আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ঘুরতে গিয়েছিলাম ভারত - ১

মেডিকেলে ভর্তি হয়েই শুনেছিলাম ফোর্থ ইয়ারে সবাই ভারত ভ্রমণ করতে যায়। যদিও এই ভ্রমণের নাম দেয়া হয় স্টাডি ট্যুর, স্টাডির কিছুই থাকে না এখানে। যা হোক, আরও যা শুনলাম তা হল ফোর্থ ইয়ারে ঘুরে বেড়াতে গিয়ে পড়াশোনার বারোটা বাজে, সেকেন্ড প্রফের প্রস্তুতি নেয়া হয় না ঠিকমত। তাই আমরা ঠিক করলাম আমরা থার্ড ইয়ারেই যাব ঘুরতে, তাহলে প্রফের আগে নিশ্চিন্তে প্রস্তুতি নেয়া যাবে। আমরা তো পরিকল্পনা করে ফেললাম, বাধ সাধল আমাদের শিক্ষকরা।

কিছুতেই আমাদের ঘুরতে যাওয়াকে সমর্থন করলেন না তারা। কিন্তু কে শোনে কার কথা, আমরা ঠিক করেছি যাব তো যাবই। পড়াশোনা নষ্ট হবে, ক্ষতি হয়ে যাবে এটাই ছিল তাদের মূল কথা। আরেক টিচার তো মেয়েদের ভয় দেখানো শুরু করলেন, তোমরা তো কালো হয়ে যাবে, ওখান থেকে ফিরে আয়নায় নিজের চেহারা দেখে নিজেই চিনতে পারবে না। হাস্যকর যুক্তি, এসব জেনে শুনেই তো আমরা যাব, কালো হওয়ার ভয়ে ঘরে বসে থাকে কে? আরও মজার ব্যাপার হল, আমরা মোটামুটি সবাই কালো হয়ে গিয়েছিলাম, কিন্তু যাকে ঐ টিচার এই ভয় দেখিয়েছিলেন, তার কোনই পরিবর্তন হয়নি।

আমাদেরকে আশ্চর্য করে আমাদের এই ভ্রমণে সমর্থন করেছিলেন শুধু একজন টিচার। আশ্চর্য হবার কারণ হল এই টিচার পড়াশোনা নিয়ে এত বেশি সিরিয়াস যে তিনি দুই ঘন্টার ক্লাস নিতেন চার-পাঁচ ঘন্টা ধরে। যা হোক, সবার অমতেই আমরা ভ্রমণের প্রস্তুতি নিতে থাকলাম। আমাদেরকে বাধা দেয়ার ব্যর্থ চেষ্টা করে টিচারদের যে ক্ষতিটা হল তা হল আমরা রাগ করে তাদের কাউকেই সাথে নিলাম না। বরং আমাদের কলেজের এক সাবেক টিচার, যিনি ঐ সময় অন্য কলেজে ছিলেন, তাকেই বেছে নিলাম।

বেশ জোরেসোরেই প্রস্তুতি চলত থাকল। সবার পাসপোর্ট করা হল জরুরি ভিত্তিতে। ঐ সময় পাসপোর্ট করতে অনেক সময় লাগত। কিন্তু আমাদের এক সহপাঠী ভিআইপি পরিবারের হওয়ায় কাজটা সহজ হয়ে গেল। সে নিজে যদিও আমাদের সাথে যায়নি, কিন্তু সহযোগিতা করেছে পুরোদমে।

আমার অবশ্য পাসপোর্ট আগেই করা ছিল। আমাদের আয়োজকরা সব ধরণের কাজেই সাহায্য করেছে। পাসপোর্ট, ভিসা, ডলার এনডোর্সমেন্ট থেকে শুরু করে ছবি তোলার জন্য ফিল্মও কিনে এনেছে তারাই। সবাই শুধু যার যার খরচটা দিয়ে দিয়েছিল। যাদের ক্যামেরা ছিল না তারা এই উপলক্ষ্যে ক্যামেরাও কিনে ফেলল।

হোটেলে কোন রুমে কে কে থাকবে, বাসে কে কার পাশে বসবে সবকিছুর তালিকা তৈরি করা হল। আমরা তিন কন্যা একটা গ্রুপ করে ফেললাম। সাথে এটাও ঠিক করে ফেললাম, আমরা তিনজন পালা করে ছবি তুলব, একই জায়গায় তিনজনেরই ছবি তোলার দরকার নেই। তাহলে অনেক বেশি ছবি তোলা যাবে। তখনও ডিজিটাল ক্যামেরা এতটা সহজলভ্য ছিল না।

আমাদেরকে বলা হয়েছিল যেন কমপক্ষে পাঁচটা ফিল্ম রোল নিয়ে যাই। আমরা তিনজন তিনটা করে রোল নিলাম। যেহেতু পালা করে ছবি তোলা হবে, কাজেই আমাদের আসলে নয়টা রোল হবে। আর দরকার পড়লে তো ওখান থেকেও কিনে নেয়া যাবে। পরে অবশ্য দরকার হয়নি।

গোছগাছ চলতে থাকল সবার। সিনিয়র আপুদের কাছ থেকে শুনে টুকিটাকি দরকারী জিনিসপত্রের তালিকা করে নিয়েছিলাম, তাই পুরো ভ্রমণে কোন কিছুর অভাব বোধ করিনি। তালিকা আরও একটা করা হয়েছিল। কার জন্য কী কী নিয়ে আসতে হবে তার তালিকা। অবশেষে রওনা দেবার দিন ঘনিয়ে এল।

ঈগলের দুইটা বাস রিজার্ভ করা হয়েছিল। কলেজ থেকে রাত দশটায় সবাই বাসে উঠে বসলাম। সারা রাতের জার্নির পর ভোরবেলা বেনাপোল স্থল বন্দরে পৌঁছুলাম। এখানে সীমান্ত পার হতেই সময় লেগে গেল কয়েক ঘন্টা। এর মধ্যে আমাদের সকালের নাস্তার ব্যবস্থা করা হল।

পাউরুটি, কলা আর ডিম সেদ্ধ। অনেকেই ডিমটা খেতে পারছিল না বা চাইছিল না। তাতে সমস্যা হয়নি, আমাদের মধ্যে একজন পাওয়া গেল যে সিদ্ধ ডিম খাওয়ায় সিদ্ধহস্ত। একে একে চার-পাঁচজনের কাছ থেকে ডিম নিয়ে খেয়ে ফেলল। এরপরও আরও কয়েকজনের কাছ থেকে ডিমের অফার এলে তাদেরকেও ফিরিয়ে দেয়নি সে, পকেটে ভরে নিয়েছে ডিমগুলো, যাত্রাপথে ধীরেসুস্থে খেয়ে নিবে।

যা হোক, সীমান্ত পারও হলাম, একে একে সবাই ডলার ভাঙিয়ে নিয়ে রওনা হলাম কোলকাতার পথে। এবার যে দুইটা বাস নেয়া হল এগুলোকে মুড়ির টিনের খালাত ভাই বলা যেতে পারে। শুধু পার্থক্য হল এদের বাসের সামনের কাঁচে কলেমা লেখার বদলে হিন্দু দেব-দেবীর ছবি লাগানো আর জরির ঝালর দিয়ে সাজানো। তবে আমাদের গাইড আশ্বস্ত করল যে কোলকাতায় পৌঁছে ভালো বাস নেয়া হবে, এরপরের জার্নিগুলো আরামের হবে। দুই পাশের দৃশ্য দেখতে দেখতে যেতে থাকলাম।

অনেকে আরেক দফা ঘুম দিয়ে নিল এই ফাঁকে। আমি আবার দৃশ্য দেখতে বসলে ঘুমের কথা খেয়াল রাখি না। পুরো ভ্রমণেই আমি যতক্ষণ পেরেছি জানালা দিয়ে তাকিয়ে থেকেছি, এমন কি রাতের বেলায়ও। একেবারেই ক্লান্ত হয়ে গেলে তখন ঘুমিয়েছি। যা হোক, এই মুড়ির টিনের যাত্রা শেষ করে আমরা কোলকাতায় পৌঁছুলাম।

চলবে................... ।


এর পর.....

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.