আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

রাজনীতিবিদ ও সমাজসেবকদের যোগ্যতা

রাজনীতি ছাড়া এমন কোন কাজ নেই যে কাজের জন্য নির্ধারিত যোগ্যতার দরকার হয় না। কিন্তু রাজনীতির জন্য কোন যোগ্যতার প্রয়োজন নেই। যে কেউ রাজনীতি করতে পারে বা করে। আর যেখানে যোগ্যতার প্রয়োজন নেই সেখানে অযোগ্যতাই সব চেয়ে বড় যোগ্যতা। তবে প্রশ্ন হচ্ছে সে যোগ্যতা কিসের ভিত্তিতে নির্ধারিত হবে? শিক্ষা, কর্ম, চিন্তা, অর্থ, মার্কা, সমর্থক, লবিং, বাহুবল, চেহারা, বংশ, আঞ্চলিকতা, চরিত্র, কূটকৌশল, বক্তৃতা ইত্যাদি যে কোন এক বা একাধিক বিষয়কে যোগ্যতার মাপকাঠি ধরা যেতে পারে।

যদি যোগ্যতার মাপকাঠি হয় শিক্ষা, তবে শর্ত হওয়া উচিতঃ ইউনিয়ন পরিষদের মেম্বার হওয়ার জন্য কম্পক্ষে ৮ম শ্রেণী, চেয়ারম্যান হওয়ার জন্য এসএসসি। উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান হওয়ার জন্য কম্পক্ষে এইচএসসি, চেয়ারম্যান হওয়ার জন্য ডিগ্রী। এমপি হওয়ার জন্য কম্পক্ষে অনার্স, মন্ত্রী হওয়ার জন্য মাস্টার্স। প্রধানমন্ত্রী হওয়ার জন্য কম্পক্ষে এমফিল এবং প্রেসিডেন্ট হওয়ার জন্য ডক্টরেট। আর যদি যোগ্যতার মাপকাঠি হয় কর্ম, তবে শর্ত হওয়া উচিতঃ যে কাজে যে সবচেয়ে বেশি সফলতা দেখাবে সে বিষয়ে সে তত বড় এলাকার দায়িত্বশীল হবে।

অর্থাৎ গ্রামে প্রথম হলে ওয়ার্ডে, ওয়ার্ডে প্রথম হলে ইউনিয়নে, ইউনিয়নে প্রথম হলে উপজেলায়, উপজেলায় প্রথম হলে সংসদীয় এলাকায়, সংসদীয় এলাকায় প্রথম হলে জেলায়, জেলায় প্রথম হলে বিভাগে, বিভাগে প্রথম হলে কেন্দ্রে সে বিষয়ক দায়িত্বশীল হবে। আর যদি যোগ্যতার মাপকাঠি হয় জনসমর্থন, তবে শর্ত হওয়া উচিতঃ মোট প্রাপ্ত ভোটের ৫০%-এর অধিক ভোট পেতে হবে। নতুবা সর্বাধিক ভোট পাওয়া দু’জনের মধ্যে আবার নির্বাচন হবে। নতুবা তা হবে পরাজিত সংখ্যাগরিষ্টের উপর বিজয়ী সংখ্যালগিষ্টের শাসন। সংসদে এমপিদের ভোটে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের মত ইউনিয়ন পরিষদে মেম্মারদের ভোটে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হলে অপচয় অনেক কম হবে।

আর যদি যোগ্যতার মাপকাঠি হয় অর্থ, তবে শর্ত হওয়া উচিতঃ সমাজসেবা ফান্ডে অনুদান প্রদানের ক্ষেত্রে যে ফাষ্ট হবে সে ফাষ্ট চেয়ারে বসবে এবং যে লাষ্ট হবে সে লাষ্ট চেয়ারে বসবে। এতে করে একদিকে সেবাফান্ড অনেক বেশি সমৃদ্ধ ও শক্তিশালী হবে, অন্যদিকে অপচয় ও ঘুষের লেনদেন বন্ধ হয়ে যাবে। তখন লক্ষ-কোটি টাকা ব্যয় করেও পরাজিত হয়ে হার্টফেল করতে বা প্রতিহিংসা পরায়ন হতে হবে না কাউকে। আর যদি যোগ্যতার মাপকাঠি হয় চিন্তাশক্তি, তবে শর্ত হওয়া উচিতঃ সমস্যা সমাধানে যেখানে যে বিষয়ে যে যত বেশি চিন্তাশক্তির প্রমান দিতে পারবে সেখানে সেই হবে সে বিষয়ক দায়িত্বশীল। তখন প্রত্যেকেই কূটকৌশলের পরিবর্তে জ্ঞান-গবেষণা ও সমস্যার সমাধানে নিজ নিজ সর্বোচ্চ চিন্তাশক্তিকে কাজে লাগাতে ব্যস্ত হয়ে পড়বে।

ফলে এমন অনেক লেখক-গবেষক বেরিয়ে আসবে যারা গোটা বিশ্বকেই আলোকিত করবে। আর যদি যোগ্যতার মাপকাঠি হয় সালিশ-বিচার, তবে শর্ত হওয়া উচিতঃ যে যত দ্রুত বিনা ব্যয়ে নির্ভিঘেœ সঠিক বিচার-সালিশ করতে পারবে তার কর্মএলাকা তত দ্রুত বাড়তে থাকবে। পক্ষান্তরে যে যত দেরীতে বা বিলম্বে বা ব্যয়সাপেক্ষে বা অন্যায় বিচার করবে তার কর্মএলাকা তত দ্রুত ছোট হয়ে যাবে। যে যত বেশি রাষ্ট্রীয় আইন, ধর্মীয় আইন ও সামাজিক আইন বুঝে রায় দেবে সে তত বেশি বিচারে সফল হবে। আর যদি যোগ্যতার মাপকাঠি হয় দলীয় মার্কা বা প্রতীক, তবে শর্ত হওয়া উচিতঃ শুধু মার্কা দেখে ভোট দিন, ব্যক্তি দেখার দরকার নেই।

যে মার্কা যত বেশি ভোট পাবে সে মার্কা তত বেশি আসন পাবে। যে দল যত শতাংশ আসন পাবে সে দল থেকে তত শতাংশ মন্ত্রী পরিষদের সদস্য হবে। তখন বিরোধী দল বলতে শুধুমাত্র যারা সংসদে যাবেনা বা গেলেও মন্ত্রী পরিষদে আসন লাভ করতে পারবেনা তাদেরকেই বুঝাবে। আর যদি যোগ্যতার মাপকাঠি হয় লবিং, তবে শর্ত হওয়া উচিতঃ যে প্রার্থী প্রকাশ্য জনসভায় নিজ দলীয় প্রধানকে দিয়ে বলাতে পারবে “ও নির্বাচিত হলে এবং আমি ক্ষমতায় গেলে ওকে আমি মন্ত্রী বানাব” তখন বুঝা যাবে কার লবিং কত স্ট্রং। আর যে দল আমেরিকা ও ভারতের সমর্থন পাবে সে দল ক্ষমতায় যাবে।

কিন্তু যে দল সৌদি আরব, মালয়েশিয়া, চীন, জাপানের সমর্থন পাবে সে দল দেশের বেশি উপকার করতে পারবে। আর যদি যোগ্যতার মাপকাঠি হয় বাহুবল, তবে শর্ত হওয়া উচিতঃ যে অন্যায়কারীকে প্রকাশ্যে জনসমক্ষে সজোরে থাপ্পড় দিয়ে উদ্ভোত পরিস্থিতি সামাল দিতে পারবে সেই হবে যোগ্য নেতা। তবে এ ক্ষেত্রে নিজেই অন্যায়কারী হিসেবে পরিগণিত হলে সেই হবে সবচেয়ে অযোগ্য। যে রাজপথে মার খাওয়ার সাথে সাথে মার দিতেও পারে সেই হবে যোগ্য পিকেটার। উল্লেখ্য যে, বাহুতে বল না থাকলেও বাহুবলধারী হওয়া যায়।

আর যদি যোগ্যতার মাপকাঠি হয় আঞ্চলিকতা, তবে শর্ত হওয়া উচিতঃ যে যত বেশি নিজ এলাকাকে স্বনির্ভর করতে পারবে সে তত বেশি সে এলাকায় যোগ্য বিবেচিত হবে। যে যত বেশি নিজ এলকাকে দুর্নীতি, দারিদ্র, বেকারত্ব, অবিচার, অশিক্ষা ও কুশিক্ষামুক্ত করতে পারবে সে তত বড় এলাকার নেতৃত্ব দিতে পারবে। যে যত বেশি নিজ ওয়ার্ড, ইউনিয়ন, উপজেলা, জেলা বা প্রদেশে ভাল করবে সে তত বড় দেশেও ভাল করবে। আর যদি যোগ্যতার মাপকাঠি হয় চেহারা, তবে শর্ত হওয়া উচিতঃ যে চেহারা যত বেশি হাসিমুখে মানুষের কাছাকাছি থাকে সে চেহারা তত বেশি প্রিয় হয়। যে চেহারায় যত বেশি ধর্মীয় পরিচয় ফুটে উঠে সে চেহারা তত বেশি সালামযোগ্য হয়।

যে চেহারায় যত বেশি ধুমপান-মদপান, রাগ-হিংসা, অহংকার-লোভ ফুটে উঠেনা সে চেহারা তত বেশি আস্তাযোগ্য হয়। যে চেহারা যত বেশি সুন্দর হয় সে চেহারা তত বেশি সমর্থন পায়। আর যদি যোগ্যতার মাপকাঠি হয় বংশ, তবে শর্ত হওয়া উচিতঃ শুধুমাত্র বংশ দেখে ভোট দিয়ে বা বিয়ে দিয়ে পরে আর হা-হোতাশ করা যাবে না। যে যাই বলুক না কেন বংশ দেখেই এ দেশের মানুষ অমুক বা তমুক কে আমৃত্যু মাথায় করে রাখবে। তাই তাদের দূষ দিয়ে অনর্থক নিজেই দূষী হয়ে যাবেন না।

শুধুমাত্র বংশ বা পিতৃ পরিচয়ে কত অদৃশ্য শিংওয়ালা মন্ত্রী, এমপি, চেয়াম্যান, মেম্মার হয় এ দেশে। আর যদি যোগ্যতার মাপকাঠি হয় কূটকৌশল, তবে শর্ত হওয়া উচিতঃ যে এমন কূটকৌশল বের করতে পারবে, যাতে সরকার ও বিরোধী দল মিলেমিশে কাজ করবে, বিরোধী দল হরতাল করবে না, সরকারী দল ইচ্ছামত সংবিধান পরিবর্তন করবে না, তবে সেই হবে এ দেশের সবচেয়ে যোগ্য লোক। সে যদি কেন্টনমেন্টের অধিবাসী হয় তাতেও কোন সমস্যা নেই, যদি দ্রব্যমূল্য না বাড়ে এবং ছাত্রদের খেলার মাঠ দখল না করে। আর যদি যোগ্যতার মাপকাঠি হয় চরিত্র, তবে শর্ত হওয়া উচিতঃ ব্যক্তি চরিত্র হতে হবে হযরত আবুবকরের (রাঃ) মত অটল, হযরত ওমরের (রাঃ) মত শক্ত, হযরত উসমানের (রাঃ) মত উদার, হযরত আলীর (রাঃ) মত সাহসী, হযরত মাআবিয়ার (রাঃ) মত বলিষ্ট। আর দলের চরিত্র হতে হবে তুরস্কের একেপির মত সময়ের সাথে সঙ্গতিশীল।

রাষ্ট্রের চরিত্র হতে হবে ইরানের মত নির্ভিক এবং মালয়েশিয়ার মত আধুনিক। আর যদি যোগ্যতার মাপকাঠি হয় বক্তৃতা, তবে শর্ত হওয়া উচিতঃ যখন যেখানে যা যেভাবে যতক্ষণ বলা উচিত তখন সেখানে তা সেভাবে ততক্ষণ বলতে পারলে তবেই সামনে যাবেন, নতুবা আরামচে ঘরে বসে থাকুন। সংসদে না যাওয়া, গিয়ে না বলা, বিষয় ভিত্তিক না বলে অপ্রাসঙ্গীক বলা, নির্ধারিত সময়ে শেষ করতে না পারা, গবেষণা করে প্রস্তুতি নিয়ে না বলা, মিথ্যা বলা, সংসদকে পল্টন ময়দান মনে করা ইত্যাদি চলবে না। আর যদি যোগ্যতার মাপকাঠি হয় উক্ত সবকিছুই, তবে শর্ত হওয়া উচিতঃ আপনি কোন বিষয়ে কত নম্বর পাবেন তা একবার নিজেই হিসেব করুন, আরেক বার আপনার সমালোচককে হিসেব করতে দিন। দু’জনের নম্বরের মধ্যে ব্যাবধান যত কম হবে তত বেশি আপনার যোগ্যতা।

(সংগ্রহ) ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।