আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

বিজ্ঞানী আল ফারাবী

আসসালামুআলাইকুম। আশা করি সৃষ্টিকর্তা আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের দয়ায় সবাই ভালো আছেন। আমিও আলহামদুলিল্লাহ ভালো। একসময় মুসলমানদের জ্ঞান-বিজ্ঞান চর্চা কোনো অংশে কম ছিল না। সে সময় সমগ্র বিশ্বের রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা ছিল মুসলমানদের হাতে।

জ্ঞান-বিজ্ঞান, শিল্প-সাহিত্য ও সভ্যতায় মুসলিম জাতি ছিল উন্নত ও শ্রেষ্ঠ। এমন এক যুগ ছিল যখন সমগ্র বিশ্বের রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা ছিল মুসলমানদের হাতে। পৃথিবীতে মুসলমানদের উন্নতির জন্য মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামিন আশীর্বাদ হিসেবে যুগে যুগে যে সকল মুসলিম বিজ্ঞানী ও দার্শনিককে পৃথিবীতে পাঠিয়েছিলেন আল ফারাবি তাদের অন্যতম। ‘গাবো সে অতীত কথা, গৌরব কাহিনী, নাচাইতে মুসলেমের নিস্পন্ধন ধমনী। গাবো সে দুর্দম বীর্য দীপ্ত উন্মাদনা, কৃপা করি অগ্নিময়ী করো এ রসনা।

’ আবু নসর আল ফারাবী আনুমানিক ৮৭০ খ্রিস্টাব্দে এবং মৃত্যু- ৯৬৬ খ্রিস্টাব্দে। আল ফারাবী উচ্চ শিক্ষার জন্যে গমন করেন বাগদাদে। তিনি সেখানে প্রায় ৪০ বছর ধরে অধ্যায়ন ও গবেষণা চালিয়ে যেতে থাকেন। কয়েকটি ভাষার উপর তিনি পূর্ণ দখল অর্জন করেন। তিনি জ্ঞান বিজ্ঞানের বিভিন্ন শাখায় ছিলেন পারদর্শী।

তবে দার্শনিক বিজ্ঞানী হিসেবে তাঁর খ্যাতি ছাড়িয়ে পড়ে চারিদিকে। জ্ঞানের সন্ধানে তিনি ছুটি গিয়েছেন দামেস্কে, দেশ-বিদেশের আরো অনেক স্থানে পদার্থবিজ্ঞান, সমাজবিজ্ঞান, দর্শন, যুক্তিশাস্ত্র, গণিতশাস্ত্র, চিকিৎসাবিজ্ঞান প্রভৃতিতে তিনি উল্লেখযোগ্য অবদান রাখেন। মূলত দর্শন ও বিজ্ঞানে তাঁর অবদান সর্বাধিক। পদার্থ বিজ্ঞানে তিনি শূন্যতার অবস্থান প্রমাণ করেছিলেন। তিনি বৈজ্ঞানিক ও দার্শনিক হিসেবে আরোহন করেছিলেন জ্ঞানের শীর্ষে।

তিনি সমাজবিজ্ঞান, রাষ্ট্রবিজ্ঞান, দর্শন, যুক্তিশাস্ত্র প্রভৃতি বিষয়ে বহু রচনা লিখেছেন। তাঁর রচিত গ্রন্থের সংখ্যা প্রায় শতাধিক। তবে এ সকল অমূল্য অধিকাংশ গ্রন্থের সন্ধান মেলেনি। পদার্থবিজ্ঞানে তিনি শূন্যতার অবস্থান প্রমাণ করেছিলেন । প্লেটো ও এরিস্টটলএর দর্শনের উপর তিনি বিস্তর আলোচনা করেছেন।

তিনি স্রষ্টার সর্বাধিপত্য স্বীকারের পাশাপাশি সৃষ্টিকেও শাশ্বত বলে মনে করতেন। তিনি কোন চরম মত পোষণ করতেন না এবং চিন্তার ক্ষেত্রে পরস্পর-বিরোধী মতকে প্রায়শই একসাথে মিলাবার চেষ্টা করেছেন। দশম শতকের মুসলিম দার্শনিক আল ফারাবি সত্তরটি ভাষা জানতেন! বাগদাদ ছিল সে আমলের অন্যতম জ্ঞানতীর্থ। বাগদাদে ফারাবির শিক্ষকরা ছিলেন গ্রিক দর্শনে পন্ডিত, তাদের সান্নিধ্যে ফারাবি খ্রিস্টীয় ভক্তিবাদ ও যুক্তিবাদী গ্রিকদর্শন সম্বন্ধে গভীর জ্ঞান অর্জন করেন। ফারাবির অন্যতম কৃতিত্ব হল, গ্রিক দর্শনের সঙ্গে আরব বিশ্বের পরিচয় করিয়ে দেওয়া।

সৌভাগ্যক্রমে কিছু গ্রন্থ মধ্যযুগে লাতিন অনুবাদে সংরক্ষিত আছে। বিজ্ঞানের ক্যাটাগরি করেছিলেন ফারাবি। তিনিই প্রথম মুসলিম হিসেবে সমগ্র মানবীয় জ্ঞানের ইতিহাস রচনা করার উদ্যেগ নিয়েছিলেন। ফারাবির মতে, বিশ্বজগতের সৃষ্টিকর্তা একজন প্রধানতম সত্তা বা সুপ্রিম বিয়িং-আর সৃষ্টি হচ্ছে এই সুপ্রিম বিয়িংয়ের বৌদ্ধিক কার্যক্রম, মানে বুদ্ধিমত্তা দ্বারা প্রধানতম সত্তা সৃষ্টিকার্য পরিচালনা করেন। (আমাদের মধ্যে যারা যারা লালনদর্শন নিয়ে আগ্রহী তারা লক্ষ করুন) ফারাবি বলছেন, মানুষের অর্ন্তজগতেও এই বৌদ্ধিক দিকটি (আয়নামহল?) রয়েছে, যা অমর ও অবিনশ্বর।

এই অর্ন্তলোকের উন্নতি সাধনই মানবজীবনের একমাত্র লক্ষ। ৯৫০ খ্রিস্টাব্দ। ফারবির বয়েস প্রায় ৮০ । কী কাজে সিরিয়ার রাজধানী দামাস্কাস পৌঁছলেন আল ফারবি। সে নগরেই দেহত্যাগ করেন।

শোনা যায়, আলেপ্পোর সামন্ত সাইফ আল দৌলা তাঁর কবর সুফি পোশাকেই আচ্ছাদিত করে দিয়েছিলেন। আল-ফারাবী মনে করতেন যে, জ্ঞান-বিজ্ঞানের চর্চা শুরু হয়েছে প্রথমে ইরাকের কালদিয়ান সম্প্রদায়ের মধ্যে। পরে তা বিবর্তিত হয়েছে ক্রমাম্বয়ে মিশর, গ্রিস, সিরিয়া এবং আরব দেশে। সম্ভবত জ্ঞানার্জনের উদ্দেশ্যেই এসব ঐতিহ্যবাহী স্থান তিনি সফর করেন। ফারাবীর পিতা তৎকালীন খোরাসানের একজন সৈনিক ছিলেন।

ফারাবীর মতে প্রতিহিংসা মানুষের বুদ্ধি বিবেক এবং নৈতিক শক্তিকে ধ্বংস করে দেয়। এতে তার বিচার শক্তি লোপ পায় এবং সে দিগ্বিদিক্ জ্ঞানশূন্য হয়ে পড়ে। প্রশাসক এবং রাষ্ট্রনায়করা যখন প্রতিহিংসাকে প্রতিদ্বনদ্বী নির্যাতনের হাতিয়ার হিসেবে গ্রহণ করে তখন রাষ্ট্র কক্ষচ্যুত হয় এবং সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি ও রাজনীতিক নিজের তৈরি গর্তেই চাপা পড়ে মরে। তার মতে মানুষের আত্মার বৃত্তিগুলো হচ্ছে বুদ্ধি বৃত্তি, কামনা বৃত্তি, কল্পনা বৃত্তি ও সংবেদন বৃত্তি। বুদ্ধি বৃত্তি মানুষকে জ্ঞান-বিজ্ঞান, কলা কৌশল জানতে ও বুঝতে সাহায্য করে।

এই বৃত্তির সহায়তায় মানুষ কাজের ও আচরণের ভালমন্দ দিক নির্ণয়ে সক্ষম হয় এবং পরিণামে সৎকাজে উৎসাহ ও অসৎকাজে অনীহা প্রকাশ করে। তাঁর রচিত গ্রন্থে পীথাগোরাস, হিরোক্লিটাস, সক্রেটিস, প্লেটো, অ্যারিস্টটল, থিও ফ্রিসটাস, অ্যারিস্টিপাস, ডাইওজেনিস, ইপিকিউরিয়ান, স্টোয়িক প্রমুখ দার্শনিকের উদ্ধতি ও ব্যাখ্যা পাওয়া যায়। আল-ফারাবী একজন সত্যের সন্ধানী দার্শনিক ছিলেন। তিনি অতি সাবধানে তাঁর দর্শনগ্রন্থ রচনা করেছেন। তাঁর দর্শনে ধর্মতাত্ত্বিক মতবাদের প্রকাশ নেই।

আল-ফারাবীর মতে, যুক্তিবিদ্যা ও দর্শনে তেমন কোন পার্থক্য নেই। বরং দর্শন হল উচ্চতর যুক্তিবিদ্যা। ।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।