আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

সৃষ্টিশীলতা নিয়ে একজন বেকারের কিছু অনাসৃষ্টি!!!!!

একটা ছোট্ট ঘটনা দিয়ে শুরু করা যাক। কিছুদিন আগে এক স্টুডেন্ট কে পড়াতে গিয়ে দেখলাম ওর প্রচুর জ্বর ১০২-৩ হবে। ওকে বললাম ঠিক আছে যাও আজকে তোমার ছুটি পড়তে হবে না। জবাবে ো বলল না ভাইয়া পড়ান আমি বললাম তোমার তো অনেক জ্বর কিভাবে পড়বে? ও বলল জানিনা কিন্তু পড়তে হবে নাহলে আম্মু অনেক রাগ করবে আমাকে মারবে!! আমি হতবাক হয়ে গেলাম ১০৩ জ্বর নিএ আমার জীবনে আমি পড়ছি কিনা মনে নাই আর আমার মা আমাকে ১০৩ জ্বর নিয়া না পড়লে মারা তো দূরে থাক উলটা আরো পড়তে বসলে উঠাইয়া দিতো, যাক আমার মত অভাজনের কথা। আমার হঠাৎ মনে পড়ল আচ্ছা এই সিচুয়েশন যদি নিউটনের বেলায় হইত তাইলে উনি কি করতেন? বুঝেন না বেকারের বেকার চিন্তা আর কি!! নিউটনের মা নিশ্চয়ই তারে পিটাইতেন না? আচ্ছা আইনিস্টাইন বা টমাস আল্ভা এডিসনের মাও কি উনাদের পিটাইতেন??? ধুর খালি আদিযুগের কথা!! আচ্ছা বরতমান যুগের স্টিফেন হকিং, বিল গেটস বা জুকারবাগের মাও কি উনাদের পিটাইতেন??? বিদেশ ছাইড়া এইবার দেশে আসি আইচ্ছা রবীন্দ্রনাথ, নজরুল হইতে শুরু কইরা হালের হুমায়ুন আহ্মেদ বা মোহাম্মদ ইউনূস বা মোস্তফা সরোয়ার ফারুকীর মাও কি এমন করতেন??? আচ্ছা উনারা কি খুব খারাপ ছাত্র ছিলেন???? কিংবা অসফল মানুষ??? আমরা সৃষ্টিশীল মানুষের জন্য হাহাকার করি কিন্তু কয়জন সৃষ্টিশীলতা কে সাদরে গ্রহন করি??? আপনার সন্তান বা ছোটো ভাই যদি ভাল কবিতা লিখে , গান গায় কার্টুন আঁকে আপনি কি তাকে উৎসাহ দেন নাকি পড়াশুনা নস্ট করে এইসব বাজে(!) কাজ করার জন্য বকাঝকা করেন??? কখনো কি জানতে চেয়েছেন তার মনের গোপন ইচ্ছা গুলো কি??? সে কি হতে চায়?? নাকি তার মনের ইচ্ছা গুলোকে গলাটিপে হত্যা করে তাকে ডাক্তার বা ইঞ্জিনিয়ার হওয়ার আদেশ দেন??? আজকের শিক্ষা ব্যাবস্থায় বর্তমানে A+ পাওয়াটাই ভালো ছাত্র হওয়ার মাপকাঠি।

আচ্ছা সবসময় কি ১-১০ রোল ধারীরাই A+ পায়??? পিছনের রোল জাদের তারা কি পায় না??? আমি তো দেখি কোনো স্কুল থেকে যদি ৫০০জন পরীক্ষা দেয় তার মধ্যে সর্বনিম্ন A+ পায় ৪৯০ জন বাকি ১০ জন হয়তো দৈবক্রমে বা কোনো দুর্ঘটনার কারণে A+ বঞ্চিত হয়। তাহলে পড়ালেখার নামে ছোট বাচ্চাদের উপর এই নির্যাতনের মানে কি??? আমার তো মনে হয় শুধু যদি পরিক্ষার আগে ঠিকমত ৩-৪ মাস যদি এরা পাঠ্য বই পড়ে তাহলেই ভালো রেজাল্ট সম্ভব। যাক এইবার আসেন বাস্তবতায়, আমরা সাধারণত দেখি প্রতিবছর অসংখ্য মফসসলের ছেলে মেয়েরা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভরতি পরীক্ষা দিতে ঢাকা আসে, মজার ব্যাপার হলো যে আমরা যারা ঢাকা থেকে ভাল প্রতিষ্ঠানে পড়াশুনা করি তাদের কয়জন ভাল বিষয় পায়?? সবগুলা ভাল অনুষদে ভালো রেজাল্ট করা স্টুডেন্টদের ৯০% ই হোলো মফস্বলের ছেলেমেয়েরা, আধুনিকদের(!) ভাষায় যারা ক্ষেত নামে পরিচিত!!! তাহলে সফলতা কোথায় নাগরিক জীবনের ?? নাগরিক মানুষ সবুজ দেখে না, ফরমালিন ছাড়া কিচ্ছু খায় না!, গল্পের বই পড়ে না!! সাঁতার কাটে না , ঘুড়ি উড়ায় না, ফুটবল খেলে না (মাঠ ই চিনে না অনেকে!!), ডানপিঠে এদের কাছে গুণ্ডামির নামান্তর!! এরা ঝামেলা পছন্দ করে না অতি মাত্রায় পরনির্ভরশীল, আরেক অর্থে ফারমের মুরগী!! এরা বাবুরাম সাপুড়ে কবিতার সাপেদের মত করে না তো ফোঁস ফাঁস মারি যতই ঢুস ঢাস!! অপর দিকে মফস্বলের মানুষ এক নাম্বারের ক্ষেত মোবাইলে বা কম্পিউটারে গেমস খেলে চর্বি বাড়ায় না মাঠে যাইতে চায়, চর্বি এবং এনার্জি লস করে, এরা অভিজাত রোগ অর্থাৎ হারট এটাকে মরে না এদের ডায়াবেটিস হয় না এরা বাঁচে অনেক দিন !!! এরা সহজে মাদকাসক্ত হয় না এদের জীবনীশক্তি অনেক বেশী!!! এদের দেশের প্রতি টান অনেক বেশী বিদেশি (ইংলিশ বা হিন্দি)কথা কয় না যা বলার সহজ বাংলায় বলে!! (আমি এভারেজ হিসাব বলতেছি সবাইর কথা না ) পুররররাই ক্ষেত!!!!! (কারা ক্ষেত আপ্নারাই বিচার করেন!!!) আগে আমাদের দেশে বৃদ্ধাস্রম ছিল না, পারিবারিক বন্ধন ার সম্প্রীতি ছিল আমাদের গৌরব, বিদেশিরা আমাদের ফ্যামিলি বন্ড এর কারনে আমাদের সন্মান করত, সেই আমরা বাবা-মায়ের রক্ত, মাংস, ঘাম, স্রম শোষণ করে শিক্ষিত হয়ে আজকে বাবা মাকে বৃদ্ধাশ্রমে দেই আমাদের আধুনিক জীবনযাপনের অসুবিধা হয় বলে!!!! সেলুকাস আর কাকে বলে!!! আমরা আন্দোলনকে ভয় পাই, উচিৎ কথা বলতে পারি না, এগুলো তো আমাদের পারিবারিক শিক্ষা থেকে আসার কথা। কিন্তু আমাদের পরিবার আমাদের আজকে শিক্ষা দেয় কিভাবে বন্ধুদের চেয়ে বেশি নাম্বার পাইতে হয় কিভাবে অপরকে হিংসা করতে হয়!!! এই পারিবারিক শিক্ষা যদি ১৯৭১ সালে থাকতো তাহলে ৯মাস দূরে থাক ৯০ বছরেও এই দেশ স্বাধীন হইতো কিনা সন্দেহ!!! শিক্ষা ও মনুষ্যত্ব গল্পের লেখকের ভাষায় বলতে হয় “চিন্তার স্বাধীনতা, বুদ্ধির স্বাধীনতা, আত্মপ্রকাশের স্বাধীনতা যেখানে নেই, সেখানে মুক্তি নেই। ” আসল কথা হলো শিক্ষার আসল কাজ জ্ঞান পরিবেশন নয় মূল্যবোধ সৃষ্টির উপায় তাই যেখানে মূল্যবোধের মূল্য পাওয়া যায় না সেখানে শিক্ষা নেই।

তাই আমাদের যদি দেশের প্রতি ভালোবাসা থাকে টান থাকে তাহলে আমাদের উচিৎ সৃষ্টিশীলতাকে লালন করা, যার যার অবস্থান থেকে এই চেস্টাটা করা যায় খুব সহজেই যেই ছেলেটা বা মেয়েটা সৃষ্টিশীল কাজ করতে চায় তাকে শুধু একটু মৌখিক সাপোর্ট দিবেন দেখবেন সে আপনাকে উপহার দিবে একটি সৃষ্টিশীল সুন্দর জাতি। বিঃ দ্রঃ আমি সিদ্ধান্ত নিয়েছি আমার যত স্টুডেন্ট আছে তাদের মধ্যে যারা বিভিন্ন সৃষ্টিশীল কাজ করে তাদেরকে সপ্তাহে একদিন অন্তত এক ঘন্টা হলেও সময় দিবো, তাদের কথা শুনবো, ক্ষুদ্র একজন মানুষের ক্ষুদ্র চেস্টায় যতটুকু সম্ভভ তাদেরকে সাহায্য করবো। (লেখা পড়ে কেউ বিরক্ত হইলে আমি ক্ষমা প্রার্থী আমি গুছিয়ে কিছু লিখতে পারি না যা মনে আসল তাই লিখলাম, আশা করি এই ধৃষ্টতা ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন। ) পুনশ্চঃ আমি ওইদিন অই অসুস্থ স্টুডেন্ট কে পড়াই নাই, তার গল্প শুনলাম সে কি কি করতে পছন্দ করে তা শুনলাম, চইলা আসার সময় সে আমাকে জানাইলো তার বাবা মাও নাকি এতক্ষন ধইরা তার কথা জীবনেও শুনে নাই, তারা নাকি বলে, বক বক না কইরা পড়তে বস!!! আমি মুচকি হাসলাম আর মনে মনে ভাবলাম আচ্ছা এই সন্তান যখন বড় হবে তখন কি তার বাবা মায়ের কথা মনোযোগ দিয়ে শুনবে নাকি তাকে বেশি কথা বলে এই উছিলায় বৃদ্ধাশ্রমে দিয়ে আসবে!!!! (দয়াময় আমাদের বাবা-মাদের মঙ্গল করুন, আমিন!!!) ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।