আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

পিঁপড়া বিজ্ঞানী



বছর 6/7 বয়স হবে ছেলেটার। মাটিতে উবু হয়ে গভীর মনোযোগের সাথে দেখছে সারিবাঁধা পিঁপড়ের দল। কিছু খই পড়ে ছিলো। একটা পিঁপড়া বাহিনী সেগুলোকে নিয়ে জমা করছে হাত চারেক দূরের মাটির বাসায়। ছেলেটা কাজটা প্রায়ই করে।

কিছু খাবার ফেলে দিয়ে পর্যবেক্ষণ করে পিঁপড়াদের কার্যকলাপ। সে আবিষ্কার করেছে, দেখতে এলোমেলো মনে হলেও প্রত্যেকটা পিঁপড়া একটা নির্দিষ্ট ছন্দে ছুটে চলেছে। আশেপাশের এলাকা রেকি করছে একটা নির্দিষ্ট নিয়ম মেনে। মাঝে মাঝে অন্য পিঁপড়ার মুখোমুখি হলে মুখে মুখ লাগিয়ে ভাব বিনিময় করছে। সবচেয়ে মজার ব্যাপার ঘটে হঠাৎ কোনো খাবার আবিষ্কৃত হলে।

উত্তেজনা বেড়ে যায় অনেক। আশেপাশে থাকা অন্য পিঁপড়াকে খবরটা পৌঁছে দেয়। অন্যটা পৌঁছে দেয় তার কাছের টাকে। এভাবে অল্প কিছুক্ষণের মধ্যই গড়ে ওঠে একটা সুশৃঙ্খল পিঁপড়া বাহিনী। বাসায় যাওয়ার সবচেয়ে সোজা রাস্তাটা তারা আবিষ্কার করে অনায়াসে।

তারপর আবিষ্কৃত দ্্রব্যের বহনপর্ব। একজন কিছুদূর বয়ে নিয়ে গিয়ে অন্যকে জিনিসটা দিয়ে দেয়, সে কিছুদূর গিয়ে আবার অন্যকে। মাঝে চলে ছোট্ট শুঁড় নাড়িয়ে ভাবের আদান-প্রদান। অপরিসীম দ্্রুততায় ছেলেটার মুগ্ধতা শেষ হওয়ার আগেই কাজ শেষ করে পিঁপড়া বাহিনী। এডিসনের হাঁসের ডিমে তা দেয়ার গল্প ছেলেটা জানে না।

কিন্তু তার খুব ইচ্ছে হয়, যদি পিঁপড়াদের ভাষা জানা যেতো! এত পিচ্চি শুঁড় নাড়িয়ে যে কথা ওরা বলে একে অপরকে, তা যদি বুঝা যেত! ছেলেটা মনে মনে সিদ্ধান্ত নেয়, বড় হয়ে সে এমন একটা যন্ত্রতৈরি করবে, যাতে সে বুঝতে পারবে পিঁপড়াদের সমস্ত কথা, সমস্ত আবেগ, কাজের পদ্ধতি। মা এসে তাড়া দেয়। যোগ অঙ্কগুলো সে ঠিকমতোই করেছে। এবার 5 অঙ্কের গুণন। ছেলেটা পড়াশুনায় ফাঁকিবাজ হলেও রেজালট হয় দুর্দান্ত।

কেউ কখনো বকা দেয় না। কিন্তু সবাইকে খুশি করতে তাকে মুখস্ত করতে হয় অনেক অপ্রিয় বিষয়ের পৃষ্ঠার পর পৃষ্ঠা। দিনকে দিন তার পিঁপড়া দেখার সময় কমতে থাকে। এসএসসিতে অসাধারণ রেজালট করে সে। সমস্ত শিক্ষাবোর্ডে বিজ্ঞানে সর্বোচ্চ মার্কস পায়।

এই বিশেষ অবদানের জন্য তাকে পুরস্কৃতও করা হয়। সেইসাথে বলা হয়, ক্ষুদে বিজ্ঞানী। ছেলেটা মুচকি হাসে। সে এখন আর পিঁপড়া দেখে না। নদীতে চর পড়ে।

থেমে থেমে একসময় নাই হয়ে যায়। সময়ের নদী থামে না কখনো। ছেলেটা সময়ের স্রোতে ভেসে চলে। আজ 26 বছরের নিজের দিকে তাকিয়ে সে একটি দীর্ঘশ্বাস ছাড়ে, সময় তাকে এতদিনে পুরোপুরি স্বপ্নহীন করতে পেরেছে। খুব কি কষ্টের অনুভূতি? না, তা ও নয়।



এর পর.....

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।