আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ঘুরতে গিয়েছিলাম ভারত - ৩

আগের পর্বগুলো - ১ , ২ পরদিন ভোরে ঘুম থেকে উঠে পড়লাম। এমনিতেই নতুন জায়গায় ঘুমাতে একটু ঝামেলা হয়, তার উপর ভ্রমণের উত্তেজনা তো ছিলই। যা হোক, সকাল সকাল নাস্তা করে আমরা বের হয়ে গেলাম। আমাদের রান্নাবান্না করার জন্য কোলকাতা থেকে বাবুর্চি ঠিক করা হয়েছিল। সকালের নাস্তায় দেয়া হত লুচি, সবজির লাবড়া, দুপুরের আর রাতের খাবারে ভাত, ডাল, টমেটোর চাটনি থাকত কমন, এর সাথে একদিন মাছ, একদিন মুরগির মাংসে তরকারী দেয়া হত।

মাঝে মাঝে কিছু স্পেশাল আইটেম করা হত। আর বিকালে চা নাস্তার ব্যবস্থাও থাকত। যা হোক, সকালের লুচি-লাবড়ার নাস্তা আর চা খেয়ে আমরা রওনা হলাম। আজকের প্রথম গন্তব্য সায়েন্স সিটি। এটা একটা বিজ্ঞান জাদুঘরের মত।

অনেক বড় এলাকা নিয়ে তৈরি। শুরুতে যে অংশে ঢুকলাম, এখানে একটা জায়গায় দেয়াল জুড়ে নানান গ্রহ-নক্ষত্রের ছবি টাঙানো। মাঝখানে বেশ কিছু বৈজ্ঞানিক যন্ত্রপাতিও আছে। একটা অংশে আছে ভার্চুয়াল রাইড। এখানে একটা লাল রঙের বাক্সের ভিতর সবাইকে ঢুকিয়ে দেয়া হয়।

এরপর সামনের স্ক্রীনে চলতে থাকে দৃশ্য, দৃশ্য অনুযায়ী বক্সটা দুলতে থাকে। ডানে-বাঁয়ে, উপরে-নীচে, সামনে-পেছনে ঝুঁকেও পড়ে। মনে হয় যেন ঐ দৃশ্যগুলোতে আমরাই ঢুকে পড়েছি। দৃশ্যগুলো ছিল ভবিষ্যতের কোন এক গ্রহে যেখানে আমরা সবাই উড়ে উড়ে চলছি। কখনও সারিবদ্ধ পিলারের মাঝে এঁকে বেঁকে চলছি, আবার কখনও কোন গহ্বরে ঢুকে পড়ছি।

ভারী মজার। ওহ বলতে ভুলে গিয়েছিলাম, এখানে ঢোকার সময় টিকেট কাটতে অনেক সময় লেগে গিয়েছিল। তখন আমাদের কয়েকজন আইসক্রিমের গাড়ি দেখে এগিয়ে গেল। কোন আইসক্রিম বিক্রি করছিল আইসক্রিমের গাড়িতে। ইচ্ছামত ফ্লেভার পছন্দ করে নেয়া যায়।

কয়েকজন দুই রকম ফ্লেভার মিক্স করে নিতে গিয়ে ধরা খেয়ে গেল। দাম চেয়ে বসল দ্বিগুণ, অথচ পরিমাণে দ্বিগুণের চেয়ে অনেক কম ছিল। ওদের ধরা খাওয়া দেখে আমরা বাকীদের আইসক্রিম খাওয়ার ইচ্ছা মরে গেল। তো যা বলছিলাম। ঐ লাল বাক্সের নামটা যেন কী ছিল, মনে পড়ছে না।

ওখান থেকে বের হয়ে আমরা লিফটে করে উঠে গেলাম একেবারে ওপরতলায়, সাত কি আটতলা ছিল মনে হয়। এরপর গোল হয়ে নেমে আসা সিঁড়ি দিয়ে আস্তে আস্তে নামতে থাকলাম। এখানে একেক তলায় একেক ধরণের জিনিস আছে। কোনটায় নানান যন্ত্রপাতি, কোনটায় অ্যাকুইরিয়ামে নানান জাতের মাছ, কোনটায় মহাকাশের কিছু ছবি - এরকম নানান জিনিস। পুরোটা ঘুরে দেখতে দেখতে নেমে এলাম।

এরপর এই বিল্ডিং থেকে বের হয়ে আরেক দিকে হাঁটা ধরলাম। এখানে বিশাল একটা পার্কও আছে। নানান জাতের গাছপালা দিয়ে সাজানো। একটা জায়গায় শুধু ঝোপঝাড় গাছ দিয়ে গোলকধাঁধার মত বানানো। কিছু কিছু খোলা জায়গায় একেকটা ছোটখাট যন্ত্রও রাখা আছে, যেমন উইন্ডমিল বা পানিবিদ্যুৎ প্রকল্পের রেপ্লিকা।

এক জায়গায় একটা ছোটখাটো রোলার কোস্টারও চোখে পড়ল। আমাদের দেশে তখনও ফ্যান্টাসি কিংডম হয়নি, রোলার কোস্টার শুধু টিভিতেই দেখেছি। কাজেই এই সুযোগ কেউই ছাড়তে চাইল না। তবে সমস্যা হল এই রোলার কোস্টারটা এতই ছোট যে পাঁচজনের বেশি চড়া যায় না। তাও একেক সিটে একজন করে বসতে হয়।

পালা করে পাঁচজন করে করে উঠলাম আমরা। আমরা তিন কন্যা আর আরও দুইজন চড়লাম। আমি দৌড়ে গিয়ে সবার সামনের সিটে বসলাম। ওখানকার লোকটা সিটবেল্ট আটকে দিতে দিতে শিখিয়ে দিল, শক্ত করে ধরে বসবেন, ঘুরতে ঘুরতে যখন মনে হবে বাইরের দিকে ছিটকে যাচ্ছেন তখন ভিতরের দিকে চেপে বসার চেষ্টা করবেন। তার নির্দেশ মেনে চললাম।

দেখলাম আকারে ছোট বলে এই রোলার কোস্টারকে আন্ডারএস্টিমেট করা যায় না। যথেষ্ট জোরগতিতে চলে। ভয়ের সাথেও যে মজা পাওয়া যায় ভালোমতই টের পেলাম। চিৎকার করতে করতেই হাসছিলাম সবাই। নেমে এসে তিনকন্যার একজন জানাল ওর মাথার ক্যাপ উড়ে গিয়েছে।

পরে অবশ্য সেটা উদ্ধারও হল, আমাদেরই এক বন্ধু খুঁজে বের করে দিল। পরে ওরা বলল, মনে হচ্ছিল এক্ষুণই বাইরে পড়ে যাব, আরেকটু হলেই মনে হয় পড়ে যেতাম। আমি বললাম, তো তোরা লোকটার কথামত ভিতরে চেপে বসিসনি? ওরা বলল, কই লোকটা তো এমন কিছু বলেনি। আমি বললাম, আমাকে তো বলে দিয়েছিল, আমার সমস্যা হয়নি, মনে হয় সামনের জনকে বলেই ক্লান্ত হয়ে গিয়েছিল। এরপর আমরা মাঠ পার হয়ে গেলাম আরেক অংশে।

সেখানে আরেকটা ছোটখাট আন্ডারগ্রাউন্ড জাদুঘর আছে। সেখানে ঢুকতে গেলে দারোয়ান জিজ্ঞেস করল, আপনারা কি শো-এর টিকিট কেটেছেন? বললাম, হ্যাঁ কেটেছি। বলল, তাহলে ঐটা আগে দেখে আসুন, সময় হয়ে গিয়েছে, এখানে ঢুকলে শো দেখার সময় পার হয়ে যাবে। আমরা আবারও প্রথম বিল্ডিং-এ চলে এলাম। এখানে একটা বিশাল হলরুম আছে।

ঠিক আমাদের নভোথিয়েটারের মত। অবশ্য তখন তো আর এসব কিছুই ছিল না আমাদের দেশে, তাই আমাদের জন্য এটা একেবারেই নতুন একটা জিনিস। টিকিটের নাম্বার অনুযায়ী আমরা সিট দখল করে ফেললাম। সিটগুলো এমন যে পিঠের দিকে হেলান দিলেই একেবারে শুয়ে পড়া যায়। শো শুরু হতেই সবাই যার যার সিটের পিছন দিকে হেলান দিয়ে একেবারে শুয়ে পড়লাম।

বিশাল ছাদের পুরোটাই হল স্ক্রিন। প্রথমে শুরু হল মহাকাশ দিয়ে। গ্যালাক্সি, ছায়াপথ, সৌরজগতের সবকিছু দেখিয়ে যখন পৃথিবীতে চলে এলাম, তখন ক্যামেরা আগাতে আগাতে ইউরোপে চলে এল। দেখানো হল ইউরোপের একটা রাস্তায় একটা মেয়ে স্কিপিং করছে। ক্যামেরা আরও এগিয়ে এল, মেয়েটার নাকের উপর জমে থাকা এক ফোঁটা ঘামের ভিতর ঢুকে গেল।

এরপর শুরু হল অণু পরমাণুর খেলা। আসলে আরও অনেক কিছু দেখিয়েছিল, কিন্তু বর্ণনা করতে পারছি না। যা হোক, প্রায় এক ঘন্টা ধরে মন্ত্রমুগ্ধ হয়ে দেখলাম। এরপর শো শেষ হলে আমরা সেই আন্ডারগ্রাউন্ড জাদুঘরে চলে গেলাম। এখানে ঢুকে বুঝলাম এটা হল পশুপাখির জগত।

কিন্তু কিছুই আসল না। নানান পশুপাখির মূর্তি তৈরি করে সাজানো, মূলত প্রাগৈতিহাসিক যুগের ডাইনোসর, টেরানোড্যাকটিল আরও কি কি জানি সব। তবে মূর্তিগুলো কিন্তু অনড় না, যান্ত্রিকভাবে সেগুলোকে নাড়ানো হচ্ছে। ডাইনোসরগুলো ডানে বাঁয়ে তাকাচ্ছে, আমাদের দিকে তাকিয়ে হাত নাড়ছে যেন হাতের কাছে পেলে এক্ষুণি খেয়ে ফেলবে। বড়ই হাস্যকর।

যা হোক, এখান থেকে বের হয়ে এলাম। আমাদের দুপুরের খাবারের ব্যবস্থা এখানেই করা হল। বাবুর্চিরা রান্না করে নিয়ে এসেছে। আজকে স্পেশাল মেনু, পোলাও, চিলি চিকেন আর ভেজিটেবল। ভালোই ছিল রান্না, শুধু একটু ঠান্ডা হয়ে গিয়েছিল।

যা হোক, খাওয়া দাওয়া শেষে আমাদের বাড়িতে ফেরার পালা। ফেরার সময় আর হেঁটে হেঁটে মেইন গেটে ফিরলাম না। এবার চড়লাম কেবল-কারে। একেকটা কেবল-কার দুইটা করে কম্পার্টমেন্ট, অনেকটা আমাদের শিশুপার্কের পদ্মফুলের মত, তিন-চারজন করে বসা যায়। এখানে চড়ে নিচের পার্কটা আরও সুন্দর করে দেখা গেল, বিশেষ করে গোলকধাঁধার অংশটা।

সায়েন্স সিটি থেকে বের হয়ে আমরা গেলাম ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়াল। কোলকাতায় এসে এখানে না ঘুরে কেউ যায় না মনে হয়। ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়ালে ঢুকেই রাণী ভিক্টোরিয়ার একটা বিশাল মূর্তি, সিংহাসনে বসে আছে। এটা দেখেই আমার ছোটবেলার একটা বান্ধবীর কথা মনে পড়ে গেল। সে পিচ্চিকালে বাবা-মায়ের সাথে এখানে বেড়াতে এসেছিল।

ঐ ছবি দেখিয়ে সে আমাদের গল্প করেছিল যে এখানে ঢুকে মূর্তিটা দেখেই নাকি সে দৌড়ে গিয়ে হাঁচড়ে পাঁচড়ে বেয়ে উঠে রাণীর কোলে উঠে বসেছিল। পরে মায়ের বকা খেয়ে নেমে আসতে হয়েছিল। মূর্তির সামনে, পাশে বসে ছবি তোলার পালা শেষ করে আমরা ঢুকলাম মূল ভবনে, যেটা একটা জাদুঘর। সব জাদুঘরের মত এখানেও ছবি তোলা নিষেধ। নইলে অনেক সুন্দর সুন্দর ছবি তোলার মত জিনিস ছিল।

আমার কাছে সবচেয়ে ভালো লেগেছিল ছাদের কাছে দেয়াল জুড়ে আঁকা ছবিগুলো। জাদুঘর থেকে বের হয়ে মেমোরিয়াল চত্বরের বিশাল পার্কে ঘুরে বেড়াতে থাকলাম আর ছবি তোলা তো চলছিলই। ইচ্ছা করছিল এখানেই সারাটা দিন আড্ডা দিয়ে কাটিয়ে দিই, কিন্তু সময় কোথায়? আমরা হোটেলে চলে এলাম। বিকালের মধ্যে সবকিছু গুছিয়ে নিয়ে সন্ধ্যায় বের হয়ে গেলাম। হাওড়া স্টেশনে গিয়ে রেস্টরুমে সবার ব্যাগেজ রাখলাম।

এখানে ছেলে-মেয়েদের আলাদা রেস্টরুম। বিশাল আর যথেষ্ট পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন, বাথরুমগুলোও। গাইডের কাছে জানতে পারলাম এখানে রেস্টরুমের সিকিউরিটিও খুব ভালো। নিশ্চিন্ত লাগেজ রেখে বাইরে যাওয়া যায়। আমরা সবাই গোসল করে ফ্রেশ হয়ে নিলাম এখানেই।

আমাদের ট্রেন ছাড়বে রাত সাড়ে এগারটায়। এতক্ষণ এখানে বসে থাকার কোন মানে হয় না। অতএব আমরা হন্টন যাত্রা শুরু করে দিলাম। হাঁটতে হাঁটতে প্রথমে গেলাম শ্রীরাম মার্কেট। এটা একটা শপিং মল টাইপের, দামও একটু বেশি।

এখানে একটু ঘুরাঘুরি চলে গেলাম পাশের নিউ মার্কেটে। শপিং করতে হয় এখান থেকেই। আমরা অবশ্য এখুনি কেনাকাটা করে ব্যাগ ভারী করতে চাই না। এমনিতেই ফেরার পথে আরেকবার কোলকাতা হয়েই যাব। তবে টুকিটাকি দরকারী জিনিস কিনলাম।

যেমন আমি একটা বিছানার চাদর কিনলাম ট্রেনে ঘুমানোর সময় গায়ে দেয়ার জন্য। আর অল্প কিছু কসমেটিক্সও কিনেছিলাম মনে হয়। এরপর রাস্তায় হাঁটতে হাঁটতে একটা খাবারের দোকানের সামনে গেলাম। গাইড জানাল কোলকাতার জনপ্রিয় খাবারের কথা, চানাভাটুরা বা ছোলাভাটুরা। আমরা এখান থেকে কিনে খেতে বসে গেলাম।

রাস্তায় বসেই সবাই খাচ্ছিল, আমরাও বসে পড়লাম ফুটপাথে। এই ছোলার স্বাদ আসলেই অন্যরকম মজা। পরে ঢাকায় বসুন্ধরা সিটির ইন্ডিয়ান ফুডের দোকানে খেয়ে মনে হয়েছে না খেলেই ভালো হত। ফ্রেশ ফ্রুটজুসও পাওয়া যায় এখানে। তবে আমি নিলাম লাচ্ছি, যেটা এখানে টক দই দিয়ে বানায়।

খারাপ না খেতে। কোলকাতার রাস্তায় আরও একটা জিনিস খুব পাওয়া যায়, নিম্বুপানি। এক গ্লাস ঠান্ডা পানিতে একটা লেবুর রস পুরোটা দিয়ে চিনি আর গোলমরিচের গুঁড়া দিয়ে বানায়। দারুণ লাগে গরমের মধ্যে এই নিম্বুপানি। যা হোক, রাস্তায় নাস্তা সেরে আমরা আবারও হাঁটা ধরলাম।

আমাদের একটা গ্রুপ অবশ্য আলাদা হয়ে সিনেমা দেখতে চলে গিয়েছিল। যা হোক, আমরা মূল দলটা প্রথমে মেট্রোরেলে করে গেলাম এক জায়গায়, এখন জায়গার নাম মনে পড়ছে না। এখান থেকে হেঁটে হেঁটে আমাদের নিয়ে যাওয়া হল রাজা রাজেন্দ্র মল্লিকের বাড়ি। বাড়িতে অবশ্য ঢুকতে দেয়া হয় না, অন্তত রাতের বেলায় না। বাইরে থেকে দেখেই মন ভরতে হল।

এরপর আমরা চললাম জোড়াসাঁকোর উদ্দেশ্যে, কোলকাতায় এসে ঠাকুরবাড়ি না দেখে যাওয়াটা বোকামীই হবে। হাঁটতে হাঁটতে এক তেরাস্তার মোড়ে এসে দেখলাম একটা মন্দির, তিন রাস্তার ঠিক মাঝখানে মন্দিরটা। আমাদের এক সহপাঠিনী সেখানে পুজো দিল। এরপর আমরা গেলাম সেই বিখ্যাত জোড়াসাঁকোর ঠাকুরবাড়ি, কবিগুরুর জন্মস্থান। এখানে ঢোকার সময়ও আমরা পার করেই ফেলেছিলাম, তারপরও অনুরোধ করায় আমাদের ঢুকতে দেয়া হল।

তবে ঢোকার সময়ই বলে দেয়া হল যেন কোন ছবি না তোলা হয়। কিন্তু আমরা যে বড়ই ত্যাঁদর। এর আগেও এই ধরণের নির্দেশ অমান্যের ইতিহাস আছে আমাদের। হাওড়া ব্রিজের কাছাকাছি আরেকটা ব্রিজ আছে বিদ্যাসাগর ব্রিজ। সেই ব্রিজেও ছবি তোলা নিষেধ।

এটা যে কেন করেছে জানি না। কিন্তু বিদ্যাসাগর ব্রিজ থেকে গঙ্গা আর হাওড়া ব্রিজের দৃশ্য দেখলে ছবি না তুলে থাকা মুশকিল। তাই আমাদের কয়েকজন ত্যাঁদর পোলাপাইন বাসের মধ্য থেকে ঝটপট ছবি তুলে নিয়েছিল। কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত ক্যামেরা ফ্ল্যাশলাইট পুলিশের চোখে পড়ে গিয়েছিল। আমাদের বাস থামিয়ে পুলিশ ক্যামেরা জব্দ করার চেষ্টাও করেছিল।

পরে গাইড তাদেরকে বুঝিয়ে সুঝিয়ে শান্ত করল। এমনও হতে পারে ট্যুরিস্ট বাস বুঝতে পেরে পুলিশগুলোই এই ত্যাঁদরামিটা করেছিল। যা বলছিলাম, জোড়াসাঁকোর ঠাকুরবাড়িতে ভিতরের আঙিনায় ঢুকে আমরা ঠিকই লুকিয়ে ছবি তুলে ফেললাম কয়েকটা। আর কিভাবে যেন দারোয়ানগুলো টেরও পেয়ে গেল। কিন্তু তারা দৌড়ে আসতে আসতেই আমরা ক্যামেরা লুকিয়ে ফেললাম।

তারা বড়ই মনক্ষুন্ন হয়ে বলল, দেখুন এটা কিন্তু ঠিক হচ্ছে না, এমনিতেই এই সময় ঢোকা নিষেধ তবু আপনার অনুরোধে ঢুকতে দিয়েছি, এখন ছবি তুলতে থাকলে বাধ্য হয়ে আপনাদেরকে বের করে দিতে হবে। আমরা তো তখন নিপাট ভদ্রলোক। বললাম, আরে না না, কোন ছবি টবি তুলছি না আমরা। ওহ, আগের দিনের একটা ঘটনার কথা তো বলাই হয়নি। আমরা যে হোটেলে ফিরবার সময় লোকাল বাসে চড়েছিলাম, ঐ বাসে করে আমরা হাওড়া ব্রিজের এক প্রান্তে নেমেছিলাম।

হোটেলে যেতে হলে ব্রিজ পার হতে হবে। কিন্তু এবার আমরা ব্রিজ দিয়ে পার না হয়ে উঠলাম ফেরীতে, ছোট ছোট ফেরীতে করে হাওয়া খেতে খেতে গঙ্গা পার হলাম আমরা। নদী আমার সব সময়ই ভালো লাগে, এবারও তার ব্যতিক্রম হল না। স্যার হঠাৎ আমাদের ডেকে দেখালেন, ঐ দেখ, টাইটানিক। আমরা প্রথমে বুঝলাম না কী দেখাতে চাচ্ছেন স্যার, আরেকটা ফেরীকে টাইটানিক বলছেন না কি।

পরে দেখি আসলে আমাদের ফেরীতেই একটা জুটি ফেরীর একেবারে সামনে দাঁড়িয়ে গল্প করছিল, স্যার ওদের প্রতিই ইঙ্গিত করছিলেন। আমাদের হাসাহাসিতে জুটিটা একবার বিরক্ত হয়ে তাকাল, কে পাত্তা দেয় ওসব। আচ্ছা এবার আগের কথায় আসি। জোঁড়াসাকোর ঠাকুরবাড়ি থেকে বের হয়ে আমরা ট্যাক্সি নিলাম। একবারে হাওড়া স্টেশনে এসে পৌঁছালাম।

গাইডের নির্দেশে সবাই শিকল আর তালা কিনে নিলাম স্টেশন থেকেই। ট্রেনে রাতের বেলা কে লাগেজ পাহাড়া দিবে, শিকল দিয়ে বেঁধে রাখতে হবে সব। আমরা ট্রেনে উঠে তাই করে ফেললাম। আমি আপার বার্থ নিলাম, লোয়ার বার্থে ঘুমাতে অস্বস্তি হবে ভেবে। নতুন কেনা চাদরটা গায়ে জড়িয়ে শুয়ে পড়লাম সবাই।

এর মধ্যে রাতের খাবারটা কোথায় সেরেছি ভুলে গিয়েছি আবারও। থাক, খাওয়া-দাওয়ার কথা অত মনে না রাখলেও চলে। চলবে.................... ।


এর পর.....

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.