বেশ্যা শব্দটি শুনলেই আমরা মুখ বাকাঁয় ছিঃছিঃ করি। কোন মেয়ে যদি অন্যায় কিছু করে তখন তাকে বেশ্যা বলে গালি দিয়ে নিজের রাগ মেটায়। ব্যভিচারের সংজ্ঞা কি? সামাজিক স্বীকৃত সম্পর্কের বাইরে গিয়ে কারো সাথে দৈহিক সম্পর্ক স্থাপন। বেশ্যাবৃত্তি কি কোনো সামাজিক সম্পর্কের পর্যায়ে পড়ে? বেশ্যাবৃত্তি কি ব্যাভিচারের বাইরের কোনো নিয়ম? মক্কা-মদিনায় কি সে সময়ে বেশ্যাবৃত্তি প্রচলিত ছিলো? ইসলামে কি পতিতাবৃত্তি নিষিদ্ধ নয়? লালনের গান মনে পড়লো, গোপনে যে বেশ্যার ভাত খায়, তার জাতের কি ক্ষতি হয়। নারী দেহ, নারী যৌনতা এবং মানবজাতির যৌনতা সাধারণ ভাবে বলতে গেলে নেতিবাচক হিসেবে গ্রহণ করার কথা না।
স্বভাবগত কোন কারণে নয়, অভাবের তাড়নায় পতিতাবৃত্তি করা হয় । এই দেশে যদি পতিাতদের কোন প্রয়োজন না থাকতো তবে অনেক আগেই পতিতাবৃত্তিবন্ধ হয়ে যেতো । বাংলাদেশে পতিতাবৃত্তিকে বৈধতা দেওয়া হয়েচে, তবে এখন পর্যন্ত এর সামাজিক স্বীকৃতি বাংলাদেশে দেওয়া হয় নি । এদের কোন ভোটাধিকার নেই । এদের পেশাকে জাতীয় পরিচয় পত্রে পেশা হিসেবে স্বীকৃতি দেওয় হয় নি।
কলগার্লরা পতিতালয় নির্ভর নয়। তারা চলমান এবং অদৃশ্য। দেখা যায়, কিন্তু জানা যায় না। ঢাকার কলগার্ল বিজনেস খুবই সুসংগঠিত। এ পেশাটি যারা নিয়ন্ত্রণ করেন, তাদের নেটওয়ার্কও শক্তিশালী।
দেশটা আমরা যতটা পঁচে গেছে মনে করি তার চাইতে বেশী পঁচে গেছে। বেশ্যার বাজারে এখন নিম্নবিত্ত থেকে উচ্চবিত্ত সবারই আনাগোনা আছে। পতিতাবৃত্তি হলো পৃথিবীর “সবচেয়ে পুরাতন একটা পেশা”, যদিও এখনও অনেক দেশ ও আইন জীবন ধারনের এই পন্থাকে নিষিদ্ধ এবং হীনতা হিসেবেই দেখে। স্বপ্ন এবং ইচ্ছা পুরণের নিমিত্ত হিসেবে যৌনকামনা চরিতার্থ ও উত্তেজনা প্রশমনের উৎস হিসাবে নারীর (এবং স্বল্প পরিমাণে পুরুষের) চাহিদা ছিল, আছে এবং সব সময় থাকবে। পতিতা বৃত্তিকে এই দেশের উচ্চ সমাজের মানুষ জন গৃণা চোখে দেখে ।
কিন্ত এই সকল মানুষের একটি বিরাট অংশ এই পতিতাদের কাছে নিত্য যাতায়ত করে । পতিতা বৃত্তির উদ্ভব সম্পর্কে বলতে গেলে বলা হয় এটি হলো পৃথিবীর আদিমতম ব্যবসা । একসময় ধর্মের ছত্রছায়ায় এই পতিতা বৃত্তিকে বাধ্য করা হেতো । বাংলাদেশে বেশকয়েক ধরনের পতিতা পাওয়া যায় এর মধ্যে -ভাসমান পতিতা,হোটেল গার্ল, এবং বদ্ধমূল পতিতা । এর মধ্যে কেবল মাত্র বদ্ধমূল পতিতাদের লাইসেন্স দেওয় হয় এবং অন্য সকল ধরনের পতিতাবৃত্তি বাংলাদেশে অবৈধ ।
বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলাম তার ‘বারাঙ্গনা’ কবিতায় নারী যৌনকর্মীদের ‘মানুষ’ হিসেবে চিহ্নিত করেছেন। কবিতার প্রতিটি লাইনে ছিল পতিতালয় সম্পর্কে সমাজের মনোভাবের বিরুদ্ধে বিদ্রূপ ও বিদ্রোহের স্পষ্ট প্রতিফলন।
১৬৬০ সালে মোঘল সময়ে প্রতিষ্ঠিত রমনা পার্ককে তো ঢাকার প্রাণ বলে থাকেন পরিবেশবিদরা। রাজধানীর প্রায় প্রত্যেকটি পার্কে বেশ্যাদের অবাধ বিচরণ। সন্ধ্যা হলেই তাদের অভয়াশ্রমে পরিণত হয় সব পার্ক।
কারণ তাদেরও নির্দিষ্ট কোনও জায়গা নেই। ফলে তারাও বাধ্য হন ঢাকা শহরে ভেসে বেড়াতে। বেশ্যাদের পাশাপাশি তাদের খদ্দেরকেও পোহাতে হয় পুলিশের নানা হয়রানি। নারীর যৌনতা এবং দেহ কার অধীন? আদর্শগতভাবে বলা যেতে পারে কারও না, যদিও দৃঢ় বাস্তবতায় এর উত্তর হলো: সে যে সর্বোচ্চ শক্তির সহায়তায় তার দাবীর সমর্থন আদায়ের ক্ষমতা নিয়ে দাবী উত্থাপন করে-হয়তো সেটা কখনও বিনিময় মূল্যে কিংবা নারী অসম্মতি স্বত্তেও। বাংলাদেশে ১৪টি বৈধ পতিতালয় আছে ।
হিউম্যান রাইটওয়াচের মতে প্রায় ২০০০০ পতিতা বসবাস করে । বাংলাদেশের পতিতালয়ে সাধারনত ১৪-১৮ বছরের মেয়েদের চাহিদা বেশী থাকে । এই সকল স্থানের মেয়েদের যোগান দেয় দেশের মানব পাচারকারীরা । একজন পতিতা প্রতিদিন গড়ে ১৫-২০ জনের সাথে মিলিত হয় । বর্তমানে দেশে নারী যৌনকর্মীর সংখ্যা প্রায় আড়াই লাখ।
দেশের সবচেয়ে বড় পতিতালয় হচ্ছে দৌলতদিয়ায়। কয়েকবছর আগেও যৌনকর্মীদের মৃতদেহ দাফন করা যেত না। নদীতে ভাসিয়ে দেওয়া হতো। বাংলাদেশে শিশু-কিশোরীদের যৌন পেশায় জড়িয়ে পড়ার হার বৃদ্ধি পাচ্ছে। অল্পবয়সীদের চাহিদা থাকায় শিশু-কিশোরীদের এই সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে বলে মনে করা হয়।
আবার কোথাও এরকম নিয়মও আছে- বিষেশ করে ঢাকার বাইরে- যাদের প্রতিদিন ১০০ টাকার বিনিময়ে চার পাচজন পূর্ন বয়স্ক পুরুষের শয্যাসঙ্গী হতে হয়। এই উপার্জনে বেশীর ভাগ বালিকারই কোন অংশীদারত্ব নেই কারন এরা তাদের পরিবার কর্তৃক বিক্রিত হয়েছে এই শর্তে যে দুই/তিন বছর সর্দারনীরা এদের সমস্ত অর্থ রেখে দিতে পারবে। এইসব বালিকারা ছুকরী নামে পরিচিত। অর্থের বিনিময়ে অন্যকে যৌন আনন্দ দেবার পেশাকে পতিতাবৃত্তি বলে। এটি পৃথিবীর প্রাচীনতম পেশা ২০ থেকে ৩০ বছর বয়সী নারীরাই এই পেশায় জড়িত হয় বেশি।
আমাদের দেশে অধিকাংশ নারী জোরর্পূবক এই পেশায় নিয়োজিত হয়। সমাজের দৃষ্টিতে এ পেশা নিন্দনীয় হলে ও কেবল মাত্র জীবিকার তাগিদে বহু নারীকে এ পেশা বেচে নিতে হয়। পৃথিবীর অন্যান্য দেশের মতো আমাদের দেশে পতিতাদের পুনর্বাসনের কোনো ভালো উদ্যোগ নেই । পাশ্চাত্যে পুরুষ পতিতাও রয়েছে। পুরুষ পতিতাদের বলা হয় গিগালো ।
শহরের রাস্তায় যারা ফুল, পানি, বাদাম বিক্রি করে তাদের নিরাপত্তা ও পুনর্বাসনে ব্যবস্থা না থাকায় পার্কের দারোয়ান কর্মচারীদের নির্যাতনের শিকার হয়ে এই পেশায় জড়িয়ে যায়। রাজধানীর প্রায় ১৫ হাজার পতিতার রয়েছে ৫ হাজার সন্তান। মোহাম্মদপুরের দুর্জয় শিশু যত্ন কেন্দ্রে তাদের যত্ন দেওয়া হয়। এই শিশুরা চরম অবহেলিত ও নির্যাতনের শিকার । জন্ম নিবন্ধনে মা-বাবার নাম না থাকায় এই শিশুরা রাষ্ট্রে অদৃশ্য।
অনেক শিশুদের মা তাদের সামনেই যৌনকাজ করে যা এই বাচ্চাদের মানসিক উন্নয়নে বাধা দেয়।
অর্থনৈতিকভাবে, নারীর দেহ এবং নারীর যৌনতা এক মূল্যবান পণ্য। অর্থনৈতিক পণ্য হিসাবে নারীর এই অবমূল্যায়ন হ্রাস করতে কেউ পছন্দ করুক বা নাই করুক, দুনিয়ার প্রত্যেক সমাজেই এই ব্যবস্থা বাস্তবিক এবং নিত্য তাই তা কোন স্থানের, সমাজের এবং সংস্কৃতির উট, গরু, ভেড়া কিংবা ঘোড়াই হোক না কেনো অথবা অন্যদিকে ডলার, ইউরো, ইয়েন বা ইউয়ান এর চুক্তি। প্রথমেই আমি বলব যে আমি বিশ্বাস করি যৌনকর্মীদের সম্মান করা উচিৎ, তারা তাদের যৌবন অর্থের জন্য বিনিময় করে, কিছু পাওয়ার জন কঠোর পরিশ্রম করে, এই নিয়ে কোন সমালোচনা করা কারন নেই, তাদের খদ্দেরদের সাথে সম্পর্কে তাদের অনেক বেশী সম্মান পাওয়া উচিৎ, যদিও তারা এসব করে অবৈধ ভাবে। নিঃসন্দেহে নারী যৌন কর্মীদের খদ্দেরের সংখ্যাই বেশী, এবং খদ্দেরদেরও একটা বিপুল অংশ অবৈধ অর্থই ব্যবহার করে, যদিও এই অবৈধতা এবং এই যৌন কর্মীদের অবৈধতা একই নয়, খদ্দেররা সবই করছে অবৈধভাবে বলেই, হয়ত পুরো বিশ্বই অবৈধ কর্মে লিপ্ত , কিন্তু যৌন কর্মীরা যা করছে তা নয়, তাই না।
ভারতীয় মন্দির গুলোতে এক সময় পতিতাবৃত্তির করানো হতো মেয়েদের প্রায় জোর করেই । অতীপ্রাচীন কালথেকেই ভারতে দেবদাসী প্রথার প্রচলন ছিল । এই সময় বিভিন্ন গগ্রাম থেকে সুন্দরী মেয়েদের ধরে এনে দেবতার সাথে বিবাহ দেওয়া হতো । এই সময় তাদের এই মন্দিরেই থাকতে হতো । এই সময় মন্দিরের পুরোহিত এবং স্থানীয় ধনীক সম্প্রদায় এই সকল দেব দাসীদের সাথে যৌন কর্মে লিপ্ত হতো ।
এর উপরে ভিত্তি করেই বৎসন্যায়ের কামসূত্র প্রথম রচিত হয়েছিল। ঢাকার ধানমন্ডি, উত্তরা, গুলশান, বনানলী, সেগুনবাগিচা এলাকায় ফ্যাট বাসা নিয়ে চলছে কলগার্ল বিজনেস। মডেল প্রোভাইডার হিসেবে পরিচিত অনেক প্রযোজক, পরিচালক এবং এক সময়ের নামি অভিনেত্রীরা এই কর্মযজ্ঞ চালিয়ে যাচ্ছেন। সচারচর কোন কলগার্লের বয়স বেশি হয়ে গেলে বা চাহিদা কমে আসলে তারা তখন এজেন্ট হিসেবে কাজ শুরম্ন করেন। টেলিভিশন ও সিনেমার পরিচালক-প্রযোজকের লোভনীয় অভিনয়ের সুযোগ বাসত্মবায়ন করতে, মডেল হওয়ার খায়েশ পূরণ করতে, সখের বসে এমনকি উচ্চবিত্ত গৃহবধূ একাকিত্ব দূর করতে তার বন্ধুর মাধ্যমে জড়িয়ে পড়ে এই ধরনের পেশায়।
বিদেশী ক্লায়েন্টদেরও মনোরঞ্জন করে থাকেন ঢাকার কলগার্লরা। যাদের কাঁচা টাকা ওড়াতে কোন বাধা নেই, কেবল তারাই কলগার্লদের নিয়ে মেতে ওঠেন কামনা-বাসনা চরিতার্থ করার এই জমকালো আয়োজনে। কলগার্ল হচ্ছে মুখোশের আড়ালে চালিয়ে যাওয়া একটি পেশা। দেশে ঠিক কতজন কলগার্ল আছে, সে সম্পর্কে নির্দিষ্ট করে জানা যায়নি।
ঢাকার অদূরে একটি জেলা টাঙ্গাইল।
আর সেখানে গড়ে উঠেছে দেশের বৃহত্তম পতিতালয়। স্থানীয় লোকজনের কাছে পতিতালয়টি “বেবীস্ট্যান্ড” নামেই পরিচিত। রাজধানী ঢাকা থেকে কয়েকঘন্টা দুরত্বে উত্তরপূর্বাঞ্চলে। এই পতিতালয়ে দৈহিক ব্যবসায় নিয়োজিত রয়েছে কম বয়সী মেয়েরা। যাদের বয়স খুবই কম।
আর তাদের রেট ও অত্যন্ত নিম্নমানের, মাত্র ৫০ টাকা। যার ফলে খদ্দের ধরার জন্য এসব পতিতারা প্রাণপণ চেষ্টা চালায় নানাভাবে। খদ্দেরদের আকৃষ্ট করতে যৌন কর্মীরা তাদের দৈহিক বৈশিষ্ট্য পরিবর্তন করে গরু মোটা তাজাকরণ ওষুধ খেয়ে। এসব যৌনকর্মীদের তাদের দরিদ্র পরিবার দেহ ব্যবসায়ীদের কাছে মাত্র ২০ হাজার টাকায় বিক্রি করে। সেইসব ব্যবসায়ীরা এদের নিয়ে যায় কান্দাপাড়া যৌনপল্লীতে।
সেখানেই তাদেরকে লাগানো হয় যৌনকর্মে। পতিতাপল্লীর মালিক, সর্দারণী এবং দালালরা তার কোন তোয়াক্কা করছে না।
আমার দেশ আমার গর্ব। আমার ভাষা আমার অহংকার । প্রিয় বাংলাদেশ।
আমরা আমাদের এই ছোট দেশটাকে অনেক ভালবাসি। দেশকে যে আমরা মায়ের মত ভালোবাসি, আসুন তা বাকী দুনিয়াকে দেখিয়ে দিই। বাংলাদেশ আমার গর্ব, বাংলাদেশ আমার অহংকার ।
আমি বাংলাদেশী । জয় বাংলা ।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।