আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

পল্লী উন্নয়ন ও বাংলাদেশর উন্নতি

বাংলাদেশ একটি কৃষিভিত্তিক দেশ, অথচ এই দেশের দুই- তৃতীয়াংশ এখনও অনুন্নত, গ্রামে বসবাসরত । আমাদের এই দেশকে বিশ্বের উন্নত দেশগুলোর মধ্যে একটি হওয়ার জন্য প্রয়োজন এই বিপুল পরিমাণের গ্রামবাসীর উন্নতি । কেননা এই উন্নতির সিড়ি বেয়েই আমাদের দেশ উন্নয়নশীল দেশ থেকে উন্নত দেশে পদার্পন করতে পারবে । ইতিহাসের পাতায় চোখ রাখলে দেখা যাবে যে, অতীতে আমাদের গ্রামীণ সম্প্রদায়কে অনুন্নত হিসেবে চিহ্নিত করা যেত না । কারণ তাদের সকল মৌলিক চাহিদা পূরণের সুবিধা তাদের ছিল ।

কিন্তু সময়ের সাথে সেই পরিস্থিতি এখন আর নেই । বর্তমান পল্লী সমাজে মানুষের বেঁচে থাকার মৌলিক চাহিদা ,যেমন- খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থান, যথার্থ চিকিৎসা ও শিক্ষা, কিছুই পূরণ হচ্ছে না। চলতি সময়ে আর্ত্থিক ও পরিবেশগত কারণবশত আমাদের গ্রাম বাংলার সোনার কৃষক, কারিগর কুমার, কামার, তাঁতিসহ অন্যান্য পেশার মানুষেরা তাদের এই কর্মসংস্থানের মাধ্যমে তাদের পরিবারের চাহিদা মিটাতে ব্যর্থ হচ্ছে। এই ব্যরররথতা তাদের বাধ্য করছে তাদের পছন্দের পেশাকে ত্যাগ করে শহরে এসে রিক্সাচালকসহ অন্যান্য কায়িক পেশায় যোগ দিতে। কর্মসংস্থানের এই অভাব তাদেরকে রাজধানী ঢাকা সহ অন্যান্য থানা শহর, যেখানে জনসংখ্যা ও কর্মসংস্থান বেশি, সেখানে আসতে বাধ্য করে ।

একটি কৃষিভিত্তিক দেশ হওয়ায় বাংলাদেশের এই সমস্যা স্মূলে বিনষ্ট করা একান্ত প্রয়োজন । আমাদের কৃষক সম্প্রদায় নিরক্ষর । তারা বৈজ্ঞানিক উপায়ে চাষ করা, কম খরচে বেশি উৎপাদন করাসহ নানা বিষয়ে কিছুই জানেন না । সরকারী ও বেসরকারী প্রতিষ্ঠান, এনজিও এর সহযোগীতায় এই সমাজকে শিক্ষিত করতে হবে । তাদের আধুনিক কৃষিব্যবস্থা, বৈজ্ঞানিক পন্থা সম্পর্কে অবগত করতে হবে ।

মাটির ধরণ, কোন ধরণের মাটিতে কি ধরণের সার প্রয়োজন, কোন মাটিতে কতটুকু সেচ লাগে, কোথায় কোন জমিওতে কোন ফসল লাগালে, কখন লাগালে সর্বাধিক উৎপাদন পাওয়া যাবে তা সম্পর্কে যথার্থ জ্ঞান কৃষকদের দিতে হবে । বিভিন্ন সংস্থা যেখানে কৃষকদের শিক্ষা ও প্রশিক্ষন দেওয়া হয় তাদের সংখ্যা বৃদ্ধি করতে হবে । এর ফলে যেন পুরাতন কৃষকরাও উপকৃত হয় এবং নতুন কৃষকের জন্ম হয় । এতে কেবল কৃষকের আয়ই কেবল বাড়বে না বরং বাৎসরিক উৎপাদনও বৃদ্ধি পাবে, যা দেশের অন্নের চাহিদা মেটাবে ও দেশের অর্থ-সম্পদ বৃদ্ধি করবে। আমাদের দেশের আরেকটি ক্ষেত্র আছে যাতে সকলের দৃষ্টি আনা প্রয়োজন।

যদিও বিগত কিছু বছরে বাংলাদেশের শিক্ষার হার বৃদ্ধি পেয়েছে, কিন্তু না যথেষ্ট নয় । এখন বাংলাদেশের অধিকাংশ মানুষই অশিক্ষিত । এদের শিক্ষা দান করে নিরক্ষরতা দূর করা একান্ত জরুরি । আমাদের দেশের অধিকাংশ শিক্ষিত নাগরিকরা কেবল ভালো বেতনের চাকুরির পেছনে ঘোরে, যা তারা কেবল শহরেই পেয়ে থাকে । আর যে সব ব্যক্তি আমাদের দেশের অনুন্নত খেত্রগুলোকে উন্নত করার জন্য কাজ করে তারা খুব একটা শিক্ষিত নন ।

আমাদের গ্রামবাসীকে উৎসাহিত করতে হবে তাদের দক্ষতা , বুদ্ধিমত্তাকে গ্রামীন উন্নয়নে ব্যবহার করার জন্য । এই কাজের জন্য তাদের কেবল সুনামই নয় যথার্থ সুযোগ- সুবিধাও দেওয়া প্রয়োজন। সরকারী ও বেসরকারীভাবে আমাদের স্বাস্থ্য ও চিকিৎসাক্ষেত্রে অনেক উন্নতি করা হয়েছে । গ্রাম অঞ্চলে প্রশিক্ষিত স্বাস্থ্যকর্মীরা আছেন যারা ডাক্তারের অনুপস্থিতিতে সঠিক চিকিৎসা দিয়ে গ্রামবাসীকে সাহায্য করে । তবে এসব আমাদের বেড়ে চলা জনসংখ্যার তুলনায় অনেক কম ।

আমাদের প্রচুর চিকিৎসালয়, ডাক্তার, স্বাস্থ্যকর্মী প্রয়োজন যারা এই উর্ধমুখী জনসংখ্যাকে যথার্থ সেবা দিবে । আমাদের গ্রামীন সমাজের অন্যতম সমস্যা অনুন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থা । যার ফলে অসুস্থ রোগী হাসপাতালে পৌঁছানোর পূর্বে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করে, প্রাকৃতিক দুর্যোগ সবকিছু ছিনিয়র নেবার পর বহুদিন অপেক্ষা করতে হয় আসার এক্টুখানি আলো দেখার জন্য, কৃষকরা তাদের মাথার ঘাম পায়ে ফেলে ফলানো সোনার ফসলকে বিক্রির পূর্বেই তা পচে যায় । এখানে পরিকল্পিত যোগাযোগ ব্যবস্থা, সড়ক ও ব্রিজের পাশাপাশি প্রয়োজন উন্নত যানবাহন । যাতে গ্রামবাসীর এ দুর্ভোগ দূর হয় ।

বিগত কিছু বছরে আমাদের দেশের HDI এর বেশ উন্নতি হয়েছে । কিন্তু পল্লী উন্নয়ন না হওয়া পর্যন্ত আমাদের দেশ উন্নতির উচ্চ শিখরে পৌঁছাতে পারবে না, সোনার বাংলাদেশ হিসেবে মাথা উঁচু করে দাড়াতে পারবে না । মূল প্রবন্ধঃ Bangladesh: How about rural development? ।


এর পর.....

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।