ন বিজ্ঞানী ও লেখক। অনেকেই একে অতিরঞ্জিত গালগল্প হিসেবে আখ্যা দিয়েছেন। আবার অনেকে একটি সেরা বাণিজ্যিক রহস্য হিসেবে চিহ্নিত করেছেন।
প্রশ্ন আসতে পারে রহস্যের আবার বাণিজ্য কিসের? আপাতদৃষ্টিতে রহস্যে কোনো বাণিজ্যিক দিক না থাকলেও বারমুদা ট্রায়াঙ্গলের ক্ষেত্রে বিষয়টি একেবারেই ভিন্ন। যেহেতু বছরের পর বছর ধরে এ স্থানের রহস্যময়তা কেবল বেড়েই চলেছে তাই এ সম্পর্কে সব ধরনের গুজবই ডালপালা মেলেছে। আর বিশ্বজুড়ে বারমুদা ট্রায়াঙ্গল পৌঁছে যায় মানুষের আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দুতে। আর এখানেই তৈরী হয় এর বাণিজ্যিক ভিত্তি। কি সংবাদপত্র, কি টিভি চ্যানেল অথবা বই-পুস্তক- সবখানেই এর জয়জয়কার।
আর এ কারণেই এর প্রকৃত রহস্য উদঘাটনের চেয়ে গল্প বলায় আগ্রহী ছিলেন সবাই। এরপরও অনেকে এ বিষয়ে গবেষণার পর কিছু কারণ দেখিয়েছেন। প্রকৃত রহস্য উদঘাটন সম্ভব না হলেও এ কারণগুলো বিশ্লেষণ করলে রহস্যের জট ভাঙা কিছুটা হলেও সহজ হবে।
কুসচ এর ব্যাখ্যা
লরেন্স ডেভিড কুসচ হলেন অ্যারিজোনা স্টেট ইউনিভার্সিটির রিসার্চ লাইব্রেরিয়ান এবং ‘দ্য বারমুদা ট্রায়াঙ্গল মিস্ট্রি : সলভড’ এর লেখক। তার গবেষণায় তিনি চার্লস বার্লিটজ-এর বর্ণনার সঙ্গে প্রত্যক্ষ্যদর্শীদের বর্ণনার অসংগতি তুলে ধরেন।
কুসচ-এর গবেষণায় যা পাওয়া যায় তা হলো-
ক. বারমুদা ট্রায়াঙ্গলে যত সংখ্যক জাহাজ ও উড়োজাহাজ নিখোঁজ হওয়ার কথা বলা হয় তার সংখ্যা বিশ্বের অন্যান্য সমুদ্রের তুলনায় খুব বেশী নয়।
খ. এ অঞ্চলে গ্রীষ্মমণ্ডলীয় ঝড় নিয়মিত আঘাত হানে, যা জাহাজ ও উড়োজাহাজ নিখোঁজ হওয়ার অন্যতম কারণ। কিন্তু বার্লিটজ বা অন্য লেখকরা এ ধরণের ঝড়ের কথা অনেকাংশেই এড়িয়ে গেছেন।
গ. অনেক ঘটনার বর্ণনায়ই লেখকরা কল্পনার রং ছড়িয়েছেন। আবার কোনো নৌকা নির্দিষ্ট সময়ের চেয়ে দেরীতে বন্দরে ভিড়লে তাকে নিখোঁজ বলে প্রচার করা হয়েছে।
ঘ. আবার কখনোই ঘটেনি এমন অনেক ঘটনার কথা লেখকরা বলেছেন। যেমন- ১৯৩৭ সালে ফ্লোরিডার ডেটোনা সমুদ্রতীরে একটি বিমান দুর্ঘটনার কথা বলা হয়; কিন্তু তখনকার খবরের কাগজ থেকে এ বিষয়ে কোনো তথ্যই পাওয়া যায়নি।
সুতরাং কুসচ’র গবেষণার উপসংহারে বলা যায়- লেখকরা অজ্ঞতার কারণে অথবা ইচ্ছাকৃতভাবে বারমুদা ট্রায়াঙ্গল নিয়ে বানোয়াট রহস্য তৈরী করেছেন।
মিথেন হাইড্রেটস
এখানে দেখানো হয়েছে বিশ্বের যেসব স্থানে গ্যাস হাইড্রেটযুক্ত পলি পাওয়া গেছে অথবা আছে বলে অনুমান করা হয়, সেখানে কন্টিনেন্টাল সেলভে জমে থাকা বিপুল পরিমাণ মিথেন হাইড্রেট অনেক জাহাজ ডোবার কারণ বলে দেখা গেছে।
কম্পাসের ভুল দিক-নির্দেশনা
কম্পাসের পাঠ নিয়ে বিভ্রান্তি অনেকাংশে এই বারমুদা ট্রায়াঙ্গলের কাহিনীর সঙ্গে জড়িত।
এটা মনে রাখা প্রয়োজন যে, কম্পাস থেকে চুম্বক মেরুর দূরত্বের ওপর ভিত্তি করে এর দিক-নির্দেশনায় বিচ্যুতি আসে। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, যুক্তরাষ্ট্রে শুধু উইসকনসিন থেকে মেক্সিকো উপসাগর পর্যন্ত সরলরেখা বরাবর চৌম্বক উত্তর মেরু সঠিকভাবে ভৌগোলিক উত্তর মেরু নির্দেশ করে। বারমুদা ট্রায়াঙ্গল এলাকাজুড়ে কম্পাসের এমন বিচ্যুতি সাধারণের কাছে রহস্যময় মনে হয়। কিন্তু এটি খুবই স্বাভাবিক ঘটনা।
হ্যারিকেন
হ্যারিকেন হলো শক্তিশালী ঝড়।
ঐতিহাসিকভাবেই জানা যায়, আটলান্টিক মহাসাগরে বিষুব রেখার কাছাকাছি অঞ্চলে শক্তিশালী হ্যারিকেনের কারণে হাজার হাজার মানুষের প্রাণহানী ঘটেছে, আর ক্ষতি হয়েছে কোটি কোটি টাকার। রেকর্ড অনুসারে ১৫০২ সালে স্প্যানিশ নৌবহর ’ফ্রান্সিসকো দ্য বোবাডিলা’ এমনি একটি বিধ্বংসী হ্যারিকেন ঝড়ের কবলে পড়ে ডুবে যায়।
গলফ স্ট্রিম
গলফ স্ট্রিম হলো মেক্সিকো উপসাগর থেকে স্ট্রেইটস অব ফ্লোরিডা হয়ে উত্তর আটলান্টিকের দিকে প্রবাহিত উষ্ণ সমুদ্র স্রোত। একে বলা যায়, মহাসমুদ্রের মাঝে এক নদী। নদীর স্রোতের মতো গলফ স্ট্রিম ভাসমান বস্তুকে স্রোতের দিকে ভাসিয়ে নিতে পারে।
যেমনি ঘটেছিল ১৯৬৭ সালের ২২ ডিসেম্বর ‘উইচক্রাফট’ নামের একটি প্রমোদতরীতে। মিয়ামি তীর থেকে এক মাইল দূরে এর ইঞ্জিনে সমস্যা দেখা দিলে কোস্টগার্ডকে জানানোর পরই গলফ স্ট্রিমকবলিত হয়ে অদৃশ্য হয়ে যায় জাহাজটি।
দৈত্যাকার ঢেউ
হঠাৎ করেই সমুদ্রে দৈত্যাকার ঢেউ সৃষ্টি হতে পারে, এমনকি শান্ত সমুদ্রেও এমন ঘটতে পারে (সুনামী)। তবে একথা বিশ্বাস করার কোনো কারণ নেই যে, বারমুদা ট্রায়াঙ্গলে এমন ঢেউ নিয়মিত সৃষ্টি হয়। মঝে মাঝে যখন হয়, তখন জাহাজ ডুবী হতেই পারে।
মানবঘটিত দুর্ঘটনা
অনেক জাহাজ এবং বিমান নিখোঁজ হওয়ার ঘটনার তদন্তে দেখা গেছে এর অধিকাংশই চালকের ভুলের কারণে দুর্ঘটনায় পতিত হয়েছে। যেমন- কোস্টগার্ড ১৯৭২ সালে ভিএ ফগ-এর নিখোঁজ হওয়ার কারণ হিসেবে বেনজিন-এর পরিত্যক্ত অংশ অপসারণের জন্য দক্ষ শ্রমিকের অভাবকে দায়ী করেছে। তবে রহস্যের কারণ হলো- অনেক নিখোঁজের ঘটনারই উপসংহারে পৌঁছানো যায়নি, কেননা এর কোনো ধ্বংসাবশেষ উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি।
ইচ্ছাকৃত ধ্বংসসাধন
যুদ্ধের সময় অনেক জাহাজ শত্রুপক্ষের অতর্কিত আক্রমণে ডুবে গেছে বলেও মনে করা হয়। যেমন মনে করা হয় ১৯১৮ সালে ইউএসএস সাইক্লপস এবং দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে এর সিস্টার শিপ প্রোটিয়াস এবং নিরিয়াসকে জার্মান ডুবোজাহাজ ডুবিয়ে দেয়।
তবে পরবর্তীতে জার্মান রেকর্ড থেকে এর সত্যতা প্রমাণ করা যায়নি।
জলদস্যুদের আক্রমণ
আবার ধারণা করা হয় জলদস্যুদের আক্রমণে অনেক জাহাজ নিখোঁজ হয়ে থাকতে পারে। ওই সময়ে প্রশান্ত মহাসাগরের পশ্চিমাংশে এবং ভারত মহাসাগরে মালবাহী জাহাজ চুরি খুব সাধারণ ঘটনা ছিল। ১৫৬০ থেকে ১৭৬০ পর্যন্ত ক্যারিবিয়ান অঞ্চল ছিল জলদস্যুদের আখড়া। তাই জলদস্যুদের আক্রমণেও জাহাজ নিখোঁজ হতে পারে।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।