আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

নিরাপদ ডেটিংয়ের স্বর্গরাজ্য

বাস্তবতা নিয়ে কথা বলতে চাই। জোড়ায় জোড়ায় টিকিটের জন্য লাইনে দাঁড়িয়ে। বয়স কমবেশি সবারই পনের থেকে তিরিশের মধ্যে। ফাঁকে ফাঁকে স্কুল ড্রেসপরা ছাত্রীরাও। পেশাগত পরিচয়ের বাইরে পার্কে ঢুকে বাঁয়ে যেতেই চোখে পড়লো, হাতে হাত ধরে এক যুবক যুবতীকে চুম্বন করছে।

ভেতরে যেতেই ভিরমি খাওয়ার অবস্থা, একি দেখছি। পদ্মদিঘীর পাড় ঘেঁষে, শতায়ূ উদ্ভিদের আড়ালে, গোলাপ বাগানে, আঙুর বাগানের পেছনে, বাঁশ ঝাড়ের আড়ালে অন্তত অর্ধশত জোড়া তরুণ-তরুণী উন্মুক্ত হাওয়ায় নিজেদের বিলিয়ে দিচ্ছে। একে অন্যের গায়ে এলিয়ে লুটিয়ে পড়ছে। কপালে চুম্বন আঁকছে। ঊরুতে মাথা রেখে বাদাম চিবোচ্ছে।

বুকে জড়িয়ে আছে। একা পার্কের কোথায় হাঁটাচলা যেন অপরাধতুল্য। পুরো দশ মিনিটের হাঁটায় পার্কে এক চক্কর দিতেই চোখ পড়লো নিরাপদ এই প্রেমলীলা কেন্দ্রের নানা দৃশ্য। ভাদ্র মাসের গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টিতেও প্রিয়জনকে নিয়ে অন্য খেলায় মত্ত এখানে দর্শনাথীরা। ক্যাকটাস বাগানের লম্বা পথের দু’ধারে দৃশ্য দেখলে মনে হবে কোন পরিচালকের স্ক্রিপ্ট মিলিয়ে ঘনিষ্ঠ দৃশ্যে অভিনয় করছে পার্কে আসা কুশীলবরা।

ক্যামেরায় ধারণ করতে হবে বাণিজ্যিক এ দৃশ্য। আরেকটু কাছে। আরও নিবিড়ভাবে। হচ্ছে না। আরও একবার।

এ দৃশ্য বর্ণনা পুরনো ঢাকার বলদা গার্ডেনের। যেখানে ভিড় করে আছে ৬৭২ ধরনের নানান ফলদ, বনজ, ঔষধি বৃক্ষ। চিরচেনা রাজধানীর বুকে প্রকৃতিপ্রেমিক জমিদার নরেন্দ্র নারায়ণ চৌধুরী ১৯০৯ সালে ব্যক্তিগত উদ্যোগে গড়ে তুলেন এ পার্ক। প্রথমদিকে এটি ছিল বাগানবাড়ি। যেখানে প্রায় সন্ধ্যাতেই আসর বসতো নাচ-গানের।

ঢাকার খ্যাতনামা সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্বরা এই বাগানের উন্মুক্ত বৃক্ষতলে বসেই উপভোগ করতেন শিল্পসুধা। যে পার্কে ছেলেবেলা কেটেছে নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ অমর্ত্য সেনের। ঢাকায় রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বেড়াতে এসে যে পার্কে বসে লিখেছেন তার বিখ্যাত কবিতা ‘ক্যামিলিয়া’। আজ সেখানেই চলেছে প্রেমের নামে, মনের মানুষের সঙ্গে সময় কাটানোর নামে অবাধ মেলামেশা। তরুণ-তরুণীদের কাছে পার্কটি বর্তমানে নিরাপদ ডেটিং কুঞ্জ।

পার্কের ‘সাইকী’ ও ‘সিবলী’ নামে দু’টি অংশ। সাইকী অংশে প্রবেশ নিষিদ্ধ। সিবলী অংশ সবার জন্য উন্মুক্ত। আর সিবলী অংশে সকাল থেকে শুরু হয়ে বেড়ানোর নামে অবাধে চলে মেলামেশা। কখনও কখনও পুলিশি টহলে এদিক ওদিক নড়েচড়ে বসলেও কপোত কপোতীরা পুলিশ বিদায়ে আবার আগের অবস্থানেই ফিরে আসে।

প্রেমের নামে অবাধ মিলনকেন্দ্র হওয়ায় প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের আঁধার এই পার্কটি বর্তমানে পারিবারিক বিনোদন কেন্দ্রের মর্যাদা হারিয়েছে। থানা পুলিশ কখনও কখনও ছদ্মবেশে পার্ক থেকে অবাধ মেলামেশায় রত জুটিদের আটক করে মুচলেকা দিয়ে পরিবারের কাছে ছাড়লেও আবারও যে অবস্থা তাই। ইজারাদারদেরও পোয়াবারো। টাকা পেলেই তারা খুশি। পুরনো ঢাকাসহ রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা নিরাপদ ডেটিং জোন বলে পরিচিত এই পার্কে দলে দলে তরুণ-তরুণীরা ছুটে আসে।

সরজমিনে অনেক জুটি সকালে এসে পুরোদিনই পার্কে কাটাতে দেখা গেছে। দুপুরে বিরতির সময় পার্কের বাইরে এসে আবারও পার্কে ঢুকে সন্ধ্যা পর্যন্ত সময় কাটায়। ছুটির দিনে নিম্নমধ্যবিত্ত, গার্মেন্টস শ্রমিকরা ভিড় করে এই পার্কে। কম খরচে নিরাপদ ডেটিং জোন বলধায় শংখনদ পুকুর, ক্যামেলিয়া, স্বর্ণ অশোক, আফ্রিকান টিউলিপ দিন দিন হারাচ্ছে সৌন্দর্য। ২০০৮ সাল থেকে এই পার্ক ইজারায় দেখভাল করছে নাহার কন্সট্রাকশন।

পার্কের বর্তমান চিত্র নিয়ে নাহার কন্সট্রাকশনের সিরাজুর রহমান সুমন জানান, পার্ক সবার জন্য উন্মুক্ত। কাজেই কাউকে বাধা দেয়ার কাজ আমাদের না। শুধু যে তরুণ তরুণীরা আসেন তা নয়, গবেষণার জন্য লোকজন আসেন। আর সব সময় পুলিশি নজরদারি তো আছেই। বাইরে অপেক্ষায় থাকা এক তরুণীর ফোন, হ্যালো কই তুমি, আমি তো গেটের কাছে দাঁড়ানো আর কতক্ষণ।

তাড়াতাড়ি আস না। এ চিত্র একটি দুটি নয়- এটাই এখন স্বাভাবিক। অপেক্ষা, ফোন আর দেখা। তারপরের চিত্রতো ভিন্নরকম। টিকিট কেটে প্রবেশ।

পছন্দের নিরাপদ জায়গা বাছাই। তারপর চলে অন্তরঙ্গতা। পার্কের ভিতরে চলে ঘণ্টার পর ঘণ্টা গাছের আড়ালে বসে মনের আনন্দে শুরু গল্প। যেখানে তারা কেউ কাউকে তোয়াক্কা করে না ছোট পরিসরে সবার সামনে করে অনৈতিক সব কাজ। যুবক যুবতীর বাইরে মধ্যবয়সীরা পরিবারের আড়ালে পরকীয়ায় মত্ত থাকে এখানে।

পার্কে নিয়মিতদের একজন এমনটাই জানালেন। অফিস ছুটি থাকায় প্রেমিকাকে নিয়ে পরিবারের আড়ালে ঘুরতে এসেছেন গার্ডেনে। সাংবাদিক পরিচয় জানতে পেরে শহীদুল্লাহ নামের এক ব্যক্তির জানান, এসেছিলাম গাছ দেখতে। খুবই বিভ্রান্তিকর পরিস্থিতি। কেথাও সুস্থ অবস্থা নেই।

ওয়ারী থেকে সাদেক, কামরুল ও সাচ্চু তিন ভাই ঘুরতে এসে কিছু সময় থেকেই বিরক্তি নিয়ে বেরিয়ে পড়েন। তাদের সঙ্গে কথা বললে তারা বলে আমরা জানতাম না পরিবার নিয়ে আসার মতো পরিবেশ নেই এ পার্কে। অনেক স্কুল ছাত্র-ছাত্রীরও পার্কে ফাঁকি দিয়ে ডেটিংয়ে লিপ্ত। এ ব্যাপারে ওয়ারী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোহাম্মদ রফিকুল ইসলাম বলেন, আমাদের থানা এলাকা হওয়ায় সাধারণ মানুষের নিরাপত্তা দেয়ার জন্য আমরা কাজ করি। তবে এককভাবে এই পার্কের নিরাপত্তা আমরা দেখি না।

তবে কোন ধরনের অভিযোগ এলে আমরা ব্যবস্থা নেই। পার্কের ভেতরে শালীনতা বজায় রাখতে ইজারাদারদের বলেছি। যদিও স্থানীয়দের অভিযোগ এ ব্যাপারে পুলিশের কোন ভূমিকা নেই। তথ্যসুত্র : মানবজমিন ।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে ১১ বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.