আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

অস্তিত্ব

স্বপ্ন বিলাসী আমি । স্বপ্নে নিজেরে খুঁজি । কল্পনায় বেঁচে থাকি । বাস্তবতা ভুলে যাই বারবার । প্রধান শিক্ষক মিজান সাহেব বরাবরের মতোই মোটা হাতাওয়ালা চেয়ারতিতে বসে ঝিমাচ্ছিল ।

চেয়ারের পিছনে রাখা স্টিলের আলমারিতে মাথাটা ধাক্কা খেয়ে চমকে উঠছেন মাঝে মাঝে । বিকট একটা আওয়াজে ঘুমটা একেবারেই ভেঙে গেল । না তেমন কিছু নয় । একটা ডাস্টার টেবিলে রাখার শব্দ, এই যা । সদ্য ক্লাশ শেষ করে রুমে ডুকলেন গনিতের শিক্ষক ইসহাক ।

মাস খানেক হল জয়েন করেছে এই স্কুলে । বাড়ি পাশের গ্রামেই । __ কি খবর ইসহাক, কেমন লাগছে, এ...... ? ইসহাক কিছু না বলে মুচকি হেসে জবাব দেয় । __ হুমম...! বুঝলে ইসহাক, শরিরটা ইদানীং খুব একটা ভাল যাচ্ছে না । বয়স হয়ে গেছে তো ! বাচ্চা ছেলেমেয়েদের আমি আর সামাল দিতে পারি না ।

এক কাজ কর, টুঁয়ের ক্লাসটা তুমি নিয়ে নাও । আমি ফাইভেরটা নিচ্ছি । __ আলমারির উপর থেকে কয়েকটা চক আর টেবিলের উপর ফেলে রাখা ডাস্টারটি নিয়ে ক্লাশে চলে গেল ইসহাক । আস্তে আস্তে মিজান সাহেব ও ক্লাসের উদ্দ্যশ্যে বেড়িয়ে পরে । [ ক্লাশ নিচ্ছেন প্রধান শিক্ষক মিজান সাহেব ] __ এই সবাই বস...বস ।

আজ তোমাদের ক্লাশটা আমি নিব । __ রুল নাম্বার ১ __ প্রেজেন স্যার । ( শুভ, ক্লাশের ফার্স্ট বয় ) রুল নাম্বার ২......রুল নাম্বার ৩........রুল................. [ স্কুলের মাঠে দেখা যাবে একজন মাঝ বয়সী লোক বাগান পরিচর্যার কাজ করছে, আর গুনগুন করে গান গাইছে “...পারে...লয়ে যাও আমায়......” । ] রুল নাম্বার ২৯ । __ এই, সবাই আসছে ? __ জি স্যার ।

__ ঠিক আছে । একটা বই দেখি ? (একজন ছাত্র বই এগিয়ে দেয়) __ পৃষ্ঠা ২৭ বাইর কর । __ শুভ পর কি লেখা আছে ? (শুভ পড়া শুরু করল, মিজান সাহেব আবার ঝিমুচ্ছেন) চেয়ারের হাতার পাশে হেলে পড়তে পড়তে জেগে উতলেন মিজান সাহেব । ততক্ষনে একজন ছাত্রও নেই ক্লাশে । বই খাতা ডাস্টার নিয়ে বেরুবার উদ্দ্যেশ্যে দরজায় দারালেন মিজান সাহেব ।

অবাক হয়ে দেখলেন, ছাত্ররা সবাই বাগানে কাজ করা লোকটিকে ভেড় দিয়ে বসে আছে । মনে হচ্ছে লোকটি ওদের কিছু একটা বলছেন । এগিয়ে গেলেন মিজান সাহেব । চার পাশটা আরেকটু মনোযোগ দিয়ে দেখলেন তিনি । না বিশেষ কিছু চোখে পড়ল না ।

এবার ভিড় ঠেলে এগিয়ে গেলেন টিক জটলাটার মাঝখানে । লোকটা বিশেষ পরিচিত মনে হচ্ছে । তবু ঠিক ধরা গেল না । যাই হোক কাছে গেলেন মিজান সাহেব । লোকটির কাঁধে হাত রাখলেন ।

বিশেষ ঠের পেল বলে মনে হল না । হাতটা সরিয়ে নিলেন মিজান সাহেব । সোজা হয়ে দাঁড়ালেন একবার । কেও তাঁর দিখে কোন মনোযোগই দিচ্ছে না । না এটা মেনে নেয়া যায় না ।

আমি এই বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক । আমাকে অবহেলা ? মনে মনে ভাবছেন মিজান সাহেব । রেগেমেগে ঘুরে দাঁড়াবেন মিজান সাহেব । অমনি তাঁর চুখের সামনে পড়ল একটি খাটিয়া (মৃত মানুষ বহন করার জন্য এক প্রকার চৌকি বিশেষ) । এতক্ষনে মুখ খুললেন মিজান সাহেব ।

___ এই কি হয়েছে এখানে ? এটা কার লাশ ? [কোন জবাব দিল না কেও । ] ___ আরে কি, হয়েছে কি ? কেও কথা বলছে না কেন ? না ! কেও কথাত বলছেই না, ফিরে ও তাকাচ্ছে না তাঁর দিকে । হটাত চোখে পড়ল ইসহাককে । ইসহাকের চোখে পানি । বারবার রুমাল দিয়ে চোখ মুছচে ইসহাক ।

হ্যা এদিখেই আসছে সে । তাকে জিজ্ঞ্যেস করেই সব জানা যাবে । হাত ওঠিয়ে ইসহাককে থামাতে চাইল মিজান সাহেব । কিন্তু ইসহাকও তাকে লক্ষ্য করল না বরং তাকে গায়ে গা ঘষে চলে গেল ইসহাক । হচ্ছে কি এসব ? কিছুই বুজতে পাড়ছেন না মিজান সাহেব ।

এবার জটলা থেকে বেড়িয়ে এসে স্কুলের বারান্দায় দাঁড়ালেন । একটা পরিচিত মেয়েলী কণ্ঠে কান্নার আওয়াজ শোনতে পেলেন । আওয়াজটা কমন রুমের ভেতর থেকে আসছে । ভয়ে ভয়ে এগিয়ে গেলেন মিজান সাহেব । তাঁর স্ত্রী মিনারা ।

কিন্তু ও কাঁদছে কেন ?কেও কি ? ভেতরটা নড়েচড়ে উঠল মিজান সাহেবের । একবার স্ত্রীর দিকে একবার লাশের দিকে তাকাচ্ছে মিজান সাহেব । কার লাশ ? কে ? কে ? ভাবছে মিজান সাহেব । [ততক্ষনে একটি অল্প বয়সী মেয়ে এসে হাওমাও করে লাশটিকে জরিয়ে ধরল । এতে লাশের উপরের চাদরটি সরে যায় ।

] ___ একি, এ যে আমারই.........! তাহলে আমি.....কি....? না । ___ না এইত আমি । আমিত বেঁচে আছি । [দৌরে গিয়ে মেয়েকে জরিয়ে ধরে বললেন] ___ এই পাগলী আমি মারা যাই নি । এই দেখ আমি ।

দেখ দেখ । [তাঁর মেয়ে কোন সাড়া দইল না । দৌরে গেলেন স্ত্রীর কাছে] ___ মিনারা, তুমিত আমার কথা শুনবে । এই দেখ আমি । [মিনারা একই ভাবে আগের মত কান্না করতে থাকল] মিজান সাহেব দিকভ্রান্ত হয়ে দৌরে স্কুলের মাঠে আসলেন ।

একে ধরছেন ওকে ধরছেন । কেও তাঁর কথা শুনল না । তাকে লক্ষ্যই করল না । চিৎকার শুরু করলেন মিজান সাহেব-------মাঠের এই প্রান্ত থেকে ঐ প্রান্তে দৌরাচ্ছেন । ___ আমি মরে যাই নি..................।

এই দেখ আমি বেঁচে আছি । আমি মরে যাই নি............। ___ ঠং ঠং ঠং ডং ডং ডং ডং ডং ...............। । ছুটির ঘণ্টার আওয়াজে জেগে ওঠলেন মিজান সাহেব ।

এদিক ওদিক থাকিয়ে নিজের অবস্থান সম্পর্কে জ্ঞ্যাত হয় মিজান সাহেব । এখনো তিনি পঞ্চম শ্রেণীর ক্লাশে । [ঘণ্টার আওয়াজের সাথে সাথে ছুটাছুটি করে বেড়িয়ে যাবে স্কুলের সব ছাত্র-ছাত্রী । ] কিছুক্ষনের মধ্যেই পুরু স্কুল শূন্য হয়ে যায় । তখনও মিজান সাহেব পঞ্চম শ্রেনীর ক্লাশে বসা ।

স্কুলের দপ্তরী সাবু পতাকা নামাচ্ছে । চারপাশে শুনশান নীরবতা । ধির পায়ে স্কুল থেকে বাড়ির উদ্দ্যেশ্যে রওনা দিলেন । ভর দুপুরের স্তব্দ নীরবতা কাঠিয়ে এগিয়ে চলছেন মিজান সাহেব । উদ্দ্যেশ্য বেঁচে থাকা !!!!!! ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।