শেওলা দিঘির শীতল অতল নীড়ে মায়ের কোলটি পাই যেন ফিরে পোস্ট টি আমার টিউশনির ভয়াভহ অভিজ্ঞতা নিয়ে লেখা। অনেক টিউশনি করলাম, ছেরে দিলাম এখনও করতাছি। প্রথমে অনেক টিউশনির খোঁজ করলাম পরে বড় ভাই খুজে দিলেন কয়েকটা। যাই হোক আসল কথা হল এখন কোন রকম এসব থেকে ছারা পেলেই বাচি।
জীবনের প্রথম টিউশনি বেতন ৮০০ টাকা, প্রি ইস্কুল, (মানে স্কুলে ভর্তি করাবেন)।
এক তো বাংলা বোঝেনা, আবার হিন্দিতে ফাস্ট ক্লাস ইংলিশ থার্ড। ৩ না ৪ মাস পড়ালাম। এখনও মনে আছে প্রথম মাসের বেতন ছিল ৬৭০ টাকা। ৪ শুক্রবার বাদে মিস দিছিলাম ৫ দিন তাই কাটছাঁট করে।
এরপর ক্লাস ফাইভ, স্টুডেন্ট অনেক ভাল পড়া বুঝে কিন্তু কিছুই মনে রাখতে পারে না।
পাঁচ তলা বাড়ির সে এক মাত্র ওয়ারিস। একদিন সে ছাদে খেলছিল আমি আস লাম সেদিন অন্য রুমে আমরা পরা শুরু করলাম, ওর মা মনে করলো আমি এখনও আসিনি তিনি ছাদে আওয়াজ দিলেন “সাকিব আমি গেলাম”। একটু পর পরা শেষ করে বের হবার সময় দেখি হায় হায় এ কি অবস্থা বাহিরে তালা মারা । ওর মা রুমে তালা দিয়ে বের হয়ে গেলেন। সাথে সাথে তার মাকে ফোন দিলাম , বলল আম্মুর মোবাইলের ব্যাটারি নষ্ট চার্জ থাকে না আব্বুকে ফোন দিলাম, তিনি শ্বশুর বাড়িতে ফোন দিলেন মানে ওর নানির বাসায়, বললেন সাকিবের মা বাসায় পোঁছালে সাথে সাথে কাওকে চাবি নিয়ে বাসায় পাঠাতে সার বইসা আছে।
সেদিন পুরাপুরি ৪৫ মিনিট বাধ্য হয়ে Dx ball খেললাম।
এবার আমার সবচেয়ে টেরিফিক স্টুডেন্ট। দুই মাসে দুই টিচার গেছে। সামনে ssc দিবো। একটু বুঝে কম।
মাঝে মাঝে আমার ডাউট হয় এইটা টেনে উঠলো কেমনে? তবে পড়াশোনায় ভাল ঘুরে কম, বন্ধু বান্ধব কম যা বাড়ীর কাজ দেই ফুল কমপ্লিট। অংক তে এক বার ৩৫ আরেকবার ৩৬(একটু উন্নতি হইছিল) ভূগোলে ২ বারই ফেল। এক দিন ভাই, টেন্স পরাচ্ছিলাম যা আমিও ১০ বছর পড়ে কিছু বুঝিনি । এখন Subject কাকে বলে? আমি প্রথমে ডেফিনিশন দিলাম তারপর বললাম হি ,শি ,ইউ,রহিম,করিম এটা ওটা সবগুলই Subject হবে। হঠাৎ তাঁর প্রশ্ন –
“আ..আ..আইবি হইব?”
আমি চুপ,আইবি আবার কি,একটু পরে বুঝতে পারলাম সে এই I এর কথা বলছে।
তখন থেকে তার নাম দিলাম আইবি। এখনও বলে এ এ এ এগুলাবি পরুম । আরেক দিন একটা লেখা দেখিয়ে বলে সার এটা ইংলিশ কি? লেখা ছিল কুকুর টি ঘেও ঘেও করে, আমি বললাম আরে এটা তো সোজা তুমি পারো না সে আঙ্গুল দেখিয়ে জিজ্ঞেস করলো এটা ইংলিশ ,আমি বললাম বি এ আর কে bark বার্ক মানে ঘেও ঘেও করা সে উত্তর দিলো The dog barks একদম ঠিক, আমি একটু কনফার্ম করার জন্য জিজ্ঞাস করলাম এখানে s কেন হল সে বলে
এই যে “ঘেও ঘেও”।
এবার যার কথা বলবো তারা ফেমিলি মোটামুটি ভাল। দুই ছেলে মা বাবা আর একটা ফুল ক্রেক কাজের মেয়ে।
বড় ছেলে যত ভোদাই ছোট টা তত চালাক। আমাদের এখানে একটা কথা আছে,আপনি টিচার হিসেবে অতটা সম্মান পাবেন না যতটা একজন কাজের বুয়া পায়,কারন টিচার অনেক পাওয়া যায় কাজের বুয়া সহজে পাওয়া যায় না। এখানে আমি সবচেয়ে বেশি সম্মান পেতাম যেমন ধরেন -অই সারেরে পানি কাচের গ্লাসে দিছস, গ্লাস ধুয়া দিছস, সরবত/চায়ে চিনি ঠিক দিছস, সার নাস্তা সবটি খাইছে ,বাবা কিমুন হইছে আরেকটু দেই ইত্যাদি ইত্যাদি । একদিন পড়ার সময় তার মা এসে বলেন "মাস্টার সাহেব তারাতারি আসেন আমার কাজের মাইয়াটা মাটিতে পইরা গেছে তারাতারি হাসপাতালে নিয়া চলেন। " কোন রকম তাকে ঠাণ্ডা করলাম, বললেন “ সকাল থেকা অর মাথা বেথা, আমারে না জিগায়া আমার ৩/৪ টা পেসারের ওষুধ খায়া ফালাইছে কয় আপনারটা কমে আমারটাও কমবো, আয়হায় রে আল্লাহ আমি কই যামু এই ছেরিরে লয়া।
“ আমি স্টুডেন্ট কে বললাম নিচে ফার্মেসিতে গিয়া দেখ ডাক্তার আনতে পারো নাকি তারপর আমি ওর আব্বুকে ফোন দিলাম। আমার স্টুডেন্ট ডাক্তার আন্তে সক্ষম হইলো আর তার আব্বুর আসতে একটু সময় লাগবে ঐ সময় 3 idiots এর কথা মনে পড়লো ,ভিসা তিস মিনিটে পৌছানোর গ্যারান্টি আছে আর এ্যাম্বুলেন্স এর খবর নাই ।
আমার ফ্রেন্ড রা মাঝে মাঝে বলে ‘তোর মত নাকি সব পাগল ছাগল রে পড়াই’। টিউশনি অনেকের কাছে অনেক রকম তবে আমার কাছে সব সময় একটা নতুন অভিজ্ঞতা । আশা করি আপনাদের ভাল লাগছে।
শেসে আর একটা ,কিছুদিন আগে আমার ছোট ভাগ্নির পরীক্ষার খাতা দিছে
ধর্ম খাতা, প্রশ্ন আসছে অযুর চারটি ফরজ লেখ সে লিখছে -
১ সেম্পু দিয়ে মাথা ধোয়া
২ সাবান দিয়ে মুখ ধোয়া
৩ হাত ধোয়া
৪ পা ধোয়া ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।